আমি ভালো নেই তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ
প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা হয়। মেলা আসলেই আমার মনে একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরতে থাকে, যে পরিমাণ গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, তা দিয়ে কি আমরা সমাজ পরিবর্তন করতে পারছি?
কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর আর মেলে না। মনে পড়ে হুমায়ুন আজাদের কথা। 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে?' নাকি অধিকারই এখন নষ্টদের দখলে? কোনটা? দ্বন্দ্ব নয়, সমাধান জরুরি। সংকট নয়, প্রতিকার জরুরি। কিন্তু সমাধান বা প্রতিকার চাইলেই আসে না। কারণ অন্ধকার সবসময় আলোকে গ্রাস করতে চায়। জোটবদ্ধ অন্ধকার আলো পেলেই গোগ্রাসে গিলে খেতে চায়।
ঠিক যেমন পাকিস্তানিরা বাঙালিদের গিলে খেতে চেয়েছিল। বাঙালি সত্ত্বা গ্রাস করতে চেয়েছিল। চেয়েছিল নিজেদের সংস্কৃতি আরোপ করতে। তারা সফল না হলেও এ দেশে এখনো তাদের বীজ সজীব। তারা ক্ষণে ক্ষণে মাথা জাগায়, উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের পাকিস্তানিদের গিলে খাওয়ার যে নগ্ন ইতিহাস, তা জানার উপায় কী? যারা একাত্তর দেখেনি, যুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্ম হয়নি, যারা স্বাধীনতার ঘোষক ২ জন পড়েছে, তারা কীভাবে পাকিস্তানিদের নৃশংসতার ঘটনা জানবে? তারা জানবে সাহিত্য, ইতিহাস, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এর বাইরে কি আর কোনো উপায় আছে? আছে। মানুষের মুখে বা পরিবার-স্বজনদের মুখে ঘটনা জেনে।
ধরুন, আরও ৫০ বছর পরের কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বা পাকিস্তানিদের নৃশংসতা জানার উপায় কী? দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কেউই বেঁচে থাকবেন না। তখন উপায় একমাত্র সাহিত্য, ইতিহাস, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানা, দেশ স্বাধীনের ইতিহাস জানা, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানা। সহজভাবে বললে, সাহিত্য, ইতিহাস, চিত্রকর্ম, শিল্পকর্ম, নাটক, গান, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সবাই সময় সম্পর্কে জানতে পারবে, সময়কে বুঝতে পারবে। যেমন: সেলিনা হোসেনের 'হাঙর নদী গ্রেনেড' বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের 'চিলেকোঠার সেপাই' পড়লে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানা যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানগুলো শুনলে সেই উত্তাল সময় সম্পর্কে জানা যায়। 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড', 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো', 'স্বাধীনতা তুমি' কবিতাগুলো পড়লে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানা যায়। জয়নুলের দুর্ভিক্ষের ছবি দেখলে দুর্ভিক্ষ, ক্ষুধার্ত জীবন, কষ্ট, জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 'জীবন থেকে নেয়া', 'ওরা ১১ জন', 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী', 'আলোর মিছিল', 'একাত্তরের যীশু', 'মাটির ময়না', 'মেঘমল্লার'সহ মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো দেখলেই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাহিত্যিক, গীতিকার, নাট্যকার, পরিচালকরা সৃজনশীল কাজ করেছেন বলেই তা জানা যাচ্ছে। যদি তারা সৃষ্টি বিমুখ থাকতেন বা সৃজনশীল কাজ না করতেন, তাহলে কি সেই সময় সম্পর্কে বা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যেত? না।
সময়কে জানার জন্য সাহিত্য, ইতিহাস, চলচ্চিত্রের ভূমিকা বিশাল। আর সময়কে অংকন করার জন্য সাহিত্যিক, নাট্যকার, পরিচালক, শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এখন প্রশ্ন হলো, সাহিত্যিক, নাট্যকার, পরিচালক, শিল্পীরা কি সবসময় সঠিক ভূমিকা রাখেন? না। তাই ২০১০ সালের পর এমন কোনো টেক্সট বা শিল্প বা চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি যেখান থেকে আমরা পুরো এক যুগ বুঝতে পারবো বা জানতে পারবো। স্বল্প কিছু হলেও তা অজানা।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এটি ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠন করা হয় এবং ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) তাদের কার্যক্রম শুরু করে। র্যাব গঠনের পর আমরা নতুন একটা শব্দ জানতে পারি। গণমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষের কথোপকথন, সব জায়গায় তখন নতুন শব্দের ফুলঝুরি। আলাপে, তামাশায় সেই নতুন শব্দ আমাদের মুখে মুখে। সেই শব্দ হলো 'ক্রসফায়ার'। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা নাম। তখন র্যাব মানেই আতংক। রাস্তায় র্যাবকে দেখলে মনে হয়, স্বয়ং মৃত্যুদূত হাঁটছে। তার ২ বছর পর ২০০৬ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন আহমেদের 'হলুদ হিমু কালো র্যাব' উপন্যাসটি প্রকাশিত হলো।
উপন্যাস হিসেবে এর মূল্যমান কী, তা আলাদা করে আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু যে বিষয়টি বলার দাবি রাখে তা হলো, হুমায়ূন আহমেদ এতো সূক্ষ্মভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং তাদের কর্মকাণ্ড হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, যা সত্যিই অনবদ্য। সাধারণ পাঠক এই উপন্যাস পড়ে তথ্য পাবেন, কিন্তু তত্ত্ব পাবেন না। তত্ত্ব পেতে হলে নিরীক্ষে গিয়ে 'হলুদ হিমু কালো র্যাব' উপন্যাস পড়তে হবে।
২০০৪ থেকে ২০২৩ সাল। এখন র্যাব সম্পর্কে বললেও কারো মনে শঙ্কা জাগবে না, ভয় জাগবে না। এখন 'ক্রসফায়ার' সাধারণ একটি শব্দ মাত্র। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া 'ক্রসফায়ার' এখনো চলছে। ২০১৮ সালে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের 'ক্রসফায়ারে'র অডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 'আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে...'। একরামুল হকের কন্যার এই আর্তনাদ সবাই জেনেছি, কিন্তু 'ক্রসফায়ার' কি বন্ধ হয়েছে? না, হয়নি।
২০০৪ সালে র্যাব ও 'ক্রসফায়ার' ২টি শব্দই ছিল আতঙ্কজনক। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন বলে আমরা শুধু এখন কেন, আরও ৫০ বছর পরেও এই সম্পর্কে জানতে পারব। সেই সময় সম্পর্কে জানাতে পারব। কিন্তু যদি না লেখা হতো, তাহলে কি জানা যেত?
বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি 'আলফা' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। সেই চলচ্চিত্রেও সূক্ষ্মভাবে 'ক্রসফায়ারে'র কথা বলা হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অজ্ঞাত লাশের বিষয়টি উঠে এসেছে। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু চাইলেই তা এড়িয়ে নিটোল প্রেমের গল্প বানাতে পারতেন, কিন্তু তিনি সমাজের প্রতি নিজের দায় স্বীকার করেছেন। এর বাইরে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আর কোনো কাজ কি হয়েছে? তাহলে কি সৃজনশীলরা এই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন?
সাহিত্যিক, নাট্যকার, পরিচালক, শিল্পীর দায় অনেক। একটি সমাজের পরিবর্তন, সমাজের সংকট জানা যায় শিল্পীর সৃজনে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, বিটিভিসহ অল্প কয়েকটা গণমাধ্যমে জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা বা বড়দিনের আয়োজন চোখে পড়ে। বাকিরা শুধু দায় এড়ায়। এই চলন আগে ছিল না, এখন তৈরি হয়েছে।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের 'লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা' বিখ্যাত উপন্যাস। কলেরা মহামারির ভয়াবহ সময় সম্পর্কে জানতে এই উপন্যাসটি যথাযথ। করোনা মহামারি এই পৃথিবীতে হানা দিয়েছে। নিঃস্ব করেছে পরিবার, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিকভাবে হেয় করেছে আমাদের। এই সময় কি লিপিবদ্ধ হয়েছে? গণমাধ্যম ছাড়া আর কোথাও এর দেখা মেলে না। সবাই প্রেমের উপন্যাস লিখতে চাই, সমাজকে অবজ্ঞা করে। কিন্তু সমাজবিহীন প্রেম যে নিথর, ধূসর তা কে বলবে?
'এই শহর সুবোধদের', 'আরোপিত এই নগরে', 'অর্বাচীনের আহ্নিক', 'প্রহসনের এক রাত্তির' আমার ৪টি সমকালীন কথনমালার গ্রন্থ। এই ৪টি গ্রন্থে এক যুগ চিত্রিত করা হয়েছে। শুধু সমকালীন কথনমালার গ্রন্থ কেন? কেন উপন্যাস, ছোটগল্প বা চলচ্চিত্রে মনে রাখার মতো সময় চিত্রিত হয় না?
শুধু করোনা নয়, গুম, হত্যা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক হামলা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, সংখ্যালঘু নির্যাতন, খুন, ঘরবাড়িতে আগুন, ধর্ষণ নিয়ে গত ২০ বছরে কোনো লেখা নেই। থাকলেও তা খুবই স্বল্প, দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কেন? এসব বাদ দিয়ে কি সমাজ?
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে 'তাকদির' নামের একটি ওয়েব সিরিজ হয়েছে। সেই ওয়েব সিরিজে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়ি দখলের প্রেক্ষাপট জানা যায়। এই এক 'তাকদির'ই সব?
তার মানে কি এই, ২০০০-২০২২ পর্যন্ত আমরা খুব আনন্দে ছিলাম? আমাদের সমাজে তেমন কোনো সংকট ছিল না? ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজায় যে ভয়াবহ হামলা হয়েছে তাও মিথ্যা?
২০ বছরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। ২০১৭ সালে। হেফাজতের ২৯টি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। হিন্দু ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ হেফাজত একটা ধর্মীয় দল, যারা নারী শিক্ষা পছন্দ করে না। যাদের কাছে ভিন্নমতের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের দাবিতে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পাঠ্যবই পরিবর্তন করে ফেলে। এতে করে একদিকে যেমন তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়, আরেকদিকে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে নিয়ে আসা হয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মূলত বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন, যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। এটি কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না, কিন্তু এখন এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। জন্মলগ্নের পর থেকেই এই সংগঠন বাংলাদেশে ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। ২০১১ সালে তারা শাপলা চত্বর দখল করে পুরো বাংলাদেশ অচল করে দিতে চেয়েছিল। এই সম্পর্কিত কোনো উপন্যাস, গল্প, কবিতা, শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র নেই। কেন? শুধু ব্লগাররা এই সম্পর্কে লিখেছেন। প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। কিন্তু আর কিছুই নেই। তাই তাদের প্রাণও দিতে হয়েছে। যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'প্রথম আলো' পড়ে বিশাল সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় 'প্রথম আলো'র মাধ্যমে যেভাবে সময়কে তুলে এনেছেন সেইভাবে আমাদের এইখানে চিত্রিত হয়নি। ফলে সমাজকে অবহেলা করা হয়। আর সমাজকে অবহেলা করে সাহিত্য, শিল্পকর্ম কি মানুষের মনে স্থান পায়? সাময়িক জনপ্রিয়তার মোহে কেউ যেন কথায় বলতে চাই না।
যেমন স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয় হলো গণতন্ত্র। অথচ বাংলাদেশে ৪ মূলনীতির প্রথমেই হলো গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ, এই গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেন শহীদ হয়েছিলেন। রাজপথে 'স্বৈরচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তিপাক' লিখে খালি গায়ে হেঁটে বেরিয়েছিল। সেই মাইলফলক এখন আর চোখে পড়ে না। সেই লাইনও কেউ লিখে না। সর্বশেষ কবি রকিব লিখনের 'যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ'র মতো কালজয়ী কবিতার লাইন চোখে পড়েছিল 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলনে। এরপর আর কোনো লাইন আসেনি, যা পড়ে মনে হতে পারে এই একটা লাইনের জন্য আমি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান, কবিতা শুনে এখনো মনে হয় আমি কেন সেই সময়ে জন্ম নেইনি? কেন আমি যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ পাইনি?
এই সময় বড়ই নিষ্প্রভ। সর্বশেষ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন ছিল সফল। যদিও সরকার সেই আন্দোলন ভিন্ন পথে চালিত করেছে। যা পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই লক্ষ্য করা যায়নি। পক্ষান্তরে, এইটাও বলার দাবি রাখে, এখন দেশে কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলন নেই। দেশের প্রান্তিকে ওয়াজ করার অনুমতি মিললেও একটা সাংস্কৃতিক উৎসব বা যাত্রাপালা বা পথনাটক করার অনুমতি মেলে না। অজুহাত নিরাপত্তা। সেই অজুহাত দেয় কারা? সরকার, প্রশাসন।
রাষ্ট্র বা প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় এখন উগ্রতা জন্ম নিচ্ছে। সৃজনশীল মানুষ হচ্ছে নিগৃহীত। ব্লগাররা হচ্ছে খুন। বিচার কি হচ্ছে? না। হোলি আর্টিজান তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এই কারণে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, 'সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক সব সংঘ-পরিষদ...'।
এখন সবাই তাণ্ডবে লিপ্ত। লিপ্ত হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ছাড়ানোয়। শিক্ষা থেকে সমাজ সব জায়গা এখন কলুষিত। যে কারণে হেফাজতের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকার পাঠ্যবই পরিবর্তন করেছে। এমন কি হওয়ার কথা ছিল? না। তাই বলা চলে, সবকিছু নষ্টদের অধিকারে নয়, অধিকারই এখন নষ্টদের মুঠোয়। এখন ভালো থাকার বা শান্তিতে থাকার কোনো অধিকার নেই। অধিকার নেই বলে, ২০২১ সালে শারদীয় দুর্গোৎসবে হিন্দুদের ওপর ১৩ অক্টোবর থেকে চলা সাম্প্রদায়িক হামলা চলেছে টানা ১০ দিন। গুটিকয়েক মানুষ প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সৃজনশীল, প্রগতিশীল মানুষদের একটা বড় অংশই ছিল নীরব। যেন প্রতিবাদ করলেই সম্মান চলে যাবে। সৃজনীর সৃজন ক্ষয় হয়ে যাবে।
'ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
মতিয়ুরকে ডাক।
কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে!
তোরাই তবে সোনামানিক
আগুন জ্বেলে দে।'
আল মাহমুদের মতো এই লাইন আর কেউ লেখে না। সংকট। ঘোর সংকট। এই সংকটে তসলিমা নাসরিনের মতো বলতে হয়, 'আমি ভালো নেই তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ'।
বিনয় দত্ত; কথাসাহিতিক ও সাংবাদিক
benoydutta.writer@gmail.com
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments