যেন হারটাই নিয়তি, সিরিজ শেষ হলেই বাঁচি!

বাউন্সারে মাথা নিচু মুশফিকের। পুরো সিরিজেই বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে মাথানিচু করে। ছবি: এএফপি

বল হাতে নিলেই বেদম মার, ব্যাটিংয়ে গেলেই কুপোকাত। দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটে বলে যেখানে ছুটেছে উসাইন বোল্টের মতো, বাংলাদেশ হেঁটেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। উল্টে পড়ে খাবি খেয়েছে মাঝপথেই। এমন অসম লড়াইয়ের ফল একপেশেই হওয়ার কথা, তাই হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আবার হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। সেই ২০০৮ সালের মতো। অথচ এবারের দলকে সবাই ঢের এগিয়েই রেখেছিলেন। 

প্রথম ম্যাচে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটে হার। পরের দুটিতে ৩৫৩ ও ৩৬৯ রানের দুটি এভারেস্টের নিচে পড়ে ১০৪ ও ২০০ রানের হার।পুরো সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভোগান্তির নাম বোলিং। তা আগে হোক বা পরে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে অনায়াসে পেটালেন, মনে হলো সেরে নিচ্ছেন নেট প্র্যাক্টিস। সবই যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে, চাইলেই ব্যাট করে যেতে পারেন ইচ্ছামতো।  

টাইগার বোলারদের মধ্যে তিন ম্যাচে সবচেয়ে ভালো ইকোনমি যার, সেই সাকিব আল হাসানও রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি প্রায় ছয় করে। বুঝুন বাকিদের কি অবস্থা! কেউ সাত, কেউ সাড়ে সাত কেউ সাড়ে আট করে দিয়েছেন রান। দেখলে মনে হবে, কার থেকে কে খারাপ প্রতিযোগিতা বোধহয় তা নিয়েই।

তিন ম্যাচ থেকে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেট রুবেল হোসেনের। সাকিব, মিরাজ, তাসকিনের দুটি করে। ওদিকে প্রোটিয়াদের পাঁচ বা তারবেশি উইকেট নিয়েছেন তিনজন। চারটি করে পেয়েছেন আরও দুজন।

তিন ম্যাচেই ছিল ব্যাটিং বান্ধব পিচ। এতে টাইগার বোলারদের বল প্রোটিয়াদের কাছে ঠেকেছে ‘লারেলাপ্পা’ হিসেবে। ব্যাট হাতে যেই নেমেছেন, তারই মনে হয়েছে কিছু রান করে নেওয়ার এইত সুযোগ। তিন ম্যাচে ২৮৭ রান করেছেন কুইন্টেন ডি কক, দুই ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে এবিডি ভিলিয়ার্স করেছেন ১৯৬ রান,  হাশিম আমলার ব্যাট থেকে এসেছে ১৯৫ রান। আমলা ছাড়া বাকি দুজনের স্ট্রাইকরেট ১০০ এর উপরে, ভিলিয়ার্সের তো দেড়শ ছাড়িয়ে গেছে তা। সব মিলিয়ে পুরো সিরিজের ১০০ এর উপর স্ট্রাইক রেট রেখে রান পেয়েছেন প্রোটিয়াদের নয়জন। বাংলাদেশের কেবল একজন। তাও যিনি করেছেন সেই মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খেলেছেন মাত্র ১১টি বল।

টাইগার বোলারদের গালমন্দ সবখানেই। তবে স্কোরকার্ডে ভালো করে চোখ রাখলেই ব্যাটসম্যানদের কমজুরি অবস্থা দেখা যাচ্ছে প্রকাণ্ডভাবেই। তিন ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি ছিল ডট বল। প্রথমটিতে ৫০ ওভার খেলে ১৫৮টি, দ্বিতীয়টিতে ১৩ বল কম খেলে ১৫১টি, শেষ ওয়ানডেতে প্রায় ১০ ওভার কম ব্যাট করেও ১৫৭টি ডট বল খেলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। সিরিজ জুড়েই স্ট্রাইক রোটেট করতে না পারায় সময়ের সঙ্গেই বেড়েছে চাপ। তা সরাতে কেউ খেলতে পারেননি ঝড়ো ইনিংস। বরং রানরেট বাড়াতে তালগোল পাকানো শটে হয়েছেন কুপোকাত। কোন পরিকল্পনা তো নেইই, ইনিংস গড়ে তোলায় ছিল না বুদ্ধির ছাপ। সব ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা ভুগেছেন, কখনো টিকে থাকার চেষ্টায় , কখন রান আনতে না পারায়।

সিরিজে মুশফিকুর রহিম এক সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে করেন ১৭৮ রান। এক ফিফটিতে ইমরুল কায়েসের রান ঠিক ১০০। শেষ ম্যাচে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে সাকিব করেছেন ৯৭ রান। বাকিদের অবস্থা বলার মতই না।

ওয়ানডে জার্সি পরলেই বাংলাদেশকে পাওয়া যেত চাঙাভাবে। টেস্ট সিরিজে নাজেহাল হওয়ার পর অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক মাশরাফিও জাগাতে পারেননি দলকে।  দুর্বল শরীরী ভাষা সিরিজ জুড়েই বেরিয়ে এসেছে দৃষ্টিকটুভাবে। পাওয়া যায়নি লড়াইয়ের মনোবল, তেতে উঠার বারুদ দেখা যায়নি চোখেমুখে। ভাবটা এমন যেন হারটাই নিয়তি, সিরিজ শেষ হলেই বাঁচি! 



হোয়াইটওয়াশই হলো বাংলাদেশ 

বাংলাদেশের ইনিংস যেন ডট বলের সমাহার 

Comments

The Daily Star  | English

A father lost forever

Two-year-old Masura Islam Taskia, daughter of slain lawyer Saiful Islam Alif, remains oblivious to the tragedy that has shaken her family.

1h ago