‘বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে মিয়ানমার’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খানচন সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে প্রবেশ করছে। ছবিটি গত ৫ সেপ্টেমবর তোলা। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গত তিনি দিন ধরে তারা এই কাজ করছে। ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের দুটি সূত্র থেকে ল্যান্ড মাইন বসানোর বিষয়টি জানতে পেরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা বলেছেন, নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন ফিরে যেতে না পারে সে কারণেই ল্যান্ড মাইন বসানো হতে পারে।

সূত্রগুলো বলেছে, সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বসানোর বিরুদ্ধে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ। আর বিষয়টির সংবেদনশীলতার বিবেচনায় নিজেদের পরিচয়ও প্রকাশ করতে চায়নি ওই সূত্রগুলো। তবে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা অবগত রয়েছেন।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকে রাজ্যটিতে অন্তত ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন যা আরেকটি মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে।

সীমানা পিলারের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি ভূমি মাইন বসাচ্ছে মিয়ানমার, এমন খবর জানায় একটি সূত্র। আর দুটি সূত্রই বলেছে, সীমান্তের কাছে মাইন বসানোর খবরটি গোপন সংবাদদাতাদের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারে বাংলাদেশ। মাইন বসানোর ছবিও রয়েছে ঢাকার কাছে।

একটি সূত্র বলেছে, “তিন থেকে চারটি দলে বিভক্ত লোকদের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মাটিতে কিছু পুঁততে দেখেছে বাংলাদেশের বাহিনী। পরে আমাদের চররা জানায় ওই লোকেরা সেখানে ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছিল।”

তবে যারা মাইন বসাচ্ছিল তাদের সামরিক পোশাকে থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি সূত্রগুলো। কিন্তু তারা যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নয় সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিল তারা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মকর্তা মনজুরুল হাসান খান মঙ্গলবার সীমান্তে মিয়ানমারের দিকে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছিলেন রয়টার্সকে। তখন থেকেই ল্যান্ড মাইন বসানোর ব্যাপারে সন্দেহ পাকাপোক্ত হয়।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণে একটি ছেলের পা উড়ে যায়। তাকে বাংলাদেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই ধরনের বিস্ফোরণে আরেকটি ছেলে আহত হয়। ধারণা করা হচ্ছে তারা মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছে।

গত সোমবার একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্তের ওই বিস্ফোরণস্থলের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মাটিতে পুঁতে রাখা চার ইঞ্চি পরিধির একটি ধাতব চাকতির ছবি তুলে এনেছেন। সেখানে এরকম আরো দুটি ডিভাইস তিনি দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এগুলো ল্যান্ড মাইন হতে পারে।

সোমবার দুপুর আড়াইটায় বিস্ফোরণের ঠিক আগে ওই এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন দুজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। তবে মাটিতে পুঁতে রাখা ওই যন্ত্রগুলো ল্যান্ড মাইন কিংবা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই সেগুলো স্থাপন করেছে এমন তথ্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।

সীমান্তের কাছে বিস্ফোরণ নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও মুখ খুলছে না। দেশটির নেত্রী অং সাং সু চি’র মুখপাত্র জাও তেও এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। সোমবার তিনি রয়টার্সকে বলেছিলেন, বিস্ফোরণ কোথায় হয়েছে, কারা সেখানে গিয়েছিল ও কে ল্যান্ড মাইন বসিয়েছে এই প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া দরকার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সন্ত্রাসীরা মাইন বসায়নি এটাই বা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়?

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনও এ ব্যাপারে রয়টার্সের কাছে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। সূত্রগুলো বলেছে, যা কিছু হচ্ছে তার সবই মিয়ানমারের ভেতর। বাংলাদেশের মাটিতে তারা কিছু করছে না। কিন্তু এর আগে সীমান্তের কাছে মিয়ানমারকে কখনো মাইন বসাতে দেখা যায়নি।

সারা পৃথিবীতে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মাইন বসানো রয়েছে মিয়ানমারও তার মধ্যে রয়েছে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে যেসব দেশ স্বাক্ষর করেনি মিয়ানমার তার মধ্যে একটি।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

2h ago