‘শিমু’ এবং পোশাক শ্রমিকেরা
১.
নারী পোশাক শ্রমিকের জীবন নিয়ে রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত সিনেমা 'মেইড ইন বাংলাদেশ' প্রথম দেখানো হয় বিদেশে, ২০২০ সালে। ২ বছর পরে সেন্সর বোর্ড পেরিয়ে সিনেমাটি দেশে মুক্তি পায় 'শিমু' নামে।
নাম পরিবর্তন এবং দেশে দেরিতে প্রদর্শনের পেছনে সিনেমাটিকে দেশে অবাধ প্রচারের কৌশল ও বিদেশিদের প্রথম দর্শক হিসেবে বিবেচনাই প্রধান বলে ধারণা করি। 'শিমু' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পরিমণ্ডলে আবারও সামনে আসে রপ্তানি আয়ের শীর্ষখাত। সামনে আসে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ, ৮ হাজার টাকা মাইনের তরুণ মজুরদের জীবন।
তবে এই শ্রমিকদের নিয়ে এটাই একমাত্র সিনেমা নয়। তাজরীন (২০১২) ও রানা প্লাজা (২০১৩) হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় বহু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালে তানভীর মোকম্মেলের প্রামাণ্য চিত্র 'বস্ত্র বালিকা' দেশে ও বিদেশে প্রদর্শিত হয়। তাজরীনে আগুনে পুড়ে শত শ্রমিকের মৃত্যুর আগে ২০১১ সালে জি সরকারের নির্মিত 'গার্মেন্ট কন্যা' ও ২০১৯ সালে কাজী হায়াতের পরিচালনায় 'গার্মেন্ট শ্রমিক জিন্দাবাদ' নামে মূলধারার বিএফডিসিকেন্দ্রিক (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) সিনেমাও তৈরি হয়।
রুবাইয়াতের সিনেমা 'শিমু' মূলত পোশাক শ্রমিক 'ডালিয়া'র বাস্তব জীবন সংগ্রামের অনুপ্রেরণায় তৈরি, অবলম্বনে নয়। একইসঙ্গে কানে পুরস্কারপ্রাপ্ত বেলজিয়ান সিনেমা 'রোসেটা' (১৯৯৯) এবং মার্টিন রীট পরিচালিত আমেরিকান সিনেমা 'নরমা র্যা'ও (১৯৭৯) পরিচালকের 'শিমু' তৈরির অনুপ্রেরণা।
পোশাক শ্রমিকের জীবন কাহিনী নিয়ে সিনেমা এর আগে শিক্ষিত মধ্যশ্রেণী কিংবা আন্তর্জাতিক মহলের দর্শকের খুব মনোযোগ কাড়তে না পারলেও 'শিমু' নজর কাড়ে অনেকটাই। শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলনের জমিনে 'শিমু'কে পাঠ ও এ বিষয়ে নিজের ভাবনা বিনিময়ের তাগিদ থেকেই এই লেখার সূত্রপাত।
পরিচালক হিসেবে রুবাইয়াতকে জানি 'মেহেরজান' (২০১১) এবং 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন' (২০১৫) সিনেমার মাধ্যমে। বন্ধুদের মধ্যে তার কাজ নিয়ে তখন প্রায়শই কথাবার্তা চলতো। 'মেহেরজান' নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনার মুখে সিনেমাটি হল থেকে নামাতে বাধ্য হন। দেখা হয়নি 'মেহেরজান'। বাংলাদেশে 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন'র প্রিমিয়ার শো দেখার সুযোগ হয় ২০১৬ সালে। 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন' দেখে আমি তার কাজে আগ্রহী হই।
এরপরই 'শিমু' গল্পটা যখন তিনি তৈরি করছেন, তখন গবেষণার অংশ হিসেবে কয়েকবার কথা হয়। ২০১৬ সাল থেকে বেশ লম্বা সময়ের প্রস্তুতি পরিচালকের। শিমুর পটভূমিতেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ও সংযোগ।
'শিমু' তার তৃতীয় সিনেমা। গল্প, পরিচালনা, ক্যামেরা, সাউন্ড, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনাসহ সিনেমার বড় অংশের কলাকুশলী হিসেবে নারীর উপস্থিতি তার কাজের বিশেষ দিক। নারীর মন-মর্যাদা, শরীর-বাসনা, ভার-নির্ভার হওয়া, সামাজিক চিত্রায়ন এবং লড়াইকে আলাদা করে চিহ্নিত করায় তার রয়েছে একান্ত মনোযোগ। তাই কৌতূহলী হই নারী শ্রমিকদের বিশেষ দিক তার চোখে বড় পর্দায় দেখার।
কেউ হয়তো বলবেন, 'শিমু'র আগেই তো রুবাইয়াত নারী পোশাক শ্রমিককে পর্দায় এনেছেন 'আন্ডার কনস্ট্রাকশনে'। কথা সত্যি, কিন্তু ওই সিনেমাটি পোশাক শ্রমিক 'ময়না' (রিকিতা নন্দীনি শিমু) নয়, একজন মঞ্চ শিল্পী 'রয়া' (কলকাতার শাহানা গোস্বামী) চরিত্রকে ঘিরে। রয়া মঞ্চে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নন্দিনীকে গার্মেন্ট শ্রমিক এবং রঞ্জনকে তার অনাগত সন্তান হিসেবে পুনর্নির্মাণ করে। রয়ার জীবনের নানা টানাপড়েনে ফাঁকে ফাঁকে উঠে আসে শ্রমিকের জীবন। তাতে থাকে স্মার্ট ফ্যাশনে আগুন লাগা, রানা প্লাজার ভেঙে পড়ার কিছু দৃশ্য।
পার্শ্ব চরিত্র ময়না রয়ার বাসায় কাজ করে। পরে বাসাবাড়ির কাজ ছেড়ে যুক্ত হয় পোশাক শ্রমিকের কাজে। ময়না চরিত্রটি 'শিমু'তে আগুনে পুড়ে যাওয়া নিহত শ্রমিকের নাম। সিনেমায় যার শারীরিক উপস্থিতি নেই, কিন্তু গল্প জুড়ে আছে সে। 'শিমু'তে মৃত ময়নার সহকর্মী থাকে শিমু। এভাবেই 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন'র ধারাবাহিকতায় সেই ময়নারাই প্রধান চরিত্র হয়ে হাজির হয় 'শিমু'তে।
২.
গত বছর 'শিমু'র প্রিমিয়ার শো দেখি। বড় পর্দায় পরিচিত শ্রমিকদের প্রতিচ্ছবি দেখে অনেকের মতো আমিও আপ্লুত হই। আমার একপাশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেউতি সবুর, নাট্যকর্মী ও পারফরমেন্স শিল্পী রীতু সাত্তার ও আলোকচিত্রী আশফিকা রহমান। আরেক পাশে ৩ শ্রমিক সংগঠক প্রবীর সাহা, খালেদ রহমান ও বাবুল হোসেন। হলে চলচ্চিত্র শিল্পী, পরিচালক, প্রকাশক, এনজিও কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠক, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ ছিল নানা শ্রেণী-পেশার দর্শকের উপচে পড়া ভিড়।
হলে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্দায় উপস্থিত হয় শিমু ও একদল তরুণ নারী। তাদের হাত মেশিনের সুচের নীচে, আর পা প্যাডেলে। মুখ ফ্যাঁকাসে, চুল উসকো-খুসকো। অবিরাম মেশিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেরাও যেন এক একটা মেশিন। মনে পড়ে শিমু চরিত্র যাদের প্রতিনিধিত্ব করে সেই ৪০ লাখ শ্রমিকের কথা। যারা দেশের অর্থনীতির একটা প্রতিনিধিত্বমূলক শ্রেণী। তারা দুনিয়ার মানচিত্রে স্থান দিয়েছে দেশের নাম। বর্তমানে এই খাতে নারী শ্রমিক ৬০ ভাগ। তাদের প্রাণ-পুষ্টি এবং শ্রমে ভর করেই সামনের কয়েক বছরেই ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে এগোচ্ছে এই খাত।
দিন শেষে মালিক-সরকার ও ওপরতলার ভদ্দরলোকদের চোখে তারা অতি নগণ্যই। তাদের প্রতিনিধি হিসেবেই সিনেমার পর্দায় 'শিমু'কে দেখতে শুরু করি। পর্দায় এই শ্রমিকদেরই প্রধান কিংবা 'হিরোইন' চরিত্রে দেখে মনে হয়, নগণ্য-সস্তারা হঠাৎই যেন পরিচালকের বদৌলতে 'স্বপ্নের মতো' কিংবা 'সিনেমার মতো' অসামান্য বনে গেছেন।
সিনেমার ব্যাকরণ-রাজনীতি ছাপিয়ে চেনা শ্রমিকদের বড় পর্দায় আবিষ্কার করাতেই তখন যত আনন্দ। যে আনন্দ সিনেমা হলে পাশে বসা বাকিদের মতো আমারও হতে থাকে। আমরা নিচু স্বরে অনুভূতি চালাচালি করি। একবার সেউতি সবুর ও ঋতু সাত্তারের সঙ্গে, আবার বাবুল হোসেনের সঙ্গে (সাবেক শ্রমিক ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সম্পাদক)। সেউতি ও আমি চরিত্রগুলো তৈরিতে রুবাইয়াতের পরিশ্রমের প্রশংসা করি। কিছুক্ষণ পর বাবুল বলেন, 'এরকম অনেক কিছু বাস্তবেও হয়, যে বানাইসে সে তো দেশে-বিদেশে অনেক নাম করবে।' যত সিনেমা আগায়, বাস্তবতার নানাদিক মনে উঁকি দিতে থাকে।
শো'র মাঝামাঝি সময়ে সামনের সারির দর্শকদের উদ্দেশে বাবুল আবার অস্বস্তি নিয়ে আস্তে আস্তে বলেন, 'এখানে মনে হয় মালিকদের পরিবারের লোকেরাও আছে অনেক, উনারা মজা পাইসে, হাসাহাসি করতাছে।' সিনেমা শেষে টের পাই, মহাখালী এসকেএস সেন্টারের প্রিমিয়ার শো'র আবহে বাবুলের নিজেকে বিচ্ছিন্ন বা বহিরাগত দর্শক ভাবার অনুভূতি। বাবুল আরও বলেন, 'হলে এরকম পরিবেশে এটাই আমার প্রথম ছবি দেখা। এখানে আইসে অনেক ভালো হইসে। না আসলে অনেক কিছু জানতে পারতাম না। এটা আমার জন্য বিরাট শিক্ষা এবং ধাক্কাও।'
এসকেএস সেন্টার থেকে বেরিয়ে গেটের উল্টো পাশে খোলা রাস্তায় লাগোয়া ছোট টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে নিঃশ্বাস নেই আমরা। আলাপ করি শ্রমিক সংগঠকদের সঙ্গে 'শিমু' দেখার অনুভূতি। ফেসবুকে প্রতিবাদী নারী নামে পরিচিত একজন শ্রমিক সংগঠক ইনবক্সে জানালেন 'এই সিনেমার প্রতি আমার এতটাই আগ্রহ ছিল, আমি আমার বাজারের জন্য যে টাকাগুলো রেখেছিলাম সেগুলো ভেঙে সিনেমা দেখেছি।'
বড় পর্দায় আরও ২ বার দেখি 'শিমু'। একবার এক বন্ধুর সঙ্গে রাইফেল স্কয়ারে, অন্যবার একা বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে। প্রিমিয়ার শোর পর মধ্যবিত্ত বা শ্রমিক কেউ-ই হাউজফুল করে এই সিনেমা দেখেনি বলেই শুনেছি। অন্যসব বাণিজ্যিক সিনেমার চেয়ে রুবাইয়াতের সিনেমার ভিন্নতা ও বক্তব্য নির্ভরতাই এর কারণ বলে আঁচ করতে পারি।
তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা হয় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অংশের বন্ধুদের অনেকের সঙ্গে। কিন্তু তখনো কথা হয়নি শ্রমিক এবং বিশেষভাবে নারীদের সঙ্গে। তাগিদ হচ্ছিল তাদের প্রতিক্রিয়া জানার। যদিও সব সময় ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া তার নিজস্ব সচেতন সমালোচনামূলক ভাবনার প্রকাশ ঘটায় না। সমাজ শাসকরা যে চিন্তার প্রসার চায় তাই-ই বশ করে দর্শক, পরিচালক, ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীকে।
একটা মতের পক্ষে এভাবে লোকের ভিড় জমে কখনো নিজের অজান্তে, কখনো সচেতনে। গণমাধ্যমসহ রাষ্ট্রের আদর্শিক হাতিয়ারগুলো অলক্ষ্যেই সরব থাকে। এতসবে নিজেকে জানার সুযোগ হয় না প্রায়শই সমাজের অধিকাংশ বাসিন্দার। শ্রমজীবীদের বড় অংশই মেশিন জীবনের ব্যস্ততায় নিজের নিপীড়নকেই অনেক সময় চিহ্নিত করতে পারে না। অবসরহীন-বিরামহীন, বুঁদ হয়ে কাজ করাই যেন তাদের নিয়তি। ফলে কে তার ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, কে তার শ্রেণীর বা লড়াইয়ের মিত্র, কে না—তাও বুঝে ওঠার ফুরসত মেলে না প্রায়শই।
সাভারে শ্রমিক এলাকার কাছে চন্দ্রিমা হলে শ্রমিকদের সঙ্গে দল বেঁধে সিনেমাটি দেখবো বলে ঠিক করলাম। অপেক্ষায় থেকেও নানা কারণে সুযোগ হয়নি। অগত্যা আশুলিয়ায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির অফিসে জনা পনের শ্রমিক মিলে ছোটখাটো আয়োজনে সিনেমাটি আবার দেখি।
রুবাইয়াতের কাছ থেকে পাওয়া ভিমো ভার্সন (অনলাইনে) ছবিটি দেখি অন্ধকার ঘরে ল্যাপটপে। নারীদের চোখ জ্বলজ্বল করছিল। পুরুষদেরও মনোযোগ ছিল পুরো। ছবি শেষে নারীরা উচ্ছ্বাসিত হয়ে তালি দেন। মাঝে শ্রমিক সংগঠক জিয়াদুল ইসলামের (সাবেক শ্রমিক ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির আশুলিয়া সভাপ্রধান) স্ত্রী গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন করেন। রসিকতায় জিয়াদুল বলে ওঠেন, 'আমার শিমু ফোন দিছে।' বুঝতে অসুবিধা হয় না তাদের আবেগ উচ্ছ্বাস।
সিনেমা দেখতে দেখতে তাদের স্মৃতিতে কারখানার ও ঘরের জীবনে প্রতিদিনের হয়রানি যেন ভেসে উঠছে। এরপর শুরু হয় এ নিয়ে অভিজ্ঞতার মিল খোঁজা, প্রশংসা ও পর্যালোচনা। পোশাক শ্রমিক রুবি বলেন, 'আমি শিমু হতে চাই'; রানা প্লাজার আহত শ্রমিক রূপালী বলেন, 'আমার মনে হইতাসে ডালিয়া মেয়েটা এমন খারাপ পথে গেছে, এটা না দেখায়া, ভালো কিছু করছে দেখাইতে পারতো'; শাহীদা জানান, তার কারখানায় কবে কী প্রতিবাদ করেছিল তাই। বাবুল আর আমি কিছু প্রশ্ন তুলি। 'শিমু' দেখা শেষে আশুলিয়া অফিসের সামনে লম্বা হয় আমাদের আড্ডা ও ভাব বিনিময়। বাসায় ফিরতে আমার প্রায় রাত ১টা বেজে যায়।
৩.
শ্রমিক ও নারী ২ পরিচয়ে রিকিতা নন্দীনি শিমু সিনেমার নাম চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সঙ্গে সহকর্মী মায়া, রেশমা, ডালিয়া, শিমুর স্বামী সোহেল, লাইন চিফ রেজা, বাড়িওয়ালি 'খালা' ও অন্যান্য চরিত্র। পর্দায় তারা অত্যন্ত সাবলীল। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে সিনেমা দেখছি না, যেন বাস্তবে আছি। কখনো কখনো শিমু চরিত্রের চেয়ে যেন সহকর্মীরা হয়ে ওঠেন শক্তিশালী। শিমুসহ তাদের জীবনের কোনো কোনো গল্পে চরিত্রগুলো নির্মাণে রুবাইয়াতের জোর চেষ্টা টের পাইয়ে দেয়। সে তুলনায় উন্নয়ন কর্মকর্তা বা শ্রমিক অধিকার গবেষক নাসিমা (শাহানা গোস্বামী) এবং শ্রমিক অধিকার সংগঠক ফারজানার (সামিনা লুৎফা নিত্রা) চরিত্রের নির্মাণকে আর সব চরিত্র থেকে কেমন ফিকে ও যান্ত্রিক ঠেকে।
'শিমু'তে নারীরা বিশেষ জায়গায় জুড়ে থাকা রুবাইয়াতের সচেতন সিদ্ধান্ত বুঝতে অসুবিধা হয় না। 'আমরা মাইয়া মানুষ..বিয়া করলেও জ্বালা, না করলেও জ্বালা' কিংবা 'গার্মেন্টে কাম কইরা দুইটা পয়সা কামায়া একবারে পাখা গজাইসে না! ঘরের চেয়ে বড় কিছু নাই। এই সোহেইল্লা যদি তোরে ঘরে জায়গা না দেয় কই যাবি তুই?'—ছবিতে এমনি কথোপকথনে সমাজের প্রচলিত ধারণা প্রতিধ্বনিত হয়।
ঘরের বাইরে পা রাখা মানেই যেন খারাপ মেয়ে হওয়া। সেই 'খারাপ মেয়ের' লেভেল নিয়েই ৮০র দশকে তারা শহরমুখি হয়। গোঁড়া থেকেই 'খারাপ মেয়ে' লেভেল মুছতে ঘোমটা দিয়ে চলা শুরু করেন নারী পোশাক শ্রমিকরা। ঘোমটা তাদের নতুন সামাজিক পরিচয়কে জানান দেওয়ার পোশাক। ঘোমটা সমাজের ভাবমূর্তি রক্ষায় 'ভালো মেয়ে'র প্রতীক হিসেবে সামনে আসে।
এমনি 'খারাপ' এবং 'ভালো মেয়ে'র চিত্রায়ন দেখি 'শিমু' সিনেমায়। সমাজ প্রচলিত রীতি ভাঙাকে খারাপ চোখে দেখে এবং যে ভাঙে সে 'খারাপ মেয়ে', এভাবেই শিখে বড় হয়েছি আমরা। চলচ্চিত্রে এই প্রসঙ্গগুলোকে উপস্থাপনে রুবাইয়াত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। শিমুর সহকর্মী ডালিয়া এবং শিমু চরিত্র দুটি যেন পরস্পরের বিপরীতে।
ডালিয়া (নভেরা রহমান) যেন সমাজের চাওয়া দশটা মেয়ের বাইরে কেউ। যাকে এতো খোলামেলা নিজের চাওয়া-পাওয়া-বাসনা নিয়ে বলতে দেখা যায়। একদিকে সংসারী-প্রতিবাদী শিমু ঘোমটা দেয়, কখনো হিজাব পরে। অন্যদিকে শ্রমিক ডালিয়া প্রেম করে বিবাহিত লাইন চিফ রেজার সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক জানাজানি হলে কাজ হারায় ডালিয়া। শ্রমিক পাড়ায় ঘর ছাড়া হয়। এমনকি বন্ধু শিমুর ঘরেও ঠাঁই জোটে না। গাঢ় গোলাপি রঙের জামা-লিপস্টিক আর সিগারেট মুখে সমাজ-সামাজিকতাকে উপেক্ষা করে ডালিয়া। পরিণত হয় 'বেশ্যা'য়। কিন্তু এমন পরিণতি বাস্তবে সকল শ্রমিকের জীবনের সাধারণ ঘটনা নয়।
'শিমু'তে নারী শ্রমিকরা ছবি জুড়ে থাকলেও পুরুষের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কারখানার দৃশ্যে, পথে যাওয়া-আসায় কোথাও কোনো পুরুষ শ্রমিক নেই। পুরুষ চরিত্রে কেবল হাতে গোনা ক'জন সুপারভাইজার, লাইন চিফ ও ম্যানেজার।
শ্রমিক সচেতনতার উদ্দেশ্যে ফারজানার আলোচনায়ও নারীর উপস্থিতি বেশি। নারীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন পুরুষ নাই হয়ে যায় আসা যাওয়ার পথে এবং কারখানায়ও। যেন অচেনা রাজ্য এক। রোকেয়ার 'সুলতানার স্বপ্নে'র সঙ্গে কেউ মিলিয়ে ভাবতে পারে, কিন্তু তার প্রেক্ষাপট ও গল্প ভিন্ন।
সিনেমার প্রথম দৃশ্যে কারখানায় শ্রমিকদের মাথার ওপর ভন ভন করা ফ্যানের দৃশ্য। পুরনো ইলেকট্রিক লাইন, পেঁচানো ছেড়া-ফারা তার। বোঝার উপায় নেই, এটি বানানো শুটিং সেট। কারখানায় আগুন লাগলে সবাই হুড়মুড় করে নামে; প্রাণে বেঁচে রাস্তায় একা একা বিষাদ মনে ঘরের দিকে শিমুর ফেরত যাওয়ার দৃশ্য; সরু গলির একপাশে রিকশা আর ভ্যান; অন্যপাশে শ্রমিকদের ঘরের গোলাপি দেয়ালে কাপড় ঝুলছে; একটা মুরগি উড়ে এসে হঠাৎ ঝাপটা লাগায় শিমুর গায়ে; মশার ওষুধের ধোঁয়ায় এক বিশেষ রহস্যময়তার কম্পোজিশন যেন কল্পনায় টেনে নেয়। শিমুর পড়নে লাল-হলুদ-নীল ছাপার কাপড়ের জামা, হালকা সবুজ সালোয়ার। নীল ওড়নায় রুপালি জরির মতো লেস। লম্বা চুলের বেনুনী বন্ধনী ছাড়া পিঠের ওপর—এসব যেন দৃশ্যে এক সুনিপুণ-হিসাবি বিন্যাস। এমনি বিন্যাসের পুনরাবৃত্তি আছে সিনেমাটিতে। টের পাই উন্নত মানের ক্যামেরা, শুটিং সেট ও পরিপাটি সাজসজ্জা।
শিমু ঘরের বাইরে থেকে এক চিলতে আলো সবসময় জানালা গলে ঢোকে। হালকা সবুজ ঘরের দেয়াল। এক কোনে টেবিল, আলনা, তাকে স্বামীর সঙ্গে ছবি, ছোট্ট রান্নাঘর। এখানেই সংসার-সংগঠন-সুখ-দুঃখের চলাচল। মূল দরজার বাইরে গলির মধ্যে সবসময় শ্রমিকের বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি। ওইটুকুই ওদের খেলার খোলা জায়গা। শ্রমিক পাড়াতেই শুটিং লোকেশন বাছাই করেন পরিচালক।
আগুন লাগার দুঃসহ স্মৃতি ও সহকর্মী 'ময়না'কে হারিয়ে মুষড়ে পড়ে শিমু। ক্লান্তিতে শুয়ে থাকে। বালিশের কভারে সুই-সুতায় লেখা স্বামীর নাম। শিমুকে যতটা বিষাদগ্রস্ত দেখায়, তার স্বামী সোহেল (মোস্তফা মনোয়ার) যেন ততটাই নির্লিপ্ত। শান্তভাবে সোহেল বলেন, 'আল্লাহ বাঁচাইসে তোরে, আইচ্ছা তুই শুয়ে থাক, আমি ভাত বহাইতাসি।' শিমু উঠে বসে বলে, 'ঘরে তো চাল নাই।' পেছনের নিকষ অন্ধকার আর মুখ-চোখে সামান্য আলোতে শিমুর ক্লান্তিতে যোগ হয় গাঢ়, হাইকন্ট্রাস্ট ভাব। দুটি বিপরীত রংকে যেখানে খোলা চোখের চেয়ে আরও গাঢ় দেখায়।
আগুন কীভাবে লাগলো, কীভাবে ওরা উদ্ধার পেলো, দায় কার—এসব ভাবনা নেই সোহেলের। চরিত্রের তাৎক্ষনিক চাহিদার সঙ্গে সোহেলকে বেমানান লাগে। সিনেমার অন্য ভাঁজে সোহেলের অন্যরকম অভিনয়। কখনো প্রেমিক স্বামী, কখনো নির্যাতক। তবু স্বামী সাইনবোর্ড সহকর্মী ডালিয়ার ভাষায় 'শিয়াল-কুকুরের' নজর থেকে বাঁচায় শিমুকে। বিয়ে বাড়ির উৎসবে সিনেমার একমাত্র গান 'রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া'র সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে গিয়ে স্ত্রীর বন্ধু ডালিয়ার দিকে বাসনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপে অভিনয়ের শক্তি দেখায়। কারখানায় গার্ড পুলিশের ভয় দেখিয়ে ঢুকতে না দিলে শিমু জ্বলে উঠে বলে, 'পুলিশ কি তোর বাপ লাগে হাউয়ার পো?' এমনি দোলাচলে চরিত্রগুলো কখনো জ্বলে ওঠে, আবার হারায়। কখনো কখনো যেন তারা নিজে কথা বলে না। চরিত্রের পেছনে কথা বলে দূর থেকে দেখছে এমন কেউ।
৪.
নাসিমা চরিত্রের আগমনে ছবি নতুন মোড় নেয়। ভাটা নামায় প্রাথমিক উচ্ছ্বাসে। 'আমি তোমার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই, … তুমি কাল আমার অফিসে চলে আসবা? ... হাতখরচ দিয়ে দিবো।' শিমুকে এমনি 'তুমি' সম্বোধনে অনুরোধের স্বরে যেন নির্দেশই দেয় নাসিমা। স্পষ্ট করে তার শ্রেণীর ক্ষমতা। নানা প্রশ্ন মনে ভিড় করে। তাহলে কি শ্রমিক হাতখরচ ছাড়া কোথাও যায় না? নিজেরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে না? এতটাই সহজলভ্য ও আত্মমর্যাদাহীন?
নাসিমার সঙ্গে শিমুর আবার সাক্ষাত হয় তার অফিসে। নাসিমার পড়নে বাটিকের সুতি শাড়ী, হাতা কাটা ব্লাউজ, কাঁধ পর্যন্ত চুল, পিঠে ট্যাটু আঁকা। নির্দেশ মতো তাকে নিজের জীবনের গল্প বলে শিমু। বয়স্ক একজনের সঙ্গে পরিবার বিয়ে দিতে চাইলে পালিয়ে ঢাকা আসা ও শ্রমিকে পরিণত হওয়ার গল্প। অনুমতি ছাড়াই শিমুর কথা রেকর্ড করে নাসিমা। এরপরে শিমুকে প্যাকেট দেওয়ার দৃশ্য। শ্রমিক রাজনীতিতে এইরকম প্যাকেট নিয়ে নানা কথা ও কানাঘুষা আছে।
হঠাৎই মনে হয়, ওই প্যাকেটটা আমাকেই বিদ্রূপ করছে। যেন ওটা আমাকেই দিচ্ছে নাসিমা। বিনিময়ে তার রিপোর্টের 'বিষয়' বানাতে চাইছে। কুঁকড়ে উঠি। হয়তো কোনো এনজিও বা পকেট সংগঠন যেভাবে টাকা দিয়ে সব করাতে চায়, তা-ই দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক। অনেকটা সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো নিজের জীবনে শ্রমিকদের সঙ্গে পথ চলার কিছু অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যায়।
মনে পড়ে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের কথা। হাজারো শ্রমিকের প্রাণহানি। স্মৃতিতে তাড়া করা ১৭ দিনের উদ্ধার কাজ, আটকে পড়াদের আকুতি, হাজারো ক্ষত-বিক্ষত লাশ। বন্ধু-স্বজন-শুভানুধ্যায়ীর পাশে থাকা। দোষীর শাস্তি, নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। কেবল শারীরিকভাবে নয়, আদর্শিক ও আবেগীয়ভাবেও ওই আন্দোলনে সক্রিয় শ্রমিক সংগঠকরা। আহত শ্রমিক ও স্বজনরা নিজ উদ্যোগে অফিসে সভা-সমাবেশে ভিড় জমাতো।
এক বৈঠকে নিখোঁজ হাসানের মা আমার হাতে ৫০০ টাকা গুঁজে দিয়ে বলেন, ক্ষতিপূরণ পেলে আরও টাকা দেবেন, যেন ওনাকে সাহায্য করি। তাকে জানাই, 'টাকাটা আপনার কাছেই রাখেন, লড়াইটা আমাদেরও।'
এরকম আরও ঘটনা আছে। একবার এক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পর পাওনা আদায় করে দেই আমরা। তখন শ্রমিকরা আনন্দের সঙ্গে চাঁদা তুলে সংগঠন অফিসে কিছু চেয়ার, আরেকবার কম্পিউটার কেনায় অংশ নেয়। বিপদে পড়লে দলে দলে শ্রমিক সংগঠনের অফিসে আসে তারা। শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকরা যেমন নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে, তেমনি মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত শুভানুধ্যায়ীরাও আন্দোলনের পক্ষে থেকে আর্থিকভাবে পাশে থাকা দায়িত্ব মনে করে। কিন্তু সেই বিনিময় আর নাসিমা-শিমুর বিনিময় এক মনে হয়নি।
'শিমু'তে এমনি চটজলদি লেনদেন আরও হয়। যার বদলে নাসিমার রিপোর্টের জন্য ছবি তোলা ও ভিডিওর কাজ জোটে শিমুর। সবার অলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আসে নাসিমা। ফারজানা থাকে কেবল ২ দৃশ্যে। ফারজানা ইউনিয়ন নিয়ে কথা বলে, সেই ঘর দেখে মনে হয় তিনি 'জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনে'র সংগঠক। পুরানা পল্টনে এর কেন্দ্রীয় অফিস, সেখানেই শুটিং হয়।
ফারজানা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাদের 'আপনি' সম্বোধন করেন। টের পাই ফারজানা এবং নাসিমার সামাজিক অবস্থার দূরত্ব। অবশ্য ফারজানাকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও বিস্ময় নাসিমার দিকে ছুড়ে দিতে পরিচালক দ্বিধা করেন না। 'এখান থেকে ওখান থেকে টাকা এনে দিয়ে উনাকে তো আপনি ভিক্ষুক বানায় ফেলতেসেন, উনার ভিক্ষা না, ন্যায় বিচার দরকার। ... আপনি কি মৃত শ্রমিকের গায়ে প্রাইস ট্যাগ লাগাবেন?' কথাগুলো বলে ফারজানা হাওয়া। শ্রমিক ছাঁটাই বা ইউনিয়ন করা, কোনো কিছুতেই সে নেই। ইউনিয়নের সকল প্রস্তুতি নাসিমা শিখায় শিমুকে। জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের লিফলেট এবং ইউনিয়নের ফর্ম বিলি করে শিমু। ইউনিয়নের ফাইল সরকারি অফিসে জমাও দেয়। শ্রম ভবনের করিডোরে শিমুর আনাগোনা দেখা গেলেও সেটা যে সরকারি অফিস, তা বোঝার উপায় নেই। হয়তো সেন্সর বোর্ডের চোখ এড়াতেই এই আয়োজন।
৫.
'শিমু'তে মালিক, সরকার ও বায়ারের ভূমিকা অনেকটাই ঝাপসা। তারচেয়ে লাইন চিফ, সুপারভাইজার, প্রোডাকশন ম্যানেজারের (পিএম) ভূমিকা বেশি স্পষ্ট। এই ঝাপসা ও স্পষ্টর কুহেলিকা জারি থাকে ছবি জুড়ে। মালিক-বায়ারকে যেভাবে 'শিমু'তে দেখি, তাতে তাদের প্রতি বিশেষ কোনো ক্ষোভ তৈরি হয় না। যতটা তৈরি হয় লাইন চিফ বা ম্যানেজারের উপর। 'শিমু'তে কারখানার লাইন চিফ কখনো নিষ্ঠুর, কখনো কামুক ও দায়িত্বহীন। বাস্তবেও শ্রমিকরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের জন্য লাইন চিফ ও সুপারভাইজারকেই দায়ী করে। সুপারভাইজার, লাইন চিফ বা প্রোডাকশন ম্যানেজার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালিকদের ফরমায়েশ পালন করেন শুধু। তারা অধিকাংশ শ্রমিক থেকে ওঠে আসা এবং পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা। যে সংস্কৃতি সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ই ধারণ করে। নারীরা এর ভুক্তভোগী, আর পুরুষ সুবিধাভোগী।
সুপারভাইজার, লাইন চিফ, ম্যানেজার বা স্বামীকে নির্যাতক-নিপীড়ক হিসেবে দেখেছি 'শিমু'তে। কিন্তু শ্রমিক রাজনীতিতে সুপারভাইজার, লাইন চিফ এমনকি প্রোডাকশন ম্যানেজার বা স্বামী পুরুষ হলেও শ্রমিকদের লড়াইয়ে মিত্রও হতে দেখা গেছে। কিন্তু মিত্র হয়নি মালিক-সরকার ও বায়ার।
সিনেমায় কারখানার ম্যানেজার যখন শিমুকে টাকা সাধে, ইউনিয়ন না করার উপঢৌকন হিসেবে কিংবা স্বামী কাজ পেয়ে যখন শিমুকে কাজ ছাড়তে বলে, শিমু 'না' বলে। এই না বলার পরিধি কারখানার সুপারভাইজার, লাইন চিফ, ম্যানেজার বা স্বামীর চৌহদ্দী থেকেও অনেক বিস্তৃত। কারখানার চার দেয়াল, শ্রমিকের বসত অঞ্চল, এসব কিছুর পাহারাদার এলাকার ঝুট ব্যবসায়ী, স্থানীয় মাস্তান, মেম্বার, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মালিক-সরকার-বায়ার। তাদের সবার ক্ষমতা ও ভয়ের সামনে এইরকম প্রত্যাখ্যান নিয়ে দাঁড়াতে পারাটা ভীষণ জরুরি। কারণ পোশাক শ্রমিকের রাজনীতির জাল রেজিস্ট্রেশন অফিস ছাপিয়ে বিস্তৃত।
এফডিসির ছবি 'গার্মেন্ট কন্যা' ও 'গার্মেন্ট শ্রমিক জিন্দাবাদে'ও মালিকপক্ষের ভূমিকা অস্পষ্ট। 'গার্মেন্ট কন্যা'য় সোনিয়া এবং 'গার্মেন্ট শ্রমিক জিন্দাবাদে'ও শ্রমিকের ছেলে রাজা চরিত্রটি বনে যায় জেনারেল ম্যানেজার। ২ সিনেমাতেই শ্রমিকরা বিশ্বাস করে, মালিক নয় যত দোষ সব পিএম, সুপারভাইজার, চাঁদাবাজ, ঝুট ব্যবসায়ী আর বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের।
'শিমু'র সঙ্গে এফডিসির এই দুটি ছবির মান, অর্থায়ন, চরিত্রের উপস্থাপন কোনো জায়গায় তুলনার সুযোগ নেই। ফ্রঁসোয়া দক্তেমা ও আশিক মোস্তফা প্রযোজিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি প্রাপ্ত সিনেমা এটি। খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দেলাপে-মিদি মিডিয়ার ব্যানারে এটি নির্মিত। যার পরিবেশনা, বিক্রয় প্রতিনিধি, স্ক্রিপ্ট রাইটিং থেকে প্রকাশ পর্যন্ত রয়েছে নানা ইউরোপীয় সংস্থার সমর্থন। কিন্তু মালিকপক্ষকে উপস্থাপনে মিল আছে এই তিন সিনেমাতেই।
'শিমু' প্রথম দেখার কদিন বাদেই উৎপলেন্দু চক্রবর্তী পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের পাটকল শ্রমিক আন্দোলনের ওপর নির্মিত সিনেমা 'চোখ' (১৯৮৩) দেখি। 'চোখ' সিনেমায় শ্রমিক ও মালিকের ভূমিকা স্পষ্ট। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে জেঠিয়া জুট মিলের শ্রমিক নেতা যদুনাথ নিজের চোখ শ্রমিকদের দান করে। যদুনাথ জেল সুপারের কাছে এক চিঠিতে বলেন, '... আমার চোখ দুটি সেই মজদুর ভাইকে দিতে চাই, যে এ ধরণীর অনেক কিছু দেখেনি। বেঁচে থেকে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ হতে দেখিনি। কিন্তু আমার পুরো বিশ্বাস, এই দুই চোখ ওই স্বপ্ন পূরণ হতে অবশ্যই দেখবে।'
৬.
'শিমু' কারখানাভিত্তিক ইউনিয়নের গুরুত্ব সামনে আনে, যা শ্রমিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। আমেরিকান ছবি 'নরমা র্যা' (১৯৭৯)-তেও ইউনিয়নের গুরুত্ব হাজির হতে দেখি। যদিও সেখানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সেখানে মূল চরিত্র নরমা টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক। তরুণ-মধ্যবিত্ত নেতা রবিনের অনুপ্রেরণায় নরমা প্রতিবাদী হয়। 'ইউনিয়ন' লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে টেবিলের ওপর দাঁড়ালে একে একে মেশিন বন্ধ করে সহকর্মীরা। নানা হয়রানির পর ইউনিয়ন জেতে তারা।
ইতিহাসে রবিনের মতো এমনি মধ্যবিত্তদের বরাবর শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হতে দেখা গেছে। রবিনের সঙ্গে নাসিমা চরিত্রের মিল কেউ খুঁজতে পারে। কিন্তু 'নরম্যা র্যা'তে রবিন একজন রাজনৈতিক কর্মী, শিমুতে নাসিমা উন্নয়ন কর্মী। দুই চরিত্র ভিন্ন। নাসিমার তত্ত্বাবধানে সিনেমাতে একটা পর্যায় অনেকটা কাল্পনিক ও রোমান্টিক কায়দায় ইউনিয়ন করার সুযোগ পায় শিমু। সরকারি কর্মকর্তার ঘরের দরজা বন্ধ করে তার কথা রেকর্ড করা, সাংবাদিকসহ লোক ডাকার ভয় দেখানো ইত্যাদির মাধ্যমে ফাইলে সই নিয়ে অবশেষে ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন হয়। কিন্তু আদতে পথটা এতোটা শর্টকাট নয়।
সন্দেহাতীতভাবে প্রকৃত ইউনিয়ন সকলের চাওয়া। কিন্তু 'মালিকরা কাগুজে বা পকেট ইউনিয়ন অথবা পার্টিসিপেটরী কমিটির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখায়, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারের জনগণ বিশ্বাস করে শ্রমিকরা তাদের অধিকার পাচ্ছে।' (১ মে ২০২২, নিউ এজ)
প্রকৃত ইউনিয়নের সুযোগ একেবারেই সংকুচিত। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইউনিয়নের বাইরেই বরং মাঠের লড়াই, আইনি লড়াই, সাংস্কৃতিক লড়াই—সব একযোগে চলতে দেখা যায়। বাংলাদেশে বহু শ্রমিক সংগঠন কারখানার ভেতরে এবং মাঠের লড়াই করে, যারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পায় না।
পেটের দায়ে এবং মাথা উঁচু করে বাঁচতেই এসব লড়াইয়ে যোগ দেয় শ্রমিকরা। তাদের দেখা যায় মজুরি আন্দোলনে (২০০৬ থেকে ২০১৮), সহকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের মুখে (২০০৮), তাজরীন ও রানা প্লাজার সামনে (২০১২-২০১৩), করোনা কালে কারখানার সামনে ও রাজপথে (২০২০)। তাদের লড়াই সব সময় জীবন্ত। কিন্তু 'শিমু'তে এমন লড়াইয়ের কোনো দৃশ্যায়ন নেই। একবার শুধু ফেডারেশন অফিসে নাসিমার পেছনে কম্পিউটারে রানা প্লাজার সামনে একটি সভার আউট অব ফোকাস দৃশ্যায়ন দেখি।
ইউনিয়ন সংগঠিত করার বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে এখানে কিছু বাড়তি আলাপ করতে চাই। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিক। শ্রমিকের পরিবারের সদস্যসহ এই খাতে পরোক্ষভাবে যুক্ত দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। অন্যদিকে মালিকদের অনেকেই জাতীয় সংসদে সদস্য। তাদের সংখ্যাও কম না। যদিও জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় শ্রমিকদের বর্তমানে ভোটার হিসেবে গুরুত্ব নেই বললেই চলে। তারপরও সরকার-মালিকের তাদের প্রতি আছে বিশেষ গুরুত্ব ও নজরদারি।
অর্থনৈতিক এবং শ্রেণীগত স্বার্থ রক্ষায়ই এর পেছনের কারণ। কাজে বুঁদ থাকা শ্রমিকদের আন্দোলনমুখি ও সচেতন হতে দেখলে ভয় জাগে মালিক ও সরকারের। কেবল কারখানাভিত্তিক আন্দোলনই নয়, সমগ্র গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনই তাতে ভিন্ন রূপ নিতে পারে। তাই শ্রমিক আন্দোলন দমনে বদ্ধ পরিকর থাকে সরকার ও মালিক। তা সে রেজিস্টার্ড ইউনিয়ন হোক বা নন রেজিস্টার্ডের আন্দোলন হোক। বায়াররা যতই কমপ্লায়েন্সের কথা কিংবা ইউনিয়নের কথা বলুক, মূলত লাভের জন্য সস্তা-অসচেতন-অসংগঠিত মজুরদেরই খোঁজে তারা। বাস্তবে সকল দুরবস্থার দায় চাপে উৎপাদনকারী দেশ, দেশের শ্রমিক এবং মালিকদের কাঁধে।
বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে বর্তমানে গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে, ভোটাধিকার অনিশ্চিত, ভয়ের রাজনৈতিক আবহাওয়া গ্রাস করেছে তরুণ প্রাণ। চাকরি ও প্রাণ, দুইই হারানোর ভয় এবং অব্যাহত জুলুম-নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা। এ অবস্থায় মালিক-সরকার এবং বায়ার সকলেরই চাওয়া কেবল অর্ডার অব্যাহত থাকুক, স্থিতিশীল থাকুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। মজুরি, নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন প্রসঙ্গ সেখানে বরাবরই উপেক্ষিত। ফলে শ্রমিক রাজনীতি কিংবা ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন কোনোটিই রাজনীতি ও রাষ্ট্রের চরিত্র নিরপেক্ষভাবে বিচারের সুযোগ নেই।
'শিমু'তে যেভাবে ইউনিয়ন করতে দেখি, সেভাবে কারখানায় কাজটা এতো সহজ না। রাজনৈতিক দলের মতো এখানেও এই অধিকার নির্ভর করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন করার অন্যতম যোগ্যতা হলো মালিক-সরকার ও বিদেশিদের 'নেক নজরে' থাকা।
রানা প্লাজার ঘটনার পর অনেকে আন্তর্জাতিক চাপে ইউনিয়ন করার সুযোগ পায়। যেগুলো শেষপর্যন্ত কাগুজে। শুভঙ্কর কর্মকারের 'কাগুজে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়ছে' নামে এক প্রতিবেদনে বর্তমান চিত্র উঠে আসতে দেখা যায়। তিনি লেখেন, '... বর্তমানে নানা পন্থায় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে নিবন্ধিত ইউনিয়নের বেশির ভাগই কাগুজে, অর্থাৎ কারখানা পর্যায়ে অস্তিত্ব নেই। সাধারণ শ্রমিকেরা যেন সংগঠন করতে না পারে সে জন্য মালিকপক্ষই পছন্দের শ্রমিক দিয়ে ইউনিয়ন নিবন্ধন করিয়ে নিচ্ছে। তাতে সহায়তা করছে কিছু "শ্রমিকনেতা"। অন্যদিকে ইউনিয়ন করতে গেলেই সাধারণ শ্রমিকেরা হয়রানির মুখে পড়ছেন। ছাঁটাই ও মারধরেরও শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। আবার আইনের মারপ্যাঁচে অনেক প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নের আবেদন বাতিলের ঘটনাও ঘটছে।' (১ মে ২০২১, প্রথম আলো)
শ্রমিক এলাকাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন বেচা-কেনাসহ আদতে কী হাল আছে, সেটা অনেকটা 'ওপেন সিক্রেট'। কেবল প্রকাশ্যে এড়ায় সবাই। ইতিহাসে সব জায়গায় দেখা গেছে, এমনভাবে আন্দোলন দমনে চক্র তৈরি থাকে, যাতে একবার ঢুকলে বের হওয়া কঠিন। এই চক্র প্রকল্পের আছে 'পকেট নেতা', 'মাসোয়ার ভোগী', 'পোষ্য' নেতা তৈরিসহ নানা আয়োজন। পকেট নেতাদের মাসোয়ারা, কমিশন বা ভাগা প্রদান, ঈদ পার্বণে 'বোনাস', মোবাইল, চা-নাস্তার নামে আন্দোলন থামানোর জন্য খামসহ নানা কিছু দেওয়া হয় এই প্রকল্পে।
ভয় ছড়ানোর তৎপরতাও নিয়মিত যুক্ত থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে এই ভয় বোনার কাজে। পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা শ্রমিকদের ট্রেনিংসহ নানা চাকচিক্যময় জীবনের দিকে হাতছানি দিতে থাকে। শ্রমিক সংগঠকদের দেশে দামি ভেন্যুতে আলোচনা-ট্রেনিং, 'ভালো' খাওয়া-দাওয়া, অংশগ্রহণের জন্য টাকা, দেশে-বিদেশে ব্যয়বহুল হোটেলে আবাসিক কর্মশালা ইত্যাদি। মালিকপক্ষীয়দের গুণগান করা শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের জন্যও আছে আয়োজন। আছে সাংবাদিকদের বৃত্তি ও নানা উপহার।
এভাবে নিজেদের তৈরি লোকদের দিয়ে জনমত তৈরি করা হয়। সঙ্গে থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ সরকারের নানা পেটোয়া বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের হুমকি ও নির্যাতন। থাকে হালে যোগ হওয়া 'হেলমেট বাহিনী'র হামলা। তাদের তৎপরতার দৃশ্যগুলো কখনো হয়ে ওঠে একেকটা অ্যাকশন ফিল্মের মহড়া। এতসবের মাঝে দাবি আদায়ে মাঠের লড়াই প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শ্রমিক আন্দোলনের এই জটিল পাটাতন 'শিমু' ছবিতে খুঁজে পাওয়া যায় না।
৭.
সিনেমার শেষে বড় বড় অক্ষরে পর্দায় বাংলা বর্ণমালায় ভেসে আসে, '... এই ছবির সময়কাল ২০১৩। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অধিকার, মজুরি বৃদ্ধি, ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের হারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য শ্রমিক ভাই-বোন ও নেতাদের প্রতিবাদ, আত্মত্যাগ এবং কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।'
এটা ঠিক, ২০১৩ সাল শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় কাল। রানা প্লাজায় ভবন ধসে হাজারো প্রাণ হারানোর বছর। বিশ্ব ঘুরে তাকায় বাংলাদেশের দিকে। ভোক্তারাও জানতে শুরু করে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগ লাগানো 'টি শার্ট'র পেছনে রক্তমাখা গল্প। ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার ঘটনার পর ভাবমূর্তি ও অর্ডার রক্ষায় উঠে পড়ে লাগে মালিকপক্ষ। অ্যাকোর্ড, অ্যালায়েন্স আসে, কারখানার দালান-কোঠা ও পরিবেশ বদলায়, গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে সুনামও কুড়ায় দেশের কয়েকটি কারখানা।
২০২৩ পর্যন্ত রানা প্লাজা, তাজরীনের মতো এতো বড় ঘটনা হয়তো ঘটেনি, যদিও আগুন লাগা এখনো থামেনি। তাহলে আগুন লাগা ও ভবন ধস বন্ধ হওয়াই কি 'ইতিবাচক পরিবর্তনের' একমাত্র স্মারক?
২০১৩ সালের পর আন্তর্জাতিক চাপে কাগুজে ইউনিয়ন ও 'পার্টিসিপেটারী কমিটি' বাড়তে থাকে। 'উন্নতি' যদি হয়েই থাকে, তবে কেন এতো কাগুজে ইউনিয়ন? কেন শ্রমিকের জন্য নির্ধারিত মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ? কেন শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি? কেন মূল্যস্ফীতির এই আকালে ন্যুনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবিতে কোনো কর্ণপাত নেই? কেন শ্রম আইনে এখনো ক্ষতিপূরণ অধিকার নয়? কেন শাস্তি হয় না তাজরীন-রানা প্লাজার দোষীদের।
তাহলে এ উন্নতি কার? মালিকের না শ্রমিকের? হয়তো সেন্সর বোর্ডের চাপে এমনি বক্তব্য ছবি শেষে যোগ করতে হয় পরিচালককে। যা 'মেইড ইন বাংলাদেশ' নামে বিদেশে মুক্তি প্রাপ্ত একই ছবির শেষে ছিল না। 'শিমু' শেষ হয় এলো বীর দর্পে ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্যে। কিন্তু উন্নতির সরল বয়ান বাস্তব জীবনের হাহাকার থামায় না।
দেশের উন্নতির প্রকৃত কারিগর পোশাক শ্রমিকসহ মেহনতি শ্রমজীবীদের জীবন সংগ্রাম চলচ্চিত্র কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে (উপন্যাস, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য, নাটক, চিত্রপট, আলোকচিত্রসহ) গুরুত্বের সঙ্গে এখনো উঠে আসেনি। সেই শিল্প-সাহিত্য নির্মাণের যাত্রায় রুবাইয়াতের কাজ চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হবে বলেই বিশ্বাস করি।
তাসলিমা আখতার, সভা প্রধান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ও আলোকচিত্রী
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments