শ্রীলঙ্কাকে রেকর্ড ব্যবধানে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

Bangladesh Cricket Team
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আকিলা ধনঞ্জয়ার উইকেট নেন রুবেল হোসেন। শ্রীলঙ্কার বোর্ডে তখন মাত্র ১৫৭ রান। খেলার বাকি প্রায় ১৮ ওভার। বাংলাদেশের ৩২০ রান থেকে তখন অনেকটা আলোকবর্ষ দূরে শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেয়ে মাঝমাঠে উল্লাস বাংলাদেশের।  জেতার সঙ্গে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও নিশ্চিত করল টাইগাররা। 

দায়িত্বের শেষদিকে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্পর্ক হয়ে পড়েছিল তেতো। হাথুরুসিংহের দলকে হারাতে একসঙ্গে জ্বলে উঠলেন সেই সিনিয়রাই। ব্যাটিংয়ে তামিম, সাকিব, মুশফিকের পর বল হাতে ঝাঁজ দেখিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি আর সাকিব। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের তেতে উঠার দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে লড়াই-ই করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

আগে ব্যাট করে তিন ফিফটিতে বাংলাদেশের ৩২০ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে পুরো ইনিংসে খাবি খেয়ে ডুবেছে শ্রীলঙ্কা। শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ মাশরাফির দল জিতেছে  ১৬৩  রানে বিশাল ব্যবধানে। 

জেতার কাজটা ব্যাট হাতেই করে রেখেছিলেন সাকিব-তামিমরা। বোলাররা তা দেখে গাছাড়া হননি। ব্যাটিংয়ের মতো আক্রমনাত্মক ছিল বাংলাদশের বোলিং। রান আটকানোর বদলে উইকেট নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরিতে মন দিয়েছিলেন তারা। শরীরী ভাষা ইঙ্গিত দিচ্ছিল দারুণ কিছুর। তাতে ফল মিলিছে। লঙ্কানরা ভেঙ্গে পড়েছে হুড়মুড় করে। লঙ্কানদের সব দিক দিয়ে মাইলখানেক ব্যবধানে ধসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। 

জিম্বাবুয়ে বাঁহাতি স্পিনে দুর্বল বলে ওদের বিপক্ষে বোলিং শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। শ্রীলঙ্কান টপ অর্ডারে আবার বাঁহাতিদের ছড়াছড়ি। তাই হিসাব বুঝে এবার বোলিং শুরু করেছিলেন নাসির হোসেন। দুই সমীকরণই কাজে লাগল বাংলাদেশের। সাকিবের মতো প্রথম ওভারে না হলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট নেন নাসির। তার বলে লাইন মিস করে ১ রানেই বোল্ড কুশল পেরেরা। ২ রানে প্রথম উইকেট খুইয়ে  দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেলেন কুশল মেন্ডিস আর উপুল থারাঙ্গা। এই দুজনের ৪১ রানের প্রতিরোধ ভাঙেন মাশরাফি।

দারুণ বল করতে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেট পাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন নিজের প্রথম ওভারেই। থারাঙ্গাকে তখনই আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে এলবডব্লিওর হাত থেকে বেঁচে যান অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে টানতে পারেননি দলকে, বড় করতে পারেননি ইনিংস। মাশরাফিকে মিড অফ দিয়ে উড়াতে গিয়ে ২৫ রান করে জমা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে। পরের উইকেটও যায় মাশরাফির পকেটে। এবার মেন্ডিস উড়াতে চেয়েছিলেন মাশরাফির বল। টপ এজ হয়ে তা উঠে যায় সোজা আকাশে। মিড অফ-মিড অনের মাঝামাঝি অনেকখানি দৌঁড়ে তা হাতে জমান রুবেল হোসেন। মাশরাফি তার ৮ ওভারে দিয়েছেন ২৯টি ডট বল। ৩২০ রানে লক্ষ্যে নামা চান্দিমালরা অনেকটা ওখানেই শেষ। 

বোর্ডে রান নেই,  পড়ছে উইকেটও।  ১৪তম ওভারে ৬২ রানে ৩ টপ অর্ডারকে হারিয়ে তখন কাঁপছে শ্রীলঙ্কা। রিকোয়ার রানরেট চড়া হতে হতে সাতের উপরে। চাপে থাকা লঙ্কানদের দরকার ছিল বড় জুটি, সেই সঙ্গে দ্রুতগতিতে রান। কোনটাই আসেনি। বাংলাদেশের মাপা বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকা লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা খেই হারিয়েছেন বারবার। ভড়কে যাওয়া লঙ্কানরা আর কখনো ম্যাচে ফিরতে পারেনি। 



অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে নিরোশান ডিকভেলা আরও ২৩ রান যোগ করেই মোস্তাফিজের বলে হয়েছেন কুপোকাত। আগের ম্যাচেও ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দেওয়া সব কাটার করেছিলেন ‘দ্য ফিজ’। ছন্দে ফেরার ছাপ রাখলেন এই ম্যাচেও। দারুণ এক কাটারে স্টাম্প উড়ালেন ডিকভেলার। ২০ ওভারের আগেই ৮৫ রানে চার উইকেট তুলে ততক্ষণে জয় দেখছে বাংলাদেশ। চান্দিমাল তবু জ্বালিয়ে রাখছিলেন খানিকটা আলো। দলের ১০৬ রানে মিড অফ থেকে দারুণ এক থ্রোতে তাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। পরের ওভারে বল হাতেই বাজিমাত সাকিবের।

তার পরের ওভারে পর পর দুই বলে আউট হয়ে যান অ্যাসলে গুনারত্নে আর হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। ১১৭ রানে ৭ উইকেট হারানো লঙ্কানরা তখন রীতিমতো মুখ লুকাতে ব্যস্ত।

ব্যাটসম্যানদের উপর রাগ ঝাড়তেই বোধহয় নেমেছিলেন থিসিরা পেরেরা। ১৪ বলে ২৯ রান করে দেখিয়েছেন উইকেট ছিল ব্যাট করার মতই। তাকেও ফিরিয়েছেন সাকিবই। শেষ দুই উইকেট গেছে রুবেল হোসেনের পকেটে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে গিয়ে ধীরস্থির শুরু করা তামিম ইকবাল শুরু করে দিয়েছিলেন মোমেন্টাম। মুশফিক আর সাকিব বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান বাড়িয়ে গড়েছেন ভিত। মাঝের ওভারে জুটিতে সহায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে সাব্বিরের ঝড় বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় ৩২০ রানের বিশাল সংগ্রহ।

তবে সুরাঙ্গা লাকমালের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশ হারাতে পারত উইকেট।  দুই রানে স্লিপে এনামুলের ক্যাচ ফেলে দেন কুশল মেন্ডিস। ৩৪ রানে পেরেরার বল ফের জীবন পান তিনি। এবার তার আকাশে তোলে দেওয়া ক্যাচের কাছে গিয়েও হাত ছোঁয়াতে পারেননি অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল। তবে দুইবার জীবন পেয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি এনামুল। পেরেরার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

ওদিকে তামিম শুরুটা করেছিলেন ধীরগতিতে। প্রথম ২০ রান করতেই তার লেগে যায় ৪০ বল। পরে থিতু হয়ে হাত খুলেন। মেরেছেন বড় বড় শট। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। বিপত্তি ঘটে ৮৪ রানে গিয়ে। অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার বলটা সামনে এসে পুশ করতে চেয়েছিলেন তামিম। বল তার ব্যাট ছুঁলেও মাঠের আম্পায়ার লঙ্কানদের আবেদনে সাড়া দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানকে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। ভেঙ্গে যায় সাকিব-তামিমের ৯৯ রানের জুটি।

তামিমের আউটের পরও রানের চাকা পড়েনি। সাকিবের সঙ্গে যোগ দিয়ে স্ট্রাইট রোটেট করে বলে-রানে পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছিলেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে এই দুজনের ৫৭ রানের পর চতুর্থ উইকেটেও পঞ্চাশ রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। মুশফিকের সঙ্গে ঠিক ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

ব্যাটিংয়ে যেমন বোলিংয়েও দলের সবাই রেখেছেন অবদান। ফিল্ডিং হয়েছে চোখ জুড়ানো। সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের জবাব ছিল না হাথুরুসিংহের শিষ্যদের কাছে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৩২০/৭  (৫০) (তামিম ৮৪, এনামুল ৩৫,  সাকিব ৬৭, মুশফিক ৬২ , মাহমুদউল্লাহ ২৪ , সাব্বির ২৪*, মাশরাফি ৫, নাসির ০, সাইফুদ্দিন ৬*   ; লাকমাল ০/৬০, প্রদীপ ২/৬৬, ধনঞ্জয়া ১/৪০, পেরেরা ৩/৬০ , গুনারত্নে ১/৩৮, হাসারাঙ্গা ০/৫১)

শ্রীলঙ্কা: ১৫৭/১০ (৩২.২)   (কুশল পেরেরা ১, থারাঙ্গা ২৫ , কুশল মেন্ডিস ১৯, ডিকভেলা ১৬,  চান্দিমাল  ২৮ , গুনারত্নে   ১৬, থিসিরা ২৯  , হাসারাঙ্গা ০, ধনঞ্জয়া ১৪, লাকমাল ১, প্রদীপ ০  ; নাসির  ১/২০ , মাশরাফি ২/৩০, রুবেল ২/২০, মোস্তাফিজ ১/২০, সাকিব ৩/৪৭ , সাইফুদ্দিন  ০/১৪)

ফল: বাংলাদেশ ১৬৩ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Six arrested over murder of lawyer Saiful Islam Alif: CA office

Chattagram Metropolitan Police arrested at least six people as suspects over the murder of lawyer Saiful Islam Alif, said the Chief Adviser's office this afternoon..The six were identified through video footage, said the press wing of the CA office, adding that the CMP has also detained 21

1h ago