আমরা কি কখনো ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে পারব?
ঢাকায় নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত মাসটি ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর। এই তথ্য জানতে পেরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়েছি।
ঢাকার বায়ুদূষণের এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। নয় বছরে নয়টি ডিসেম্বর মাসের মোট ১৭ দিন বায়ু ছিল 'দুর্যোগপূর্ণ', আর এর মধ্যে ১১ দিনই বায়ু দুর্যোগপূর্ণ ছিল গত ডিসেম্বরে। ক্যাপসের গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮। ২০১৬ থেকে এত খারাপ কখনোই হয়নি। গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টার সময় ঢাকার বায়ুর মান ছিল ৮৮০, যা গত নয় বছরের হিসেবে নজিরবিহীন।
অর্থাৎ, গত বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার বাতাসের মান ধারাবাহিকভাবে খারাপ থেকেছে। বর্ষা মৌসুমে বাতাসের মানের কিছুটা উন্নতি হলেও তা শীতকালে 'অস্বাস্থ্যকর' ও 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' পর্যায়ে নেমে যায়। কিন্তু একই মাসে ১১ দিন 'দুর্যোগপূর্ণ' বাতাস এক অশনি সংকেত এবং জরুরি ভিত্তিতে এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এটাই এখন সময়ের দাবি।
নিঃসন্দেহে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আগের সরকারের ব্যর্থতা বড় ভূমিকা রেখেছে। গত এক দশকে বাতাসের মানোন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এগুলো থেকে প্রত্যাশিত ফল আসেনি। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রকল্প-তহবিল তছরুপের অভিযোগও এসেছে। তবে আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও কি কোনো কিছু বদলেছে? ইটের ভাটা, কারখানা থেকে নির্গত দূষিত বায়ু, সড়কে চলাচলের অনুপযোগী পরিবহন, যথেচ্ছা বর্জ্য পোড়ানো এবং অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজের মতো দূষণের প্রধান উৎসগুলোর প্রভাব কমিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নতুন কোনো প্রকল্পের প্রয়োজন নেই—যা দরকার, তা হলো, সক্রিয় ও নিরবচ্ছিন্ন নিরীক্ষা প্রক্রিয়া, যা এ মুহূর্তে একেবারেই কার্যকর নেই। এই ব্যর্থতার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এটা সবাই জানে যে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এসব উদ্যোগে বাধা আসতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও এসব সমস্যার সমাধানে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকার বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষণা দেন সরকার বায়ু দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ, বায়ু মান মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তবে এরপর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষণীয় নয়। যার ফলে, ঢাকার হাসপাতালগুলো এখন বায়ুদূষণ সংশ্লিষ্ট রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপে ভারাক্রান্ত।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই পরিস্থিতিতে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আসবে, আমরা তা প্রত্যাশা করি না। তবে ঢাকার বাসিন্দারা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে অল্প হলেও দৃশ্যমান উদ্যোগ ও উন্নতি দেখতে চায়। এ বিষয়ে ব্যর্থতা এড়ানোকে প্রাধান্য দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। আবারও ঢাকাবাসীর আশাভঙ্গের কারণ যেন না হয়, সেদিকে তাদের নজর দিতে হবে।
Comments