চালাকে খায় কাঁঠাল, বব্বরের মুখে আঠা

jackfruits

বাংলাদেশের জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’ নিয়ে অনেক প্রবাদ আছে। ‘গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল’- প্রবাদটিতে তেলের প্রসঙ্গ এসেছে কাঁঠালের আঠাকে কেন্দ্র করে। ‘পীরিতি কাঁঠালের আঠা...’- জনপ্রিয় একটি গানের লাইন। ‘অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া’- নিজের লাভের জন্যে অন্যকে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকে উদ্ভব হয়েছে প্রবাদটির। ‘চালাকে খায় কাঁঠাল, বব্বরের মুখে আঠা’- বব্বর বা বোকা, মানে সহজ-সরল মানুষ। ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, চালাক বা ধুরন্ধরদের দায় তাকে বহন করতে হয়। ধুরন্ধর বা চালাকের সংখ্যা কম, বোকার সংখ্যা সব সময়ই বেশি। চালাকদের শক্তির উৎস বোকারা। ধুরন্ধররা এমনভাবে বোকাদের ব্যবহার করেন যে, বোকারা ভেবে নিতে বাধ্য হন যে ‘তাদের মঙ্গলের জন্যে সবকিছু করা হচ্ছে’। দু-একটি নমুনা দেওয়া যাক-

ক. ঘোষণা এলো ‘যেমন খুশি তেমন’ গাড়ি চালানো যাবে না। চালালে কিছু দণ্ড হবে। তার উপস্থিতিতেই ঘোষণা পাস হলো। তিনি তাতে সম্মতিও দিলেন। তারপর রাজঘরে বোকাদের একত্রিত করলেন। সকালে নিজে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সন্ধ্যায় সেই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বোকাদের বোঝালেন ‘তোমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে- যেমন খুশি তেমন’ গাড়ি চালাতে পারবে না। বোকারা প্রতিরোধে রাস্তায় নেমে পড়লেন।

খ. আরেক বোকা রূপালি পর্দা থেকে এসে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বছরের পর বছর ধরে বোকাদের বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে, আপনারা শুধু শুধু ‘... মুখে আঠা’ নিয়ে কাঁঠাল খাওয়ার দায় বহন করছেন। কাঁঠাল থেকে আপনাদের অবস্থান বহু দূরে। কাঁঠালের ভাগ আপনারা কোনোদিন পাবেন না। ধুরন্ধর চালাকদের কাছে এই বোকা বড় অসহায়। চালাকরা বোকাদেরকে দিয়েই বোকার ছবিতে জুতার মালা পরালো, অবাঞ্ছিত ঘোষণা করালো।

গ. শিশুরা রাস্তায় নেমে এলো ‘আমাদের চাপা দিয়ে হত্যা করা যাবে না’- দাবি নিয়ে। ‘সব মেনে নিলাম’ ঘোষণা এলো। সঙ্গে কিছু উত্তম-মধ্যম। ‘বেগুনা’ চলবে না, রঙচটা ভাঙ্গাচোরা লক্কড়-ঝক্করগুলোও চলবে না, বোকাদের জানানো হলো। এতদিন আমরা দেখতে পাইনি ‘এবার চোখ খুলে গেছে’, ‘বিবেক জেগে গেছে’। হুট করে ‘বেগুনা’, ‘লক্কড়-ঝক্করগুলো’ উধাও। বোকাদের সে কী দুর্ভোগ! বোকাদের মঙ্গলের জন্যেই আবার দেবতার মতো হাজির হলো ‘বেগুনা’, ‘লক্কড়-ঝক্করগুলো’।

নিয়ম করে চাপা পড়ে বোকারা মরতে থাকলেন। কীভাবে মরেন, দায় কার? নিজেরা নিজের দোষেই মরেন!

বোকারা বলেন, মুরগি আগে, চালাকরা বলেন ডিম আগে। কাঁঠাল থেকে বহুদূরে অবস্থান করে ’ডিম- মুরগি’ তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বোকারা। চালাকদের মুখে ‘... পুষ্পের হাসি’।

২. পানি বহুদূর গড়ালো। ‘চাকরিতে সবার জন্যে সমান সুযোগ’ কারও জন্যে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নয়- ঘোষণা এলো। বেশির ভাগ বোকাদের দাবিতেই এমন ঘোষণা। কমসংখ্যক বোকা দাবি তুললেন ‘না মানি না’ বিশেষ সুবিধা রাখতে হবে। ‘দুর্বার আন্দোলন’ গড়ে তুলে ‘বিশেষ সুবিধা’ ফিরিয়ে আনা হবে- ঘোষণা দেওয়া হলো। ফিরিয়ে আনার ঘোষণাদানকারী যিনি, তিনি আবার ‘বিশেষ সুবিধা’ বাতিল সিদ্ধান্তেরও একজন। বোকারা সবই দেখেন, বোঝেন না কিছুই।

৩. বোকারা কথা বললেই তা ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানো হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বলতে বা লিখতে পারেন- মনে করে নিয়েও বোকাদের ধরা যাবে। নিশ্চিত জেল জরিমানার বিধান ঠিক করে রাখা হয়েছে। চালাকদের রক্ষাকারীরা হত্যা করলেও, তাদের বিরুদ্ধে বোকাদের আমানত জালিয়াতি-লুট করে নেওয়ার অভিযোগ আসলেও, ধরা যাবে না। ধরার আগে অনুমতি নিতে হবে। সবই করা হচ্ছে বোকাদের মঙ্গলের জন্যে!

৪. কোনো প্রবাদই নাকি অসত্য নয়। প্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। এযাবৎকালের গবেষকদের তথ্যে তেমন প্রতিফলনই দেখা যায়।

যদিও ‘বোকার কোনো শত্রু নাই’- প্রবাদটির সত্যতা নিয়ে এখন রীতিমতো সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কথা বলতে না পারলেও সমস্যা নেই, আকার-ইঙ্গিত করলেও, এমনকি- কিছু না করলেও যদি ছোটকর্তাও ‘মনে করেন বা বিশ্বাস করেন’ যে গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’, তবে বোবার জন্যেও নিরাপদ জেল-জরিমানার ব্যবস্থা আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

6h ago