পেসারদের সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে মানসিক সামর্থ্যে: ডোনাল্ড
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখছেন পেস বোলাররা। সব সংস্করণেই গতিময় বোলারদের কাছ থেকে প্রভাব ফেলা পারফরম্যান্স পাচ্ছে দল। পেসারদের নিয়ে যিনি কাজ করছেন দক্ষিণ আফ্রিকান সেই কিংবদন্তি পেসার অ্যালান ডোনাল্ড দ্য ডেইলি স্টারকে একান্ত সাক্ষাতকারে শোনালেন তার পেছনের গল্প। হাসান মাহমুদের মতোন তরুণকে নিয়ে জানালেন তারা উচ্ছ্বাস।
বাংলাদেশের পেসাররা ইদানিং দারুণ পারফর্ম করছে। পেসারদের উন্নতির পেছনের কারণ কি মনে হয়?
অ্যালান ডোনাল্ড: গর ১২ মাসে সবাই যেভাবে এগিয়েছে তাতে আমি ভীষণ গর্বিত। আমার মনে হয় আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে মানসিক সামর্থ্যে। আমি যখন প্রথম এলাম প্রথমেই দক্ষতার জায়গাগুলো খুঁটিয়ে দেখলাম। দ্বিতীয়ত দেখলাম লড়াইয়ের আবহে আমাদের মানসিক অবস্থা। আমার কাছে এই লেভেলে সবকিছুই নির্ভর করে মনোভাবের উপর। দক্ষতা আমরা বাড়িয়ে নিতে পারি। আপনি যদি গ্রুপ হিসেবে তীব্রভাবে লড়াকু হন, কেবল ব্যক্তিগতভাবে না। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিশন। এই গ্রুপটাকে প্রতিদিনই লড়াকু করে তুলছি।
বোলিংয়ের দিক থেকে আমি সত্যিই গর্বিত সবাই যেভাবে নতুন পথে ভাবছে। ছক্কা খেলেও ঘাবড়ে যাচ্ছে না। স্ট্রাইকরেটের দিক থেকে আমরা সব সংস্করণেই উন্নতি করেছি। বিশেষ করে সাদা বলে, যেভাবে হওয়া উচিত (সেভাবে হচ্ছে)। আপনি যদি ব্যাটারকে তাড়া না করেন, ঝুঁকি না নেন তাহলে কোথায় যেতে পারবেন না। এটা হচ্ছে আক্রমণের বিপক্ষে আক্রমণ।
আমরা কৌশল নিয়ে কথা বলতে পারি, আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে পারি। চাপের মধ্যে চতুর হতে হবে। বুঝতে হবে কি দরকার। গ্রুপ হিসেবে লড়াকু হলে সেটা সম্ভব। এটাই সবচেয়ে উন্নতি।
আমার লক্ষ্য হচ্ছে গ্রুপটাকে বড় করা। দেখা যে বয়সভিত্তিক দল ও এইচপিতে দেখা কি অবস্থা। আমি এরমধ্যে কয়েকজনকে দেখেছি। মাফ করবেন নাম মনে করতে পারছি না। ভারতের সঙ্গে যখন চট্টগ্রামে টেস্ট খেলি তখন অনেক পেসার এসেছিল। আমার মনে হয় অনেকেই এখন আছে।
আমার মনে হয় এখন যে গ্রুপটা আছে হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, রেজাউর রহমান রাজা, খালেদ আহমেদ। আমরা কাউকেই কোন একটা সংস্করণের জন্য তকমা দিচ্ছি না। আমরা চাই তারা এগিয়ে আসবে নিজেদের স্বস্তির জায়গা থেকে খেলে অবদান রাখবে।
তাহলে আগ্রাসী থাকাই বড় কথা?
ডোনাল্ড: আপনি যদি বেন স্টোকসের দিকে দেখেন। ইংল্যান্ডের টেস্ট ও ওয়ানডে দলের দিকে তাকান তাহলে বড় উদাহরণ হয়। তারা তাদের পথ বদলে ফেলেছে। তারা তাদের মানসিকতা বদলে ফেলেছে সব সংস্করণে। তারা যায় এবং আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে। তারা তীব্রভাবে লড়াকু। আমরাও এটাই চাই।
বিশ্বকাপে পেসাররা কেমন করবে? আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশেরও এখন অন্যতম সেরা পেস আক্রমণ আছে?
ডোনাল্ড: আমার মনে হয় বিশ্বকাপের পিচগুলো ইংল্যান্ডের মতই দুর্দান্ত হবে। বিশ্বকাপে খুব ভালো উইকেট হবে। এটা নিয়ে কোন সংশয় নাই। ২০১১ (উপমহাদেশে বিশ্বকাপে) সালে আমি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ছিলাম। সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে। কাজেই খুব কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কঠিন সময়েও আমাদেরকে সেরাটা দিতে হবে। এটা হয়তো পুরানো একঘেয়ে কথা হয়ে গেল। কিন্তু আসলেই চাপে আমাদের শান্ত থাকা দরকার হবে। আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা এটা প্রয়োগ কর। এই গ্রুপটাকে ছুটবে। আরও দৃঢ়তা নিয়ে, আরও আগ্রাসণ নিয়ে আরও সাহস নিয়ে বড় ম্যাচের চাপ সামলাবে।
হাসান মাহমুদ খুবই তরুণ, কিন্তু দেখে মনে হয় দারুণ পরিণত। তার বিশেষত্ব কি আপনার কাছে?
ডোনাল্ড: হাসান মাহমুদ অসম্ভব মেধাবী তরুণ। তার ব্যক্তিত্ব, তার ধরণ আমি ভালোবাসি। সে চাপে খুব একটা কাবু হয় না যদিও তার ক্যারিয়ার সবে শুরু হলো। নতুন বলে তার প্রভাব উল্লেখযোগ্য। উচ্চ মানের বোলিং দিয়ে সে সবসময়ই জুটি ভেঙে দেয়। সে খুব ভালো শেপে দুই দিকে মুভ করাতে পারে। আমি তাকে খুব ধীরস্থির একজন মানুষ হিসেবে পেয়েছি। ও খুব নির্ভার থাকতে পারে। তার একটা বালকসুলভ চেহারা আছে কিন্তু আসলে সে খুবই লড়াকু ও কঠিন মানসিকতার।
সে সব সময় দারুণ সব প্রশ্ন করে এবং সবকিছু সহজ করে নেয়। সে কখনই বাড়তি চিন্তা করে না। যখনই (খেলায়) সম্পৃক্ত হয়, দ্রুতই প্রভাব ফেলে। সব সময়ই যে ঠিক থাকে এমন না কিন্তু চাপের মধ্যে সে দুর্দান্ত। আমরা এমন একজনকেই চাই যে চাপের মধ্যে শান্ত থেকে আমাদেরকে খেলা বের করে দেবে।
পাইপলাইনে অনেক পেসার থাকা কি সবাইকে অনুপ্রাণিত করে ভালো খেলার? বিশ্বকাপে পেস আক্রমণের আদল কেমন হতে পারে?
ডোনাল্ড: পেসারদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দারুণ। নির্বাচকদের জন্য আসলেই কঠিন কাজ। এশিয়া কাপের সময়টায় আপনি বুঝে যাবেন কোন দিকে যাচ্ছে সব কিছু। বিশ্বকাপে পাঁচ পেসার নাকি ছয় পেসার নিয়ে যাব আমরা জানি না এখনো। এমনিতে কোর পেসার যদি বলেন হাসান আছে, তাসকিন, ইবাদত, মোস্তাফিজ, শরিফুলের কথা বলব। এর বাইরে (রেজাউর রহমান) রাজা আছে, খালেদ (আহমেদ) আছে। তারাই আমাদের মূল বোলার। এছাড়া আমরা আরও অনেকের উন্নতির দিকে চোখ রাখছি। ইতিবাচক দিক হলো সবাই সবাইকে কমপ্লিমেন্ট করছে। এক হয়ে কাজ করছে।
সবাই কতটা কঠোর পরিশ্রম করে এটা দেখা দুর্দান্ত। সবাই বিশ্বকাপের জন্য সবাই দরজায় কড়া নাড়বে এটাই আমরা চাই। এটাই ছয় মাস আগে আমরা বলেছি। এমন না যে সবাই সবার বিপক্ষে লড়ছে, আসলে একে অন্যের জন্য লড়ছে। এই গ্রুপের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ঠতা হয়েছে এটা প্রশংসা করার মতন ব্যাপার।
Comments