ক্রিকেটে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতাল মেয়েরাই
খুব কাছে গিয়েও বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন ছেলেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাই কোন শিরোপা পাওয়া হচ্ছিল না বাংলাদেশের। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন মেয়েরা। যাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক ছিলই না বলতে গেলে। রোববার এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা গড়েছে ইতিহাস।
ছেলেরা আইসিসি ট্রফি আর এসিসি ট্রফি জিতেছিল তবে সেগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মর্যাদা পায়নি। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ছেলেরা ফাইনালে উঠেছে চার বার, খুব কাছে গিয়েও জেতা হয়নি একবারও। এবার মেয়েদের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি জেতা তাই ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই বাংলাদেশের প্রথম কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা।
সাকিব আল হাসানরা ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দুই এশিয়া কাপ আর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার মাঠে নিদহাস কাপে ফাইনালে উঠেও পারেননি। প্রতিবারই সঙ্গী হয়েছে হতাশা। ২০১২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে কেঁদে কেঁদে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের। ২০১৮ তে প্রথমবার ফাইনালে উঠেই মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নিজেদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের ভিডিও পোস্ট করেছেন তামিম। অন্তত মেয়েরা তো ঘোচাতে পারলেন এতদিনের আক্ষেপ! আফগানিস্তানের কাছে ছেলেদের হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসার পর গুমোট হাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ঈদের আগে মেয়েদের শিরোপা জয় যেন স্বস্তির বৃষ্টি।
মালোয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যে ভারতকে হারিয়ে রোববার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ, সেই ভারতের মেয়েরা আগের সব এশিয়া কাপেই হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। এবার মেয়েদের ক্রিকেটে পরাক্রমশালী ভারতকে টুর্নামেন্ট দুইবার হারায় সালমা খাতুনের দল। গ্রুপ পর্বে ১৪১ রান তাড়া করে জেতার পর ফাইনালে ১১২ রান তাড়া করে ৩ উইকেটের জয়।
অথচ এই টুর্নামেন্টের আগে নাজেহাল অবস্থা ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে সব ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারার পর এশিয়া কাপে গিয়েও প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৬৩ রান গুটিয়ে বড় হার। মনে করা হচ্ছিল আরেকটি দুঃস্বপ্নের টুর্নামেন্ট অপেক্ষা করছে মেয়েদের জন্য। অনুমান ভুল করে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো। পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শুরু, পরে ভারতকেও একই ব্যবধানে হারানোর পর থাইল্যান্ড ও মালোয়েশিয়াকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে উঠা। ফাইনালেও শক্তিশালী সেই ভারতকে ফের ধরাশায়ী করা। টুর্নামেন্টের আগে এমন সম্ভাবনার কথা বললে হয়তো ভিমড়ি খেতেন রুমানা-সালমারা।
কিন্তু এখন সবই বাস্তব। কাগজে কলমেই টি-টোয়েন্টিতে এশিয়ার সেরা হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নিয়মিত খেলার সুযোগ না পাওয়া, ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয়শ টাকার ম্যাচ ফিসহ আরও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসা মেয়েদের ক্রিকেটে বাক বদলের হয়ত এই শুরু। মেয়েদের ক্রিকেটে সাফল্য আসে না বলে বিসিবির হাহাকার থামার এবার আশা করাই যায়। অপ্রত্যাশিত সাফল্য দেখিয়ে নিজেদের সুযোগ সুবিধার বাড়ানোর দাবিটাও যেন জোরালো করল বাংলাদেশের মেয়েরা।
Comments