অরোরার সঙ্গে সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে থাকাকালীন একজন বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম ইউরোপে নাকি নর্দান লাইট দেখতে পাওয়া যায়। ইন্টারনেটের বদৌলতে ছবিও দেখেছিলাম বেশ কিছু। সেই থেকেই আগ্রহের সূত্রপাত। খুব আগ্রহ ছিল এটা আসলে কেমন দেখতে, ছবির মতো আলো কি বাস্তবেই আকাশ থেকে এভাবে নেমে আসে? এসব প্রশ্ন ছিলই। গত বছরে ফিনল্যান্ডের পরিচিত এক ভাই তার দলবল নিয়ে ফিনল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশে গিয়েছিলেন এই অরোরা দেখার সন্ধানে। তাদের তোলা ছবিতে প্রথম দেখা সবুজ আলো মানে নর্দান লাইট। যখন ফিনল্যান্ডে মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পেলাম, তখন আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। কারণ নর্দান লাইট ফিনল্যান্ড থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখতে পাওয়া যায়। মন বলতে লাগল এবার আমি ছবিতে নয়, নিজের চোখে সবুজ আলো দেখব।

এরপর ফিনল্যান্ড আসা। অনেক দিন পার হয়ে গেলেও নর্দান লাইটের দেখা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ একদিন  আমি রান্না করছিলাম, তখন আমার ফ্ল্যাটমেট সিনাহ জানাল, নর্দান লাইট দেখা যাচ্ছে এবং আমাকে বলল, আমি দেখতে যেতে চাই কিনা! আমি রাজি হয়ে গেলাম একবাক্যে। সে বলল, ‘চলো আমাদের সামনের লেকে গিয়ে দেখে আসি’। আমরা লেকে গেলাম এবং সেই অদ্ভুত সুন্দর নর্দান লাইট দেখলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! আমি কী সত্যিই সবুজ আলোর এই অসাধারণ বিচ্ছুরণ নিজের চোখে দেখছি! কিন্তু আমার আশা মিটল না, কারণ যখন দেখতে গিয়েছিলাম তখনই অনেক হালকা হয়ে গেয়েছিল অরোরার রঙ।

দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস এলো। আমার প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে তখন। বেশ অবসর সময় কাটছে। হঠাৎ ফেসবুকে দেখলাম ফয়সাল হাসান ভাই ওলুতে আসছেন বেড়াতে। আমরা পূর্বপরিচিত ফেসবুকের কল্যাণে। তার তোলা ছবির আমি একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই ভাবলাম ওনার সঙ্গে দেখা করি। যেই ভাবা সেই কাজ, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বললাম, ভাই আপনি ওলুতে আছেন? আমার বাসায় একদিন আসেন, দেখা হোক। তিনি বললেন, আপু আমি তো আমার শ্বশুরবাড়ি এসেছি, আমি সময় পেলে আপনার সঙ্গে দেখা করে যাব।

এর দু’দিন পর তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। দিনটা ছিল ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬। ফয়সাল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো আমার ফ্ল্যাটেই। কথা আর আড্ডার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ উনি বললেন, আপু এখানে খোলা জায়গা আছে? অরোরা দেখা যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী করে  বুঝলেন! তিনি বললেন আমি স্কাই ক্যামেরায় দেখতে পাচ্ছি অরোরা দেখা যাচ্ছে।

আমাদের তৈরি হতে বলে ফয়সাল ভাই বাইরে গিয়ে দেখছিলেন অবস্থা। আমি তৈরি হয়ে বাইরে গিয়ে যা দেখলাম তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একটা সবুজ আলো আকাশে একপাশ থেকে অন্যপাশে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমি নিজের চোখে মুভিং অরোরা দেখছি, তাও আমার বাসার কাছে! ভুলে ক্যামেরা বাসায় রেখে আসায় খুব আফসোস হচ্ছিল, তাই মোবাইল দিয়ে আলোকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ভালো আসছিল না স্বাভাবিকভাবেই। এরপর আমরা আমার বাসার পাশের একটা লেকে গেলাম অরোরা দেখার জন্য। ওখানে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চলমান আলো দেখলাম। মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গ থেকে ঐশ্বরিক আলো এসে আমাদের অভিবাদন জানাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল যেন অনন্তকাল ধরে এই আলোর খেলা দেখতে থাকি। অনেকক্ষণ এই আলোর খেলা উপভোগ করে ধন্যবাদ জানালাম অরোরা দেখার প্রধান উদ্যোক্তা ফয়সাল হাসান ভাইকে। তিনি আমার এবং সোনিয়া ভাবির ছবি তুলে দিলেন অরোরা দেবীর সঙ্গে। দীর্ঘ এক বছর পর আমার স্বপ্ন এবং ইচ্ছা বাস্তব রূপ পেল। সেদিন যে খুশি আমি হয়েছিলাম তার তুলনা অন্য কিছুর সঙ্গে করা সম্ভব না কোনোভাবেই।

ছবি : ফয়সাল হাসান 

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago