ভালোবাসা থাকে, তবে অনুভূতি পাল্টে যায়: মিথিলা

mithila
অভিনেত্রী-মডেল-কণ্ঠশিল্পী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ছবি: স্টার

“নিজেদের সম্পর্ক সুন্দর রাখতে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো বন্ধুত্ব। সেই সময় ভালোবাসা আর থাকে না তা আমি বলব না, কিন্তু তা একটা অন্য লেভেলে চলে যায়। এই লেভেল পরিবর্তনের কারণে ভালোবাসাটা আপনি আর শুরুতে যেমন অনুভব করতেন, তেমন অনুভব করতে পারবেন না। তাকে দেখলেই শিহরণ জাগবে না। তবে একটা ভালো লাগা তো কাজ করেই, যার অনুভূতিটা হয়তো একটু ভিন্ন রকমের হয়।”

গত মার্চে ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বামী-স্ত্রীর “পারস্পরিক সম্পর্ক” নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী-মডেল-কণ্ঠশিল্পী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা।

ভক্তরা এতক্ষণে জেনে গেছেন তাঁদের প্রিয় তারকা জুটি তাহসান-মিথিলা হাঁটছেন বিবাহ-বিচ্ছেদের পথে। তাঁদের বিয়ের ১১ বছর পর এলো এমন ঘোষণা। এমন সময় মিথিলার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সম্প্রতি, দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া মিথিলার একটি একান্ত সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো।

মিথিলা মনে করেন, “একটা সম্পর্কের শুরুতে পরস্পরের প্রতি প্রেম আর আকর্ষণ থাকে। দীর্ঘ সময়ের সম্পর্কে সেই আকর্ষণটা আর থাকে না। তার সঙ্গে আমার দেখা করতেই হবে, কথা বলতেই হবে এমন অনুভূতিগুলো কমে যায়। এক ছাদের নিচে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে দু’জন দু’জনের অস্থিমজ্জা সব কিছুই জেনে যায়। তখন আকর্ষণ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন্যাল ডেভেলপমেন্ট থেকে আরলি চাইল্ডহুড বিষয়ে পড়া মিথিলার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল। গত বছরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তনে মেয়ে আইরাকে সঙ্গে নিয়েই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক “হাউসফুল”-খ্যাত এই অভিনেত্রী।

আরও পড়ুন: আলাদা হয়ে যাচ্ছেন তাহসান-মিথিলা

নারীর ক্ষমতায়ণ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে মিথিলার ভাবনা, “মেয়েদেরকে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের ভেতরেই এমন চিন্তা থাকা জরুরি যে একে অপরের পরিবারকে ভালোবাসবে এবং সম্মান করবে। দু’জনের ভেতরেই এই চিন্তা না এলে তো আর হবে না।”

“সবাই চিন্তা করে যে মেয়েটা যেহেতু ছেলের বাড়িতে গিয়ে উঠবে সেজন্য সেটাকে নিজের বাড়ি বলেই মনে করবে। ছেলের বাবা-মাকে মেয়েটা খুবই সম্মান করবে কিন্তু ছেলেটার বেলায় মেয়ের বাবা-মাকে সেই সম্মান না করলেও চলবে। এখান থেকেই বৈষম্যের শুরু হচ্ছে”, বলে তিনি যোগ করেন।

পড়াশোনা, সংসার, সন্তান, ক্যারিয়ার সব এক সঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া মিথিলার আগ্রহ অনেক বিষয়ে। বিজ্ঞাপন দিয়ে মিডিয়া জগতে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে অভিনয়ে আসা মিথিলা বলেন, “আমার গানের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। গানটা আমি ঠিকমতো করতে পারিনি। যার কারণে আমার একক কোনো অ্যালবাম নেই। আমার যখন বিয়ে হয় তখন বয়স ২৩ বছর। বিয়ের পর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করেছি। চাকরিও করেছি। এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াতে কাজ করার জন্যও সময় বের করেছি।”

চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল পাওয়া মিথিলা তাঁর নেতিবাচক আবেগগুলোকে ইতিবাচক করে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেন। তাঁর ভাষ্য, “চাপের মধ্যে থেকে কাজ করা আমি উপভোগ করি। যার কারণে কোনো অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন আমার খুব ভালো লাগে। এমন চাপের কারণে আমি অন্য সবকিছু থেকে নিজের কনসেন্ট্রেশন সরিয়ে শুধু ওই কাজটাই মনোযোগ দিয়ে করি। ইউনিভার্সিটিতে আমার ফ্যাকাল্টিরা কোনোদিন আমি ডেড লাইন মিস করেছি তা বলতে পারবে না। চেষ্টা করি ডেডলাইনের আগে কাজ জমা দিতে, এমনকি এটা আমার অফিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”

নারীর ক্ষমতায়ণ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে মিথিলার মত, “বাংলাদেশের মেয়েদের অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যক্তিগত সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের এখনো অনেক অনেক দূর যেতে হবে নারী-পুরুষের সমতার জন্য। এখনো আমরা যে সমাজে আছি সেখানে নারীদের কত ধরনের সমস্যা আছে, নারীরা কতটা পিছিয়ে আছে তা একেবারে সবারই চোখের সামনে।”

মিথিলার প্রত্যাশা নারী-পুরুষের সমতার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ হোক। তাঁর এই স্বপ্ন সফল হোক – এমন শুভকামনাই ভক্তদের।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাফি হোসেন

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

8h ago