কেবল নক্ষত্র পতন নয়, উত্থানেরও তো রাত

ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

এক রাতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়েছে সময়ের সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর। এই দুই নক্ষত্রের পতনে হাহাকার ঝরছে, বিশ্বকাপের জৌলুস হারানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু একই রাতে কি নতুন নক্ষত্রের দেখাও মেলেনি!

মাত্র ১৯ বছর বয়স কিলিয়ান এমবাপের। যারা ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন ফরাসী এই প্রতিভাবান তরুণের কথা তাদের জানা ছিল। বিশ্বকাপে তার পা জোড়া থেকে দারুণ কিছু ঝলক দেখার আশাও ছিল। তবে এমবাপে গত রাতে যা করলেন তাতে নিশ্চিতভাবেই দিয়েছেন নতুন নক্ষত্র হওয়ার আগমনী বার্তা।

এবার বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ দল নিয়ে এসেছে ফ্রান্স। আর বয়সের হিসেবে সবচেয়ে বুড়ো আর্জেন্টিনা। এই খেলাটিই তাই বেধে দিল শেষ আর শুরুর সুর। যেন ‘তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা’। 

গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হলেও খুব একটা মনকাড়া ফুটবল খেলতে পারেনি ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা তো উদ্ধার হয়েছে ধুঁকতে ধুঁকতে। প্রতিভায় এগিয়ে ফ্রান্স, অভিজ্ঞতায় আর্জেন্টিনা। তাদের লড়াইয়ে জিতল তারুণ্য, জিতল প্রতিভা আর গতি। সেই হারজিতের হিসেব নিকেশে মিইয়ে গেলেন ফুটবল আকাশের বিশাল নক্ষত্র মেসি। তার জায়গাটিই যেন নিলেন এমবাপে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে জোড়া গোল করে পাশে বসেছেন কিংবদন্তী পেলের। 

প্রথমার্ধে  মাঝমাঠ থেকে দুবার বল পেয়েছিলেন এমবাপে। ক্ষিপ্র গতিতে তেড়েফুঁড়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স ভেদ করে এগিয়ে গেছেন। দুবারই তাকে ফাউল করে বেঁচেছে আর্জেন্টিনা, একবার অবশ্য পেনাল্টিতে গোল হজম করে শেষ রক্ষা হয়নি।

বিরতির পর আরও দুবার এমন দুর্বার গতি দেখালেন। ছুটলেন অনেকটা যেন উসাইন বোল্টের গতির কাছাকাছি। দুবারই গোল পেল ফ্রান্স। অর্থাৎ এমবাপেই তছনছ করে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন রক্ষণ। পরের বিশ্বকাপে আরও পোক্ত হবেন তিনি, আরও ঋদ্ধ হবে তার ভাণ্ডার। বড় ম্যাচে দান মেরে যে আলো নিজের দিকে এনেছেন তাতে আরও তিন বিশ্বকাপ তাকে মাতাতে দেখা যেতেই পারে।

এমবাপের উত্থানের ম্যাচে লিওনেল মেসির হয়ত শেষ দেখে ফেলেছে বিশ্বকাপ। তার যা বয়স তাতে পরের বিশ্বকাপ খেলা একটু বাড়াবাড়ি প্রত্যাশা।

মেসির বিদায়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বিদায় নেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও। তাদের দুজনের মধ্যে কে সেরা, এই নিয়ে বহুদিনের বিতর্ক। এবার বিশ্বকাপে রোনালদো চার গোল করেছেন, মেসি একটি। ব্যক্তিগত লড়াইয়ে হয়ত এগিয়ে রোনালদো। তবে দুজনেই ব্যর্থ হয়েছেন দলকে শেষ আটে নিতে। চার বিশ্বকাপ খেলেও মেসি-রোনালদো কেউই বিশ্বকাপের নক আউটে গোল পাননি। নিজেদের সেরা সময়ে জিততে পারেননি বিশ্বকাপ।

তাদের এমন মিলের দিনে বিদায়েও কত মিল। কেবল একই রাতে বিদায়ই নয়। মিল আছে আরও। রোনালদোদের বিদায় করেছেন যে এডিসন কাভানি তিনি যে ক্লাবে এমবাপেরই সতীর্থ।

ফ্রান্সের লিগ ওয়ানের দল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)’র বড় তারকাই দুজন। মেসিকে বিদায় করতে যেভাবে বারুদ দেখিয়েছেন এমবাপে, রোনালদোর বেলায় ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছেন কাভানি।

ঠিক সময় ঠিক জায়গায় থাকা, ঠিক নিশানা করে বল জালে পাঠানো। স্ট্রাইকারদের এমন মৌলিক কিছু গুণের কারণে কাভানির কদর বিশ্বজোড়া। কেন সেটা দেখিয়েছেন আরেকবার। দুরন্ত হেডের গোল, পরে প্লেসিং শটে বাজিমাত।

এমবাপের মতো বয়সে তরুণ নন কাভানি। ৩১ বছরের কাভানি খুব বেশি দিন যে বিশ্ব ফুটবলে আলো ছড়াতে পারবেন তাও না। তবে মেসি-রোনালদোর বিদায়ের দিনে এমবাপের সঙ্গে আলোটা তার প্রাপ্যই। 

রোনালদো আর মেসিকে নিয়ে হাহাকার থাকতে পারে, আবেগ থাকতে পারে। তবে তাদের বিদায়ে বিশ্বকাপের জৌলুস কমে যায়নি।  বিশ্বকাপ অনেকের শেষ দেখেছে, আবার সেই বিশ্বকাপই অনেকের উত্থান দেখিয়েছে। কেউ কেউ হয়ত দুই নক্ষত্র পতনের কথা ভেবেই বিমর্ষ হতে পারেন। তবে মাথাটা ঘুরিয়ে নতুন নক্ষত্রের দিকে তাকান। দেখা যাবে আলোর রোশনাই আসছে। আসছে রোমাঞ্চ। তাদের নিয়েই হয়ত মাতোয়ারা হওয়ার সময় আসছে সামনে। দুনিয়ার নিয়মই তো এটাই।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda acquitted in Zia Charitable Trust graft case

The HC scraped the trial court verdict that sentenced Khaleda and two others in the same case.

40m ago