যেসব কথা হয়নি বলা ‘সঞ্জু’-তে!
মা নার্গিস আদর করে ছেলে সঞ্জয় দত্তকে ‘সঞ্জু’ বলে ডাকতেন। সেই নামটিকেই শিরোনাম হিসেবে নেওয়া হয়েছে সঞ্জয় দত্তের জীবনীচিত্রে। আজ অদম্য গতিতে ছুটে চলছে বলিউডের সেই ‘সঞ্জু’।
বক্স অফিস মাতিয়ে রাখা পরিচালক রাজকুমার হিরানির এই ছবিটি মুক্তির অষ্টম দিন পর্যন্ত মোট আয় করেছে ২১২ কোটি রুপি। ‘মুন্নাভাই’-খ্যাত সঞ্জয় দত্তের বৈচিত্র্যময় জীবনের যে অবিকল উপস্থাপনা দিয়েছেন অভিনেতা রণবীর কাপুর তা দেখতেই যেন দর্শকদের ভিড় লেগেছে!
বলিউডের ‘খলনায়ক’-এর জীবনের অনেক ঘটনা ‘সঞ্জু’-তে তুলে ধরা হলেও ছবিটিতে যেন না বলাই থেকে গেছে সঞ্জয়ের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। নন্দিত এই চলচ্চিত্রে সুনীল-নার্গিস পুত্রের সেসব না বলা কথার কিছু তুলে ধরা হলো।
সঞ্জয় দত্তের দুই স্ত্রী এবং মেয়ে ত্রিশলা
‘সঞ্জু’-তে দিয়া মির্জার অভিনয়ের মাধ্যমে সঞ্জয়ের তৃতীয় বা বর্তমান স্ত্রী মান্যতা দত্তের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী রিচা শর্মার কোনো কথা উল্লেখ নেই চলচ্চিত্রটিতে। ১৯৮৭ সালে বিয়ে করেন সঞ্জয় ও রিচা। ১৯৯৬ সালে ব্রেন টিউমারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কে মারা যান তিনি। সেসময় সঞ্জয় ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারতেন না বলে তাদের সংসার জীবনেও ছিল অশান্তির ছায়া।
এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ত্রিশলা দত্ত। মেয়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক এতোদিন ভালোই ছিল! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের প্রশংসাও করতেন। জানাতেন পরস্পরের প্রতি তাদের ভালোবাসার গভীরতার কথা। কিন্তু, রহস্যজনকভাবে জীবনীচিত্রটিতে অনুপস্থিত সঞ্জয়-কন্যা। আর সেজন্যেই হয়তো ‘সঞ্জু’ নিয়ে নীরব ত্রিশলা।
রিচার মৃত্যুর দুই বছর পর, ১৯৯৮ সালে রিয়া পিল্লাইকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। আর তাদের বিচ্ছেদ হয় ২০০৫ সালে। রিচার মতো দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়াও অনুপস্থিত সঞ্জয়ের জীবনীচিত্রে।
কুমার গৌরব
১৯৮১ সালে ‘রকি’-র মাধ্যমে বলিউডে সঞ্জয়ের অভিষেক হলেও শুরুটা তেমন সহজ ছিল না বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা ও অভিনেত্রী সুনীল-নার্গিস দম্পতির বড় ছেলের। চলচ্চিত্রে একের পর এক ব্যর্থতায় মাদকাসক্ত হয়ে উঠেন ‘মে আওয়ারা হুন’-অভিনেতা। সেসময় সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুমার গৌরব বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। পরিচালক মহেশ ভাটের ‘নাম’-এ নাম লিখান সঞ্জয়ের। ছবিটি পায় ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা, আর সঞ্জয় পায় বলিউডে ফিরে আসার সুযোগ। কিন্তু, সেসব কথার কোনো উল্লেখ নেই ‘সঞ্জু’-তে।
১৯৯৯: সাফল্যের বছর
১৯৯৯ সালে সঞ্জয়ের পাঁচটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও সেগুলোর মধ্যে ‘দাগ: দ্য ফায়ার’, ‘হাসিনা মান জায়েগি’ এবং ‘বাস্তব’ ব্যবসা সফল হয়। বিশেষ করে, ‘বাস্তব’-এর জন্যে তিনি লাভ করেন ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার। ‘সঞ্জু’-তে ২০০৩ সালে তৈরি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর একটি দৃশ্য দেখানো হলেও ১৯৯৯ সালের কোনো ছবির কথা উল্লেখ নেই সেই জীবনীচিত্রে। ‘মুন্নাভাই’ এবং ‘সঞ্জু’ ছবি দুটি একই পরিচালকের বলেই হয়তো এমনটি হয়েছে। কিংবা এমনও হতে পারে পরিচালক সতর্কভাবেই সবাইকে দেখাতে চেয়েছেন যে ব্যর্থ সঞ্জয় তার মাধ্যমেই সফলতার মুখ দেখেছেন। কিন্তু, সঞ্জয়ের জীবন থেকে মুছে দেওয়া যাবে না ১৯৯৯ সাল।
সঞ্জয়ের প্রেম-গুঞ্জন
প্রেমের ব্যাপারে কতটা উদার সঞ্জয় সে কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন ‘সঞ্জু’-তে। ১৯৯০ এর দশকটিকে এই অভিনেতার রোমান্টিক দশক বলা যেতে পারে। চলচ্চিত্রটিতে রুবির সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জনের কথা বলা হলেও সেই তালিকায় ছিলেন অভিনেত্রী মাধুরী দিক্ষিত এবং টিনা মুনিমও। কিন্তু, পরিচালক কেন যেন সে ব্যাপারে নীরব।
বাল ঠাকরে ও জামিন
১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে বোমা হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনাটি ‘সঞ্জু’-তে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু, সেই মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার জন্যে উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন প্রধান বাল ঠাকরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি- সে বিষয়টির কোনো উল্লেখ নেই চলচ্চিত্রটিতে। প্রায় ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ১৯৯৫ সালে জামিনে বের হয়ে আসেন সঞ্জয়। সেসময় খবর বেরিয়েছিল যে সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলটির প্রধানের কাছে গিয়েছিলেন ছেলের মুক্তির বিষয়ে তদবির করার জন্যে।
রাজনীতিতে যাওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস
সমাজবাদী পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ২০০৯ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত। কিন্তু, ১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে বোমা হামলার মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সঞ্জয়ের প্রার্থিতা বাতিল করে দেন।
পরে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তার সম্পর্কটিকে ‘জীবনের এক বড় ভুল’ হিসেবে আখ্যা দেন। কেননা, তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিতে। তার বাবা সুনীল দত্ত কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন।
বিস্তৃত অপরাধ জগত
অপরাধ জগতে সঞ্জয় দত্তের কথিত বিস্তৃত পদচারণার একটি অংশ তথা মুম্বাই হামলার বিষয়টি ‘সঞ্জু’-তে উঠে এলেও ‘খলনায়ক’-কে নিয়ে আরও যেসব কথা প্রচলিত রয়েছে সেগুলো নিয়ে কোনকিছুই বলা হয়নি এই জীবনীচিত্রে। বিশেষ করে, সন্ত্রাসী আবু সালেম এবং ছোট শাকিলের সঙ্গে সঞ্জয়ের কথিত সম্পর্কের বিষয়ে নীরব থেকেছেন পরিচালক হিরানি।
সালমান খান ও সঞ্জয় গুপ্তের বন্ধু সঞ্জয়
‘মুন্নাভাই’-এর বৈচিত্র্যময় জীবনে শুধু যে সন্ত্রাসীদের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল তা কিন্তু নয়। তার বন্ধুদের তালিকায় রয়েছে অভিনেতা সালমান খান এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তের নামও। এখনো তারা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু।
যা হোক, চলচ্চিত্রের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে বলেই হয়তো সময় স্বল্পতার কারণে সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ করতে পারেননি পরিচালক।
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন:
Comments