ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা যেন গভীরতর অসুখের নাম
এবার বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক সেরে রেখেছিলেন। অ্যান্টিগার মতো জ্যামাইকার উইকেটে অতো বাউন্স আর মুভমেন্টও ছিল না। তবু পারেননি ব্যাটসম্যানরা। দৃষ্টিকটু ভুলে দুই সেশনেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের এই ধসে পড়া তাই এখন হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটন নয়, যেন ধীরে ধীরে বড় হওয়া গভীর কোন অসুখ। দাওয়াই জানাই আছে, নেই প্রয়োগ, সে কারণে নেই উপশমও।
জ্যামাইকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়েও ফলোঅন এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। নিদারুণ ব্যর্থতায় নিজেরা গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৪৯ রানে। সুযোগ পেয়েও অবশ্য বাংলাদেশকে ফলোঅন করায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ৯ রান করেছে। আগের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে আউট করেছেন সাকিব আল হাসান। নাইটওয়াচম্যান কেমো পলকে নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করবেন ডেভন স্মিথ। হাতে ৯ উইকেট নিয়ে এরমধ্যে তারা এগিয়ে গেছে ২২৪ রানে।
এর আগে বাংলাদেশ আবার ভুগেছে পেসের ঝাঁজে। আগের টেস্টে ৫ উইকেট করে নিয়েছিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল আর কেমার রোচ। এবার ৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে শর্ষে ফুল দেখিয়েছেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।
ওপেনার তামিম ইকবালের ৪৭, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ৩২ আর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ২৪ রানই এই ইনিংসে হয়েছে বলার মত ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
বাংলাদেশের শুরুতে ছিল জুতসই কিছু করার ইঙ্গিত। দুই ওপেনার ব্যাট করছিলেন আস্থার সঙ্গেই। তবে পতনের শুরু অদ্ভুত এক ভুলে। রিভিউ ব্যবহারের দিক থেকে বোধহয় টেস্ট দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে। তার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে এবারও । শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ওভার দ্য উইকেটে এসে করা আড়াআড়ি বলটা লিটন দাসের প্যাড স্পর্শ করার সময় বেরিয়ে যাওয়ার দিকেই ছিল। আম্পায়ারের আঙুল তুলায় চ্যালেঞ্জ জানানোই হতো স্বাভাবিক। কিন্তু তামিমের সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ না নিয়েই বেরিয়ে যান লিটন। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি লেগ স্টাম্প থেকে অনেকটা দূরে ছিল। রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন লিটন। খানিকপর অবশ্য রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন তামিম। কিন্তু খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ধুকেছেন পুরোটা সময়ই ।
এক উইকেট যেন ডেকে আনে আরেক উইকেট। ব্যাটসম্যানদের রান পাওয়া ধারাবাহিকতা না থাকলেও জোড়ায় জোড়ায় আউট হওয়ার অন্যরকম ধারাবাহিকতা দেখা গেছে পুরো ইনিংস জুড়ে। শুরুটা মুমিনুল হককে দিয়েই। লিটনের আউটের পর এসে তিনি এক বল ডিফেন্স করেছিলেন ঠিকঠাক। পরের বলেই আউট হলেন যেন অ্যান্টিগা টেস্টের রিপ্লে দেখিয়ে। সেই একই বোলার, একই ফিল্ডার, একই জায়গায় ক্যাচ। বলের লাইনে না গিয়ে সেই একই রকম ভুল। তিন ইনিংসের দুইটাই শূন্য, আরেকটাতে করেছেন ১ রান।
২০ রানে ২ উইকেট খুইয়ে ব্যাটিং অর্ডারে দেখা গেল বদল। চারে মুশফিকের বদলে এলেন অধিনায়ক নিজেই। ইতিবাচক মানসিকতায় কিছুক্ষণ চালালেন পালটা আক্রমণ। তামিমের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটির পর আবার জোড়া পতন। এবার হন্তারক জেসন হোল্ডার। সাকিবের বোল্ডের পরের বলেই ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিও মাহমুদউল্লাহ। এই সিরিজে তিন ইনিংসের দুইটিতেই রানের খাতা খুলতে পারলেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
চার থেকে ছয়ে নেমে মুশফিকুর রহিম ফেরাতে পারেননি সুসময়। তবে তামিমের সঙ্গে গড়ে উঠে ছোটখাটো এক জুটি। ৭৯ থেকে ১১৭। ৩৮ রান পর আবার সেই একই দৃশ্য। আরেকটি জোড়া পতন। তামিম ইকবালকে বেশ খানিকক্ষণ ৪০ এর ঘরে আটকে ভোগাচ্ছিলেন কেমো পল। অফ স্টাম্প বরাবর বল ঢুকিয়ে ফেলছিলেন অস্বস্তিতে। তাতেই কাবু হয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার। ৪৭ রান করে কেমোর বলেই অফ স্টাম্প গেছে তার। অ্যান্টিগায় দ্বিতীয় ইনিংসে রান পাওয়া নুরুল হাসান সোহান পরের বলেই করেছেন হতাশ। কেমো পলের ভেতরে ঢোকা বলে পা বাড়িয়ে হয়েছেন আত্মঘাতী।যদিও রিভিউ নিলে তিনিও বেঁচে যেতেন। রিপ্লেতে দেখা গেছে বল তার পায়ে লাগার সময় ইম্পেক্ট ছিল বাইরে। আম্পায়ার আঙুল তোলার সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে যান এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এক্ষেত্রে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে আসেনি কার্যকর পরামর্শ।
আর ১১ রান পরেই আরেকবার জোড়া পতনের অবস্থা তৈরি হয়েছিল। হোল্ডারকে ২৪ রান করে গালিতে মুশফিকের ক্যাচ তুলে দেওয়ার পরের বলেই বোল্ড হয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। হোল্ডার ওভারস্টেপিং করায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। জীবন পেয়ে ৪ বাউন্ডারিতে ১৮ রান করে ফলোঅন এড়ানোর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন দল্কে । পরে ওই হোল্ডারের বলেই ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদকেও বোল্ড করে পাঁচ উইকেট নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৫৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮ ওভারে ১৪৯/৪(তামিম ৪৭, লিটন ১২, মুমিনুল ০, সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ২৪, নুরুল ০, মিরাজ ৩, তাইজুল ১৮, কামরুল ০, জায়েদ ০; গ্যাব্রিয়েল ২/১৯, পল ২/২৫, কামিন্স ১/৩৪, হোল্ডার ৫/৪৪, হেইস ০/২২)।
বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে ফের ব্যাটিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯/১ (ব্র্যাথওয়েট ৮, স্মিথ ৮*, কেমো ০* ; জায়েদ ০/৮, মিরাজ ০/৮, ০/৩, ১/০)
Comments