স্টার ওমেন

নুসরাত ফারিয়া

নুসরাত ফারিয়া

অভিনয় শিল্পী

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন- এমন শব্দ শুধু নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে লেখা সম্ভব। তার সঙ্গে যায় বিষয়টা। শো-বিজ মিডিয়ায় তার অবস্থান ঈর্ষণীয়। অল্প সময়ে মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছেন। যা বিশ্বাস করেন অকপটে ভাগাভাগি করে নেন সবকিছু।

নুসরাত ফারিয়া প্রথম অভিনয় করেন যৌথ প্রযোজিত সিনেমা ‘আশিকী’তে। বিপরীতে ছিলেন কলকাতার অঙ্কুশ। ছবিটি  দুই বাংলায় প্রশংসিত হয়েছে। ‘আশিকী’ সিনেমার গানগুলোতে নুসরাত ফারিয়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি চমকে দিয়েছে দর্শকদের। সেই চমকে যাওয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরপর অভিনয় করেন ‘হিরো ৪২০’ নামের সিনেমায়। অন্য নায়িকা ছিলেন কলকাতার রিয়া সেন। ফারিয়ার বিপরীতে ছিলেন ওম। ছবিটি ব্যবসাসফলতা না পেলেও নুসরাত ফারিয়া ছিলেন আলোচনায়।

 যৌথ প্রযোজিত আরেকটি সিনেমা ‘বাদশা দ্য ডন’ যেমন আলোচনায় ছিল, তেমন ব্যবসাসফলতা পেয়েছে ব্যাপক। এই সিনেমায় ছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক জিৎ। দু’জনকেই গ্রহণ করেছে দর্শকরা। দুই বাংলাতেই ‘বাদশা দ্য ডন’ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। জিৎ-এর সঙ্গে কলকাতার ‘বস-২’-তে অভিনয় করছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এর শ্যুটিং শুরু হবে। ‘বস-২’-তে একেবারে নতুন লুকে দেখা যাবে তাকে- আনন্দধারার সঙ্গে একান্ত আলাপে এমনই জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘প্রেমী ও প্রেমী’ নামের নিটোল ভালোবাসার ছবি। আরিফিন শুভর সঙ্গে তার রসায়ন পছন্দ করেছে দর্শক।  অভিনেত্রী হিসেবেও জায়গা শক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। শ্যুটিং করছেন ‘ধ্যাততেরেকী’ নামের আরেকটি সিনেমায়। বিপরীতে রয়েছেন আরিফিন শুভ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় মুখ নুসরাত ফারিয়া। প্রায় কোটির কাছে তার ফ্যান-ফলোয়ার। এমন একজন স্মার্ট নায়িকা বাংলা সিনেমায় বড় বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।

নাবিলা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

নাবিলা

উপস্থাপক ও অভিনয় শিল্পী

প্রথমেই বাজিমাত। দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছেন সবাই। নাম তার মাসুমা রহমান নাবিলা। অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় নাবিলার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে সব শ্রেণির দর্শকের কাছে। সাবলীল অভিনয়ে মন ছুঁয়ে গেছে সবার। অনেকেই নাবিলার সঙ্গে খুঁজে পেয়েছেন মুম্বাইয়ের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী জিনাত আমানের।

‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় পাশের বাড়ির একজন সাধারণ মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন শিক্ষিত, সৃজনশীল মানুষ- সেটা তিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পর্দায়। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে সাবলীল অভিনয় দেখে কারো বলার সাধ্য ছিল না এটাই তার প্রথম সিনেমা। আয়নাবাজি সিনেমার হৃদি হয়ে উঠেছে আমাদের চেনা চরিত্র। যাকে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চোখে পড়ে এই যান্ত্রিক শহরে। অনেকদিন পর সব শ্রেণির মানুষ সিনেমা হলে ভিড় করেছিল হৃদি আর আয়না ম্যাজিক দেখার জন্য। দর্শকদের মনে অনেকদিন গেঁথে থাকবে নাবিলা ওরফে হৃদি। সবার জীবনে এমন সুযোগ আসে না।  নাবিলা সেই স্বাদটা গ্রহণ করেছেন। একটা সিনেমা করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।

নতুন আর কোনো সিনেমার খবর না থাকলেও উপস্থাপনা করছেন নিয়মিত। উপস্থাপনায় আলাদা করে নিজেকে চিনিয়েছেন অনেক আগেই। এভাবেই কাজ করে যেতে চান। নাবিলা বলেন, আমি অল্প সময়ের জন্য কিছুই করতে চাই না। সেটা সিনেমা হোক কিংবা উপস্থাপনা। বেছে বেছে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ভালো কাজ করতে চাই আজীবন। নাবিলা বর্তমানে ‘এক ডিশ দুই কুক’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া

মডেল ও অভিনয় শিল্পী

বাংলাদেশি হয়ে বড় বেশি আন্তর্জাতিক জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। তার নামটা এখন বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। মডেলিংয়ে পিয়ার নামটা আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশের একমাত্র মডেল যার এত আন্তর্জাতিক আনাগোনা। ভোগ ম্যাগাজিনের মডেল হয়েছেন ভারতীয় সংস্করণে, যা অনেক কিছু যোগ করেছে পিয়ার ক্যারিয়ারে। পিয়া বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো লাগার, পাওয়ার আর কী থাকতে পারে একজন মডেল হিসেবে? আমাদের পথ ধরে নতুন প্রজন্মের মডেলরা তাদের স্বপ্নের পথে সহজে হাঁটতে পারবে। পথটা তাদের চেনা হবে।’

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া আত্মবিশ্বাসী একজন। যে কাজটা করেন তা জেনে-বুঝে করার চেষ্টা করেন। না বুঝে কোনো ধরনের কাজই করেন না। এই বোঝাপড়া তাকে নিয়ে এসেছে অনেকদূর। সেই কারণে মডেলিংয়ের শীর্ষে রয়েছে তার নাম।

পিয়ার জন্ম খুলনায়। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ২০০৭ সালে এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ‘মিস বাংলাদেশ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতঃপর শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটি’ প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জন করেন। কোরিয়ার লাল গালিচায় উড়িয়েছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।

২০১৩ সালে মিসরের রেড মি এলগোয়ানেতে বিভিন্ন দেশের  টপ মডেলদের সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটেন। বিকিনি পরে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পিয়া বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কাজ করতে গেলে এমন করতে হয়। এখানে খারাপ কিছু তো দেখিনি।’ রেদোয়ান রনির ‘চোরাবালি’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘আবার হাসিমুখ’ গানের মডেল হিসেবে দেখা গেছে তাকে। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখানেও ভালো কিছু করার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিছুদিন আগে নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে ট্রেসমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এটাও একটা বড় অর্জন পিয়ার ক্যারিয়ারে। ধাপে ধাপে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি।

ঐশী ফাতিমা তুজ জোহরা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

ঐশী ফাতিমা তুজ জোহরা

কণ্ঠশিল্পী

নতুন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি নাম ঐশী। ইতোমধ্যে তার কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের। বেশ কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। শুধু অ্যালবামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে। এরই মধ্যে বেশ কিছু সিনেমার প্লেব্যাক করেছেন। সব মাধ্যমেই একটু একটু করে জ্বলে উঠছেন। এমনি করেই সুরের জোছনা ছড়িয়ে যেতে চান।

ঐশীর গাওয়া ‘দিল কি দয়া হয় না’ গানটার সঙ্গে প্রথম শ্রোতাদের যোগসূত্র হয়। অন্য অনেক কণ্ঠশিল্পী এই গানটা কণ্ঠে ধারণ করলেও ঐশীর কণ্ঠে নতুন একটা মাত্রা পায়। ফোক আর রকের ফিউশনে শ্রোতাদের কাছাকাছি পৌঁছে যান খুব সহজে।

ঐশীর জন্ম নোয়াখালীতে। আবদুল মান্নান ও নাসিমা আখতারের সন্তান। গানের পেছনে রয়েছে তাদের অসীম উদারতা। ছায়া হয়ে সারাক্ষণ সঙ্গী থাকেন তারা। নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পাস করেছেন। বর্তমানে এমএইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্স করছেন। ডাক্তার হয়ে মানুষের আরো কাছাকাছি যেতে চান।

মায়ের কাছে গানের হাতেখড়ি হলেও গান শিখেছেন রংপুর শিশু একাডেমিতে। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কচিকাঁচার মেলার শিক্ষক মো. শরীফের কাছে গান শিখেছেন। ২০০৮ সাল থেকে এখনো গান শিখছেন হাফিজউদ্দিন বাহারের কাছে।

হৃদয় খানের ‘হৃদয় মিক্স-৩’ অ্যালবামের গান গেয়ে অডিওতে আত্মপ্রকাশ। এরপর বেশকিছু মিশ্র অ্যালবামে গান করেন। ২০১৫ সালে ইমরানের সুর ও সংগীতে ‘ঐশী এক্সপ্রেস’ অ্যালবামের মধ্যে শুভসূচনা হয়। অ্যালবামের ‘তুমি চোখ মেলে তাকালে’ গানটি শ্রোতারা ভালোভাবে গ্রহণ করে। এরপর বেলাল খানের সুরে ‘মায়া’ নামের আরেকটি অ্যালবামে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের বেশ কয়েকটি গান শ্রোতারা গ্রহণ করে। নাজির মাহমুদের সুরে ‘হাওয়া’ শিরোনামের একটি গান বেশ আলোচনায় রয়েছে। গানের পাশাপাশি ছবি আঁকা, আবৃত্তির প্রতি রয়েছে ভালোলাগা। ঐশীর পুরো নাম ঐশী ফাতিমা তুজ জোহরা।

শারমিন সুলতানা সুমি। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

শারমিন সুলতানা সুমি

কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকবি

চিরকুট ব্যান্ডের কথা মনে হলেই বড় গোল টিপের একজনের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সুমি নামেই যার সবচেয়ে বেশি পরিচিতি। পুরো নাম শারমিন সুলতানা সুমি। গান লেখেন, নিজেও গান করেন। চিরকুট ব্যান্ডের শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো তার লেখা। শুধু চিরকুট ব্যান্ডের নয়, দেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গান লিখেছেন। খুলনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে জড়িয়ে যান সবকিছুর সঙ্গে। গত বছরের আলোচিত সিনেমা ‘আয়নাবাজি’র ‘দুনিয়া’ গানটি লিখেছেন। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছে চিরকুট। গান লিখেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ সিনেমায়। তন্ময় তানসেনের ‘পদ্ম পাতার জল’ সিনেমাতেও লিখেছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আলোচিত সিনেমা ‘ডুব’-এ থাকছে তার গান। শব্দ আর সুরের মায়াজালে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। চিরকুট ব্যান্ডের বেশকিছু গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- সাজনা, কাটাকুটি, বন্ধু, আমি জানি না, দয়াল, ঘরে ফেরা। তার মধ্যে বেশিরভাগ গান শারমিন সুলতানা সুমির লেখা। তাদের প্রথম শ্রোতাপ্রিয় গান ‘জাদুর শহর’-এ রয়েছে সুমির কলমের দাগ। সিনেমার গানের মধ্যে ‘কানামাছি’, ‘দুনিয়া’ তার কলম থেকে জন্ম নিয়েছে। ‘চিরকুট’ ব্যান্ডের নামটি সুমির দেয়া। সুমি বলেন, আমাদের ব্যান্ডে আমি ছাড়া সবাই ছেলে। অন্যরা আমাদের ছেলেদের বলে তুই তো মেয়েদের ব্যান্ডে আছিস। এই যে মানসিকতা, এটা খুব দুঃখজনক। এগুলোর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। নিজের ভেতরের ভাবনাগুলো শব্দে-কণ্ঠে তুলে ধরতে চান।

জান্নাতুল মাওয়া

জান্নাতুল মাওয়া

আলোকচিত্রী

বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে এখনো সাধারণ শিক্ষার জন্যই মেয়েদের পাড়ি দিতে হয় প্রতিকূল সব অধ্যায়, সেখানে একজন নারী যিনি হাতে তুলে নিয়েছেন ক্যামেরা, ভালোবেসে কাজ করছেন শিল্পের সঙ্গে, আলোকচিত্রের সঙ্গে তার কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়। এমনই এক নাম জান্নাতুল মাওয়া। মাওয়া সবসময়ই প্রথাগত কাজের বাইরের জীবনটাকে বেছে নিতে চেয়েছেন। ভালোবাসতেন ছবি আঁকা। সেই সূত্রেই চারুকলায় পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষে বিষয় হিসেবে বেছে নেন বাংলা সাহিত্য; এবং যুক্ত হন বাম রাজনীতির সঙ্গে। তাতে জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। সিনেমা বানানোর আগ্রহ ছিল, সে কারণেই মূলত আলোকচিত্রের পাঠ নেয়া। কিন্তু এরপর ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায় ভিজ্যুয়াল এই মাধ্যমটির সঙ্গে। যদিও তিনি মনে করেন আলোকচিত্র দিয়ে কোনো কিছুর আমূল পরিবর্তন করা যায় না, কিন্তু এটা পরিবর্তনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা আলোকচিত্র ও আলোকচিত্রীদের শেখার প্রতিষ্ঠান পাঠশালায় প্রফেশনাল ফটোগ্রাফিতে গ্র্যাজুয়েশন শেষে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তবে এর আগেই কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকা, বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থায়। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতাও আছে তার। মত প্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আলোকচিত্রকে বেছে নিয়েছেন। কাজ করেছেন সেসব বিষয় নিয়ে, যা সত্যিকার অর্থে সমাজ পাল্টানোর সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে। তাই তার কাজের বিষয়বস্তু সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশদ কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়ার। এই নিয়ে গবেষণাও করছেন তিনি। সোশ্যাল ডকুমেন্টারির অংশ হিসেবে মাওয়ার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- গৃহপরিচারিকাদের নিয়ে তৈরি ফটোস্টোরি ‘ক্লোজ ডিস্ট্যান্স’, নেপালি মাওবাদী গেরিলার ওপর ‘নিয়ার ল্যান্ড’; এবং আত্মজকে নিয়ে করা ‘ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড’ বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের নিয়েও একটি কাজ করছেন তিনি। নারী জাগরণ নিয়ে কাজ করেছেন অনেক, এটি তার কাজের অন্যতম প্রধান বিষয়ও বটে। তার ‘পাওয়ার অব উইমেন’ প্রদর্শিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গৃহপরিচারিকাদের নিয়ে করা স্টোরি ‘ক্লোজ ডিস্ট্যান্স’ প্রদর্শিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমন- ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ফটো ফেস্টিভ্যাল, ঢাকা আর্ট সামিট, এশিয়ান ওমেন ফটোগ্রাফার শোকেস, অবসিকিওরা ফটো ফেস্টিভ্যাল, দিল্লি ফটো ফেস্টিভ্যাল, আইস অন বাংলাদেশ, ছবিমেলা বাংলাদেশ, ফটো কাঠমান্ডু এবং ফটোকিউ ২০১৫ প্যারিস। পাঠশালার প্রকাশনা আন্ডার দ্য বেনিয়ান ট্রিতে স্থান পেয়েছে ‘ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড’ এবং লে মন্দ, বাজফিড ও সিএনএনসহ বিভিন্ন জার্নালে ছাপা হয়েছে ক্লোজ ডিস্ট্যান্সের কথা।

তিনি বিভিন্ন সাম্মানিক পুরস্কারও পেয়েছেন তার লেখা ও আলোকচিত্রের জন্য। দ্যা ডেইলি স্টার, পারসোনা-এসিআই সেরা নারী, কে এল পি এ, গুইজহা ফেস্টিভ্যাল, পি আই বি এবং ইউনিসেফের মতো সংগঠন তার কাজের জন্য সম্মান জানিয়েছে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে ফটোগ্রাফির মতো শক্তিশালী মাধ্যমকে পেশা হিসেবে চ্যালেঞ্জিং মনে করেন মাওয়া। তা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। তবে সমাজের তথাকথিত চিন্তাধারার পরিবর্তন আনাটা জরুরি, আর এজন্যই তিনি মনে করেন ফটোগ্রাফিতে অধিকসংখ্যক মেয়ের উপস্থিতি প্রয়োজন। বিদ্যমান সমাজে ছেলে এবং মেয়ে বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে, আর সে কারণেই যে কোনো বিষয়কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। ফলে এ রকম শক্তিশালী মাধ্যমে মেয়েদের কাজ করাটা জরুরি। তাদের কার্যকরী ভূমিকা নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে।

লায়লা খায়ের কণক। ছবি: সংগ্রহ

লায়লা খায়ের কণক

জুয়েলারি ডিজাইনার

স্কুলজীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকে ফ্যাশন ডিজাইন ও শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ছিল পারিবারিক কারণেই। বরেণ্য কবি ফজল শাহাবুদ্দীন কণকের বড় মামা। সেই সুবাদে বেশ অন্যরকম আবহেই তার বেড়ে ওঠা। গান শিখেছেন বাফায়; অনেক বছর। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গানও গেয়েছেন। এভাবেই জীবনের ভিত তৈরি হয়ে যায়। সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিলেটেড আর্টস বিভাগে। শিল্প, ক্র্যাফট এসবের প্রতি অনুরাগ থেকেই বেছে নিয়েছিলেন এই বিষয়। নিরীক্ষা ছিল তার সহজাত। এক্সপেরিমেন্ট করতে, ঘর সাজাতে ভালোবাসতেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই গান গেয়ে, বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করে যা টাকা পেতেন তা নিয়ে চলে যেতেন গাউছিয়া কিংবা চাদনী চকে। গয়নার প্রতি ঝোঁকটা বলতে গেলে সেই সময় থেকেই। গয়নার দোকানে গয়না নাড়াচাড়া করে দেখতেন; নিজের মতো করে গয়না বানাতে চাইতেন। গয়না নিয়ে আগ্রহ থেকেই যেকোনো গয়নাতে স্বাতন্ত্র্য দেয়ার চেষ্টা করতেন। প্রয়াসী ছিলেন সাধারণত্বকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। তখনও ভাবেননি গয়নার প্রতি এই ভালোবাসা তাকে কোনো গন্তব্য দেবে। এমনকি তখন তার মাথাতেও আসেনি গয়না নিয়ে পড়াশোনার কথা। সময় গড়ায়, বিয়ের পর যোগ দেন অঞ্জন’স-এ। তিনিই অঞ্জন’স-এ প্রথম সংযোজন করেন বিষয়ভিত্তিক গয়নার সংগ্রহ। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক গয়নায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন ক্রেতাদের। প্রতিটি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। শেখার এই অপার আগ্রহেই ২০০৩ সালে সিঙ্গাপুরে টনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে যান বিউটিফিকেশনের ওপর ডিপ্লোমা করতে। দেশে ফিরে কাজও শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন। তবে গয়নার প্রতি আগ্রহটা মনের মধ্যে সুপ্ত ছিল সবসময়। তার সঙ্গে ছিল শিখে কাজ করার অভিপ্রায়- দুয়ের মিশেলই তাকে আরো একবার প্রাণিত করে জুয়েলারি ডিজাইনার হয়ে উঠতে। সেই লক্ষ্যেই সিদ্ধান্ত হয় সিঙ্গাপুরের জুয়েলারি ডিজাইন ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে যাওয়ার। যদিও সে পথ সহজ ছিল না বড়। ছোট ছোট দুই সন্তানকে রেখে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়াটা সমস্যাও তৈরি করে। তবু মনোবল ও একাগ্রতা থেকে সরে আসেননি। জুয়েলারি ডিজাইন নিয়ে পড়তে চলে যান সিঙ্গাপুরে। ভর্তি হন জুয়েলারি ডিজাইন ম্যানেজমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে (জেডিএমআইএস) শুরু করেন জুয়েলারি ডিজাইন নিয়ে ও হাতেকলমে শেখা। তিনটি বিষয়ে তিনি ডিপ্লোমা করেছেন- ডিপ্লোমা ইন মেটাল আর্টস, ডিপ্লোমা ইন ফ্যাশন জুয়েলারি আর ডিপ্লোমা ইন ফাইন জুয়েলারি ডিজাইন। প্রতিটিতে আবার ছিল ৭টি করে মডিউল। জানতে হয়েছে এপিক জুয়েলারি বা গয়নার ইতিহাস, মানব ইতিহাস, জেমোলজি। আর শিখেছেন ফাইন জুয়েলারি, ফ্যাশন জুয়েলারি, মেটাল ক্লে জুয়েলারি টেকনিক- প্রেশাস ও নন-প্রেশাস জুয়েলারি, কার্ভিংসহ নানা কিছু। তবে মেটাল ক্লেই তার প্রিয়। দু’বছরের চেষ্টায় তিনি শিখেছেন এই নতুন বিষয়। পেয়েছেন ভালো নম্বরও। বিশেষত মেটাল আর্টস ও ফ্যাশন জুয়েলারিতে তিনি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন। এখনো পড়ছেন ফাইন আর্টস জুয়েলারি নিয়ে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গয়না বিষয়ে পড়াশোনা করে ডিপ্লোমাধারী এই একজনই। এখন অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন তার সৃষ্টিতে। গড়ে তুলেছেন ‘কণক : দ্য জুয়েলারি প্যালেস’ পড়ার সময়ই নিজের আগ্রহেই জেনেছেন এবং শিখেছেন গয়না তৈরির বিশাল এক অধ্যায় সম্পর্কে, অসাধারণ তথ্য, অসাধারণ সব বিষয়। সিঙ্গাপুরে অনেকেই ভাবতে পারেনি, বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে কেউ গয়নার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে পড়াশোনা করবে। তবে অধ্যবসায় ও একাগ্রতা দিয়ে সবাইকে অবাক করেন। ব্রিটিশ নাগরিক প্রিন্সিপাল তানিয়া শ্যাডোর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন অনেক। সেই পড়াশোনা আর আগ্রহের সুবাদেই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। দেখেছেন বিভিন্ন দেশের গয়নার নানা ধরন। নিজের ভালোলাগা থেকেই সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন দেশের গয়না। গয়না বিষয়ে শিখতে চান আরো অনেক। তবে গয়না নিয়ে এই পথচলা সহজ ছিল না। এই বিষয়ে সবসময় সাহায্য ও উৎসাহ দিয়েছেন চন্দ্র শেখর সাহা। নিজের আগ্রহ থেকেই সবার নজর কাড়েন সিঙ্গাপুরেও। কনক মনে করেন, প্রতিটি মেয়ের নিজের পরিচয় থাকা জরুরি। কারো মা, স্ত্রী কিংবা মেয়ে নয়, নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়েই পরিচিত হওয়া উচিত। নিজে আরো একটু গুছিয়ে নিয়ে অনেক নারীকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে পোষণ করেন তিনি। গড়ে তুলতে চান নিজের একটা স্টুডিও। গয়না নারীর বিষয় হলেও বেশিরভাগ গয়নার দোকানেই পুরুষ কর্মী দেখা যায়- এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে কণকের।

নিজস্ব একটা স্টুডিও গড়তে চান কণক। এমন একটি অবস্থা তৈরি করতে চেয়েছেন, যেখানে গয়না পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং হবে না, গয়না কিনে সেই অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে গয়না সংগ্রহ করতে চান, সংগ্রহ করতে চান বাংলাদেশের গয়না ঐতিহ্যের প্রতিটি উপাদান।

ফারনাজ আলম। ছবি: সংগ্রহ

ফারনাজ আলম

সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

তরুণ মেধাবী ফারনাজ আলম। রূপের জগতে উজ্জ্বল নাম। আর্কিটেকচারে গ্র্যাজুয়েশন করলেও ফারনাজ এখন ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত। ছোটবেলা থেকে মাকে পার্লারের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন। বউদের সাজাতে দেখেছেন সুন্দর করে। কখনো ভাবেননি নিজেও এই রং-রূপের জগতে কাজ করবেন। পড়াশোনার জন্য দেশ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করলেও পাকিস্তান, মালয়েশিয়া থেকে বিউটির ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। দেশের বাইরে, দেশের বিভিন্ন ইভেন্টে ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের পক্ষে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। বন্ধুদের উৎসাহে অংশগ্রহণ করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল মেকআপ ডিজাইন কনটেন্টে; এর আয়োজনে ছিল ল’রিয়েল। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এক্সপেরিয়েন্সড ১০০ জনের ভেতরে নির্বাচিত হয়েছিলেন ফারনাজ আলম।

চড়াই-উতরাই পার করে টপ টেনে জায়গা করে নেন। কনটেস্ট হয়েছিল মালয়েশিয়াতে। ভোট দেয়ার ক্ষমতা উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য। বাংলাদেশিরা প্রচুর ভোট করেছিলেন ফারনাজের জন্য। প্রায় ৮০০০ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ফারনাজ। এরপর থেকে ল’রিয়েল-ওমেন্স ওয়ার্ল্ড একসঙ্গে কাজ করছে। নতুন কোনো প্রডাক্ট লঞ্চ হলে ফারনাজকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ল’রিয়েল। এসব প্রডাক্টের সঙ্গে ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে ফারনাজের সাহায্যে পরিচিত হচ্ছে সবাই। দেশ-বিদেশে ছড়ানো ফারনাজের খ্যাতি ঈর্ষণীয় বৈকি। ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে বিউটি এক্সপার্ট ফারনাজ আলমের বেশ কিছু অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। সুযোগ্য কন্যা হিসেবেও তো বটেই, নিজের প্রতিভা দিয়েও সবার মন জয় করে চলেছেন।

মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। ছবি: সংগ্রহ

মাবিয়া আক্তার সীমান্ত

ক্রীড়াবিদ

নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবতেই পারেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। ভাগ্যবতী এজন্যই ভাবতে পারেন যে, তিনি বাংলাদেশে জন্মেছেন। আগে যতবার বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতে বিদেশে যেতেন, চেয়ে চেয়ে দেখতেন বাংলাদেশের পতাকা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারিতে থাকত। কিন্তু ব্যাপারটা মাবিয়াকে খুব যন্ত্রণা দিত। সবার ছোট হওয়ায় মনের মধ্যে পুষে রাখা যন্ত্রণার কথা কাউকে মুখ ফুটে বলতেও পারতেন না। শুধু ভাবতেন কবে এই লাল-সবুজের পতাকাটা সবার ওপরে তুলে ধরতে পারবেন। ভাবতেন কবে বাজবে জাতীয় সঙ্গীত, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’

মাবিয়ার খেলাধুলার ক্যারিয়ার খুব বেশি দিনের না। কিন্তু এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে বাংলাদেশকে গর্বে ভরিয়ে দেয়ার প্রথম সুযোগ আসে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। পুনেতে কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়ে ভারতের ভারোত্তোলকদের হারিয়ে সোনা জেতেন। এরপর থেকেই যেন মাবিয়ার ক্যারিয়ার, জীবনের বাঁক বদলের শুরু হলো। কে জানত মাবিয়ার জন্য আরো বড় চমক অপেক্ষা করছিল দুই মাস পর, ভারতের গুয়াহাটিতে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে!

গেমসের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের কোনো খেলা থেকে সোনার পদক আসছিল না। অনুশীলনে চোট পাওয়ায় ভার তোলার মঞ্চে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়েই ছিলেন সংশয়ে। তবে পরদিন ব্যথা অনেক কম থাকায় এরপরই খেলার সিদ্ধান্ত নেন। বাকিটুকু তো ইতিহাস।

বাংলাদেশকে এনে দেন গেমসের প্রথম সোনা। সোনা জয়ের পরও যেন মাবিয়ার বিশ্বাস হচ্ছিল না। আনন্দে চোখে পানি চলে আসে মাবিয়ার। গেমসে প্রথম জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে মাবিয়ার জন্য। ওই কান্নার ভিডিওটা ইউটিউবে আর ফেসবুকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।

মাবিয়ার বাবা হারুনুর রশীদ। খিলগাঁওয়ে তার একটা মুদির দোকান আছে। মাবিয়ারা দুই বোন ও এক ভাই। তিনি সবার ছোট। ছোটবেলায় পড়তে চাইতেন না। এজন্য একদিন বাবা খুব মেরেছিলেন। মামা বক্সার কাজী শাহাদৎ হোসেন ওই দিন তাদের বাড়িতে এসে দেখেন সেটা। এরপর মাবিয়ার মামা ভারোত্তোলন ফেডারেশনে নিয়ে যান তাকে। সেখানে মামার হাতে ভারোত্তোলনের হাতেখড়ি হয়ে গেল। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভার তুলেই বাংলাদেশ আনসারে চাকরি হয়েছে। পড়াশোনাটাও নতুন করে শুরু করেন। এখন জীবনটাই বদলে গেছে তার। তিনি কৃতজ্ঞ ফেডারেশনের যারা আমাকে এ পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছেন। ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদসহ অনেকেই এই তালিকায় থাকবেন।

ফেডারেশন থেকে নিয়মিত বৃত্তি দিত মাবিয়াদের। তবে শর্ত ছিল, নির্দিষ্ট একটা ওজনে ভার তুলতে পারলেই ওই বৃত্তির টাকা পাওয়া যাবে। প্রতি ট্রায়ালে মাবিয়া চেষ্টা করতেন নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ওজন তুলতে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারোত্তোলনে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে সেরা মাবিয়া। এরপর এশিয়ান গেমসেও পদক জয়ের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন একদিন অলিম্পিকে অংশগ্রহণের।

রুমানা শারমিন। ছবি: সংগ্রহ

রুমানা শারমিন

পপআপ বুক ডিজাইনার

শিশুদের পছন্দের ত্রিমাত্রিক বইগুলো থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে রুমানা শারমিনের পপ-আপ বইয়ের কারখানায়। যারা ভাবছেন পপ-আপ বইয়ের কারখানায় ত্রিমাত্রিক বই, সেটা আবার কী? তাদের ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য নিয়ে যাওয়া যাক রুমানার বইয়ের দোকানের ‘ছোট্ট খোকন’ বইটির কাছে।

এর লেখনীতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প যেমন উঠে এসেছে সুচারু বর্ণনায়, তেমনই আবার বইয়ের পাতার ভাঁজগুলো খুলতেই নানান কাগুজে নকশায় সে গল্পগুলো যেন বাস্তব হয়ে ফুটে ওঠে চোখের সামনে। শেষ পাতার ভাঁজ খুলতে তো আস্ত স্মৃতিসৌধটাই দাঁড়িয়ে গেল, যা বাস্তবের স্মৃতিসৌধের মহিমাই যেন বয়ে বেড়ায় শিশুদের ছোট্ট মনে। এমনই রুমানা শারমিনের পপ-আপ বই। বইগুলো সাজানো রয়েছে তার বইয়ের দোকান ‘দ্য পপ-আপ ফ্যাক্টরি’তে।

 প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর রুমানা শারমিন স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। স্থাপত্যকলার ছাত্রীর মনে শিশুদের জন্য পপ-আপ বইয়ের ভাবনা এলো কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে রুমানা শারমিন জানান, ভাবনাটা একেবারে হঠাৎ করেই আসেনি। শুধু স্থাপত্যবিদ্যা নয়, গ্রাফিকস ডিজাইনিং নিয়েও খানিকটা জানাশোনা আছে তার। তাছাড়া আগে থেকেই কাগজ কেটে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করে ফেলতেন মনের খেয়ালে, তা দেখে চমকে যেত সহপাঠীরা। ব্যাপারটা যেন রুমানার মাঝে ছিল প্রকৃতিগতভাবেই। আর পপ-আপ বইও এর আগে দেখেছিলেন তিনি। সেসব বিদেশি গল্পের, বিদেশ থেকে নিয়ে আসা। জিনিসটাকে ভালোই লাগত তার। শুধু রুমানার নিজের নয়, তার ঘরের অন্য শিশুদেরও পছন্দ ছিল এই পপ-আপ বইগুলো। অর্থাৎ তখন থেকেই রুমানা লক্ষ করলেন, এমন বইয়ের প্রতি খুব সহজে আকৃষ্ট হয় ছোটরা।

একই সঙ্গে আরো একটা বিষয় লক্ষ করলেন তিনি। তা হলো, বই পড়ার অভ্যাসটা দিন দিন কমে যাচ্ছে শিশুদের মাঝে। রুমানা নিজে ছিলেন বইপোকা। সেও একদম ছোটবেলা থেকেই। তাই বোঝেন, একটা সুস্থ জীবন ও পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠনের জন্য কতটা জরুরি বই পড়া। সে সময়ই তার মনে হলো, শিশুদের মনে বইয়ের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টির অনেক বড় একটা ক্ষেত্র এ দেশে এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। তাহলে দেশের একজন তরুণ হিসেবে এই জায়গাটাতেই কেন কাজ করবেন না তিনি?

এসব ভাবনা তো ছিলই, সঙ্গে এসে যুক্ত হলো রুমানার নতুন কিছু করে দেখানোর প্রচ- প্রয়াস। গৎবাঁধা কাজের ছকে আবদ্ধ হতে কখনই ভালোবাসতেন না রুমানা। তাই দুইয়ে দুইয়ে হলো চার। প্রতিভা, উচ্চাশা আর মনের চাওয়াটাকে মিলিয়ে রুমানা শারমিন তৈরি করে ফেললেন দেশের প্রথম পপ-আপ বইয়ের দোকান দ্য পপ-আপ ফ্যাক্টরি। সে থেকেই শুরু। একে একে শিশুদের কল্পনার জগৎ খুলে যেতে শুরু করল রুমানার হাতের ছোঁয়ায়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গুটি গুটি পায়ে যে যাত্রার শুরু করেছিলেন রুমানা, রাতারাতি সেটি পরিচিতি পেতে শুরু করে সবখানে। এমন একটা সময় কাজে নেমেছিলেন রুমানা, যখন দেশে পপ-আপ বই তেমন একটা পাওয়া যেত না। এ ধরনের কাজের চেষ্টা যাও দেখা গেছে, তাও খুবই নগণ্য। তবে রুমানা কাজে নেমেছেন প্রস্তুতি নিয়ে। আরো বেশি জানাশোনা বাড়িয়েছেন সারা বিশ্বে পপ-আপ শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে। তাই প্রতি চেষ্টাতেই তিনি সবার সামনে নিয়ে আসতে শুরু করলেন নতুন কিছু। তার বই খুললে তা থেকে কখনো বের হয়ে আসতে থাকল ইয়া বড় রাজপ্রাসাদ অথবা দুই ডানা মেলে দিয়ে ওড়ার জন্য প্রস্তুত এক ঝলমলে প্রজাপতি। আর পাতায় পাতায় লেখা থাকল সাহসী রাজকুমারী অথবা দয়ালু মনের রাজকুমারের গল্প।

শুরুতে রুমানা নিজেই লিখতেন, ছবি আঁকতেন, কাগজ কেটে নিজেই গল্পের দৃশ্যায়নকে ফুটিয়ে তুলতেন বইয়ের ভাঁজে। সাহায্য করতেন কাছের বন্ধুরা। অনলাইন যোগাযোগের সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই নিজের সৃষ্টিগুলোকে তুলে ধরতেন অন্যদের কাছে। এখন পরিসর বেড়েছে কাজের, বেড়েছে কর্মীর সংখ্যাও। আর রুমানার মজার কারখানায় তৈরি হওয়া বইগুলোর মুগ্ধ পাঠকদের সাড়া ছিল এতটাই ইতিবাচক যে, অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতিও পেতে শুরু করলেন।

মজার এই পপ-আপ ফ্যাক্টরিকে ঘিরে রুমানা কেমন দেখতে পান শিশুদের ভবিষ্যৎ? উত্তরে বলেন, ‘আমি এমনভাবে কাজ করে যেতে চাই যে, এক সময় শিশুরা তাদের পছন্দের সব ধরনের ইন্টারঅ্যাকটিভ বই-ই খুঁজে পাবে দ্য পপ-আপ ফ্যাক্টরিতে।’ এভাবে কতগুলো কোমল মনে আনন্দের জোগান দিতে বর্ণিল স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রুমানা।

Comments

The Daily Star  | English

Budget support from WB, ADB: $1.1b loan likely by December

The World Bank and the Asian Development Bank are preparing to submit proposals to their boards for $1.1 billion in budget support for Bangladesh, finance ministry officials have said.

9h ago