শ্রীলঙ্কার হারে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশের
দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতের লক্ষ্যটা হাতের কাছে রাখায় দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন দুনিথ ওয়ালালাগে। এরপর ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে লড়াই করেন বুক চিতিয়ে। কিন্তু সঙ্গীদের ব্যর্থতায় ব্যর্থ হয় তার প্রতিরোধ। তাতে ভারতের কাছে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের এই হারে জটিল এক সমীকরণে টিকে থাকা বাংলাদেশের শেষ আশারও সমাপ্তি ঘটে।
মঙ্গলবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালের টিকেট কেটেছে ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে ২১৩ রানে অলআউট হয় তারা। জবাবে ৫১ বল বাকি থাকতেই ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কা হেরে যায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। আগামী বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি তৈরি হলো অলিখিত সেমি-ফাইনালে। সেই ম্যাচের জয়ী দল আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ভারতের বিপক্ষে।
এদিন লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটাই ভালো করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। জাসপ্রিত বুমরাহর তোপে দলীয় ২৫ রানেই টপ অর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে পাথুম নিসাঙ্কাকে লোকেশ রাহুলের ক্যাচে পরিণত করার পর হাওয়ায় ভাসানো স্লোয়ারে কুশল মেন্ডিসকে অতিরিক্ত ফিল্ডার সুরিয়াকুমার যাদবের ক্যাচে পরিণত করেন বুমরাহ। করুনারত্নেকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। ১৮ বলে ২ রান করার এ ব্যাটারের হঠাৎই ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে ধরা পড়েন স্লিপে।
চাপে পড়া দলের হাল সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে ধরেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। চতুর্থ উইকেটে ৪৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। সামারাবিক্রমাকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে এ জুটি ভাঙেন আগের দিন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেওয়া কুলদিপ যাদব। এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকেও ফেরান এই স্পিনার। উইকেটের পেছনে অবশ্য দারুণ ক্যাচ ধরেন রাহুল।
দলীয় ৯৯ রানে অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তাকে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা। স্লিপে দারুণ ক্যাচ লুফে নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ফলে বড় চাপে পড়ে যায় দলটি। তবে সপ্তম উইকেটে ওয়ালালাগেকে নিয়ে লঙ্কানদের ফের স্বপ্ন দেখান ধনাঞ্জয়া। ৬৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা।
কিন্তু হঠাৎ ধৈর্য হারান ধনাঞ্জয়া। মিডঅন উপর দিয়ে হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন সুরিয়াকুমারের হাতে। কার্যত তখন হার দেখতে থাকে লঙ্কানরা। এরপর মহেশ থিকসানাকে হার্দিক পান্ডিয়া আউট করার পর লেজের দুই উইকেট ছাঁটাই করেন কুলদিপ। ফলে দারুণ এক জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ওয়ালালাগে। ৪৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। ৬৬ বলে ৫টি চারে ৪১ রান করেন ধনাঞ্জয়া। ভারতের পক্ষে ৪৩ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন কুলদিপ।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে শুরুটা দারুণ করে ভারত। ৬৭ বলের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮০ রান। এরপর শুরু হয় ওয়েলালাগের স্পিন ভেলকি। দ্বাদশ ওভারে বল করতে এসে নিজের প্রথম বলেই শুবমান গিলকে বোল্ড করেন। টার্নে পরাস্ত হন তিনি। ভারতের স্কোরবোর্ডে আর ১১ রান যোগ হতে ওয়েলালাগে সাজঘরে পাঠান বিরাট কোহলি আর রোহিতকেও।
পিচে পড়ে কিছুটা থেমে আসা বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন কোহলি। নিচু হওয়া ডেলিভারিতে স্টাম্প হারানোর আগে রোহিত ওয়ানডেতে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ভারতের ষষ্ঠ ও সব মিলিয়ে ১৫তম ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
৯১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েন ইশান কিশান ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল। ৮৯ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন দুজনে। এই জুটিও ভেঙে শ্রীলঙ্কাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু দেন ওয়েলালাগে। এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারত।
কোহলিকে কুপোকাত করার মতো প্রায় একই বলে রাহুলকে ফিরতি ক্যাচ বানান ওয়েলালাগে। আরেক থিতু ব্যাটার ইশানের আউটেও ভূমিকা রাখেন তিনি। আসালাঙ্কার বলে শর্ট মিডউইকেটে নেন দুর্দান্ত ক্যাচ। এরপর বিপজ্জনক হার্দিক পান্ডিয়াকে রিভিউ নিয়ে দ্রুত ফেরায় লঙ্কানরা। এই উইকেটের মাধ্যমে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ফাইফারের স্বাদ নেন ওয়েলালাগে।
পরের গল্পটা আসালাঙ্কার। রবীন্দ্র জাদেজার পর টানা দুই বলে তিনি শিকার করেন জাসপ্রিত বুমরাহ ও কুলদীপ যাদবের উইকেট। আর আক্সার প্যাটেলকে ঝুলিতে ঢুকিয়ে ভারতকে গুটিয়ে দেন থিকশানা।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন অধিনায়ক রোহিত। ৪৮ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৭টি চার ও ২টি ছক্কা। ইশান ৬১ বলে ৩৩ রান করেন একটি করে চার ও ছক্কায়। রাহুলের ব্যাট থেকে ২ চারের সাহায্যে আসে ৪৪ বলে ৩৯ রান। শেষদিকে আক্সার ৩৬ বলে একটি ছক্কায় করেন ২৬ রান। তার কারণে ভারতের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যায় দুইশ।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ১০ ওভারে একটি মেডেনসহ ৪০ রানে ৫ উইকেট নেন ২০ বছর বয়সী ওয়েলালাগে। আসালাঙ্কা ১৮ রানের বিনিময়ে পান ৪ উইকেট। অপর উইকেটটি পান মাহিশ থিকশানা। ফলে ভারতের ১০ উইকেটের সবকটিই নেন লঙ্কান স্পিনাররা। ওয়ানডে এবারই প্রথম কোনো ম্যাচে স্পিনারদের কাছে ১০ উইকেট হারাল ভারত। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এমনটা ঘটল ১০ বার।
Comments