ঐতিহ্য ও কৌশল ধরে রেখে চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে সমুদ্রগামী কাঠের নৌকা

মধ্যযুগে চট্টগ্রাম ছিল বিশ্বের কাঠের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে তৈরি কাঠের জাহাজ এক সময় রপ্তানি হতো তুরস্ক, মিশর এমনকি ইউরোপের দেশ জার্মানিতেও। তবে সময়ের সাথে লোহার জাহাজ কাঠের জাহাজের স্থান দখল করে নিলে চট্টগ্রামের এ শিল্প ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে হারিয়ে যায়।

তবে চট্টগ্রামের সমুদ্রগামী মাছ-ধরার বড় নৌকাগুলো ছোট পরিসরে সে নির্মাণ শিল্পের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন।

কর্ণফুলীর তীরে রাজাখালী এলাকায় এখন চলছে কাঠের বড় নৌকা তৈরির কর্মযজ্ঞ। চট্টগ্রামের বিখ্যাত জাহাজ কারিগরদের মত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও নকশা ছাড়াই কেবল মাত্র আন্দাজের উপর ভিত্তি করে নৌকার মিস্ত্রীরা বিশালাকৃতির সমুদ্রগামী মাছধরা নৌকা তৈরি করেন। তবে এখনকার নৌকাগুলোর কলেবর আগে নির্মিত জাহাজের অর্ধেক। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট ও প্রস্থে প্রায় ১৫ ফুট। আগে এক একটি কাঠের জাহাজ দৈর্ঘ্যে ছিল ৮০ ফুট আর প্রস্থে ৪০ ফুট। তখন কর্ণফুলী নদীর তীরে ষোলশহর থেকে পতেঙ্গার মোহনা পর্যন্ত চলত কাঠের জাহাজ নির্মাণের কাজ। হাতুড়ী-বাটালের টুকটাক শব্দে মুখরিত থাকত নদীর তীর।

চট্টগ্রামের ইতিহাস গবেষক আব্দুল হক চৌধুরী তার বন্দর শহর চট্টগ্রাম গ্রন্থে চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন ১৮১৮ সালে জার্মান সরকার চট্টগ্রাম থেকে একটি কাঠের জাহাজ নির্মাণ করিয়ে নেয়। জার্মানিতে নিয়ে গিয়ে এর নাম দেওয়া হয় ডয়চল্যান্ড ফ্রিগেট। বর্তমানে সেটি জার্মানির ব্রেমাহাফেন শিপ বিল্ডিং মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

ইউরোপের ভ্রমণকারী সিজার ফ্রেডারিক ১৫৬৭ সালে চট্টগ্রাম আসেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী বছরে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে রপ্তানি হতো। তুরস্ক, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি দেশে যেতো সেগুলো। তুরস্কের সুলতানও মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়ায় তৈরি জাহাজের চেয়ে চট্টগ্রামে কাঠের তৈরি জাহাজ পছন্দ করতেন। তাই তুরস্কের সুলতান ১৩টি জাহাজের একটি নৌবহর বানিয়ে নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম থেকে। ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় ছিল।

তবে সময়ের সাথে সাথে উন্নত প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি চট্টগ্রামের কাঠের জাহাজ শিল্প। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইঞ্জিন চালিত লোহার জাহাজের প্রচলনের সাথে সাথে হারিয়ে যায় এই বিখ্যাত শিল্প।

তবে বড় আকৃতির সমুদ্রগামী মাছধরা নৌকা যেন সে ঐতিহ্য ও নির্মাণ কৌশল ধরে রেখেছে।

Click here to read the English version of this news

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago