চিটাগংকে উড়িয়ে বিপিএলের ফাইনালে শিরোপাধারী বরিশাল

ছবি: ফরচুন বরিশাল

বিপিএল অভিষেকে মোহাম্মদ আলী ৫ উইকেট নিয়ে চিটাগং কিংসকে বেঁধে ফেললেন দেড়শর নিচে। সাদামাটা লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কোনো বেগই পেল না ফরচুন বরিশাল। তাওহিদ হৃদয়ের অপরাজিত ফিফটিতে ১৬ বল হাতে রেখে অনায়াসে সমীকরণ মিলিয়ে ফেলল তারা। তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ফের উঠে গেল প্রতিযোগিতার ফাইনালে।

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ২০২৫ বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৯ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে বরিশাল। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগং ৯ উইকেটে করে ১৪৯ রান। জবাবে মাত্র ১ উইকেট খুইয়ে ১৫০ রান তুলে ফাইনালের টিকিট কেটেছে বরিশাল।

ওপেনিংয়ে নেমে ৪৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো হৃদয় পরে হয়ে ওঠেন আগ্রাসী। তিনি অপরাজিত থাকেন ৮২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে। ৫৬ বল মোকাবিলায় নয়টি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। ডিপ মিড-উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন হৃদয়। এবারের আসরে তার এটি প্রথম ফিফটি। ব্যাট হাতে রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা তরুণ ব্যাটার জ্বলে উঠলেন মৌসুমের শেষভাগে এসে।

তামিমের সঙ্গে হৃদয়ের ৫২ বলে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের ভিত মিলে যায় বরিশালের। তামিম চিটাগংয়ের পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের শিকার হন ২৬ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২৯ রান করে। এরপর ক্রিজে যাওয়া ডাভিড মালান শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক মেজাজে। তাকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে হৃদয়ও খোলস ভেঙে ফেলেন। এতে ৪৬ বলে দলীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করা বরিশাল দলীয় শতরানে পৌঁছায় ৮০ বলে।

তাদেরকে থামানোর কোনো উপায় খুঁজে পাননি চিটাগংয়ের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। শেষমেশ ৫২ বলে ৯৫ রানের এই অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই ফয়সালা হয়ে যায় একপেশে লড়াইয়ের। ইংলিশ ব্যাটার মালানের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৩৪ রান। ২২ বল খেলে দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি।

চিটাগংয়ের পক্ষে একমাত্র উইকেটটি নেন ডানহাতি পেসার খালেদ। চার ওভারে ৩৪ রান দেন তিনি। খরুচে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের চার ওভার থেকে ওঠে ৪৯ রান। রহস্য স্পিনার আলিস আল ইসলাম চার ওভারে ৩৭ রান দেন।

এর আগে চিটাগংয়ের পক্ষে ব্যাট হাতে একাই লড়াই করেন বাঁহাতি ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ছয়ে নেমে ৭৯ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন তিনি। ৪৭ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে নয়টি চার ও চারটি ছক্কা। ষষ্ঠ ওভারে ৩৪ রানে পড়ে যায় ৪ উইকেট। সেই চাপ সামলে শামীম তোলেন ঝড়। পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে প্রথমে ৫০ বলে ৭৭ এবং পরে খালেদকে নিয়ে ২৬ বলে ৩২ রানের জুটি গড়েন।

ছবি: স্টার

উড়তে থাকা শামীমকে থামিয়ে এক ওভারে ৪ উইকেটসহ ২৪ রানে মোট ৫ উইকেট নেন বরিশালের পাকিস্তানি পেসার আলী। বিপিএলের ইতিহাসে এক ওভারে ৪ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার তিনি। ম্যাচসেরা আলী টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ নিলেন। আঁটসাঁট থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন সতীর্থরা। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কাইল মেয়ার্স চার ওভারে ২ উইকেট নেন ২৭ রানে। আরেক পেসার ইবাদত হোসেন ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন শিকার করেন একটি করে উইকেট।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানি ওপেনার খাওয়াজা নাফায়েকে বোল্ড করে দেন মেয়ার্স। নিজের পরের ওভারে তিনি সাজঘরের পথ দেখান ইংলিশ ব্যাটার গ্রাহাম ক্লার্ককে। মিঠুনকে টিকতে দেননি আলী। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পাকিস্তানি হায়দার আলী ইবাদতের শিকার হলে ভীষণ বিপাকে পড়ে যায় দলটি।

একপ্রান্ত আগলে ছিলেন ওপেনার ইমন। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলকে আলোর দিশা দেওয়ার কাজে নামেন শামীম। এতে রান বাড়তে থাকে দ্রুত। ১৩তম ওভারে স্কোরবোর্ডে একশ ছুঁয়ে ফেলে চিটাগং। পরের ওভারে ভাঙে পঞ্চম উইকেট জুটি। টুকটুক করে এগোতে থাকা ইমন রিশাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন। ৩৬ বলে তিনটি চার ও দুটি ছক্কায় তিনি করেন ৩৬ রান।

ছবি: স্টার

বরিশালের বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া শামীম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাত্র ২৯ বলে। তিনি একই তালে চলতে থাকায় ১৮ ওভার শেষে চিটাগংয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪৩ রান।

এরপর সব আলো কেড়ে নেন বিপিএলে অভিষেক ম্যাচে মাঠে নামা আলী। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই খালেদকে বোল্ড করে দেন তিনি। ধুঁকতে থাকা খালেদ ১ রান করেন ৮ বলে। এক বল পর শামীমের লড়াই থামে বড় শট খেলার চেষ্টায় ইবাদতের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শেষ দুই বলে আরাফাত সানি ও আলিসকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন আলী।

শেষ দুই ওভারে স্রেফ ৬ রান যোগ করতে পারে চিটাগং। বোলিংয়ের শুরুর মতো শেষটাও দারুণ হয় বরিশালের। শেষমেশ জিতে তারা পেয়ে গেছে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট। হারলেও শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে থাকার আরেকটি সুযোগ থাকছে চিটাগংয়ের। আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তারা মোকাবিলা করবে খুলনা টাইগার্সকে।

Comments

The Daily Star  | English
price hike of essential commodities in Bangladesh

Essential commodities: Price spiral hits fixed-income families hard

Supply chain experts and consumer rights activists blame the absence of consistent market monitoring, dwindling supply of winter vegetables, and the end of VAT exemptions granted during Ramadan.

14h ago