‘দলে এখন অনেক নায়ক, নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত লিটন-শান্তরা’
২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের সাফল্যের বড় কারিগর ছিলেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। মেয়াদ পূর্ণ করার আগে চলে গেলেও তার প্রতি মোহ কমেনি বিসিবির। পাঁচ বছর পর চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। নতুন মেয়াদে চার মাসে তিন সিরিজ পার করেছেন তিনি। এবার কেবল জাতীয় দল না, বাংলাদেশের পুরো ক্রিকেট কাঠামো নিয়েই বিশদ কাজে জড়িয়ে আছেন লঙ্কান কোচ। দ্য ডেইলি স্টারকে একান্ত সাক্ষাতকারে শুনিয়েছেন সেই গল্প।
(দ্বিতীয় পর্ব)
প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনা করে আপনি হোম কন্ডিশন কাজে লাগানোর কথা বলছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেস বান্ধব উইকেট বানানো কি দেশের বাইরে ভালো খেলার পরিকল্পনা থেকে?
চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে: না, উইকেটের ধরণ আসলে নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় করা হয়েছে। আমরা নেট ও অনুশীলন সুবিধা উন্নত করে দক্ষতা বাড়াতে পারি। এনসিএল ও বিসিএলেও স্পোর্টিং উইকেট হচ্ছে। আমরা দেশের বাইরের কথা ভেবেই পেস বান্ধব উইকেটে খেলিনি। এটা আমাদের শক্তির উপর নির্ভর করে। আমাদের যদি ভালো পেস বোলার না থাকত তাহলে সিম বান্ধব উইকেট বানানোর প্রশ্নই আসত না। কিন্তু এখন আমাদের সেটা আছে। আমরা যদি উইকেট থেকে স্পিন চাই তাহলে স্পিন বান্ধব উইকেট করব কারণ আমার স্পিনারও আছে। কৌশলগতভাবে যেরকম চাই আমরা খেলতে পারব। এটা নির্ভর করবে প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতার উপর।
আপনি বলেছেন আসন্ন এশিয়া কাপে বাংলাদেশের দারুণ সুযোগ। ভারত-পাকিস্তানের শক্তি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
হাথুরুসিংহে: আমার মনে হয় আমরা এখন যেখানে আছি সেখান থেকে সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে বিশেষ কিছু করব। আমি জানি যে র্যাঙ্কিং মিথ্যা কথা বলে না আমরা এখন আটে (আসলে সাতে) আছি। আমরা নিজেদের বোকা বানাতে চাই না। কিন্তু বলব যে নিজেদের সেরা দিনে যে কাউকে হারানোর মত দক্ষতা ও মেধা আমাদের আছে। বিশেষ কিছু করার আমাদের এটাই সুযোগ।
আপনার অধীনে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। আপনার কি মনে হয় এবারও ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণে সবার সম্মিলিত মানসিক শক্তি আছে?
হাথুরুসিংহে: ভক্তদের বরাবর প্রত্যাশা থাকবে। এই কারণেই তারা ভক্ত। আমি চাইব তারা আশা রাখবে কারণ আমরা চাই তারা যেন তেমন সমর্থন দেয়। ২০১৫ সালে আমরা সামর্থ্যের বাইরে খেলেছি। আমরা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি এবং বেশ কিছু ভালো মোমেন্টাম ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (২০১৭) আমরা ভালো খেলেছি। বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলেছি। এই সময়ে আমরা বিশ্বাস করি যে আরও এক ধাপ এগুবো। আমরা ২০১৬ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) সালে ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলাম। এবার টুর্নামেন্ট বেশ ভিন্ন (২০১৯ সালেও একই ফরম্যাট ছিল)। কারণ প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে খেলবে, মোট ৯ ম্যাচ আছে। কাজেই আপনার বাজে দিন আসা যাবে না। এজন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। ওয়ানডে সুপার লিগের অবস্থানের কারণে আমরা ফেভারিট ট্যাগ পেতে পারি। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেলে এটা আর কাজে দেবে না। আমি মনে করি আমাদের সামর্থ্য আছে ভালো করার।
আপনারা কঠিন পরিস্থিতি চাপ সামলাতে পারবেন?
হাথুরুসিংহে: চাপ সামলানো মানুষের ধরণ। ধরুন আপনি জঙ্গলে গেলেন। কোন এক মুহূর্তে কেউ চিৎকার করে বলল সিংহ আছে এখনে। সবাই কিন্তু লাফ দিয়ে দৌড় শুরু করবে। আত্মরক্ষা হচ্ছে মানুষের প্রবণতা। খেলাধুলাতেও তাই। চাপের পরিস্থিতি আসলে খেলোয়াড়রা তাদের সহজাত প্রবণতা থেকে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমি দলের সংস্কৃতি, গঠন, কৌশল স্থাপনের চেষ্টা করছি। চাপ আপনাকে গিলে ফেলার বদলে, অনুশীলনে সবচেয়ে বিরক্তিকর যে জিনিসগুলো আপনি করেন তা আপনাকে সফল হওয়ার সেরা সুযোগ করে দেবে। আমি সেই বদল আনার চেষ্টা করছি- যাতে খেলোয়াড়রা আড়ষ্ট না হয়।
দেখে গেছে বাংলাদেশ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল বা মুশফিকুর রহিমের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এটার বদল দরকার?
হাথুরুসিংহে: ভক্ত বা অন্য কেউ কি ভাবল তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। দেখুন গত কয়েক সিরিজে আমাদের অনেক হিরো আছে। আমরা দেখছি আমাদের অনেক ভিন্ন ভিন্ন নায়ক। সাকিব ও তামিম বড় টুর্নামেন্টে আমাদের জয়ে সম্পৃক্ত ছিল না। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে মিরাজ সেরা ছিল। আমরা এক-দুইজন নিয়ে উদ্বিগ্ন না, আমাদের ভালো একটা দল আছে।
সাকিব, মুশফিক, তামিম তারা ক্যারিয়ারের শেষ দিকে আছে। আপনি কি অন্যদের নেতৃত্বে তৈরির দিকে ফোকাস করছেন? আপনার কি মনে হয় শান্ত, লিটন, মিরাজ এবং তাসকিনে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে শূন্যতা পূরণের?
হাথুরুসিংহে: বোর্ড ইতোমধ্যে লিটকে কিছু ম্যাচে দায়িত্ব দিয়েছে, শান্ত সহ-অধিনায়ক ছিল। মিরাজও কিছু সিরিজে সহ-অধিনায়ক ছিল। আমার মনে হয় না তাদের তৈরি করতে হবে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। লিটন, শান্ত, মিরাজ, তাসকিন, ইবাদত, তাইজুল সবাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে। আমার মনে হয় তারা প্রস্তুত।
বোর্ড ও ভক্তরা মনে করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট পরের ধাপে নিতে আপনি ঠিক ব্যক্তি। আপনি কি সেটা অনুভব করেন?
হাথুরুসিংহে: আমার নিজের প্রত্যাশা আছে। যেটা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অন্যদের প্রত্যাশা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। জেনে কৃতজ্ঞ যে তা আমার উপর এই ভরসা রাখেন। আমার নিজের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে, একই সঙ্গে আমি খুব বাস্তববাদী। আমি খেলোয়াড়দের যেটা বলতে পারি, তারা যেন ভালো করতে নিজেদের তাড়না দেয়।
বাংলাদেশ ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট খেলেছে ১৩ বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় ২০ বছর আগে। ভালো টেস্ট দল হয়ে বড় দলের সঙ্গে লড়াই করা কতটা কঠিন? যদি না পর্যাপ্ত টেস্ট না খেলেন?
হাথুরুসিংহে: শতভাগ (একমত)। আপনি কিছু না করলে ভালো করতে পারবেন না। এটা আমাদের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। খেলোয়াড়দের কাছে আমরা ৩০ দিনের সফরে চমক আশা করি। এমনকি সেরা দল অস্ট্রেলিয়াও উপমহাদেশে খেলতে এলে ভুগে। তারা শিখে ও ভালো করে ১৫তম সফরে এসে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা (বড় দেশে কম সিরিজ) আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
Comments