২০২৫ সালে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে

২০২৫ সালে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ফাইল ভিজুয়াল: সালমান সাকিব শাহরিয়ার
২০২৫ সালে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ফাইল ভিজুয়াল: সালমান সাকিব শাহরিয়ার

নতুন বছরে বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাই।

২০২৪ সালের ঘটনাগুলো বাংলাদেশে বড় বড় রূপান্তর এনে দিয়েছে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটেছে। যার ফলে বাংলাদেশের জন্য এখন আরও মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত বছর আমাদের রাজনৈতিক অর্জন অসামান্য ছিল এবং এগুলো সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ছাড়িয়ে গেছে। সে কারণেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতির পুনর্জাগরনের দিকে আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ দ্য ইকোনমিস্টের নির্বাচনে 'বর্ষসেরা দেশ' হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সম্মান এবং আন্তর্জাতিক মহলের সাধুবাদ পেলেও দেশের অর্থনীতি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে, সেগুলোকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার নয় শতাংশের উপরে থেকেছে এবং এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কঠোর নীতিমালা অবলম্বন করা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি কমেনি, যা প্রকারান্তরে দেশের সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত ভোগান্তির কারণ হয়েছে। আমদানি কমলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আসেনি। যার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়েনি এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্র খুবই হতাশাজনক থেকেছে এবং বেশ কয়েক বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতিও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এসব চ্যালেঞ্জের মাঝে জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে যথোপযুক্ত প্রাধান্য দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বলা যায়, জরুরি ও টেকসই উদ্যোগ না নেওয়া হলে দেশের অর্থনীতিকে টেকসই উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনা বেশ ঝামেলাপ্রদ হবে।     

তবে আশার কথা এই যে জানুয়ারির শেষ নাগাদ একাধিক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দেবে। আমরা আশা করতে পারি, দেশের সার্বিক সুশাসন কাঠামোকে মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আইনি ও নির্বাচনী সংস্কারের সুপারিশ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়েও পূর্ণমাত্রায় বিতর্ক অব্যাহত থাকবে। ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ এর শুরুতে নির্বাচন হতে পারে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও প্রধান উপদেষ্টার নিজেই নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের মধ্যে ঐকমত্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যত দ্রুত সম্ভব একটি সুসংহত জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার আয়োজন করাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সম্ভবত এসব লক্ষ্য পূরণই হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকার যদি এই রোডম্যাপ অনুসরণ করে, সে ক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাব। জাতি হিসেবে সামনে এগিয়ে যেতে যে ধরনের সংহতি প্রয়োজন, তাকে বড় আকারে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এ ধরনের কার্যক্রম। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অসামান্য আত্মত্যাগ একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নয়নশীল দেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের ওপর বর্তেছে। 

এ কথা বলে আমরা সবাইকে ২০২৫ সালের আগমনে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের মনে রাখা উচিত, যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আমরা দেখছি, তা শুধু সামগ্রিক উদ্যোগ ও সংহতির মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

Political, economic reforms led to drop in overseas migration last year

More than 700 female workers migrated as skilled professionals last year

31m ago