আফগানিস্তানের অপেক্ষা বাড়িয়ে ভারতের বিশাল জয়
এর আগে ১৩ ম্যাচ শেষে কোনো সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখেনি আফগানিস্তান। ফর্মে থাকা আফগানরা ভারতীয়দের বিপক্ষে প্রথম জয়ের আশা নিয়ে চলমান বিশ্বকাপে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু লড়াই পর্যন্ত করতে পারেনি রশিদ খানের দল। জেতার জন্য রোহিত শর্মার দল ১৮২ রানের লক্ষ্য রাখে আফগানদের সামনে। পাওয়ারপ্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে যে-ই পিছিয়ে পড়ে আফগানিস্তান, রান তাড়ার পুরোটা সময়েই এরপর তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানের হারেই সুপার এইট পর্ব শুরু করতে হয়েছে তাদের।
বৃহস্পতিবার বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেট ১৮১ রানের সংগ্রহ গড়ে ভারত। সূর্যকুমার যাদব ২৮ বলে ৫৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। শেষের দিকে হার্দিক পান্ডিয়াও ২৪ বলে ৩২ রানের ইনিংসে রাখেন অবদান। রশিদ ও ফজলহক ফারুকী দুজনেই নেন ৩টি করে উইকেট। ভালো পুঁজি নিয়ে ভারতকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন জাসপ্রিত বুমরাহ। মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেটে নিজের স্পেল শেষ করেন বুমরাহ। হার্দিক বাদে সকলের উইকেটের খাতায় দাগ পড়ে। সম্মিলিত বোলিং পারফরম্যান্সে ১৩৪ রানে আফগানিস্তানকে অলআউট করে দেয় ভারত।
লক্ষ্য তাড়ায় রহমানউল্লাহ গুরবাজ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করলেও ৮ বলে ১১ রানেই থেমে যায় তার ইনিংস। চতুর্থ ওভারে ইব্রাহিম জাদরানও একই পথ ধরেন ১১ বলে ৮ রান করে। টানা তিন ডটের পর বড় শট খেলতে গিয়ে ইব্রাহিম ক্যাচ তুলে দেন কাভারের হাতে। এ ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়ে ওপেনিংয়ে নামা হজরতউল্লাহ জাজাইকে নিজের দ্বিতীয় ওভারে আউট করে দেন বুমরাহ। বুমরাহর আরেকটি কাটারে বোকা বনে ক্যাচ তুলে দিয়ে জাজাই যখন ফিরে যান ২ রানে, ২৩ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে পথ হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান।
উইকেট মেডেন ওভারে শুরু করা অক্ষর প্যাটেল দারুণ নিয়ন্ত্রণে চেপে ধরেন আফগানদের। চলমান বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামা কুলদীপ যাদব ভেঙে দেন ৪৪ রানের জুটি। ২১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় গুলবদিন নাইব ১৭ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান। ৩৮ বলের চতুর্থ উইকেট জুটি যদিও আফগানদের আশার আলো দেখাতে পারেনি। পুরো ইনিংস জুড়েই পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তান আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের উইকেটও হারিয়ে ফেলে দ্রুত।
চার রানের মধ্যে রবীন্দ্র জাদেজার বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন ওমরজাই। ২০ বলে ২৬ রান করে তিনি আউট হন দলকে ৭১ রানে রেখে। তরতর করে বেড়ে ওঠা রান রেটকে একপাশে রেখে মোহাম্মদ নবি ও নাজিবউল্লাহ জাদরান জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বুমরাহ এসে আবার ব্রেকথ্রু এনে দেন। ১৭ বলে ১৯ রান করে নাজিবউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর নবিও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন পরের ওভারেই। ১৪ বলে ১৪ রানে নবি আউট হলে আফগানিস্তান হারিয়ে ফেলে ১১৪ রানে সপ্তম উইকেট। এক অঙ্কে বাকি ব্যাটাররা ফিরে গেলেও নূর আহমেদের ১২ রানের ইনিংস তাদের নিয়ে যায় ১৩৪ রান পর্যন্ত।
শেষটা দারুণ হলেও এর আগে শুরুটা রোহিতের দল করতে পারেনি মনের মতো। তৃতীয় ওভারে যখন ১৩ বলে ৮ রান করে ফিরে যান রোহিত, দলের রান পাড়ি দেয়নি ১১। ফারুকির কাটারে ক্যাচ তুলে রোহিতের ফেরার পর ওয়ান ডাউনে নামা রিশভ পান্ত আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন। অপরপ্রান্তে বিরাট কোহলি যদিও ধীরগতিতে খেলে যাচ্ছিলেন। ৫ ওভারে ৩৪ রান আনা ভারতকে পাওয়ারপ্লে শেষে পান্ত নিয়ে যান ৪৭ রানে। নবির করা ৬ষ্ট ওভারে মারেন তিনটি চার।
কিন্তু রশিদের ফুল বলে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলে তাকে থেমে যেতে হয় ২০ রানেই। ১১ বলের ইনিংসে বাঁহাতি এই ব্যাটার মারেন ৪টি চার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে রশিদ ফিরিয়ে দেন কোহলিকেও। কোহলির ২৪ বলে মাত্র এক ছয়ে গড়া ২৪ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ওয়াইড লংঅফে ধরা পড়ে। ৬২ রানে ভারতের তিনটি উইকেট তুলে নেয় আফগানিস্তান। মাঝের ওভারে এরপর তাদের স্পিন আক্রমণে ভারতীয়দের চেপে ধরার আশা ভেস্তে যায় সূর্যকুমারের ব্যাটে।
রশিদকে একের পর এক সুইপে বাউন্ডারি বের করেন সূর্যকুমার। ১৩তম ওভারেই শতরান পেরিয়ে যায় ভারত। কিন্তু এর আগেই শিবাম দুবের সঙ্গ হারান তিনি। ৭ বলে ১০ রান করে রশিদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হন দুবে। ইনিংসের সবচেয়ে বড় ৬০ রানের জুটি এরপর সূর্যকুমার গড়েন হার্দিককে নিয়ে। নিয়মিত বাউন্ডারি বের করে নিজের ফিফটি তিনি পেয়ে যান ২৭ বলে। কিন্তু ফিফটির পরের বলেই তাকে ফিরতে হয় বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে। ২৮ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৩ রান করে যখন ফিরছেন সূর্যকুমার, ভারতের রান ১৭ ওভারে ১৫০।
ঝড়ের আভাস দিয়ে পরের ওভারে হার্দিকও ফিরে যান। ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ রানে হার্দিকের বিদায়ের পর জাদেজাও আউট হয়ে যান দ্রুত। ৭ রানে জাদেজার ফেরার পর শেষ ওভারে অক্ষরের ব্যাটে ভারত আনে ১৪ রান। ১৮১ রানের পুঁজিকে যথেষ্ট প্রমাণই করেনি এরপর তারা, বড় জয়ে রান রেটের হিসাবেও নিজেদের অনেক এগিয়ে রেখেছে ভারত।
Comments