যেন সেই পুরনো দিনের বাংলাদেশ

৭০ রানের ইনিংস খেলার পথে লিটন দাস। ছবি: এএফপি

একসময় বাংলাদেশ টেস্টে প্রায়ই ইনিংস ব্যবধানে হারত। মাঝে মাঝে একদিনে দুবারও ব্যাট করতে নামতে হতো। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে কেউ একজন দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলে বাহবা কুড়াতেন।তাতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেন সমর্থকরা। শনিবার ব্লমফন্টেইনে যেন ফিরে এল সেসব স্মৃতি। বলা ভালো দুঃসহ সব অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন শেষেই যে ইনিংস হারের সামনে বাংলাদেশ।  

দিনের শুরুতে বৃষ্টি বিড়ম্বনা। খেলা শুরু হতে দেরি। এরপর শুরু হলো প্রতীক্ষা। বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডাররা যেন চেয়ে থাকলেন ফাফ ডু প্লেসির দিকে। কখন তিনি ইনিংস ঘোষণা করেন। কখন রেহাই পাবেন তারা। লাঞ্চ বিরতির পর ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে ইনিংস ছাড়ল প্রোটিয়ারা। এরপরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার গল্প। ব্যাটসম্যানদের একের পর এক আত্মাহুতি। তেতে থাকা ওদের পেসারদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন কেবল লিটন দাস। হতাশার দ্বিতীয় দিনে প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ রান তুলে কোনোমত দিন শেষ করেছে মুশফিকুর রহিমের দল।

ব্লুমফন্টেইনে শনিবার দুদলের ব্যাটিং দেখে যেকেউ ভাবতে পারেন  ভিন্ন পিচেই বুঝি খেলা হচ্ছে। যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যান করলেন সেঞ্চুরি। সেখানেই বাংলাদেশের প্রথম চার উইকেট পড়ল ৫০ রানের ভেতর। ৬৫ রানে পড়ল ছয় উইকেট। বেগতিক অবস্থা দেখে হয়তো ব্যাট শান দিয়ে নেমেছিলেন লিটন দাস। তিনি যখন নামেন তখন কাঁপন ধরেছে বাংলাদেশ ইনিংসে। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে খেললেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। ৭৭ বলে ৭০ রানের ইনিংসে চার মেরেছেন ১৩টি। এর কোনটিই বাজে শটে নয়। সপ্তম উইকেট জুটিতে তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করলেন ৫০ রান। তার ব্যাটিং দেখে কে বলবে উইকেটে আছে কোন জুজু।

এর আগে ৫৭৩ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে  শুরুতেই দিশেহারা টপ অর্ডার। তামিম নেই তাই ওপেনিংয়ে জুটি বেঁধেছিলেন ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। চোট থেকে ফেরা সৌম্যের কাছে দাবি ছিল বড় কিছুর। দুই চারে ৯ রান করে দায়িত্ব সারেন তিনি। রাবাদার লেগ স্টাম্প মুখি বল কিনা লেগ স্টাম্প থেকে সরে খেলতে গেলেন!  প্রায় একই ভুল মুমিনুলের। প্রথম টেস্টে একটা ফিফটি পেয়েছিলেন। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারতেন। পরিস্থিতিও তাকিয়ে ছিল তার ব্যাটের দিকে। চার রান করেই লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়া অলিভিয়ারের বলে উইকেটের পেছনে তুলে দিলেন ক্যাচ।

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের উইকেটও পেয়েছেন অলিভিয়ার। তবে তাতে সবচেয়ে বড় অবদান টেম্বা বাভুমার। গালিতে লাফিয়ে হাফ চান্সকে ক্যাচ বানিয়েছেন প্রোটিয়াদের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। টাইগার অধিনায়ক ফিরেছেন ৭ রান করে। ৩৬ রানে তিন উইকেট হারানো দলকে দিশা দিতে পারেননি  আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চার রান করে ওয়েইন পারনেলের বলে তিনিও ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।

২৬ রান করা ইমরুল কায়েস বিরতির পর এসেই পীড়াদায়ক খোঁচায় আউট। সাব্বির রহমান রাবাদাকে খেলতে গেলেন লফটেড ড্রাইভ। দৃষ্টিকটু এই শট গেল এক্সট্রা কাভারের ফিল্ডারের হাতে। তাইজুল ইসলাম ৩৮ বলে ১২ রান করে বোল্ড হয়েছেন। তবে বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে টিকে ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো লজ্জা দিয়েছেন তিনি। ৭০ রান করে লিটন দাস পেটাতে গিয়ে আউট হয়েছেন। টেল এন্ডারদের নিয়ে রান যত সম্ভব রান বাড়ানোর তাড়া ছিল তার। টেল এন্ডাররাও দলকে দেড়শ পার করতে পারেননি।

দ্বিতীয় দিনই দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামতে হয়েছে। তৃতীয় দিনে হাতে থাকছে ১০ উইকেট। কিন্তু ইনিংস হার এড়াতেই প্রয়োজন এখনো ৪১৯ রান। দলের হাল বিবেচনায় তা যেন অনেকটাই অসম্ভব।বরং তিন দিনে ইনিংস হারের ভুলে যাওয়া স্মৃতি ফের উঠে আসার উপক্রম। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (দ্বিতীয় দিন শেষে)

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৪২৮/৩ (মার্কারাম ১৪৩, এলগার ১১৩, আমলা ৮৯*, ডু প্লেসি ৬২*; শুভাশিস ২/৮৫, রুবেল ১/৯১)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪২.৫ ওভারে ১৪৭ (ইমরুল ২৬, সৌম্য ৯, মুমিনুল ৪, মুশফিক ৭, মাহমুদউল্লাহ ৪, লিটন ৭০, সাব্বির ০, তাইজুল ১২, রুবেল ১০, মুস্তাফিজ ০, শুভাশিস ২*; রাবাদা ৫/৩৩, অলিভিয়ের ৩/৪০, পার্নেল ১/৩৬, মহারাজ ১/৭, ফেলুকওয়ায়ো ০/২৮)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১.২ ওভারে ৭/০ (ইমরুল ৬*, সৌম্য ১*; বারাদা ০/৬, অলিভিয়ের ০/১)



টস: বাংলাদেশ

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Extend tenure of Tk 200 crore stockmarket fund, BSEC urges BB

The commission also wants the fund dedicated for each bank to be increased to Tk 300 crore

32m ago