আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনোত্তি আর নেই
আর্জেন্টিনাকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মাহেন্দ্রক্ষণ এনে দিয়েছিলেন তিনি। তার কোচিংয়ে যুব বিশ্বকাপেও (অনূর্ধ্ব-২০) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। প্রয়াত মহাতারকা দিয়েগো ম্যারাডোনার জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল তার হাত ধরেই। সেই কিংবদন্তি আর্জেন্টাইন কোচ সেজার লুইস মেনোত্তি মারা গেছেন।
আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) সোমবার মেনোত্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, 'আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক কোচ সেজার লুইস মেনোত্তির মৃত্যুর খবর জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে।'
মৃত্যুকালে মেনোত্তির বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। রক্তস্বল্পতাসহ নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ছিলেন এক সময়ের তুখোড় ধূমপায়ী মেনোত্তি। বিভিন্ন ধরনের রোগের সঙ্গে অনেক দিন ধরে লড়াই করতে থাকায় ছিলেন প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। এবার চিরতরে নিলেন বিদায়।
৩৭ বছরের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে মেনোত্তি ১১টি ক্লাব ও দুটি জাতীয় দলের দায়িত্বে পালন করেন। কোনো কোনো ক্লাবে তিনি কাজ করেন একাধিকবার। তবে ফুটবল বিশ্বে তিনি সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে আছেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানোর কীর্তির জন্য। ঘরের মাঠে আয়োজিত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৪৮ বছরের লম্বা ও যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। ফাইনালে তারা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতেছিল ৩-১ গোলে।
পরের বছর একই স্কোরলাইনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। সেই দলের কোচও ছিলেন মেনোত্তি। ওই আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়ে ফুটবল দুনিয়াকে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। এর আগেই অবশ্য আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল তার।
ম্যারাডোনাকে অভিষেকের সুযোগ করে দিলেও ১৯৭৮ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নেননি মেনোত্তি। সেসময় ম্যারাডোনার বয়স ছিল ১৭ বছর। দলে না নেওয়ায় তুমুল সমালোচনা হলেও মেনোত্তি ছিলেন অটল। তার ব্যাখ্যা ছিল, কম বয়সী ম্যারাডোনার সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের ভাবনা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত।
মেনোত্তি আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। সামরিক জান্তা শাসনের অধীনে তার কোচিং চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ছিল বিতর্কও। তবে সার্বিকভাবে মেনোত্তির আবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তার অধীনেই শারীরিক শক্তিনির্ভর কৌশল থেকে সরে এসে আর্জেন্টিনা বেছে নিয়েছিল ছন্দময় খেলা। সেই থেকে ফুটবলপ্রেমীদের মন জিতে চলেছে দলটি।
Comments