কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়েই ম্যাচ খোয়ায় বাংলাদেশ

লাহোরের গাদ্দফি স্টেডিয়ামের উইকেট রীতিমতো ব্যাটিং স্বর্গ। এই স্বর্গে কোনো রানই নিরাপদ নয়। তারপরও তিনশর বেশি লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারলে তা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায় প্রতিপক্ষের জন্য। চেজ করার আলাদা চাপ তো থাকেই। কিন্তু সেখানে বোলারদের লড়াই করার মতো মাঝারী পুঁজিও এনে দিতে পারলেন না টাইগার ব্যাটাররা। হতশ্রী ব্যাটিংয়ে যে মামুলী পুঁজি দাঁড় করায় বাংলাদেশ, তা পেরিয়ে যেতে হবে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি পাকিস্তানের।

অথচ দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল তিনশ পেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। এমনকি এই জুটি ভাঙার পরও সম্ভাবনা ছিল অন্তত তিনশর কাছাকাছি যাওয়ার। প্রয়োজন ছিল কেবল টিকে থাকা। তার উপর আটজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এতো বেশি ব্যাটার নিয়ে খেলতে নেমেও লাভ হয়নি। উল্টো কাঠগড়ায় তারাই।

আফিফ হোসেনকে এবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে সাত কিংবা আট নম্বরে নেমে দ্রুত রান করার জন্য। মাথায় যেন সেটাই বাঁধিয়ে রেখেছিলেন তিনি। অথচ দ্রুত উইকেট পতনে ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তার কাছে প্রত্যাশা ছিল সেন্সেবল ব্যাটিং। পরিস্থিতির দাবি মেটানো তো দূরের কথা তখন উইকেট বিলিয়ে ফিরেছেন এই ব্যাটার। 

দায় এড়াতে পারবেন না বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতে কার্যকরী ভূমিকা রাখা মুশফিকুর রহিমও। দ্রুত রান তোলার তাগিদে ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে শামিম হোসেন পাটোয়ারি ব্যর্থ হলে ৫০ ওভার পর্যন্ত খেলাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। উইকেটে সেট ব্যাটারের সে কাজটাই নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে সময় উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে আসেন তিন সংস্করণ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ ম্যাচ খেলা এই ব্যাটার। ৮৭ বলে তার কাছ থেকে আসে ৬৪ রান।

আর মুশফিকের বিদায়ের পরের বলেই আউট হয়ে যান তাসকিন আহমেদও। উইকেটে তখন শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে ছিলেন আফিফ। খেলা তখনও বাকি ১২ ওভারের বেশি। হাতে দুই উইকেট থাকায় লেজের ব্যাটারদের নিয়ে আরও কিছু ওভার ব্যাটিং করে যেতে পারলে পুঁজি আরও বড় হতে পারতো বাংলাদেশের। তাতেও হয়তো হার এড়ানো যেতো না। তবে রান রেট কিছুটা হলেও উন্নত হতে পারতো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নাসিম শাহর বলে হাঁকাতে গেলেন আফিফ। আকাশে তুলে তিনি সাজঘরে ফেরার পর আর ৩ বল টিকতে পেরেছে টাইগাররা।

তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগেই বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায় টাইগাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েন তিনি। অথচ এশিয়া কাপে এবার দুর্ধর্ষ ছন্দে ছিলেন শান্ত। তার পরিবর্তে লিটন দাসকে পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বরাবরের মতোই দারুণ শুরুর পর তার ইনিংস শেষ হয়েছে হতাশায়।

এদিনও মেকশিফট ওপেনার নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করে বাংলাদেশ। মূলত আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ায় আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অথচ দলে ফিরেছিলেন নিয়মিত ওপেনার লিটন। তবে এক অর্থে ওপেনারের মতোই খেলতে হয়েছে তাকে। মাত্র এক বল খেলতে পেরেছেন মিরাজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম বল মোকাবেলা করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে।

আগের দুই ম্যাচের মতো এদিনও উইকেটে থিতু হয়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। ইনফর্ম বোলার হারিস রউফের বলে হাঁকাতে গিয়ে তুলে দেন আকাশে। এশিয়া কাপটা ভালো যাচ্ছে না তাওহিদ হৃদয়েরও। এদিনও ব্যর্থ হয়েছেন। রউফের গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

বাংলাদেশের স্বপ্নটা চওড়া হয় পঞ্চম উইকেট জুটিতে। ১২০ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব ও মুশফিক। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই সব শেষ। ফাহিম আশরাফের শর্ত বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে টাইমিংয়ে হেরফের করে ক্যাচ তুলে দেন বাউন্ডারি লাইনে। ৫৭ বলে ৫৩ রানে থামে তার ইনিংস। এরপর হুট করেই যে দায়িত্ব থেকে সরে যান মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ১৯৩ রানে থামতে হয় টাইগারদের। আয়ারল্যান্ড সিরিজ বাদ দিলে শেষ আট ম্যাচে পাঁচবার অলআউট হলো তারা। এরমধ্যে চারবার তো দুইশর নিচে।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দেখে শুনে খেলতে থাকে পাকিস্তান। ৩৫ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। ফখর জামানকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন আরেক ওপেনার ইমাম উল হক। ৩৯ রানের জুটি গড়েন তারা। বাবরকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ।

এরপর রিজওয়ানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ইমাম। ৮৫ রানের জুটিতে জয়ের ভিত গড়েই আউট হন এই ওপেনার। মিরাজের বলে হাঁকাতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যাওয়ার আগে খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস। এরপর বাকি কাজ আঘা সালমানকে নিয়ে শেষ করেন রিজওয়ান। ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।

Comments

The Daily Star  | English

NCP unveils 24-point ‘New Bangladesh’ manifesto, calls for Second Republic and new constitution

Key pledges include recognising the July uprising and ensuring justice for those affected

1h ago