বিপিএলে তারা কারা?
বিপিএলে এবার প্রতি দলে খেলছেন পাঁচ বিদেশি। তাদের অনেকে পরিচিত নাম, কেউ কেউ দুনিয়া জুড়ে টি-টোয়েন্টির বিখ্যাত ফেরিওয়ালা। আবার কেউ কেউ একদম অচেনা মুখ, কেউবা চলে গেছেন বাতিলের খাতায়। তবু বিপিএল এলে কদর জুটে তাদের।
সিলেটে চলছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের সঙ্গে খুলনা টাইটান্সের ম্যাচ। খুলনার একাদশের চার বিদেশির নামডাক শোনা গেলেও জোফরা আর্চারকে দেখে অনেকেরই চোখ কপালে। কাইল অ্যাবটের জায়গায় তাকে খেলানো হচ্ছে। কে তিনি? প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেল এই ক্যারিবিয়ান তরুন অলরাউন্ডার খেলার সুযোগ পাননি তার দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সিপিএলেও। খুলনার দলে আগের বছর নিকোলাস পুরানকে দেখেও অবাক হয়েছিলেন অনেকে। এবার সেই পুরান তো আছেনই, যোগ হয়েছেন আর্চার।
একই অবস্থা চিটাগাং ভাইকিংস দলে। প্রথম ম্যাচে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লুক রঙ্কি এনে দিয়েছিলেন ঝড়ো শুরু। ৮ ওভারেই বোর্ডে উঠে গিয়েছিল ৮০ রান। সেই অবস্থা থেকে ভাইকিংস করতে পারে মাত্র ১৪৩। যখন রান বাড়াতে দরকার ছিল বড় শট, তখন দুই বিদেশিই ডুবিয়েছেন তাদের। এদের একজন ইংলিশ লুইস রেইস। প্রেসবক্সে বসা সাংবাদিকরাও তাকে চিনতে পারলেন না। ইংলিশ কাউন্টিতে খেলেছেন কিন্তু প্রায় অচেনা তিনি। ইংল্যান্ডের জাতীয় পর্যায়ে কোন দলেই খেলেননি, ইংল্যান্ডের বাইরে ফ্রেঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাকেই উড়িয়ে আনা হয়েছে। এবার পাঁচ বিদেশি খেলানোর নিয়মে একজন দেশি ক্রিকেটারের জায়গা নিয়েছেন তিনি।
চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক পাকিস্তানের মিসবাহ উল হক। তার বয়স হয়ে গেছে ৪৪। এই বছর টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন সেই ২০১২ সালে। মার কাটারি ক্রিকেটে ব্যাটে বড় ঝড় তুলার সুনাম নেই তার। প্রথম ম্যাচে ১৪তম ওভারে নেমে ৬ রান করে আউট হয়েছেন, তবে ওই সময় নেমে বল নষ্ট করেছেন ১১টি। কুমিল্লার বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৯১ রান তুলেও বাকি ১০ ওভারে তাই আর মাত্র ৫২ রান যোগ করে ভাইকিংস। ওই মামুলি সংগ্রহ পাত্তায় পায়নি ভিক্টিরিয়ান্সদের কাছে।
পরের ম্যাচেও একই দশা। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে ১১২ রান করে ফেলেছিল ভাইকিংস। পরের ১০ ওভারে আর মাত্র ৫৪ রান। এবারও শ্লথ ব্যাটিংয়ের কালপ্রিট আগের দুজন। ১৬ বলে ১০ রান করে আউট হন লুইস। মিসবাহ এই ম্যাচে আর আউট হননি। মন্থর ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ২৯ করেছেন। মিসবাহ রীতিমতো অধিনায়ক হিসেবে খেললেও সুযোগ মিলেনি নাঈম ইসলাম, জুনায়েদ সিদ্দিকদের।
শ্রীলঙ্কান দিলশান মুনাবিরাও খেলছেন চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে। বিপিএলে তিনি মোটামুটি পরিচিত মুখ। তবে প্রথম সারির পারফর্মার নন। কিছুটা বোলিং, কিছুটা ব্যাটিং তবে কোনটাতেই বড় কিছু করেননি এখনো। অবশ্য খুব খারাপ একটি রেকর্ডে নাম আছে তার। বিপিএলে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড এতদিন তার একারই ছিল। সিলেট সুপার স্টার্সের হয়ে চার ওভারে দিয়েছিলেন ৫৪ রান। সিলেটেরই আরেক ফ্রেঞ্চাইজি সিলেট সিক্সার্সের কামরুল ইসলাম রাব্বি এবার ৪ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে তার সঙ্গে জুটেছেন।
এবার বিপিএলে টপ অর্ডারে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা সুযোগ পাচ্ছেন কম। ঢাকা ডায়নামাইটসের দ্বিতীয় ম্যাচে টপ অর্ডারে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সবাই ছিলেন বিদেশি। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মোসাদ্দেক হোসেন ব্যাটিং এর সুযোগ পেয়েছিলেন সাত নম্বরে। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলছেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। কুমিল্লার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ ওভারে জয়ের জন্য সিলেটের দরকার ছিল ১০ রান। আট নম্বরে নেমে এক ছয় আর এক চারে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের ম্যাচেও মেলেনি আগে নামার সুযোগ। ফের লিয়াম প্লাঙ্কেটের নিচে নামানো হয় তাকে।
দেশি ব্যাটসম্যানদের কেউ এখনো ফিফটি পাননি। রনি তালুকদার ও নাসির হোসেন দুজনেই গিয়েছিলেন কাছাকাছি। রনি প্রথম ম্যাচে ৪৭ রান করে আউট হন, সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক নাসির। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের রান না পাওয়া নিয়ে অবশ্যই পাঁচ বিদেশি খেলানোকেই দায়ি করলেন মাশরাফি মর্তুজা। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক বলেন, ‘ পাঁচ বিদেশি খেলানোয় দেশিরা আসলে উপরে ব্যাট করার সুযোগ পাচ্ছে কম। আমাদের যেমন শাহরিয়ার নাফীস নিচে ব্যাট করছে। অল্প কয়কজন ছাড়া অনেককেই নিচে খেলতে হচ্ছে। আসলে এটা তাদের জন্য কঠিন।’
Comments