বিপিএল ফাইনাল

লিটন-চার্লসের ব্যাটে বিপিএলে আবার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা

Comilla Victorians
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মাশরাফি বিন মর্তুজার বল অফ সাইডে ঠেলেই উল্লাস করতে শুরু করলেন জনসন চার্লস। ডাগআউট থেকে ছুটে এলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সব খেলোয়াড়। খানিক পর বাতি নিভে গিয়ে শুরু হলো আতশবাজি। লিটন দাস ও চার্লসের ঝলকে আরও একবার বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নবম আসরের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে কুমিল্লা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো তারা জিতে নিয়েছে বিপিএলের শিরোপা। টুর্নামেন্টের সফলতম দলের এটি চতুর্থ শিরোপা। কখনোই ফাইনালে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল তারা। অন্যদিকে, পঞ্চমবারে এসে বিপিএলের ফাইনাল হারার তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো সিলেট অধিনায়ক মাশরাফির।

আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের পুঁজি পেয়েছিল সিলেট। ৪ বল আগে ওই রান পেরিয়ে যায় ইমরুল কায়েসের দল। নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় প্রথমবার ফাইনালে ওঠা সিলেট। রান তাড়ায় দলের দায়িত্ব নেন লিটন। তার ফিফটিতে পাওয়া শক্ত ভিত ধরে দুর্বার হয়ে ওঠেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চালর্স। তাতে বিপিএলের শিরোপা ধরে রাখল কুমিল্লা।

রান তাড়ায় কুমিল্লার জয়ের দুই নায়ক; একজন দেশি, আরেকজন বিদেশি। লিটনের ৩৯ রানে ৫৫ রানের পর ৫২ বলে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন চার্লস। এছাড়া, মইন আলির ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে অপরাজিত ২৫ রান।

ফাইনালের মতো চাপের মঞ্চে ১৭৬ রানের লক্ষ্যে আগ্রাসী শুরু পেয়েছিল কুমিল্লা। লিটন আর সুনিল নারাইন প্রথম ২ ওভারে আনেন ২৭ রান। ১ ছয় ও ১ চার মারার পর নারাইন রুবেল হোসেনের বলে টাইমিং পাননি। সহজ ক্যাচে বিদায় তার। অধিনায়ক ইমরুল পুরো আসরে ব্যাট হাতে নিজের মলিন দশা টেনে আনেন এদিনও। এবার ৩ বলে ২ রান করে দেন সহজ ক্যাচ।

লিটনের ছন্দ বজায় থাকায় পাওয়ার প্লেতে আসে ৪৯ রান। দারুণ সব শটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আভাস দেন তিনি।

লিটনের সঙ্গে জমে ওঠে চার্লসের জুটি। ব্যক্তিগত ৮ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। বাউন্ডারি লাইনে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন রুবেল হোসেন। জীবন পাওয়া ক্যারিবিয়ান পরে হন মাশরাফিদের হতাশার বড় কারণ। 

কুমিল্লার সেরা ব্যাটার লিটন আরেক দিকে নেন দায়িত্ব। ৩৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর আর টিকতে পারেননি তিনি। রুবেলের বলে ছক্কার চেষ্টায় টপ এজ হয়ে ক্যাচ উঠে যায় আকাশে। স্কয়ার লেগে দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা হাতে জমান শান্ত। ভেঙে যায় তৃতীয় উইকেটে ৫৭ বলে ৭০ রানের জুটি।

১৫ ও ১৬তম ওভার থেকে কেবল ৮ রান দিয়ে খেলায় ফেরার ইঙ্গিত দেয় সিলেট। কিন্তু সেই চাপ তারা রাখতে পারেনি, আবার খলনায়ক সেই রুবেল। ১৭তম ওভার থেকে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ২৩ রান নিয়ে ম্যাচ আবার নিজেদের মুঠোয় নিয়ে আসেন চার্লস। সামনের সমীকরণ হয়ে পড়ে অনেক সহজ। এরপর ইংলিশ পেসার লুক উডের ওভার থেকে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৮ রান নিয়ে নেন তিনি। শেষ ওভারে কুমিল্লার মাত্র ৩ রান দরকার থাকায় আর কোনো উত্তেজনা ছিল না।

ফিটনেস নিয়ে ভুগতে থাকা মাশরাফির ওভারে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারে কুমিল্লা। এক পর্যায়ে, ৩০ বলে ৩৩ রানে থাকা চার্লস পরের ২২ বলে তোলেন ৪৬। ৭ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কায় নায়ক তিনি।

এর আগে  টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ওভারেই কুমিল্লার 'উপহার' পেয়ে যায় সিলেট। ওভার থ্রো থেকেই ওই ওভারে আসে ৮ রান। প্রথম ওভারে হয়ে যায় ১৭ রান। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে তৌহিদ হৃদয়কে বোল্ড করে দলের ক্ষতি কিছুটা পোষান তানভির ইসলাম।

আগের দুই ম্যাচের মতো আবার নিজেকে উপরে তুলে আনেন মাশরাফি। তিনে নামার বাজি এবার কাজে লাগেনি। আন্দ্রে রাসেলের বলে সহজ ক্যাচে বিদায় ঘটে তার।

২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দারুণ জুটিতে দলকে টানতে থাকেন শান্ত-মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ৫৬ বলে ৭৯ রান। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় কিছু বাউন্ডারি পাওয়া শান্ত নিজেকে দ্রুতই নিয়ে নেন চালকের জায়গায়। রান বাড়ানোর মূল ভূমিকা নেন তিনি। টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিপিএলের এক মৌসুমে পাঁচশ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে ইমরুল ক্যাচ না ছাড়লে শান্ত থামতে পারেন ত্রিশের ঘরে।

বিপদজনক শান্তকে পরে থামান ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন। ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করা এই ব্যাটার কাট করতে গিয়ে হন বোল্ড। থিসারা পেরেরা প্রথম বলেই হয়ে যান বোল্ড। জর্জ লিন্ডাও বেশি দূর এগোতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত টিকে সিলেটের ইনিংস চ্যালেঞ্জিং জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কারিগর মুশফিক। ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবু এই রানও পরে যথেষ্ট হয়নি তাদের জন্য।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago