ভারতের বিপক্ষেই যখন লড়বেন ‘ভারতীয়রা’

USA Cricket

নিউইয়র্কে আজ (বুধবার) ম্যাচের কোন মুহূর্ত সূর্যকুমার যাদবের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে সৌরভ নেত্রভালকরকে। সৌরভ সবশেষ ভারতে যখন নিজের একমাত্র প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন, সূর্যকুমার তখন তার প্রতিপক্ষ ছিলেন না। ২০১৩ সালের সে ম্যাচে এই দুজনে মিলে একসঙ্গে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছেন রঞ্জি ট্রফিতে। শুধু সৌরভই নয়, নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দিনটা আজ অন্যরকম আবেগের হবে আরও ছয়জনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্কোয়াডের সাতজনের যে ভারতে জন্ম অথবা বেড়ে উঠা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ওভারের নায়ক সৌরভ ভারতের জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্ন দেখে বড় হয়েছেন। ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সে স্বপ্ন পূরণ হলেও জাতীয় দলের দরজা খুলেনি। শেষমেশ ক্রিকেট স্বপ্নের ঘরে তালা মেরে দেন ২০১৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যখন পাড়ি জমালেন, বর্তমানে বিশ্বখ্যাত ওরাকলের এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ক্রিকেটকে পেছনেই রেখে এসেছিলেন। কিন্তু মার্কিন মুলুকে ক্রিকেট আবার তাকে খুঁজে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সৌরভ এবার খেলতে নামবেন নিজের মাতৃভূমির বিপক্ষে। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সতীর্থ সূর্যকুমারকে তিনি দেখতে পাবেন ভিন্ন পরিচয়ে। কেমন আবেগ কাজ করবে তার মধ্যে? সৌরভ দারুণভাবে তুলে ধরেছিলেন এভাবে- 'ভারত আমার জন্মভূমি, যুক্তরাষ্ট্র আমার কর্মভূমি, দুই দেশকেই সম্মান করি।'

সৌরভের অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের জন্ম গুজরাটের আহমেদাবাদে। গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলে খেলা এই ব্যাটার দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ মঞ্চে পা রাখতে পারেননি। তাই বলে সৌরভের মতো ক্রিকেট ছেড়ে তিনি যাননি যুক্তরাষ্ট্রে। বরং পাকিস্তানের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের নায়ক মার্কিন মুলুকে গিয়েছিলেনই ক্রিকেট স্বপ্ন সত্যি করতে।

এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে জন্মভূমির বিপক্ষে টস করতে নামবেন। কেমন অনুভূতি হবে তার, 'আপনি এসব জিনিস নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। হুট করে আপনি টসে রোহিত শর্মার সঙ্গে নিজেকে দেখবেন। এটা কাল্পনিক মনে হয়।' ভারতের বিশ্বকাপ দলে থাকা পুরোনো সতীর্থদের সঙ্গেও দেখা হবে মোনাঙ্কের। পার্থক্য শুধু, একসঙ্গে গুজরাটের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলা অক্ষর প্যাটেল কিংবা জাসপ্রিত বুমরাহ তাকে আউট করার চেষ্টাই করবেন এবার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হওয়া হারমিত সিংয়ের আদর্শ ছিলেন রোহিত। মুম্বাইয়ের রঞ্জি দলে যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়কের কাছ থেকে। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের জার্সি গায়ে শিরোপাও জেতা হয়েছে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। আইপিএলের আঙ্গিনায়ও ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটের স্বপ্নে বাস করার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্র দলের আরেক বাঁহাতি স্পিনার নশতুশ কেনজিগের জন্ম অবশ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু পরিবার তার দুই মাস বয়সের সময়ই নিজের দেশে ফিরে আসায় বেড়ে উঠেছেন তিনি ভারতে। তামিল নাডুর ছেলে ছোটবেলায় ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে থাকলেও উপরের দিকে উঠতে পারছিলেন না। তামিল নাডু ছেড়ে কর্নাটকেও গিয়েছিলেন ক্রিকেটের উদ্দেশ্যে, কিন্তু শেষমেশ ২৫ বছর বয়সে ক্রিকেটে সমাপ্তি টেনে ফেলেন।

বায়োমডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে নতুন জীবনে আবার সেই ক্রিকেটেই পা পড়ে যায় তার। কিন্তু ২০১৬ সালে যাওয়া কেনজিগে তখন আমেরিকা মহাদেশের দেশটির পক্ষে খেলার জন্য যোগ্য ছিলেন না। সে কারণে বছরে ৮০০ ঘণ্টা কমিউনিটি সার্ভিস হিসেবে কোচিং করিয়েছেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি সেটা করা কঠিন হবে বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

যে কেনজিগের লক্ষ্য ছিল শুধু কর্নাটকের রাজ্য দলে সুযোগ পাওয়া, সেই তিনি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। ক্রিকেট স্বপ্নের ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসেছিলেন, এবার ভারতের ছেলে লড়বেন ভারতেরই বিপক্ষে, বিশ্বকাপের মঞ্চে।

জাসদিপ সিংয়েরও জন্ম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তিন বছর বয়সে পাঞ্জাবে তার পরিবার ফিরে যায়। ভারতে শৈশব পার করা এই অলরাউন্ডারের যদিও ক্রিকেটের শুরু সেই মার্কিন মুলুকে হয়েছে। তবুও ভারতীয় বংশোদ্ভুত জাসদিপেরও রোহিত শর্মার দলের বিপক্ষে খেলতে অন্যরকম আবেগ কাজ করবে।

নিউইয়র্কের মাঠে ভারতীয় দলের বিপক্ষে এই পাঁচজনের মাঠে লড়াই করার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ডাগআউটে বসে আরও দুজন ভারতীয়ও তাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন। তেমনই একজন মিলিন্দ কুমার। যার ক্রিকেটের সবকিছুই ছিল ভারতে। আইপিএলে দিল্লির দলেও ছিলেন তিনি। দিল্লির এই ছেলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন ক্রিকেটের জন্য। বাকিদের মতো ক্যারিয়ারের প্রায় সবটুকু জুড়ে তার স্বপ্ন ছিল ভারতের ওই জার্সি।

যুক্তরাষ্ট্র স্কোয়াডের আরেকজন সদস্য নিসর্গ প্যাটেলের অবশ্য জন্ম গুজরাটে। যদিও বাঁহাতি এই স্পিনার বেড়ে উঠেছেন আমেরিকা মহাদেশের দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপে খেলেছেনও তিনি।

সৌরভ কিংবা মোনাঙ্করা ভিন্ন গতিপথে একই গন্তব্যে এসে পৌঁছেছেন। তাদের সকলের গল্পই ভিন্ন। তবে ২০২৪ সালের ১২ জুন তাদের সবাইকে এক গল্পেই মিলিয়ে দেয়- যেদিন তারা ভারতীয় হয়ে লড়বেন ভারতের বিপক্ষে।

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

12h ago