সিলেট থেকে

‘ডোনাল্ডের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে আমরা তিন-চারবার কথা বলি’

Ebadot hossain and Taskin Ahmed

হাঁটুর চোটে লম্বা সময় মাঠে বাইরে থাকা পেসার ইবাদত হোসেন আছেন ফেরার লড়াইয়ে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ধাপ উন্নতি হচ্ছে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের আগে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে নিজের হালচাল জানিয়েছেন ইবাদত। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স, পেসারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, সাবেক কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ, পরের প্রজন্মকে নিয়ে আশাবাদের গল্প শুনিয়েছেন তিনি। 

ইনজুরির কি অবস্থা? রিকোভারি কেমন হল?

ইবাদত: আজ তিন সপ্তাহ ধরে রানিং করছি। রানিং ইন্টেনসিটি ২০-৩০ শতাংশ। গতকাল রানিং করেছি, একটু জোরেই রানিং করেছি যেমন ৩০-৪০ শতাংশ ইন্টেনসিটি ছিলো। রানিংয়ে কোন অভিযোগ নেই আলহামুদিল্লাহ। যে জিনিসটা নিয়ে খুশি, রানিং খুব ভালোভাবে করতে পারছি।

বোলিং শুরু করবেন কবে?

ইবাদত: যেভাবে এগুচ্ছি আমি আশা করছি যে দুই সপ্তাহ পর বোলিং শুরু করব। রানিং ইন্টেনসিটি যখন হয়ে যাবে ৭০-৮০ ভাগ তখন বোলিং শুরু করব আরকি ছোট রানআপে। প্রথমে জায়গায় দাঁড়িয়ে বল করব, পরে বাড়াব ধাপ।

কবে থেকে মাঠে ফিরতে পারবেন?

ইবাদত: আমি প্রক্রিয়া ভালো মেন্টেন করছি। ওটার কারণে ফল ভালো পাচ্ছি। এখন সামনে অনেক খেলা। দেখি আগে বোলিং শুরু করি। বোলিং শুরুর পর ছন্দ পেতে হবে। তারপর এফোর্টের মাধ্যমে ছন্দ…আনতে হবে। ইন্টেনসিটি বাড়াতে হবে, সব কিছু মিলিয় এগুতে পারব। দেখা যাক সামনে কোন খেলা দিয়ে শুরু করতে পারি।

Ebadot Hossain

ফেরার পর আগের জায়গায় যাওয়ার চ্যালেঞ্জও তো আছে

ইবাদত: অবশ্যই। আগে আমার কোন সার্জারি হয়নি। প্রথম আমার সার্জারি। যেহেতু আমি ছন্দময় বোলার ছন্দই আমাকে খুঁজতে হবে। যদি বোলিং শুরু করি ছন্দ পেতে বেশি বেগ পেতে হবে না। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী, আমি বোলিং শুরু করলে ছন্দটা পাব আশা করি।

মাঠের বাইরে থেকে দলকে খেলতে দেখার অনুভূতি কেমন? ফিট থাকলে আপনার নিজের ভেন্যুতে দুইটা টেস্ট খেলে ফেলতেন, আক্ষেপ তো নিশ্চয়ই হয়

ইবাদত: অবশ্যই (আক্ষেপ)। একজন খেলোয়াড় হিসেবে খেলাটা মুখ্য। যখন খেলতে পারছি না তখন তো খারাপ লাগে। এই যে বিপিএল গেল। সবাই বিপিএল খেলছে আমাকে রিহ্যাভ করতে হচ্ছে, এটা স্বাভাবিক এগুলোতে কষ্ট লাগে। যখন দল আবার জিতে। সেদিন শ্রীলঙ্কাকে আমরা ওয়নডেতে হারলাম। তখন আবার ভালো লাগছে। রিশাদ আসছে, ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে। তানজিম সাকিব আসছে, ওর সঙ্গেও কথা হইছে। তানজিদ তামিম আসছে, ওদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছি। দল জিতলে ভালো লাগে। নিজে খেলতে পারছি না এইটুকু আক্ষেপ।

শ্রীলঙ্কা সিরিজে সতীর্থদের পারফরম্যান্স কেমন লাগলো?

ইবাদত: সব মিলিয়ে যদি বলেন, বোলিং বিভাগে সবাই ভালো করেছে। তাসকিন, শরিফুল, (তানজিম) সাকিব। সবারই বাড়তি চেষ্টা ছিলো। ব্যাটিংয়ে শান্ত ভালো করেছে, রিশাদ অবিশ্বাস্য এফোর্ট দিয়েছে। সবার অবদান খুব ভালো। যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সবারই দলকে জেতানোর জন্য যে তাড়না সেটা ভালো লেগেছে। যার কারণে জিততে পেরেছি। নিজেকে মিস করেছি কিন্তু জেতায় ভালো লেগেছে

ওয়ানডে সিরিজে সব পেসার উইকেট পেয়েছে। এটা কীভাবে দেখলেন?

ইবাদত: আমাদের পেস বোলিং গ্রুপে (হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ) আমরা সবাই এপ্রিয়েশিট করে একজন আরেকজনকে। আমাদের গ্রুপে অ্যালান ডোনাল্ড আছে, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ( শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরন) শ্রীনিও আছে।

ডোনাল্ড চলে যাওয়ার পরও যোগাযোগ আছে, তাই না?

ইবাদত: ওর সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে আমরা তিন-চারবার কথা বলি। ওর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে।

কোন সমস্যা বা টেকনিক্যালি কিছু জানার হলেও যোগাযোগ করেন?

ইবাদত: হ্যাঁ। ওর সঙ্গে আমাদের সব বিষয়ে কথা হয়। 

এটা তো ইতিবাচক বিষয়, চাকরিতে নাই তবু যোগাযোগ রাখেন।

ইবাদত: ও তো স্টেটমেন্ট দিয়েছিলো। আমি যেখানে যাই না কেন এই গ্রুপের সঙ্গে অন্তরের একটা মিল হয়ে গেছে। সে আগেও অতীতে অনেক কাজ করেছে অনেকের সঙ্গে, বা সামনেও হয়তবা করবে। কিন্তু আমাদের যে বাঞ্চ পেয়েছে, এই গ্রুপের সঙ্গে সে বলেছে চিরজীবনই থাকতে চায়। কারণ ওর সঙ্গে কাজ করে আমাদেরও ভালো লেগেছে। এই প্রথম এরকম কোন কোচ দেখলাম যে সে নিজে থেকে চাচ্ছে যে আমি এই গ্রুপের সঙ্গে সব সময় থাকব।

নাহিদ রানার মতন তরুণরা উঠে আসছে, তানজিম সাকিব ভালো করেছে। তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করেন? প্রতিযোগিতা কি বাড়ছে?

ইবাদত: এটাই তো চাই আমরা। দেখেন আমি সারাজীবন খেলব না, তাসকিনও খেলবে না, মোস্তাফিজও খেলবে না। আমাদের যখন আস্তে আস্তে সময়টা কমে আসবে তখন তো কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে বাংলাদেশ দলে। বাংলাদেশ দলটা ত একটা দেশের গর্বিত দল। আমরা চাই আমাদের পেছনে যারা থাকবে ওরা যাতে আন্তর্জাতিক লেভেলের হয়ে আসে। এমনভাবে নিজেদের তৈরি করে যাতে বাংলাদেশকে আরও ভালো কিছু দিতে পারে। আমরা যতটুকু রেখে যাব, তারচেয়ে দ্বিগুণ ভালোটা যাতে রেখে যায়। এরকম একটা মেন্টালিটি আমাদের আছে। পেস বোলিং গ্রুপটা এরকম, আমরা তৈরি করার চেষ্টা করেছি আমি, তাসকিন মিলে। এমনভাবে তৈরি করব যাতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। যাতে আমাদের ছোট যারা আসবে এটা অনুসরণ করে এবং আরও উপরে নিয়ে যায়। নাহিদ রানা, তানজিম সাকিব এদেরকেও আমাদের গ্রুপে যুক্ত করব।  ওই মানসিকতা নিয়ে যাতে সবাই দেশের হয়ে খেলতে পারি।

নাহিদ রানার পেসটা তো স্পেশাল

ইবাদত: পেসটা ঠিকাছে। এখন যে জিনিসটা হবে নতুন বলে  বল করতে গেলে পেসের কারণে এদিক সেদিক হবে। যখন সে অ্যাকুরেসি নিয়ে কাজ করবে, আরও অ্যাকুরেট হওয়ার চেষ্টা করবে। টেস্টে ডাক পেয়েছে। টেস্টে যদি একুরেট না হতে পারে তাহলে সমস্যা। শুধু পেস হলে তো হবে না, আপনাকে একুরেট হতে হবে। যখন একুরেসি নিয়ে কাজ করবে, পেসের সঙ্গে যখন একুরেসি সমান হবে তখন দেখবেন ও আরো ভাল বল করছে। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে  সেদিন একাডেমিতে।  আলহামুদুলিল্লাহ খুব ভালো বোলার, ভালো প্রসপেক্ট আমাদের। আমরাও চাই এরকম আগ্রাসী ও গতিময় বোলার আমাদের দলে থাকুক। আমাদের জন্য অনেক পাওয়া। ওকে অভিনন্দন জানিয়েছি প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। মাঠে নামার সুযোগ পেলে ও নিজেকে উজাড় করে দেবে।

Ebadot Hossain

টেস্টে কি মনে হয় কেমন করবে? পেসারদের কাছ থেকে বিশেষ করে কি প্রত্যাশা? সিলেটের উইকেটে নিশ্চয়ই সাহায্য আছে পেসের? 

ইবাদত: যেই সুযোগ পাক নতুন বলটা যাতে ব্যবহার করতে পারে। নতুন বলে শাইন থাকে, শাইনটা যেন কাজে লাগাতে পারে। যাতে স্লিপে ক্যাচ যায়, আমরা শেষবার আফগানিস্তানের সঙ্গে যেরকম টেস্টে খেলেছি। ওরকম উইকেট হলে আমাদের পেস বোলিং গ্রুপ আছে ভাল করবে। আশা করছিলাম তাসকিন বা ফিজ কেউ একজন অভিজ্ঞ থাকলে ভালো হতো। দেখা যাক।

এখনো মাঝের ওভারে খেলা এলেও ইবাদতকে মিস করে সবাই

ইবাদত: শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আমিও ফিল করছিলাম একটা জুটি যখন হয়ে গেল, ওই জুটি ভাঙার জন্য কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে। সেদিন তাসকিন বল করছিল, শরিফুল ও তানজিমও বল করছিল। তখন নিজেরই আফসোস লাগে ইশ যদি আজকে থাকতে পারতাম।

ইবাদত থাকলে হতো, এটা শুনতে কেমন লাগে?

ইবাদত: ভালো লাগে। কারণ কি দেখেন এই যে প্রত্যাশা, মানুষের যে চাওয়া যে ইবাদত থাকলে জিনিসটা হতো। এই আক্ষেপ। যেমন বিশ্বকাপের আগে সাকিব ভাই আক্ষেপ করেছে। শুধু সাকিব ভাই না কোচও। এই যে মানুষের আক্ষেপ শুনতে ভালো লাগে। আক্ষেপ ত শুনি ভাই, কষ্ট লাগে খেলতে পারছি না। মাঝের ওভারের যখন জুটি হয়ে যায় নিজের কাছে খারাপ লাগে। একটা জুটি হয়ে গেলে তো দল পিছিয়ে যাবে। ওই সময় নিজের চেষ্টাটাকে এমনভাবে মিস করি। আমার কাছে অধিনায়ক দুই থেকে তিন ওভার চাইবে। আমার যে আগ্রাসন আছে ওটা দিয়ে একটা ব্রেক থ্রো দিতে পারলে আরেকজন এসে কাজটা সহজ হয়। খেলতে থাকতে পারছি না খারাপ লাগে।

নতুন বোলিং কোচের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছে?

ইবাদত: যোগাযোগ হয়েছে বলতে, সেদিন কোচ আসছিলেন সিলেটে আমি ওখানে গিয়েছিলাম। আর ওইদিন উনারও প্রথম দিন ছিলো। একটু হাই হ্যালো এতটুকু।

সিলেট টেস্ট দেখবেন তো

ইবাদত: অবশ্যই আসছি।  মাঠে আসব খেলা দেখতে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

11h ago