মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে: সিপিজে
হুমকি, গ্রেফতার ও সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সংবাদমাধ্যমের গলা চেপে ধরছে মিয়ানমার।
গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)-এর প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ করা হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতি সামরিক জান্তাদের আচরণ আবার ফিরে এসেছে অং সান সু চির আপাত-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। ফলে, দেশটির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওপর এসেছে চরম আঘাত। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক যারা দেশটিতে কাজ করেন তারা সিপিজে-কে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সামরিক শাসন থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের শাসনের দিকে ফিরে যাওয়ার পথে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো তা থেকে যেন সরে আসছে দেশটি।”
এতে আরো বলা হয়, গণমাধ্যমকে দমন করতে উপনিবেশিক আমল ও সামরিক জান্তাদের আইনগুলোর অপব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আশা করেছিলেন, সু চি ক্ষমতায় এলে সেই আইনগুলো বাতিল বা সংশোধন করা হবে। তিনি যে শক্তিশালী গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন তার ফলে এমন আশা জাগতেই পারে যে সু চি উদারতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব দিবেন।
দেশটিতে কাজ করছেন এমন সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে। অনেক সাংবাদিক ইতোমধ্যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
হুমকির মুখে মিয়ানমার ছাড়লেন পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ইসথার তুসান
নিজের দেশ মিয়ানমারে জীবন নিরাপদ নয় পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ইসথার তুসানের। এপির এই নারী সাংবাদিক গত বছরের শেষের দিকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন যা কিনা শাসক গোষ্ঠীর কাছে স্পর্শকাতর মনে হয়েছে। কেননা, তুসান লিখতেন জাতিগত রোহিঙ্গাদের গণ-পলায়ন, রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিতর্কিত অভিযান, সমস্যা মোকাবেলায় সু চির ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে।
বৈশ্বিক শান্তি, সন্ত্রাসবাদ, অবৈধ অভিবাসন ইত্যাদি নিয়ে সু চির বক্তব্যকে তুসান ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর যে জন্যই গত নভেম্বর দেশটির সরকার চরম চাপে ফেলে দেয় সেই সাংবাদিককে। এমন অবস্থায় সু চির এক সমর্থক হত্যার হুমকি দেন তুসানকে। নাম প্রকাশের শর্তে এপির কয়েকজন সাংবাদিক সিপিজে-কে এ তথ্য দেন।
এর আগে, এক সন্ধ্যায় ইয়াঙ্গুনের শহরতলীতে তুসানের বাড়ি দেখে যায় এক অপরিচিত লোক। এরপর, বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অন্ধকারের ভেতর থেকে তাঁর নাম ধরে ডাকে। নিরাপত্তার অভাবে তুসান গত ডিসেম্বরে মিয়ানমার ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন। সম্প্রতি তিনি সিপিজে-কে জানান, তার বিশ্বাস ইয়াঙ্গুনের বাড়িতে যারা এসেছিলেন তারা সাদা পোশাকধারী পুলিশ। তারাই তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তুসান সম্পর্কে জানতে চায়।
একজন রিপোর্টার সিপিজে-কে বলেন, “তুসান মিয়ানমারে খুব শিগগির ফিরছেন না।”
Comments