সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ

ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

ছবি: বাফুফে

তুলনামূলক দুর্বল পাকিস্তানের সঙ্গে কোনোমতে ড্র। এরপর কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সিনিয়র ফুটবলারদের বিরোধ চলে এসেছে প্রকাশ্যে। বাঁচা-মরার ম্যাচের আগে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য মোটেও আদর্শ ছিল না। তবে বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তাপের প্রভাব অদৃশ্য থাকল ভারতের বিপক্ষে মাঠের খেলায়। আফঈদা খাতুনের লক্ষ্যভেদের পর তহুরা খাতুন করলেন জোড়া গোল। গোলরক্ষক রুপনা চাকমা দিলেন বেশ কিছু অসাধারণ সেভ। শঙ্কা উড়িয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

বুধবার নেপালের কাঠমুন্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ৩-১ গোলে জিতেছে প্রতিযোগিতার শিরোপাধারী। সবগুলো গোলই হয় প্রথমার্ধে। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে 'এ' গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে উঠেছে  বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বিপাকে ছিল বাটলারের শিষ্যরা। তবে সব সংশয় দূরে ঠেলে দারুণ পারফরম্যান্সে ভারতের বিপক্ষে পূর্ণ পয়েন্ট মিলেছে তাদের। গত সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ভারতকে গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল মেয়েরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা বলেছিলেন, কোচ সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না। এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের পর বাটলারও কঠোর জবাব দিয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে সিনিয়রদের খেলিয়ে তারা কী করতে পারেন সেটা দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে এমন অপ্রত্যাশিত দ্বন্দ্বের রেশ দূরে রেখে মাঠে ছন্দময় ও আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ।

নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে সব সিনিয়রকে অবশ্য শুরুর একাদশে রাখেননি কোচ। পরিবর্তন আসে দুটি। সেন্টার ব্যাক কোহাতি কিসকু ও মিডফিল্ডার স্বপ্না রানীর জায়গায় নামেন দুই অভিজ্ঞ মাসুরা পারভীন ও মারিয়া মান্দা। তাদেরকে নিয়ে শুরু থেকেই বল দখলে রেখে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। তবে দশম মিনিটে ঘটতে পারত বিপদ। আফঈদার ব্যাক-পাস ক্লিয়ার করতে কালক্ষেপণ করেন রুপনা। সুযোগ বুঝে দৌড়ে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন ভারতের মনীষা। রুপনা তখন পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন এক সতীর্থকে। বল মনীষার পায়ে লেগে গোলপোস্টের কাছ দিয়ে বাইরে চলে যায়।

আধিপত্য করার সুফল ১৮তম মিনিটে পায় মেয়েরা। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কর্নার প্রতিহত হওয়ার পর ডি-বক্সে বল পান ডিফেন্ডার আফঈদা। তিনি ঠাণ্ডা মাথায় শট নিয়ে গোলরক্ষক পান্থই চানুর মাথার ওপর দিয়ে নিশানা ভেদ করেন। ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের মতো ফের হতাশ হতে হয় ঋতুপর্ণা চাকমাকে। তার বাঁ পায়ের কোণাকুণি শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।

২৯তম মিনিটে ঠিকই ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা ক্রস করেন ডি-বক্সের ভেতরে বিপজ্জনক জায়গায়। দূরের পোস্টে বুক দিয়ে বল জালে ঠেলে দেন ফরোয়ার্ড তহুরা। ৩৫তম মিনিটে রুপনার দৃঢ়তায় ব্যবধান কমাতে পারেনি লড়াইয়ে ফিরতে গা ঝাড়া দেওয়া ভারত। একেবারে ফাঁকায় থাকা অধিনায়ক বালা দেবীর শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। দুই মিনিট পর মনীষার ফ্রি-কিক বাধা পায় পোস্টে।

এরপর আবার গোলের উল্লাস করে বাংলাদেশ। ৪২তম মিনিটে শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রু বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিলেও শট নেওয়ার অবস্থায় ছিলেন না ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। তিনি বল বাড়ান তহুরার উদ্দেশ্যে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিখুঁত শটে বাকিটা সারেন তহুরা। পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে ভারত আশা জাগায়। ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা রুপনার দায় ছিল সেখানে। প্রতিপক্ষের একটি উঁচু ক্রস তিনি গ্লাভসে জমাতে ব্যর্থ হন। সামনে থাকা বালা আলগা বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন।

দ্বিতীয়ার্ধে ভারত প্রাণপণ চেষ্টা চালায় গোলের জন্য। কিন্তু রুপনা ছিলেন নিরেট প্রাচীর হয়ে। রক্ষণভাগের মাসুরা-আফঈদাদের সহায়তাও পান তিনি। গত সাফের সেরা গোলরক্ষক ৫৫তম মিনিটে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন বদলি রিম্পা হালদারের শট। সাত মিনিট পর আরেক বদলি জ্যোতি চৌহানের প্রচেষ্টাও নস্যাৎ করে দেন তিনি। এই অর্ধে বাংলাদেশ মনোযোগী ছিল লিড ধরে রাখতে। তাই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ তেমন আসেনি। ৮০তম মিনিটে বদলি স্বপ্নার দূরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান চানু। আর শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় বাংলাদেশ দল।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago