দিনশেষে সেই হতাশারই গল্প
চমক দিয়েই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটেও স্পিনার বাড়িয়ে শুরু থেকেই স্পিন আক্রমণ। তাতে ফলও মিলছিল, কিন্তু দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চমকের ঝাপটা সরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট আর শিমরন হেটমায়ারের দৃঢ়তায় জ্যামাইকা টেস্টের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতেই।
জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৪ উইকেটে ২৯৫ রান। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে আউট হয়েছেন ব্র্যাথওয়েট। ১১০ রানের ইনিংস খেলতে এই ওপেনার লাগিয়েছেন ২৭৯ বল। কঠিন সময় দলকে পার করেছেন আস্থার সঙ্গে। ঠিক উলটো অ্যাপ্রোচ ছিল শিমরন হেটমায়ারের। প্রায় ওয়ানডে মেজাজে খেলে সেঞ্চুরির পথে আছেন তিনি। ৮৪ রানে থাকা এই ব্যাটসম্যানের সঙ্গী ১৬ রান নিয়ে ব্যাট করে রোস্টন চেজ।
অ্যান্টিগা টেস্টে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর আত্মবিশ্বাস জোগাড় করতে জ্যামাইকায় ভাল শুরুর বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। সকালে টস জেতায় ছিল শুভ ইঙ্গিত। তবে একাদশ দিয়েই শুরুতে চমক দেয় বাংলাদেশ। আগের টেস্টেরে একমাত্র স্পিনারকে বসিয়ে যেখানে একাদশ সাজিয়েছে স্বাগতিকরা, বাংলাদেশ সেখানে পেসার কমিয়ে বাড়ায় স্পিনার সংখ্যা।
অ্যান্টিগায় বাজে বোলিং করা পেসার রুবেল হোসেনের জায়গায় নামেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। উইকেট যে স্পিনারদের জন্য স্বর্গ, তেমনটা মোটেও নয়। বরং অ্যান্টিগার মত জ্যামাইকাতেও পেসারদেরই বেশি ফায়দা পাওয়ার কথা। তবে অনূকুল কন্ডিশনেও পেসাররা কিছু করে দেখাতে না পারাতেই বোধহয় টিম ম্যানেজমেন্টের অমন বেঁকে বসা।
প্রথম দিন খেলা হয়েছে ৯২ ওভার। তারমধ্যে ৭৪ ওভারই বল করেছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। শুরুতেই অবশ্য সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজ টার্ন আর বাউন্সে ভড়কেও দিয়েছিলেন স্বাগতিকদের। প্রথম সেশনে রাজত্ব তাই মিরাজদেরই। ৫৯ রানে ২ উইকেট ফেলা গিয়েছিল, দুটিই মিরাজের পকেটে। উইকেট পেতে পারতেন সাকিবও। কিন্তু দিন বাড়তেই আলগা হয়েছে বাঁধন। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এখন ব্যাট করছেন। দুদলের শরীরী ভাষাতেও এসেছে বদল। কঠিন পরিস্থিতি টেম্পারমেন্টের সর্বোচ্চ প্রদর্শনীতে কীভাবে দিনটা নিজেদের করে নিতে হয় তা দেখিয়েছেন ব্র্যাথওয়েট। বাংলাদেশকে পেলেই তার ব্যাট এমনিতেই চওড়া হয়ে যায়। অ্যান্টিগার পর জ্যামাইকাতেও করে ফেললেন আরেক সেঞ্চুরি।
একদিকে ব্র্যাথওয়েট রান পেলেও আরেকদিকে কিরন পাওয়েল, শাই হোপদের ফিরিয়ে দিতে পারছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ধারা বজায় থাকেনি। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ রানের জুটিতে দ্বিতীয় সেশন থেকেই বাংলাদেশকে ম্লান করে দিতে থাকেন ব্র্যথওয়েট-হেটমায়ার জুটি। দিনের শেষ দিকে ব্র্যাথওয়েটকে ফেরান মিরাজ। ৫৯ রানে ২ উইকেট পড়ার পরই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানো শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ব্র্যাথওয়েটের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করছিলেন শাই হোপ। ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর। দারুণ এক বলে হোপকে ভড়কে দেন তাইজুল। এজ হয়ে সিলি পয়েন্টের দিকে বেশ খানিকটা শূন্যে এগিয়ে যাওয়া বল চিতার ক্ষিপ্রতায় হাতে জমান উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। ৭৯ রানের ওই জুটি ভাঙার পর আর ধন্দে ফেলার মতো কোন ডেলিভারি আসেনি বাংলাদেশের বোলারদের কাছ থেকে।
শেষ ভাগে ব্র্যাথওয়েট ফিরলেও রোস্টন চেজকে নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছেন হেটমায়ার। প্রথম দিনের চার উইকেটের তিনটাই পেয়েছেন মিরাজ, শাই হোপকে আউট করে বাকিটা তাইজুলের। দুই পেসার আবু জায়েদ রাহি ও কামরুল ইসলাম মিলে ১৮ ওভার বল করলেও খুব একটা খারাপ করেননি। দেননি খুব বেশি আলগা বল। দ্বিতীয় দিনে আরেকজন পেসারের অভাব বাংলাদেশ টের পেতেই পারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৯২ ওভারে ২৯৫/৪ (ব্র্যাথওয়েট ১১০, স্মিথ ২, পাওয়েল ২৯, হোপ ২৯, হেটমায়ার ৮৪*, চেইস ১৬*; আবু জায়েদ ০/২২, সাকিব ০/৫১, মিরাজ ৩/৯০, তাইজুল ১/৬৫, কামরুল ০/২২, মাহমুদউল্লাহ ০/২০)।
Comments