বেওয়ারিশ লাশ ও শহীদের সংখ্যা বিতর্ক
সাম্প্রতিক দুটি সংবাদ শিরোনামে চোখ বুলানো যাক।
১. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ; শহীদ ৮৫৮, আহত ১১ হাজার ৫৫১।
২. গণঅভ্যুত্থানে নিহত অনেককে 'বেওয়ারিশ' হিসেবে দাফন, পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা কম।
এবার একটু পেছনে ফেরা যাক।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কত লোক শহীদ হয়েছেন—সে বিষয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। বইপত্র ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ লাখ শহীদের কথা বলা হলেও কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এই সংখ্যাটিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, সংখ্যাটি ৩০ লাখ নয়, তিন লাখ! কেননা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর বঙ্গবন্ধু গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিন লাখকে তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) বলে ফেলেছিলেন। এটি মূলত তার 'স্লিপ অব টাং'।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই বিতর্ক অনেকটা কমে এলেও বা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক না উঠলেও ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পরে জনপরিসরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুলছেন। তাদের দাবি, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যাটি 'আওয়ামী বয়ান'।
বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই এবং কেউ যদি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে এই দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন মনে না করেন বা অন্য কোনো ঘটনা বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের তুলনা করেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে হবে তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। সুতরাং রাজনৈতিক মতপার্থক্য, আদর্শ ও বিশ্বাসের ভিন্নতা সত্ত্বেও ১৯৭১ প্রশ্নে পুরো জাতির ঐকমত্য জরুরি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, নানা কারণেই মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এর একটি প্রধান কারণ মুক্তিযুদ্ধের দলীয় বয়ান। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধকে যেমন তাদের একক কৃতিত্ব দাবি করে এবং বছরের পর বছর মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর নামে যে এককেন্দ্রিক ইতিহাস লেখা ও চর্চার প্রবণতা ছিল, তাতে এই অনৈক্য আরও বেড়েছে।
দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সত্যিই কত মানুষ শহীদ হয়েছেন, একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সর্বজনগ্রাহ্য গবেষণার মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশতাব্দী পরেও নিরূপণ করা যায়নি। এর একটি বড় কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বারবারই নানাবিধ অস্থিরতার ভেতর দিয়ে গেছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে ক্ষমতায় থাকা সব দলের দৃষ্টিভঙ্গিও এক ছিল না।
বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের গ্রামভিত্তিক তালিকা প্রণয়নের কথাও শোনা গিয়েছে। কিন্তু সেটি খুব একটা হালে পানি পায়নি। এত বছর পর অবশ্য প্রতিটি গ্রামে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করাও কঠিন। কেননা ঘটনার পরে অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেছে। যারা এই বিষয়ে জানেন এবং নির্মোহভাবে সঠিক তথ্য দিতে পারতেন, তাদের বিরাট অংশই বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তাদের পক্ষেও এত বছর পরে সবকিছু ঠিকঠাক মনে করে সঠিক সংখ্যাটি বলা প্রায় অসম্ভব।
৩০ লাখ কি অতিরঞ্জিত?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু একজন বিদেশি সাংবাদিককে ৩০ লাখ শহীদের কথা বললেও তার আগে থেকেই বিভিন্ন সূত্রে শহীদের যে সংখ্যা বলা হয়েছে তা তিন লাখের বেশি।
যেমন: মওলানা ভাসানী যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়েই ১০ লাখ মানুষ হত্যার কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কবি আসাদ চৌধুরীর লেখা বেশ কয়েকটি কবিতায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কথা উঠে এসেছে। 'রিপোর্ট ১৯৭১' কবিতায় তিনি লিখেছেন '১০ লাখ গলিত লাশ'।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, 'হানাদার দুশমন বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ নিরীহ লোক ও দুশতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে...'। তখনও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে।
১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি রাশিয়ার প্রাভদা পত্রিকায়ও ৩০ লাখের কথা উল্লেখ আছে। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি মর্নিং নিউজও ৩০ লাখের কথাই লিখেছে। একই দিন ঢাকার পত্রিকা দৈনিক অবজারভারের শিরোনাম ছিল, 'পাক আর্মি কিল্ড ওভার ৩০ লাখ পিপল'। এর আগের দিন আজাদ পত্রিকাও প্রাভদার কথা উল্লেখ করে তাদের সংবাদে।
টাইমস পত্রিকা একাত্তরের এপ্রিলের শুরুতে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা লিখেছে ৩ লাখের বেশি। অর্থাৎ যখন যুদ্ধ কেবল শুরু হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি নিউজউইক লিখেছে সাত লাখ শহীদ। দ্য বাল্টিমোর সান ১৪ মে ১৯৭১ লিখেছে ৫ লাখ। দ্য মোমেন্টো ১৩ জুন লিখেছে ৫ থেকে ১০ লাখ। কাইরান ইন্টারন্যাশনাল ২৮ জুলাই লিখেছে ৫ লাখ। ২৩ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে ২ থেকে ১০ লাখ। সেপ্টেম্বরে টাইমস লিখেছে ১০ লক্ষাধিক। ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর দ্য হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট এক্সপ্রেস শহীদের সংখ্যা লিখেছে ২০ লাখ। এরপর কম্পটনস এনসাইক্লোপিডিয়া তাদের গণহত্যা পরিচ্ছদে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা লিখেছে ৩০ লাখ। এনসাইক্লোপিডিয়া অ্যামেরিকানা তাদের ২০০৩ সালের সংস্করণে বাংলাদেশ নামক অধ্যায়ে একাত্তরে নিহত মানুষের সংখ্যা উল্লেখ করেছে ৩০ লাখ। গণহত্যা গবেষক লিও কুপার তার বিখ্যাত জেনোসাইড বইতে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। (আরিফ রহমান, প্রতিচিন্তা, ১০ ডিসেম্বর ২০২১)
সুতরাং এতকিছুর পরেও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়া এবং এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া দুঃখজনক।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকাও অসম্পূর্ণ
১৯৭১ সালে কতজন বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন, তার সঠিক তালিকা হয়নি। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান তাদের সন্তানেরা। এদিন রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই আমাদের উচিত ছিল, বুদ্ধিজীবীদের ও শহীদদের তালিকা তৈরি করা। মুক্তিযুদ্ধে আমরা ৩০ লাখ শহীদ বলছি, কিন্তু তাদের তালিকা তৈরি হয়নি। তালিকা তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা লড়াই করছি, এখনো এ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। (প্রথম আলো ১৪ ডিসেম্বর ২০২১)
১৯৮৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, এই তথ্য ১৯৭২ সালে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ ঢাকা বিভাগে ২১২ জন; চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে ২৩৪ জন; খুলনা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া ২৮৬ জন; রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর বগুড়া, পাবনাসহ রাজশাহী বিভাগে ২৭৭ জনসহ মোট ১০০৯ জন। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক শহীদ হয়েছেন। এই বইতে ১৩ জন শহীদ সাংবাদিকের নাম রয়েছে। চিকিৎসক রয়েছেন ৫০ জন। সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, অভিনয়শিল্পীসহ অন্যান্য পেশায় শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে নাম রয়েছে ১৮ জনের। এই সব সংখ্যা যোগ করলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় এক হাজার ১১২। কিন্তু এটিই শহীদ বুদ্ধিজীবীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা বলে মনে করা হয় না।
এই বইতে 'বিস্মৃতি, শহীদ বুদ্ধিজীবী, ইতিহাস' শিরোনামে একটি প্রবন্ধে রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে লিখেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারী শহীদ হয়েছেন। অথচ সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এলাকায় কোথাও তাদের নাম নিশানা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার। সেখানেই শহীদ স্মৃতি ম্লান সবচেয়ে বেশি।'
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা কত?
এবার আসা যাক ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে।
গত সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটি যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে শহীদের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১ হাজার ৫৮১ জন। কমিটির সদস্যসচিব ও সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এক মাস ধরে নানান ভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর পাওয়া সবশেষ তথ্যমতে আহত পাওয়া গেছে ২২ হাজার। চিরতরে পঙ্গু বা অঙ্গহানি হয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৫৮৭। (ইত্তেফাক, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
কিন্তু এর তিন মাস পরে গত ২১ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রথম ধাপের যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে সেখানে নিহতের সংখ্যা বলা হয় ৮৫৮ জন। আহত ১১ হাজার ৫৫১ জন। তার মানে দেখা যাচ্ছে, তিন মাসের ব্যবধানে নিহত বা শহীদের সংখ্যাটি কমে এসেছে। বলা হচ্ছে এটি খসড়া তালিকা। সুতরাং চূড়ান্ত তালিকায় হয়তো আরও কিছু পরিবর্তন আসবে।
অভ্যুত্থানে নিহত ও শহীদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের একটি বড় অন্তরায় সম্ভবত বেওয়ারিশ লাশ। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোর একটি খবরের শিরোনাম: গণ–অভ্যুত্থানে নিহত অনেককে 'বেওয়ারিশ' হিসেবে দাফন, পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা কম। খবরে বলা হয়, রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ১১৪টি মরদেহ। তাদের অনেকে গণঅভ্যুত্থানে নিহত।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা জুলাইয়ে ৮০ জন এবং আগস্টে ৩৪ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা অনেকেই আন্দোলনে নিহত। কিন্তু সংখ্যাটি কত, তা অজানা। তাছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিদের কবরগুলো সংরক্ষণও করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফলে ভবিষ্যতে নিহতদের সংখ্যা বের করা আরও কঠিন হবে।
প্রসঙ্গত, আন্দোলনে নিহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে 'গণঅভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল' গঠন করেছে সরকার। ১০ নভেম্বর এই সেলের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে নিহত, নিখোঁজ, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত অথবা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে অন্য কোনোভাবে মারা গেছেন, তাদের স্বজনদের তালিকায় নাম লেখাতে অনুরোধ জানানো হয়।
পরিশেষে, ১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও শহীদের তালিকা প্রণয়নে বিলম্ব করা যাবে না এটি যেমন ঠিক, তেমনি তাড়াহুড়া করলেও ভুলভ্রান্তি থেকে যেতে পারে। এই ধরনের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ধরনের গলদ না থাকে এবং প্রক্রিয়াটি যাতে 'আনবায়াসড' বা পক্ষপাতমুক্ত থাকে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এই অভ্যুত্থানে শুধু আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও অনেকে নিহত হয়েছেন। সেই সংখ্যাটি নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটিই চূড়ান্ত কি না বা এই ইস্যুতে আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে কি না, সেটিও ভেবে দেখা দরকার। কেননা ভবিষ্যতে এই বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক উঠতে পারে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়ার পরিণতি সবাই জানে। কিন্তু তারপরও মানুষ বারবার ইতিহাসের শিক্ষা উপেক্ষা করে। ফলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সালে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্কের যেমন অবসান হওয়া জরুরি, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের সঠিক সংখ্যাটিও জানা দরকার। সেজন্য বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যাটি নিরূপণ করা জরুরি এবং ডিএনএ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে খুব অসম্ভব কিছু নয়। এর জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক কমিটমেন্ট।
আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক
Comments