ঢাকায় বিআরটিসির গাড়ি দুর্ঘটনায়, প্রক্সি গাড়ি ঘিরে যাত্রীদের বিক্ষোভ কলকাতায়
ঢাকায় দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির প্রক্সি দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহনের লিজ নেওয়া শ্যামলী পরিবহনের গাড়ি ঘিরে ঢাকাগামী যাত্রীরা তুমুল বিক্ষোভ দেখালেন।
শনিবার (২২ জুলাই) কলকাতা থেকে আনুমানিক ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটারের মধ্যে এই ঘটনায় যাত্রী ও কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটের যাত্রীবাহী সৌহার্দ্য পরিবহনের (বিআরটিসি) নির্ধারিত গাড়ি কলকাতায় না পৌঁছানোয় সৌহার্দ্য পরিবহনের (পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন) বিকল্প গাড়িতে পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির যাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
কলকাতার করুণাময়ী আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের (বিআরটিসির) গাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল ৪৫ জন যাত্রীর। কিন্তু শুক্রবার ঢাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় গাড়িটি কলকাতায় নির্ধারিত সময় এসে পৌঁছাতে পারেনি।
সৌহার্দ্য সিরিজের পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগমের একটি বিকল্প বাসে করে ওই যাত্রীদের শনিবার সকালে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু ঢাকাগামী যাত্রীরা সবাই ওই কাটা সার্ভিসে যেতে অস্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, সরাসরি বাসের টিকিটের টাকা তাঁরা দিয়েছেন, কিন্তু তাঁরা কেন বাস বদল করে বেনাপোল থেকে আবার নতুন একটি বাসে উঠবেন। যদিও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে যাত্রীরা ওই বাসে চড়ে রওনা হন। তবে মাঝপথে হাবড়া এলাকায় এসে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এক পর্যায়ে চালক ও সুপারভাইজারকে আটক করে হাবড়া থানায় যান উত্তেজিত যাত্রীরা। সেখানে শ্যামলী পরিবহনের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন কয়েকজন যাত্রী।
হাবড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৈনাখ ব্যানার্জি জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক হওয়ায় আমরা দুই পক্ষকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সেই পরামর্শ মেনেই কিছু সময়ের মধ্যে বাসটি যাত্রীদের নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ভূতল নিগমের লিজ পাওয়া শ্যামলী পরিবহনের কর্ণধার অবণী ঘোষ এই প্রতিবেদককে জানান, “পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝির ফল। ঢাকা থেকে যে গাড়িটি আসার কথা ছিল, সেই বিআরটিসির গাড়িটি দুর্ঘটনার জন্য কলকাতায় এসে পৌঁছায়নি। যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগম বিকল্প একটি ভলবো বাসে যাত্রীদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি গাড়ির জন্য আন্তর্জাতিক রুট পারমিটের প্রয়োজন হয়, শনিবারের ঢাকার গাড়িটি যেহেতু কলকাতা থেকে যাত্রী নিয়ে যেতে পারেনি, তাই কোনোভাবেই আমরা কলকাতার কোনও গাড়িতে যাত্রীদের সরাসরি সীমান্ত অতিক্রম করে নিয়ে যেতে পারতাম না। কারণ সীমান্ত অতিক্রম করার বৈধতা ছিল শুধুমাত্র ঢাকার বিআরটিসির ওই বাসের। যে বাসটি কলকাতা পৌঁছাতেই পারেনি।”
শ্যামলী পরিবহনের ঢাকাগামী যাত্রী জসিম আখতার জানান, “কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি বাসের জন্য আমরা টিকিট কেটেছিলাম। এর জন্য ভাড়াও নিয়েছে দেড় হাজার রুপি। তবে কেন আমাদের পেট্রাপোল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে?”
শ্যামলী পরিবহনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যাত্রীদের পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়, ঢাকা পর্যন্তই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের পেট্রাপোল সীমান্তে বাস বদল করে বেনাপোল থেকে নতুন বাসে উঠতে হচ্ছে। বাস বদলে যাত্রীদের হয়রানির জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটের দুই দেশের সৌহার্দ পরিবহনের সংশ্লিষ্টরা।
Comments