আওয়ামী লীগ হয়তো জিতবে, কতটা মূল্য দিতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে

বহির্বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের আইনি ব্যবস্থার কোন ধরনের ভাবমূর্তি তুলে ধরছি?
দেশাত্মবোধক গানগুলোতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারায় আমাদের উচিত সিয়াম, নূরজাহান ও আকলিমাদের মতো ‘ফুলদের’ কাছে ক্ষমা চাওয়া। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি প্রায়ই ১৯৭১ সালের সেই গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা স্মরণ করি। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে পেরে আমরা কতটা ভাগ্যবান ছিলাম, সেই কথা ভাবি। আমরা সেই গৌরব, ত্যাগ ও সাহসিকতার সময়টিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করি এবং আমাদের অন্তর্নিহিত অভা, অদম্য আকাঙ্ক্ষা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে চাই, যেটি আমাদের সত্ত্বাকে আচ্ছন্ন করেছিল, সাহসী ও ভীরু, সবাইকে দুঃসাহসিকতায় পূর্ণ, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার মতো কাজে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং গণহত্যাকারী সেনাদের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত করেছিল।

সেই সময় নিঃসন্দেহে আমাদের সহযোদ্ধারাই ছিলেন অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস। একইসঙ্গে কবিতা, দেশাত্মবোধক গান, অতীত সংগ্রামের ইতিহাস এবং অবশ্যই, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে সময়ের একটি গান আমার স্মৃতিতে চির অম্লান:

'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি

মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি'

ছয় বছর বয়সী সিয়াম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পড়তে যেয়ে আমার এই গানের কথা মনে পড়ে যায়। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সিয়াম তার বাবা কারাবন্দী বিএনপি নেতা আবুল কালামের (৩৫) একটি ছবি তুলে ধরেছিল। সেখানে আরও উপস্থিত ছিল নুরজাহান (৪) ও তার বড় বোন আকলিমা (৭)। তাদের বাবা গ্রেপ্তার এড়াতে লুকিয়ে আছেন। তাদের মা হাফসা আখতারকে তুলে নেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়। তার পরিবারের ভাষ্য, তিনি কখনোই কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এর পরও আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আবেদন মঞ্জুর করে। শিশুগুলো তাদের দাদা-দাদী, নানা-নানীর সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিতে এসেছে। চার বছরের নুরজাহানের চোখ-মুখ দেখেই তার মায়ের শূন্যতা বোঝা যাচ্ছিল। সে এর আগে আর কখনোই মাকে ছাড়া বাসা থেকে বের হয়নি। এই বিক্ষোভ কেন হচ্ছে বা এখানে কী হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছুই বুঝতে না পেরে শুধু মাইক্রোফোনে তার বাবা-মায়ের নাম শুনে তারস্বরে কেঁদে উঠেছিল শিশুটি। তার মতো আরও অনেক শিশু ছিল সেখানে। একেবারে ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ছিল সেখানে, যারা সবাই তাদের বাবা-মায়ের খোঁজে এসেছে—বিশেষত, বাবাদের—যারা আটক আছে।

একটু আগে যে গানটির কথা উল্লেখ করেছি, সেটা কি স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে লেখা হয়নি? এই শিশুরাই কি সেই 'ফুল' নয়, যাদেরকে বাঁচানোর জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি? আমরা কি আমাদের তরুণ প্রজন্মের মুখের হাসি অটুট রাখতে অস্ত্র ধরিনি? আমরা কি আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে দায় দিতে পারি, যদি তারা ধরে নেয় যে শহীদদের প্রতি আমাদের সকল অঙ্গীকার ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়? আমাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কি আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধগুলোকে প্রহসনে পরিণত করিনি? আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মিথ্যা বলেছি?

নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মারধর, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভয়-ভীতি প্রদর্শনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গত মঙ্গলবার প্রশ্ন তোলেন, 'বিএনপি করা কি অপরাধ?'। বুধবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একটি সংগঠনের দাবি করে, ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিরোধীদলের ২০ হাজার ৩২৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিএনপির। আইনজীবীরা দাবি করেন, মোট ৮৩৭টি 'সাজানো ও গায়েবি' মামলায় ৭৩ হাজার ১২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশ ও অন্যান্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে একই সময়ে ৮ হাজার ২৪৯ জন আহত হয়েছেন এবং এক সাংবাদিকসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন।

তাহলে কি আমরা এটাই ধরে নেব যে, বিরোধীদলের কর্মীরা, বিশেষত যারা বিএনপির সদস্য, তারা সবাই হঠাৎ অপরাধী হয়ে উঠেছেন? কর্তৃপক্ষের উত্তর হবে: যারা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত, শুধু তাদেরকেই আটক করা হচ্ছে, বিএনপি কর্মীদের নয়। বিষয়টি যদি এরকমই হয়, তাহলে বিএনপি যখন হাজারো মানুষ নিয়ে (কখনো লাখো মানুষের অংশগ্রহণে) বড় সমাবেশের আয়োজন করেছিল, তখন কেন সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি? কেনই বা পাঁচ থেকে দশ বছরের পুরনো মামলাগুলোকে হঠাৎ করে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে, ঠিক নির্বাচনের আগে? এসব ঘটনা কি এক সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে না যে, আমাদের আইনি ব্যবস্থা এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে, বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে?

এই মুহূর্তে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে যা আমাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

প্রথমত, বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেপ্তার, জোর করে বাসায় ঢুকে হেনস্তা, তাদেরকে খুঁজে না পেলে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া, ইচ্ছেমত মামলায় জড়ানোসহ আরও অনেক কিছুর জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সার্বিকভাবে এমন এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে বাধ্য হয়ে দলটির অনেক কর্মী এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে দুইটি ঘটনা ঘটেছে: দলের সেই কর্মীদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে ও তাদের পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এদের অনেকেই চরম অর্থ সংকটে আছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢোকাতে পেরেছে পুলিশ। এটাই আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার চিত্র।

দ্বিতীয়ত, আমাদের আইনি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দুইভাবে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে। ১) যে কাউকে অভিযুক্ত করা যায়, এবং এ ক্ষেত্রে মামলাগুলোর পেছনের যুক্তি যেমনই হোক না কেন—খুব সম্ভবত গ্রহণ করা হবে; এবং ২) জামিন দেওয়ার বিষয়টিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিকার নয়, বরং সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল এবং উপযুক্ত কারণ ছাড়াই জামিন আবেদন নাকচ হতে পারে। এর অর্থ হলো, আসামি হলেই কারাবরণ করতে হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিমান্ডেও যেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সম্প্রতি খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে মামলাটি বিবেচনা করতে পারি। তাকে জামিন পেতে আটবার আবেদনের প্রয়োজন পড়ে, শেষ পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ আদালতে গড়ায়। এর মধ্যে পেরিয়ে যায় ১৪ মাস।

আইন এখন আর নাগরিকদের সুরক্ষা কবচ নয়, বরং ভীতি ও দমন-পীড়নের উৎস। আজকের দিনে, যেকোনো মানুষকে, যেকোনো মামলায়, যেকোনো সময় এবং যেকোনো অজুহাতে অভিযুক্ত করা যেতে পারে—এবং এ ক্ষেত্রে পুলিশই বিচারকের ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আইনি ব্যবস্থা তাকে মুক্ত করার কোনো দায় নেবে বলে মনে হয় না। আমাদের আইন 'অজ্ঞাতনামাদের' বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সুযোগ দেয়, যাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন থেকে শুরু করে কয়েক ডজন, এমনকি শত শতও হতে পারে। এতে পুলিশ যেকোনো মানুষকে অভিযুক্ত করার সুযোগ পেয়ে যায়, বিশেষত, যাদের সঙ্গে রাজনীতির ন্যুনতম হলেও যোগসূত্র রয়েছে এবং যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন (অথবা ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসা পরিচালক বা ছোটখাটো উদ্যোক্তা), যারা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহায় এবং যাদের টাকা খরচ করা ছাড়া এই বিপদ থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় নেই। কর্তৃপক্ষও কিছু মনে করে না, কারণ এতে পুলিশ খুশি থাকে।

বহির্বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের আইনি ব্যবস্থার এ কোন ভাবমূর্তি তুলে ধরছি?

এই কলাম লেখার সময় আমি মালদ্বীপের সাম্প্রতিক নির্বাচনের কথা না ভেবে পারছি না, যেখানে বিরোধী দলের প্রার্থী—মোহামেদ মুইজ্জু—৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন—আর তার প্রতিপক্ষ ও ক্ষমতাসীন, আমি আবারও বলছি, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী—৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই দুই দলের ধ্যানধারণা পুরোপুরি বিপরীতধর্মী। তা সত্ত্বেও, কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। উন্নয়নের রোল মডেল হওয়া সত্ত্বেও মালদ্বীপ যা পেরেছে, আমরা তা করে দেখাতে পারিনি।

থাইল্যান্ডে জেনারেল প্রাইয়ুত চান-ও-চা ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর গত নয় বছর কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন—যদিও সেনাবাহিনী তার পক্ষে ছিল। সেখানে অত্যন্ত অস্থিতিশীল পরিবেশেও নির্বাচন ও ক্ষমতার হস্তান্তর ছিল শান্তিপূর্ণ।

তৃতীয় একটি উদাহরণও আমাদের মনোযোগ পেতে পারে। তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মে মাসে নির্বাচন আয়োজন করেন। তিনি একজন উচ্চাভিলাষী, অত্যন্ত অসহিষ্ণু ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত, যিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এমনকি সংবিধানেও পরিবর্তন এনেছেন। তিনি পুনর্নির্বাচিত হয়ে টানা তিন দশক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরদোয়ান দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার বা ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার ভোট পান। মোট ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ ভোট দেন। তিক্ততা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ণ এই নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ড অবধি গড়ায়। কিন্তু তা স্বত্বেও, নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ।

আমি যতদূর জানি, উপরের তিন নির্বাচনের উদাহরণের ক্ষেত্রে—একটি খুবই ছোট নির্বাচনী এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়, আরেকটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের নায়ককে উৎখাত করা হয় এবং অপরটিতে একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি জয়ী হয়েছেন যিনি বিরোধী পক্ষের প্রতি অত্যন্ত অসহিষ্ণু। কিন্তু কোথাও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠেনি, বিরোধী দলের হাজারো নেতাকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়নি, এমনকি, তাদের সমর্থকদের পুলিশ খুঁজে বেড়ায়নি এবং তাদেরকে ঘর ছেড়ে পালাতেও হয়নি। উপরের একটি দেশেও বিরোধী দল ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেনি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে এই তিন দেশের একটিকেও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

নির্বাচন শুধু একটি ঘটনা—এটা যতই জটিলতায় পূর্ণ হোক না কেন, এর সঙ্গে যত সম্পদ-উপকরণের সংযুক্তিই থাকুক না কেন এবং এর জন্য প্রস্তুতি যতই দীর্ঘ হোক না কেন—এটা একসময় শেষ হবে। প্রশ্ন হলো: নির্বাচন শেষে আমরা কোন ধরনের দেশ পাব? এটাকে নির্বাচন বলা যায় কি না, সেটাও একটি প্রশ্ন, কেননা এতে মূলত আওয়ামী লীগ এ ও বি (দলের অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্রোহীরাই) লড়বেন। শাসনব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, আমলাতন্ত্র সরকারের অনুগত, পুলিশ রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে এবং প্রতিটি সরকারি সংস্থার রাজনীতিকরণ হয়েছে—সবচেয়ে উঁচু স্তর থেকে একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। এ অবস্থায় কীভাবে আমরা দেশ পরিচালনায় ন্যূনতম সুশাসনের দেখা পাব?

কীভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলব—এ ধরনের প্রশংসনীয় কাজ করার পর—যেখানে ব্যাংক লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীরা আগের চেয়েও বেশি সুরক্ষিত, দুর্নীতি কোনো ত্রুটি নয়; বরং সার্বিক প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক অংশ, সাধারণ জনগণের সরকারি সেবা পেতে ঘুষ না দেওয়ার কোন বিকল্প থাকছে না, সৎ ব্যবসাগুলোকে সবদিক থেকে চেপে ধরা হচ্ছে, বড় প্রকল্পগুলো বড় আকারের দুর্নীতির ছদ্মবেশ হিসেবে কাজ করছে এবং একজন মানুষ আইনের আওতায় পড়বেন কি না, সেটা নির্ধারণ হচ্ছে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে?

মূল্যবোধ ধ্বংস হয়েছে, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকরণ হয়েছে এবং দুর্নীতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায়, নির্বাচনে জয়ী হলেও চরম মূল্য দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।

দেশাত্মবোধক গানগুলোতে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো পূরণ না করতে পারার জন্য সিয়াম, নুরজাহান, আকলিমা ও তাদের মতো অন্য সবার কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments