ছোটকাকু
গত কয়েক বছর ধরে চ্যানেল আইতে সাত দিনের ঈদের অনুষ্ঠানমালায় ‘ছোটকাকু’ সিরিজের নাটকগুলো বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের এখানে ছোটদের নিয়ে একসময় শুধু বিটিভিতে অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। প্রাইভেট চ্যানেলগুলো সেই অর্থে ছোটদের অনুষ্ঠান করে না বললেই চলে। চ্যানেল আই ছোটদের নিয়ে ছোটকাকু সিরিজ করে যাচ্ছে সুনামের সঙ্গে। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের রচনায় এবং আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় ছোটদের জন্য নির্মিত নাটক এবারের ঈদে প্রচারিত হবে ‘কুয়াকাটায় কাটাকাটি’। নাটকটি দেখার আগেই পড়ে নিতে পারেন আনন্দধারার ঈদ সংখ্যায়।
ফরিদুর রেজা সাগর
আফজাল হোসেন
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-১
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : আউটডোর, সমুদ্রসৈকত, কুয়াকাটা
রাতের দৃশ্য, সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে দূর থেকে ভেসে আসছে যাত্রাপালার আওয়াজ। ছোট ছেলে যার বয়স ১২-১৪ বছর যাত্রার পোশাক পরে হাঁটছে। ছেলেটার নাম বাবলু। আকাশে চাঁদ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের ফসফরাসের কারণে আমরা ছেলেটাকে দেখতে পারব। হঠাৎই অন্ধকারের মধ্যে সে কিছু আওয়াজ শুনতে পাবে। এক বাচ্চা ছেলের আতঙ্কের আওয়াজ, চাপা কান্নার আওয়াজ। সে থেমে যাবে, ব্যাপারটা বোঝার জন্য সে একটা নারিকেল গাছের আড়ালে চলে যাবে।
হঠাৎই সে কিছু একটা দেখবে। তার মুখের আতঙ্কগ্রস্ত ক্লোজ শটে দৃশ্যটি ফ্রিজ হয়ে যাবে। এরপর ছোটকাকু সিরিজের টাইটেল আসবে।
দৃশ্য-২
লোকেশন : ইনডোর, ড্রয়িং রুম, ছোটকাকুর বাসা
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে মোবাইলে চ্যাটিং করছে অর্ষা আর সীমান্ত টিভি দেখছে। ছোটকাকু আরেক সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে। অনবরত ল্যান্ডফোনটা বেজে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তা ধরছে না। যতবার বাজছে, ততবার সবাই বিরক্তি নিয়ে ফোনটার দিকে দেখছে। ফোনের রিংটা বন্ধ হলে সীমান্ত অর্ষাকে উদ্দেশ করে বলবে :
যে হারে মোবাইলে তুমি চ্যাটিং কর, একদিন দেখিও ফিঙ্গার প্রিন্ট বলে কিছুই থাকবে না তোমার!
অর্ষা বলবে : তাইলে তো ভালোই, চুরি-ডাকাতি করলে কেউ ধরতে পারবে না... (হাসি)
ঠিক তখনই সীমান্ত টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে কোনো এক বাংলা চ্যানেলে আসবে, যেখানে খবর হচ্ছে আর সংবাদ পাঠক বলছে এই মাত্র কুয়াকাটায় আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছে পরপর কয়েকদিনের মধ্যে কুয়াকাটায় বেশ ক’জন শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে, সর্বশেষ গতকাল বাবলু নামে একজন শিশু অপহরণ হয়েছে। অপহরণের শিকার শিশুগুলোর মধ্যে কুয়াকাটার গণ্যমান্য ব্যক্তি যিনি চৌধুরী সাহেব হিসেবে পরিচিত তার নাতিও রয়েছে। প্রশাসন তদন্ত করছে, কিন্তু এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ছোটকাকু বলবে : ছেলেধরা?
সীমান্ত ছোটকাকুকে উদ্দেশ করে বলবে : আচ্ছা ছোটকাকু নামটা শুধু ছেলেধরা কেন? ওরা কি মেয়েদের ধরে না?
সীমান্তের শিশুসুলভ কথায় সবাই হেসে উঠবে।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : ইনডোর, নিউজ চ্যানেলের অফিস
ডেস্কে বসে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে এক নারী সাংবাদিক। পাশের ফাঁকা ডেস্কে তার সহকর্মী এসে বসে বলবে :
অহনা নতুন কোনো অ্যাসাইনমেন্ট? বিজি কিসে?
অহনা : আপাতত লিপস্টিকে! বস কি খুব ক্ষেপে আছে?
কলিগ : অহনা লিপস্টিকটা বন্ধ রাখ, বস পেছনে!
ঠিক তখনই তাদের পেছনে এসে দাঁড়াবে তাদের বস। অহনা তাড়াতাড়ি লিপস্টিকটা রেখে দেবে ভ্যানিটি ব্যাগে। তাড়াহুড়োয় তার ঠোঁটের পাশে লিপস্টিক লেগে যাবে।
বস : অহনা, দেশে ঘটছে কী এখন?
অহনা : বস দেশে এখন গরম পড়েছে, ভূমিকম্প হচ্ছে। আর একটু পর আমার ওপরও ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে!
বস : অহনা, আমার অফিস কোনো কোচিং সেন্টার না, আমি কোচিংয়ের ক্লাসও নেই না। তোমার ফার্স্ট হওয়ার লাস্ট চান্স। আমাকে আধা ঘণ্টার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা জানাও, না হলে ভূমিকম্প অবশ্যই হবে।
অহনা : জি বস! আপনি টেনশন নিয়েন না।
বস : না না, টেনশন তো আমি নেই না, টেনশন তুমিই দাও। আর রিপোর্টিংয়ে মন নেই লিপস্টিক লাগানোতে তো মনটা দিতে পারো!
অহনার কলিগ তার ঠোঁটের পাশে যে লিপস্টিক লাগানো আছে তা ইশারায় বুঝিয়ে দেবে। অহনা দ্রুত তা মুছে ফেলবে। বস চলে যাবে, অহনা একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলবে : ঘটনা, ঘটনা... কী ঘটনা? কী ঘটনা?
ঠিক তখনই তারা কিছু আওয়াজ শুনবে। মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে আর কিছু মানুষ তাকে সান্ত¡না দিচ্ছে। তার পেছনে ফিরে দেখে তাদের অফিসের এক নারী পিয়ন বিলাপ করছে, আর অহনার কিছু সহকর্মী তাকে সান্ত¡না দিচ্ছে। অহনা আর অহনার কলিগ এগিয়ে যাবে।
অহনা : রহিমা আপা কী হয়েছে?
রহিমা : আপায় আমার পোলাডার তিন দিন ধরে খোঁজ নাই।
অহনা : ওরা কুয়াকাটা থাকে না?
রহিমা : হ...
তখন অহনার আর একজন কলিগ এসে বলবে :
রহিমার ছেলেসহ মোট চারজন, এক মাসে চারজনের খোঁজ নাই!
অহনা : চারজন? আচ্ছা মনে হচ্ছে একটা ঘটনার জন্ম হচ্ছে।
সে তখন সেই কলিগকে উদ্দেশ করে বলবে : রফিক ভাই রফিক ভাই, ঘটনাটা একটু খুলে বলেন না!
রফিক : খোঁজ তো রাখো না, শুধু ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ নিয়েই আছো! আমাদের ঘণ্টার নিউজটাও তো দেখতে পারো। কুয়াকাটায় এই এক মাসে ৪ জন বাচ্চা হারায় গেছে।
অহনা : ছেলেধরা?
রফিক : কেউ জানে না, সমুদ্রে হারায় গেছে, না ছেলেধরা নিছে কেউ জানে না, কেউ না। পুরাই হাসপিসাস।
অহনা জটলা থেকে সরে আসবে। সে টিভির সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। দেখবে টিভিতে সেই নিউজটাই হচ্ছে। সে দৌড়ে বসের রুমে যাবে।
অহনা : বস, মনে হচ্ছে ঘটনা ঘটে গেছে!
বস : তাই নাকি? তা ঘটনাটা একটু শুনি।
অহনা : কুয়াকাটায় এক মাসে ৪ জন বাচ্চা হারায় গেছে। কীভাবে হারায় গেছে কেউ জানে না। কেউ বলে ছেলেধরা, কেউ বলে সমুদ্রে ডুবে গেছে; এখন যদি আমরা বস প্রমাণ করে দেই যে বাচ্চাগুলোকে তিমি মাছ খেয়ে ফেলছে ব্যাপারটা কেমন জমবে বস!! থ্রিলিং, এক্সাইটিং, মিস্টিরিয়াস।
বস কিছুক্ষণ তার দিকে তাকায় থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে বলবে : অহনা তিমি মাছ মাংস খায় না, সো তিমি মাছের আইডিয়া বাদ দাও। এখন এটাই তোমার অ্যাসাইনমেন্ট। খোঁজ কর সত্যটা, দরকার হলে কুয়াকাটা যাও, ইনভেস্টিগেশন কে করছে খোঁজ নাও, তার সঙ্গে জোঁকের মতো লেগে থাকো। মনে রেখ একজন সাংবাদিক সবসময় একজন গোয়েন্দা। যাও... একটা টিম কর। আর কাজে লেগে পড়। গো।
অহনা দ্রুত বসের রুম থেকে বের হয়ে তার কলিগের কাছে আসবে। কলিগের নাম রিমা।
রিমা : ব্যাপক উত্তেজিত! ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটে গেছে?
অহনা : আচ্ছা কুয়াকাটা বিখ্যাত কেন? সমুদ্র ছাড়া আর কী আছে?
রিমা : শুনেছি কুয়াকাটার সূর্যোদয় জটিল ফ্যান্টাস্টিক!
অহনা : গুড, আমার অ্যাসাইনমেন্ট কুয়াকাটায়। এক মাসে ৪টি বাচ্চা নিখোঁজ। রিপোর্ট করতে হবে। তুমি আমার টিমে, সঙ্গে আমাদের ক্যামেরার ছেলেটা আছে না জামাল, ও থাকবে। নতুন অ্যাসাইনমেন্ট, নাম দেয়া দরকার একটা। কী নাম দেয়া যায়?
রিমা : কুয়াকাটায় ফাটাফাটি?
অহনা : ওহু, কুয়াকাটায় কাটাকাটি!!!
দৃশ্য-৪
লোকেশন : ইনডোর, ড্রয়িং রুম, ছোটকাকুর বাসা
কলিংবেলের আওয়াজ। ঘরে ঢুকবে শরীফ সিঙ্গাপুরী/এসএস। ঘরে ঢুকেই হৈহৈ করে ছোটকাকুকে উদ্দেশ করে বলবে :
এটা কোনো কথা ক্যাপ্টেন? তোমাদের একটা দাওয়াত খাওয়ানোর সুযোগ তো দিবা না কী? আমি কত কী খাই তোমাদের কাছে!!
ছোটকাকু হেসে বলবে : শুধু তো চা, টা-তো আপনি ভুঁড়ির গল্প বলে পালিয়ে যান!
এসএস : ভুঁড়িটাই তো সমস্যা। কিন্তু তোমার তো ভুঁড়ি নেই, আর অর্ষা-সীমান্তের তো এখন খাওয়ারই বয়স!! চল চল।
ছোটকাকু বলবে : খাবো বুঝলাম, কিন্তু উপলক্ষটা কী?
এসএস : তোমাদের নববর্ষের স্পেশাল ডিশ খাওয়াব, একদম স্পেশাল, ওই যে ফুচকার দোকানে লেখা থাকে না ‘একবার খাইবেন তো বারবার চাইবেন’ (হে হে হে)
সবাই একসঙ্গে বলে উঠবে : নববর্ষ!!
অর্ষা : পহেলা বৈশাখ? সে তো শেষ হলো কয়েকদিন আগেই, জ্বরের কথা বলে আপনি আমাদের সঙ্গে রমনায় গেলেন না!
এসএস : ওই আমি থাকতাম কই আগে? সিঙ্গাপুরে না? ওখানে নববর্ষ পালন হয় পুরো এক মাস জুড়ে!
ছোটকাকু বলবে : একমাস নয়, ওটা এক সপ্তাহ!
এসএস : ওই একই!
সীমান্ত : স্পেশাল ডিশটা কী? কুকুর-বিড়াল না তো আবার?
অর্ষা : সীমান্ত আবার বোকার মতো কথা! ওগুলো থাইল্যান্ডের লোকেরা খায়!
এসএস : হ্যাঁ, মাছ খাওয়াব তোমাদের। তিমি মাছের মাংস!
অর্ষা-সীমান্ত একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে বলবে : তিমি মাছ?
এসএস : ইয়েস তিমি মাছ, চল চল! আর এটা রান্না যেনতেন ব্যাপার নয়। রান্নার নির্ধারিত সময়ে না খেলে স্বাদ পাবা না!
দৃশ্য-৫
লোকেশন : ইনডোর, নিউজ চ্যানেলের অফিস
অহনা আর রিমা ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা করছে। তারা অনেকগুলো পত্রিকা নিয়ে বসেছে। সেখান থেকে ঘটনাটির কোনো নিউজ এসেছে কি না তা দেখছে। একজন ছেলে তাদের সাহায্য করছে। ছেলেটির নাম জামাল।
অহনা : ব্যাপারটা বুঝো, সবার বয়সই কিন্তু ১৩-১৪ বছরের মধ্যে।
রিমা : আর সবাই ছেলে!
জামাল : আমাদের কি রহিমা আপার সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার না?
অহনা : ইয়েস, ইনভেস্টিগেশন অফিস থেকেই শুরু হোক।
জামাল রহিমাকে ডেকে আনবে।
অহনা : রহিমা আপা আমি জানি তোমার মনের অবস্থা কী! তবু যদি ব্যাপারটা তুমি আমাদের বল দেখি তোমার ছেলেকে ফিরায় আনতে পারি কিনা!
রহিমা : কী কমু আমি আপা। হের বাপে কইলো যাত্রায় পাট পাইছিল একখান, বাবলু আবার যাত্রায় পাট করে। সেই দিনও তাই করতে গেছিল, যাত্রাও হইছে, হেয়ও অভিনয় করছে, কেন্তু বাড়িত আর আসেনি!
অহনা : হু, আর যারা হারাইছে ওদের কি বাবলু চিনত?
রহিমা : হ, আমাগো পাশের বাড়ির সেকান্দর মাঝির পোলা হারুন, হ্যায় হারাইছে ১ দিন আগে!
অহনা : গুড রহিমা, তুমি যাও!
রহিমা চলে যাবে চোখ মুছতে মুছতে।
রিমা : আমাদের পটুয়াখালীতে কে কাজ করে অহনা?
জামাল : পটুয়াখালীতে যে-ই কাজ করুক, কুয়াকাটার আমি একজনকে চিনি, সেও সাংবাদিক, বাট অন্য হাউসের। শুনছি কুয়াকাটায়ও হ্যাডমওলা লোক।
অহনা : তাহলে ওকেই আমার চাই। তুমি ওর সঙ্গে কথা বল। তোমার পরে আমি বলব। ওই হবে এখন আমাদের কুয়াকাটায় কাটাকাটির নিউজ চ্যানেল।
দৃশ্য-৬
লোকেশন : ইনডোর, এসএসের বাসা, ডাইনিং রুম
ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ছোটকাকু, অর্ষা, সীমান্ত আর এসএস তদারক করছে। সে সবার প্লেটে তিমি মাছের মাংস তুলে দিচ্ছে।
এসএস ছোটকাকুকে উদ্দেশ করে : মাংসটা চেখে দেখেন, আপনার মতো সেরা গোয়েন্দা না হতে পারলেও আমি যে সেরা শেফ আপনাকে মানতেই হবে!
সীমান্ত এবার এসএসকে বলবে : কিন্তু আপনি তিমি মাছের মাংস তিমি মাছের মাংস বলছেন কেন? কখনো কি ইলিশ মাছের মাংস বলেছেন?
এসএস : যদিও তিমি পানিতে থাকে, তবুও তিমি তার বাচ্চাদের দুধ পান করায়, ইলিশ করায়? গরু করায়, ছাগল করায়, করায় না?
অর্ষা বলবে : কিন্তু মুরগি তো করায় না!
সবাই একযোগে হেসে উঠবে।
ঠিক তখনই ছোটকাকুর বাসার কাজের লোক ডাইনিং রুমে আসবে। এসে ছোটকাকুকে উদ্দেশ্য করে বলবে :
স্যার এক ফাদার আইছে, বসায় রাখছি।
সীমান্ত বলবে : ফাদার? ফাদার মানে তো বাবা। কার বাবা?
ছোটকাকু বলবে : আবুল, উনি কি সাদা লম্বা আলখেল্লা পরেছে? গলায় ক্রস আছে (বলে ছোটকাকু আঙুল দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেখাবে)
আবুল বলবে : হ হ, এই রকম একটা মালা গলায় আছে, আর বড় দরবেশদের লাগান পাঞ্জাবিও পরসে।
অর্ষা বলবে : ওহ-হ ফাদার, পাদ্রি।
ছোটকাকু এসএসকে বলবে : তাইলে তো উঠতে হয় এসএস। দেখো না ফাদার এসেছে, দেখা তো করতেই হবে।
এসএস বাধা দিয়ে বলবে : উঠবেন মানে, কেবল এক টুকরো মুখে দিছেন। আবুল যাও ফাদার না গডফাদার নিয়ে আসো এখানে।
আবুল চলে যাবে।
এসএস বলবে : কিন্তু ফাদারের সঙ্গে তোমার কাজ কী? তুমি কি খ্রিস্টান হচ্ছো?
ছোটকাকু : না খ্রিস্টান হচ্ছি না, আবার এই জীবনে কোনো ফাদারের সঙ্গে মিশিওনি! ঘটনা কী? কোনো নতুন ঘটনার কি জন্ম হবে?
প্রথম পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-২
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : ইনডোর, এসএসের বাসা, ডাইনিং রুম
ডাইনিং রুমে সাদা আলখেল্লা পরা, গলায় ক্রস ঝোলানো এক ফাদার প্রবেশ করবে। তার মাথার চুল সামনে থেকে দেখলে মনে হয় সব পাকা, কিন্তু পাশ থেকে দেখলে বোঝা যায় কিছু কাঁচা অবশিষ্ট আছে এখনো। নাম ফাদার বেনাস।
ফাদার : ছি ছি, আমি খাবারের সময় চলে এসেছি, আমাকে বললেও তো হতো, অপেক্ষা করতাম!
এসএস : শোনেন মি. ফাদার ‘পড়েছেন মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে’, চেয়ার ফাঁকা আছে, তিমি মাছের মাংসও আছে, শুধু হাতটা ধুয়ে আসুন!
ছোটকাকু ফাদারকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : আপনি আমার কাছে? কোনো দরকার?
ফাদার : জি, আপনার একটা নাম আছে সেটা আমি জানি না, শুধু জানি আপনি ছোটকাকু। আমি আপনার কাছেই এসেছি। আমার নাম ফাদার বেনাস। কিন্তু বাড়িটা মনে হয় আপনার...
(বলে সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে এসএসের দিকে তাকাবে)
এসএস : হ্যাঁ হ্যাঁ, বাড়িটা আমার।
ফাদার : ওহ, আপনি তাইলে শরিফউদ্দিন আহমেদ।
এসএস তিমি মাছটা মুখে দিতে গিয়েই আবার নামিয়ে রেখে একটু অবাক হয়ে তাকাবে।
সঙ্গে সঙ্গে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : এসএস তোমার দরজায় তোমার নামটা কিন্তু তুমিই যতœ করেই লাগিয়েছো! সবাই হেসে উঠবে।
ফাদার : তাহলে তো সবার সামনেই বলা যায়, আমি এসেছি কুয়াকাটা থেকে, গত এক মাস ধরে এলাকায় বেশ কিছু শিশু নিখোঁজ হয়ে গেছে। তিন-চারটা ঘটনার পর সবাই পুলিশের কাছে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। একটা শিশুকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছোটকাকু : আপনি কি চাচ্ছেন আমি কুয়াকাটা গিয়ে সে বাচ্চাগুলোকে খুঁজে বের করি?
ফাদার : আমি তো চাই-ই, আমার থেকে বেশি চায় চৌধুরী সাহেব, যার অনুরোধেই আমি এসেছি।
ছোটকাকু : চৌধুরী সাহেব?
ফাদার : কুয়াকাটার সবচেয়ে জনপ্রিয় আর প্রভাবশালী চৌধুরী সাহেব; আর চৌধুরী সাহেবের আগ্রহের বড় কারণ এই নিখোঁজের দলে তার নাতিও আছে!
ছোটকাকু : আচ্ছা। আপনার কাছে কি কোনো লিস্ট আছে?Ñ কবে কোন ছেলেটা হারায় গেছে?
ফাদার : সে রকম কিছু নেই। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত আমার জানা মতে চারজন ছেলে হারায় গেছে!
ছোটকাকু : হিসাবটা কি এই রকম যে প্রতি মাসে একজন করে ছেলে হারিয়ে যাচ্ছে?
ফাদার : না না, তা হবে কেন? প্রথম মাসেই একসঙ্গে হারিয়ে গেছে দুজন!
ছোটকাকুর খাওয়া হয়ে গেছে। সে হাত ধুতে ধুতে বলবে :
ছোটকাকু : ফাদার বেনাস, আপনার নম্বরটা দিয়ে যান, আমি জানাব আমি যাবো কি না!
ফাদার : দেখুন চৌধুরী সাহেবের একান্ত ইচ্ছা আপনি কুয়াকাটায় যান এবং ছেলেগুলোকে উদ্ধার করুন।
ছোটকাকু : দেখুন ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখন থাক। ভালো থাকবেন।
ফাদার : আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি, আমি কাল সকালে আবার আসব। ধন্যবাদ মি. শরীফ। মাছটা অনেক ভালো ছিল।
দৃশ্য-২
লোকেশন : ইনডোর, ছোটকাকুর রুম, ছোটকাকুর বাসা
ছোটকাকুর রুমে বসে সীমান্ত অর্ষাকে বলবে :
সীমান্ত : দেখেছো সকালেই দেখলাম টিভিতে আর দুপুরেই কুয়াকাটা থেকে একজন হাজির!
অর্ষা : ছোটকাকু এটাই তো মিরাকল তাই না?
ছোটকাকু : মিরাকল বলতে পারিস আবার গ্যাড়াকলও! একটু ভাবতে দে, একটু স্টাডি করতে হবে। যা তোরা ঘুমিয়ে পড়।
ছোটকাকু লাইট অফ করে দেবে আর তখনই একটা টেলিফোন আসবে :
টেলিফোনের ভয়েস : আমি হাবিবুর রহমান বলছি, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান, শুধু সংবাদ নয় আপনাকে সাবধানও করছি, কুয়াকাটায় আপনার কাটাকাটি না করাই ভালো।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : ইনডোর, নিউজ চ্যানেলের অফিস
জামান অহনাকে একটা চিরকুট এনে দেবে। অহনা চিরকুটটা খুলে দেখবে সেটায় একটা নাম আর মোবাইল নম্বর লেখা। নামের জায়গায় লেখা সাংবাদিক হাবিবুর রহমান, সাপ্তাহিক কুয়াকাটা। অহনা মোবাইল ফোন বের করে সেই নম্বরে ফোন দেবে।
অহনা : হ্যালো...
হা. র. : হ্যালো কে বলছেন?
অহনা : আমি নিউজ বাংলা চ্যানেল থেকে অহনা বলছি, অহনা মুস্তাফিজ। জামাল নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে কথা বলেছে?
হা. র. : জামাল বলেছে। আমি জানি ব্যাপারটা রহস্যের। আর আপনাদের মতো নিউজ চ্যানেলেরও কাটতির। কিন্তু ঘরের বাঘই যদি হরিণ খেয়ে ফেলে তবে বনের বাঘ কীভাবে আসবে?
অহনা : ঘরের বাঘ, বনের বাঘ মানে?
হা. র : মানে চৌধুরী সাহেব। ৪ জনের মধ্যে একজন চৌধুরী সাহেবের নাতি। আর চৌধুরী সাহেবের সুনাম অনেক কুয়াকাটায়।
অহনা : মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন চৌধুরী সাহেব বাচ্চা চুরি করে নিজের নাতি চুরির নাটক করছে?
হা. র : কেন নয়? দেখুন ব্যাপারটা আমি জানি, বুঝি। আর তা ছোটকাকুকেও বলেছি।
অহনা : ছোটকাকু? মানে গোয়েন্দা ছোটকাকু?
হা. র : ইয়েস! তাকে নিয়োগ করেছে চৌধুরী সাহেবই। দেখি ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ তিনি বের করতে পারেন কিনা!! বলেই হাবিবুর রহমান ফোন কেটে দেবে। অহনা বার দুয়েক হ্যালো হ্যালো বলবে। এরপর রিমাকে উদ্দেশ করে বলবে :
অহনা : গল্পে টুইস্ট চলে এসেছে, অ্যাসাইনমেন্টটা মনে হয় জমবে!!
দৃশ্য-৪
লোকেশন : ইনডোর, ছোটকাকুর বাসা
বারান্দায় বক্সিংয়ের হেভি ব্যাগ (কোলবালিশের মতো) ঝুলিয়ে সীমান্ত বক্সিং প্র্যাকটিস করছে। ঠিক তখনই অর্ষা মোবাইলে চ্যাটিং করতে করতে সীমান্তর কোমরে একটা গুঁতো মারবে। সীমান্তর কাতুকুতুর সমস্যা আছে। সে বিরক্ত হয়ে বলবে :
সীমান্ত : এমন ঘুষি মারব না মুখের জিওগ্রাফি পাল্টে যাবে!!
অর্ষা : শোনো আমি তোমার বড়, তাই বেশি বাড়িও না ঝড়ে পড়ে যাবে! সীমান্ত তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে লম্বা মাপবে।
সীমান্ত : নিজে যারে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়!!
এই কথা বলে সীমান্ত যেই হেভি ব্যাগে একটা ঘুষি দেবে অমনই অর্ষা সীমান্তকে আর একটা গুঁতো দেবে। সীমান্ত পেছনে ঘুরে যেই অর্ষাকে বক্সিং মারতে যাবে হেভি ব্যাগটা ঘুরে এসে সীমান্তর মুখে লাগবে। অর্ষা এতটাই হাসি দেবে যে ছোটকাকু সে শব্দে বারান্দায় এসে বলবে :
ছোটকাকু : হাসির পরে আছে কান্না বলে গেছেন রাম সন্না!! তোমাদের তো গরমের ছুটি চলছে, কুয়াকাটা যেতে চাও না?
অর্ষা সীমান্ত একসঙ্গে : অবশ্যই!!
ছোটকাকু : গত চার মাসের খবরের কাগজগুলোতে মফস্বলের পাতায় কুয়াকাটা নিয়ে কী কী খবর রয়েছে সেগুলো রাতে তোমরা আমাকে দিতে পারবে?
সীমান্ত : আজকের রাতের মধ্যে?
অর্ষা : হ্যাঁ ছোটকাকু পারব! কিন্তু তুমি কি ফাদার বেনাসের কথায় ইন্টারেস্টেট?
ছোটকাকু : ইন্টারেস্ট তখনই হবো যখন রাতের মধ্যে তোমরা তোমাদের কাজ করতে পারো?
অর্ষা : আর ফাদার বেনাস?
ছোটকাকু : ওনাকে আজ রাতটা অপেক্ষা করতে হবে!!
দৃশ্য-৫
লোকেশন : ইনডোর, ছোটকাকুর বাসা
ড্রয়িং রুমের কার্পেটে বসে অর্ষা আর সীমান্ত পেপার দেখছে আর কাটছে।
অর্ষা : মনে রাখতে হবে সীমান্ত চার মাসে চারজন বাচ্চা হারায় গেছে।
সীমান্ত : হু আর চারজনই ছেলে, যাদের বয়স ১২-১৪ বছর, সবাই স্কুলে পড়ে।
ঠিক সে সময় অর্ষা একটা পত্রিকায় কুয়াকাটার একটা নিউজ পাবে।
অর্ষা : খবরটা দেখ কুয়াকাটার সৈকতে মৃত তিমি। আর সেটির মাংস নাকি বাজারে সের দরে বিক্রিও হয়েছে!
সীমান্ত : মানে আজ যে তিমি খেলাম এসএস তা কুয়াকাটা থেকে নিয়ে এসেছে!! বাহ্ আমাদের না জানিয়ে কুয়াকাটা উনি গেলেন কখন?
অর্ষা : বুদ্ধু... রাজশাহীর আম কি তুই রাজশাহী গিয়ে কিনে আনিস?
ঠিক তখনই কলিং বেল বাজবে। এসএস প্রবেশ করবে।
এসএস : কী হচ্ছে? পড়াশোনা?
অর্ষা : না, ছোটকাকুর অ্যাসাইনমেন্ট। গত চার মাসে দৈনিক পত্রিকার মফস্বল পাতায় কুয়াকাটা নিয়ে কী কী নিউজ এসেছে তার খবর।
সীমান্ত : তার মধ্যে একটা খবর তিমি মাছের মাংস আপনি আমাদের জন্য কুয়াকাটা থেকে নিয়ে আসছেন!
এসএস : কুয়াকাটা? আরে না, ওটা খাস সিঙ্গাপুরী তিমি! টিনের প্যাকেটে পাওয়া যায়, আমার বন্ধু পাঠিয়েছে। তবে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট যদি সফল হয়, ছোটকাকু যদি প্লিসড হয়, তবে হয়তো কালকের মধ্যে আমাদের কুয়াকাটা মিশন শুরু হবে।
সীমান্ত : আর আমরাও খাস বাংলাদেশি তিমির মাংস খেতে পারব!
সবাই হেসে উঠবে সীমান্তর কথায়।
এসএস : তা গোয়েন্দা সহকারীগণ পত্রিকায় কী পেলেন কুয়াকাটা নিয়ে এই চার মাসে?
অর্ষা : মোট সতেরটি খবর। এই চারজনের খবর আছে, তিমি মাছের খবর আছে।
অর্ষা আর সীমান্ত একটা প্লাস্টিকের ফাইলে সব পেপার কাটিংগুলো পেস্ট করবে।
এসএস : শাবাশ। দেখি কী বলে মি. ক্যাপ্টেন?
ঠিক তখনই ছোটকাকু ড্রয়িং রুমে ঢুকবে। তার মুখটা একটু গম্ভীর থাকবে। অর্ষা, সীমান্ত আর এসএস এ-ওর দিকে মুখ চেয়ে ইশারায় বোঝার চেষ্টা করবে কেন ছোটকাকুর মুখ গম্ভীর। তারা ফাইলটা ছোটকাকুকে দেবে। ছোটকাকু তা পড়তে শুরু করবে।
এসএস : কী হলো ক্যাপ্টেন? এ রকম চুপসে গেলে যে? কুয়াকাটা মিশন কি ক্যানসেল?
ছোটকাকু : কুয়াকাটা এখনো কুয়াশার মতো ঝাপসা, রাত্রির মতো অন্ধকার।
এসএস : তাহলে সূর্যটা কি উঠবে না?
ছোটকাকু : উঠবে, উঠবে। ফাদার বেনাসকে আসতে বলেছি।
অর্ষা : উনি কি আসছেন?
ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠবে। ফাদার বেনাস রুমে প্রবেশ করবে।
ছোটকাকু : যে ছেলেগুলো হারিয়ে গেছে তাদের সবাইকে কি আপনি চিনতেন?
ফাদার : হ্যাঁ, সবাই আমার মিশনারি স্কুলের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই আমি এদের চিনি।
ছোটকাকু : আচ্ছা আপনি কুয়াকাটায় কতদিন আছেন?
ফাদার : তাও কম না, ১৪ বছর হয়ে গেল? কেন বলুন তো?
ছোটকাকু : নাহ্, তেমন কিছু জানতে চাচ্ছি না। আচ্ছা আপনাদের কুয়াকাটায় হাবিবুর রহমান বলে কেউ আছেন?
ফাদার : নামটা এত কমন যে, দুই-তিনজন আছেন।
ছোটকাকু : পত্রিকায় লেখেন। সাংবাদিক।
ফাদার : ইয়েস ইয়েস আছেন একজন, যা সত্যি নয় এমন সব সংবাদ পাঠায় পত্রিকায়।
ছোটকাকু : তিনি গত রাতে আমাকে ফোন করেছিলেন, আমি যেন কুয়াকাটা না যাই। অনেকটা হুমকির মতো!!
ফাদার : কিন্তু কেন?
ছোটকাকু : কারণ পুরোটাই চৌধুরী সাহেবের নাটক!!
ফাদার : নাটক? আপনি এক সাংবাদিকের হুমকিতে চৌধুরী সাহেবকে সন্দেহ করছেন?
ছোটকাকু : মি. বেনাস আপনাকে একটা কথা বলে রাখি একজন গোয়েন্দার কাছে কেউ সন্দেহের ওপরে নয়!
চৌধুরী সাহেব যেমন নয়, সাংবাদিক হাবিবুর রহমানও নয়; এমনকি আপনিও!
ফাদার : আমিও? আপনি কি কুয়াকাটা যাবেন না?
ছোটকাকু : যাব মি. বেনাস, যাব। যেতে আমাকে হবেই। কতগুলো বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে কারা নাটক করছে জানতে হবে আমার। ধন্যবাদ কাল সকালে আমরা কুয়াকাটা যাচ্ছি। গুডনাইট।
দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৩
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : আউটডোর, কুয়াকাটা যাত্রা
ছোটকাকু, অর্ষা, সীমান্ত, এসএস ফাদার বেনাসের গাড়িতে। গাড়ি কোনো একটা হাইওয়ে ধরে চলছে।
ফাদার : মি. ছোটকাকু, চৌধুরী সাহেব অনেক খুশি শেষমেশ আপনি আসছেন! চৌধুরী সাহেব প্রথমেই চেয়েছেন আপনারা চৌধুরী প্যালেসেই থাকুন!
ছোটকাকু : দেখুন ফাদার বেনাস আমি আপনার চৌধুরী সাহেবকে খুশি করার জন্য যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি একজন হুমকিদাতার সঙ্গে কথা বলতে যিনি কাল রাতে আমাকে ফোন করেছিলেন!
ফাদার : দেখুন হাবিবুর রহমান উল্টাপাল্টা লোক, চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে অনেক ঝামেলা করেছে। যদি চৌধুরী সাহেবের দু’পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি থাকত এই লোকগুলো সমুদ্রের জলে ভেসে যেত!!
ছোটকাকু : কেন চৌধুরী সাহেব কি অসুস্থ?
ফাদার : হু... গত বছর ওনার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়, তারপর থেকে হুইল চেয়ারে। আর হুইল চেয়ার জীবনে তার একমাত্র সঙ্গী ওই নাতি। এজন্যই আপনাকে কুয়াকাটা আনতে ওনার এত আকুতি!
ছোটকাকু : হু, বুঝলাম।
অর্ষা : আচ্ছা ছোটকাকু কুয়াকাটা এটা কেমন নাম?
সীমান্ত : কেন তুমি কি ভেবেছিলে ওটার নাম হবে সমুদ্র কাটা!!
ছোটকাকু : কুয়া চেন তোমরা? ঢাকায় বড় হয়েছ নাও চিনতে পারো। কুয়া মাটির নিচে একটা চৌবাচ্চার মতো, যাতে মাটির গভীরের প্রাকৃতিক পানি সব সময় রিজার্ভ থাকে। অনেকটা আমাদের বাড়ির ছাদে যে পানির ট্যাঙ্ক থাকে সে রকম। সেই কুয়া বানাতে হলে মাটি কাটতে হয়। আর বার্মিজরা যখন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য দখল করে নেয়, তখন অনেক রাখাইন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে আসে এখানে। আশেপাশে সমুদ্র আর জঙ্গলে খাবার পানির ছিল বড্ড অভাব, এজন্য তারা কুয়া খোঁড়ে, আর সেই কুয়া কাটা থেকেই এলাকার নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা!
এসএস : বাহ। শুনেছি ওখানে নাকি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত বড্ড ফ্যান্টাস্টিক?
ছোটকাকু : ফ্যান্টাস্টিক কিনা জানি না, তবে বিশ্বের একমাত্র জায়গা যেখানে একই প্রান্ত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়?
সীমান্ত : কেন ওখানে কি পৃথিবী স্থির?
ছোটকাকু : স্থির না, জিওম্যাট্রির খেলা!
অর্ষা : শুধু সমুদ্র আর কুয়া ছাড়া আর কিছু নেই ওখানে?
ফাদার কথা বলবে :
ফাদার : থাকবে না কেন? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি আছে, গঙ্গামতীর জঙ্গল আছে, যা অনেকটা সুন্দরবনের মতোই।
এসএস : মানে রথ দেখা কলা বেচা একসঙ্গে, সমুদ্রও দেখা হবে সুন্দরবনও!
কথা বলতে বলতে তারা একটা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকবে।
দৃশ্য-২
লোকেশন : আউটডোর, হাইওয়ে রেস্তোরাঁ
হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে একটা টেবিল দখল করে বসবে ছোটকাকুদের গ্রুপটা। ঠিক তখনই সেখানে প্রবেশ করবে নিউজ চ্যানেলের অহনাদের গ্রুপটা। জামাল অহনার কানে ফিসফিস করে বলবে :
জামাল : অহনা ছোটকাকু দেখেছো?
অহনা : হু, তোমরা বসো, আমি আসছি।
বলে অহনা ছোটকাকুর দিকে যাবে।
অহনা : ও মাই গড, আপনি ছোটকাকু না? তুমি অর্ষা, তুমি সীমান্ত, আর আপনি এসএস? ঠিক?
সবাই মাথা নাড়াবে।
অহনা : তা কই যাওয়া হচ্ছে?
ছোটকাকু : কুয়াকাটা। তা আপনাকে ঠিক চিনলাম না?
অহনা : আমি নিউজ বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিক অহনা, অহনা মুস্তাফিজ। ওই আমার গ্রুপ। আর কী ব্যাপার বলুন তো আমরাও যাচ্ছি কুয়াকাটা, একটা নিউজ কাভার করতে। তা আপনাদের কি অ্যাডভেঞ্চার নাকি স্রেফ হলিডে?
ছোটকাকু : অ্যাডভেঞ্চার প্লাস হলিডে।
অহনা : নাকি ‘শিশু নিখোঁজ রহস্য’? হা হা হা, দেখা হবে কুয়াকাটায়।
বলে অহনা চলে যাবে।
এসএস : তুমি কি আজকাল ফেসবুক ব্যবহার শুরু করেছ?
ছোটকাকু : কেন?
এসএস : তুমি গেলেও না সবাই জেনে গেল? ভাবলাম তুমি অর্ষা-সীমান্তের মতো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করেছÑ আজ পরীক্ষা শুরু, বন্ধুরা দোয়া কর।
অর্ষা : নিশ্চয়ই সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বলেছে?
ছোটকাকু : শাবাশ অর্ষা। সাংবাদিক সাংবাদিক মাসতুতো ভাই।
ফাদার বেনাসের দিকে তাকিয়ে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : ফাদার বেনাস খেলা কিন্তু জমে গেছে। এখন গোলটা কে দেয় এটাই দেখার বিষয়!!!
দৃশ্য-৩
লোকেশন : আউটডোর, অহনা ও তার গ্রুপের গাড়ি
গাড়িতে বসে আছে অহনা, রিমা আর জামাল।
জামাল : অহনা তোমার কাছে কী মনে হচ্ছে, ফ্রডটা কে? হাবিবুর রহমান নাকি চৌধুরী সাহেব? আর ওই ফাদারটা কিন্তু চৌধুরী সাহেবের লোক!
অহনা : ব্যাপারটা জটিল এখানেই। হাবিবুর রহমানের মতে চৌধুরী সাহেবের অতীত ইতিহাস ভালো নয়, আবার ছোটকাকুর মতো একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা কাজ করছে চৌধুরী সাহেবের হয়ে!
রিমা : আর ছোটকাকুর অতীত ইতিহাসের সঙ্গে তা কিন্তু যায় না!
অহনা : অঙ্কটা এখানেই মিলছে না। দুয়ে দুয়ে চার না হয়ে পাঁচ হচ্ছে, আর ব্যাপারটাও টেনশন দিচ্ছে!
জামাল : কুয়াকাটায় আমাদের প্ল্যান কী?
অহনা : আমরা কুয়াকাটায় কোন অ্যাসাইনমেন্টে যাচ্ছি শুধু হাবিবুর রহমান ছাড়া কেউ জানে না, না চৌধুরী সাহেব, না ছোটকাকু।
রিমা : তাহলে আমাদের মিশনের বেজ পয়েন্ট হাবিবুর রহমান?
অহনা : ইয়েস। বাকিরা জানবে আমরা কুয়াকাটার ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছি। জামাল পৌঁছে হাবিবুর রহমানে সঙ্গে মিটিং ঠিক কর। লোকটা একটু ত্যাড়া, কথা শুনে যা বুঝলাম।
জামাল : ওকে ম্যাডাম। যদি ছোটকাকু বুঝতে পারে?
অহনা : এখানেই একটা সমস্যা। মনে রেখ আমরা ডালে ডালে থাকলেও ছোটকাকুর মন থাকে পাতায় পাতায়, তাকে সামলাতে হবে। কারণ আমরা এখনো জানি না ছোটকাকু কী চায়! যদি হাবিবুর রহমানের কথা সত্য হয়, তবে ছোটকাকুও আমাদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়!
দৃশ্য-৪
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
গাড়িতে বসে আছে ছোটকাকু, অর্ষা, সীমান্ত, এসএস, ফাদার বেনাস। ছোটকাকুর আগের কথাবার্তায় ফাদার বেনাস বিমর্ষ। সে হাল না ছেড়ে ছোটকাকুকে বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা যেন চৌধুরী প্যালেসে থাকে।
ফাদার : দেখুন যদিও কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট প্লেস, অনেক হোটেলও হয়েছে। কিন্তু চৌধুরী প্যালেস ইজ বেস্ট প্লেস ফর ইউ অল ফর দ্যা ইনভেস্টিগেশন!!
ছোটকাকু : দেখুন মি. বেনাস আমি প্রথমেই বলেছি কেউ সন্দেহের ওপরে নয়। তাই স্যরি। আমাদের পর্যটনের যে রেস্টহাউস আছে, সেখানে তিনটা রুম পেলেই হলো।
ফাদার : কিন্তু চৌধুরী সাহেব কী মনে করবেন? উনি অনেক আশা করেছিলেন! ওনার ওখানে থাকলে আপনিও খুশি হতেন!
ছোটকাকু : আমি কাউকে খুশি করার জন্য কুয়াকাটা যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি কয়েকটি নির্দোষ শিশুকে বাঁচাতে।
একটা জিনিস মনে রাখবেন মি. বেনাস আমি খুশি হবো যদি আপনি আমি যে কুয়াকাটা যাচ্ছি এ কথাটা কাউকে এমনকি চৌধুরী সাহেবকেও না বলেন তবে। আশা করব আপনি এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন?
ফাদার বেনাস বিমর্ষ মুখে মাথা নাড়াবে।
সীমান্ত : তুমি যে বারবার পেপার কাটিং দেখছো তাতে নতুন কোনো তথ্য কি পেলে?
ছোটকাকু : বিশেষ কিছু চোখে পড়েনি বলেই বারবার সংবাদগুলো দেখছি।
এসএস : একটা জিনিস খেয়াল করেছ ক্যাপ্টেন, যে ছেলেগুলো হারিয়েছে তারা কিন্তু সবাই একই দিনে হারিয়েছে!
অর্ষা : কিন্তু ছোটকাকু চৌধুরী সাহেবের নাতি কিন্তু একই দিনে হারিয়ে যায়নি!
ছোটকাকু : খটকা তো ওখানেই অর্ষা, খটকা ওখানেই! ব্যাপারটা আমিও খেয়াল করেছি। পরে কুয়াকাটা পৌঁছে জানতে হবে, শুধু দিন নয়Ñ হারানোর সময়গুলো একই কি না!
এতক্ষণ কথা না বললেও এবার ফাদার বেনাস সামনের সিট থেকে মাথা ঘুরিয়ে বলবে :
ফাদার : এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখনই দিতে পারি।
ছোটকাকু : বলুন তাহলে।
ফাদার : একই দিনে ছেলেগুলো হারিয়েছে সেটা সত্যি, তবে সময় ছিল একেক রকম। কেউ সকালে, কেউ বিকেলে আর কেউ রাতে।
ছোটকাকু : আপনি এতটা কনফিডেন্ট কীভাবে?
ফাদার : আমরা রাতের বেলা প্রথম বুঝতে পারি, ছেলেরা ঘরে ফিরে আসেনি। তারপর খোঁজ নিয়ে দেখি কে কখন বেরিয়েছে। সেটা দেখেই বুঝতে পারি, কে কখন হারিয়েছে।
এসএস : আর আপনার চৌধুরী সাহেবের নাতি?
ফাদার : দেখুন আপনার এক সাংবাদিকের কথা শুনে প্রথম থেকেই চৌধুরী সাহেবকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি ভিলেন নন!
ছোটকাকু : কে নায়ক কে ভিলেন কেউ জানে না এখনো, আমিও না আপনিও না; কিন্তু যেদিন জানব সে দিনের অপেক্ষা করুন মি. বেনাস, সিনেমা কেবল শুরু, শেষের দৃশ্যটাই আসল!!
দৃশ্য-৫
লোকেশন : আউটডোর, অহনা ও তার গ্রুপের গাড়ি
হাইওয়ে ধরে ছুটছে অহনা ও তার গ্রুপের গাড়ি। তাদের গাড়ির পাশ থেকে শাঁই করে ছুটে যাবে ছোটকাকুদের গাড়ি।
অহনা : দেখলে ছোটকাকুদের গাড়ি গেল?
রিমা : তার মানে আমাদের আগেই তারা পৌঁছে যাবে। মনে হয় চৌধুরী সাহেবের বাসায়ই উঠবে।
অহনা : যেখানেই উঠুক আমাদের একটু সাবধান থাকতে হবে। দেখ এই অ্যাসাইনমেন্টটা তোমাদের কী জানি না কিন্তু আমার জন্য অনেক ইমপরট্যান্ট। শুধু ক্যারিয়ার না, ছোটবেলার গোয়েন্দা হওয়ার খায়েশটা একটু পূরণ করার সুযোগ।
জামাল : আর বোকারাই সুযোগ পেয়েও হারায়।
দৃশ্য-৬
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
গাড়িতে ছোটকাকু, অর্ষা, সীমান্ত আর এসএসের মধ্যে কথোপকথন চলছে।
অর্ষা : সাংবাদিক মেয়েটার ব্যাপারটা কী ছোটকাকু?
সীমান্ত : তার কাজ কী সেটা সে জানাবে না কিন্তু আমাদের কাজ নিয়ে অনেক আগ্রহ।
ছোটকাকু : এটাই তো ওদের কাজ। সে কিন্তু কুয়াকাটা যাচ্ছে এই বাচ্চা নিখোঁজের ব্যাপার নিয়েই!
এসএস : এজন্যই তার আগ্রহ তুমি কেন যাচ্ছো কুয়াকাটায়।
ছোটকাকু : হু... এটাই!
অর্ষা : আচ্ছা ছোটকাকু এই সাংবাদিক মেয়েটাও কি তোমার সন্দেহের তালিকায় আছে?
ছোটকাকু : আমার তালিকায় সবাই আছে, শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু সাবধান থাকিস, আমরা মাকড়শার এক জালে জড়ায় পড়ছি, চোখ-কান খোলা রাখিস। ঠিক তখনই অর্ষা বেশ আতঙ্কের চিৎকার দিয়ে উঠবে। আর সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা বেশ কড়া ব্রেক করবে। সবার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা যাবে।
তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৪
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
আগের পর্বে দেখানো গাড়ির ব্রেক করা অংশ থেকে এই পর্ব শুরু হবে।
এসএস : কী হলো ড্রাইভার? অ্যাক্সিডেন্ট?
ড্রাইভার : স্যার একটা ছোট ছেলে আর একটু হলে গাড়ির নিচে পড়ে যেত স্যার।
ফাদার : এটা এ এলাকার কমন বিষয়।
ছোটকাকু : আমাদের মনে হয় নামতে হবে, ব্যাপারটা কী বোঝা দরকার।
বাইরে একটা জটলা। তারা গাড়ি থেকে নেমে জটলার দিকে যাবে। তারা দেখবে ১২-১৪ বছরের খালি গা, হাফপ্যান্ট পরা, মাথার চুল ছোট ছোট করে ছাঁটা একটা ছেলে বসে আছে।
এসএস : ওফ, একটু হলেই ছেলেটা গাড়ির তলায় পড়ত!
ফাদার : ছেলে মানে ছেলে মানেÑ ও তো আমাদের বাবলু!
ছোটকাকু : বাবলু মানে?
ফাদার : বাবলু মানে আমাদের হারিয়ে যাওয়া চারজনের একজন। হারু মিয়ার ছেলে।
ছোটকাকু : লাস্ট যে ছেলেটা হারিয়ে গেল?
ফাদার : হু, ফাদার বেনাস তখন সেখানে জটলা পাকানো লোকগুলোর মধ্যে এক ছেলের সঙ্গে কথা বলবে।
ফাদার : এই ছেলে এলো কোথা থেকে?
পথচারী : জানি না ফাদার, আপনাদের গাড়ির আওয়াজ পেলাম, দৌড়ে দেখি এই অবস্থা।
ফাদার : ওকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
পথচারী : আপনার মিশন স্কুলেরই তো ও ছাত্র, আপনি নিলেই ভালো হবে। অন্তত ভরসাটা থাকবে! ফাদার বেনাস বাবলুকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে আর ঠিক তখনই অহনাদের গাড়িটি ওখানে এসে দাঁড়াবে।
দৃশ্য-২
লোকেশন : আউটডোর, অ্যাক্সিডেন্ট এলাকা
অহনা গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই ছোটকাকুর সঙ্গে দেখা হবে।
অহনা : ছোটকাকু কী ব্যাপার দেখুন আপনার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল? ঘটনা কী? এত জটলা কীসের? আর ছেলেটাইবা কে?
ছোটকাকু : একটা ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্ট বলতে পারেন? আজকালকার দুরন্ত বাচ্চা। দৌড়ে আমাদের গাড়ির নিচে পড়তে এসেছিল।
অহনা : ওহহ... কিন্তু ছোটকাকু আপনি আমাকে তখন থেকে আপনি আপনি বলছেন কেন বলুন তো? আমি কত ছোট আপনার! আমাকে তুমিই বলুন।
ছোটকাকু : আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে যাই কেমন? ভালো থাকিও।
অহনা : কিন্তু আপনারা ওকে নিয়ে যাচ্ছেন যে?
ছোটকাকু ফাদার বেনাসকে দেখিয়ে বলবে :
ছোটকাকু : ওহহ... ওই যে সাদা আলখেল্লা পরা লোকটা ওনি ফাদার বেনাস, ওনার একটা মিশনারি স্কুল আছে কুয়াকাটায়, ওনার ছাত্র ওই বাচ্চাটা তাই ওনি নিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার লোকজনও তাই চায়।
অহনা : আচ্ছা। অ্যাক্সিডেন্ট কি খুব গুরুতর?
ছোটকাকু : না না। কিছু হয়নি। শুধু একটু শক্ড হয়েছে। আচ্ছা বাই।
অহনা : বাই ছোটকাকু... আবার দেখা হবে।
ছোটকাকু : নিশ্চয়ই। পৃথিবী যখন গোল।
অহনা হেসে বিদায় নেবে।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : আউটডোর, অহনাদের গাড়ি
অহনা, রিমা আর জামালের মধ্যে কথোপকথন চলছে।
অহনা : ব্যাপারটা দেখেছো? ফাদার লোকটা কেন বাচ্চাটাকে নিয়ে যাচ্ছে? এটা কি হারানো ছেলেদের একজন?
রিমা : কিন্তু ছোটকাকুর কথাটা তো শুনলে! বাচ্চাটা শক্ড হয়েছে আর সেজন্য তারা তাকে নিয়ে যাচ্ছে।
অহনা : কেন যেন ছোটকাকুর কথাগুলো আমার কাছে মিস্টিরিয়াস মনে হচ্ছে। সে আমাদের কাছে লুকাচ্ছে কেন?
রিমা : অহনা তোমার মনে হয় ছোটকাকুকে সব খুলে বলা উচিত আমরা কেন কুয়াকাটা যাচ্ছি!
অহনা : হু, ঠিক। কিন্তু তার আগে বুঝতে হবে হাবিবুর রহমান কি সত্যি বলছে? ক্রিমিনাল কি চৌধুরী
সাহেব? ফাদার লোকটা কি মুখোশ পরে আছে? ছোটকাকু কি নিজের ইচ্ছায় চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে কাজ করছে নাকি সেও অন্ধকারে?
দৃশ্য-৪
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
গাড়িতে উঠে সীমান্ত আর অর্ষার পাশে ফাদার বেনাস ছেলেটিকে বসিয়ে দেবে।
সীমান্ত : বাবলু কেমন আছ?
বাবলু কোনো কথা বলবে না।
অর্ষা : তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে? কিছু খাবা?
ফাদার : ছেলেটা বোধহয় ভয় পেয়েছে। তাই কথা বলছে না।
এসএস একটা পানির বোতল এগিয়ে দেবে।
এসএস : ওকে একটু পানি খাওয়াও... ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এতদিন কোথায় ছিলে বাবলু?
বাবলু ছেলেটা ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে এসএসকে দেখবে। কিন্তু কোনো জবাব দিল না। ফাদার বেনাস সামনের সিট থেকে বেশ বিরক্ত হয়ে বলবে :
ফাদার : বাবলু-বাবলু কথা বলছো না কেন? আমাকে চিনতে পারছো না?
বাবলু কোনো কথা বলবে না, ইশারায় বুঝিয়ে দেবে সে চেনে।
ফাদার : তাহলে কথা বলছো না কেন? এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?
বাবলু : এরা কারা?
ফাদার : আমার বন্ধু। তোমাকে খুঁজতে এসেছে।
বাবলু : আমাকে খুঁজতে মানে?
ছোটকাকু চিন্তিত হয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
দৃশ্য-৫
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
সবাই চুপচাপ। এই মৌনতা কাটাতে এসএস কথা শুরু করবে।
এসএস : খিদেয় আমার পেট চোঁ চোঁ করছে। গাড়ি থামিয়ে রাখলে চলবে? ড্রাইভার সাহেব, রওনা দিন, রওনা দিন। ড্রাইভার ফাদার বেনাসের দিকে তাকাবে। ফাদার বেনাস তাকাবে ছোটকাকুর দিকে।
ছোটকাকু : বাবলুর বাসা কোথায়?
ফাদার : আপনারা যে রেস্টহাউসে থাকছেন তার কাছাকাছি।
ছোটকাকু : তাহলে বাবলুকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাই।
ফাদার : বাবলুকে পরে নামালেও হবে। আপনারা পরিশ্রান্ত। আগে আপনারা রেস্টহাউসে নামেন।
এসএস : ফাদার, সত্যি আপনি আমাদের মনের কথা বলেছেন। ক্যাপ্টেন চল আগে রেস্টহাউসেই যাই।
ছোটকাকু : খাওয়া-দাওয়া অনেক হবে। সবার আগে আমার জানা প্রয়োজন ছেলেটা এতদিন কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল?
এসএস : জানার প্রয়োজন আমিও বুঝছি, তুমিও বুঝেছ। কিন্তু ছেলে কথা না বললে আমরা কী করব? আর তুমি তো জানোই হাংরিম্যান মানেই তো অ্যাংরিম্যান!
ছোটকাকু ফাদার বেনাসের দিকে তাকিয়ে বলবে :
ছোটকাকু : সামনে যদি কোনো রেস্টুরেন্ট থাকে সেখানে থামুন। ছেলেটার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।
ফাদার : এটা ঢাকা নয়, কুয়াকাটা। আপনাদের বসার মতো রেস্টুরেন্ট কোথায় পাবেন?
তাদের কথার মাঝখানে গাড়ির ড্রাইভার বলে বসবে :
ড্রাইভার : তবে স্যার আপনারা যদি ভালো চা খেতে চান, সামনেই সগির কারিগরের চায়ের দোকান।
ফাদার বেনাস বেশ কড়া দৃষ্টিতে ড্রাইভারের দিকে তাকাবে। ড্রাইভার অপ্রস্তুত হয়ে চুপ হয়ে যাবে।
ছোটকাকু : অনেকক্ষণ ধরে চা খাব ভাবছিলাম। ড্রাইভার সাহেব আপনি বরং সগির কারিগরের চায়ের দোকানে নিয়ে চলেন।
গাড়ি একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াবে। দোকানটি বেশ ভাঙাচোরা। তা দেখে এসএস একটু মন খারাপ করে বলবে :
এসএস : ক্যাপ্টেন একবার চিন্তা করো, এই দোকানে চা খাবে?
অর্ষা : শুধু চা নয়, গরম শিঙ্গাড়া খাব।
সীমান্ত : আমি খাব মোগলাই!
চায়ের দোকানটিতে অনেকগুলো লোক ছিল। তারা চা খাচ্ছিল। তারা সবাই বাবলুকে দেখছে। তারা বাবলুকে দেখে মৃদু গুঞ্জন শুরু করবে। সবাই মিলে একটি টেবিলে গিয়ে বসবে। বাবলু প্রায় রাক্ষসের মতো মোগলাই পরোটা খাওয়া শুরু করবে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে তার খাওয়া দেখবে।
ফাদার : বাবলু এতদিন কোথায় ছিলে?
সে উত্তর না দিয়ে ওয়েটারকে ডাকবে।
বাবলু : আমি চা খাব!
ফাদার : সে কী! এর মধ্যে তুমি চা খাওয়া শিখে গেছ!
বাবলু চা খাওয়া শুরু করবে।
ছোটকাকু : বাবলু কতদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল?
ফাদার : গত পরশু আপনার বাসায় গেলাম, তার মানে ৪ দিন হলো।
ছোটকাকু : মাত্র ৪ দিনে একটি শিশুর স্বভাব পরিবর্তন মিস্টিরিয়াস!
এরপর বেশ জোর দিয়ে বাবলুর দিকে তাকিয়ে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : আচ্ছা বাবলু, খাওয়া-দাওয়া তো হচ্ছেÑ তুমি কেমন ছিলে? কোথায় ছিলে?
বাবলু ছোটকাকুর দিকে তাকাবে।
বাবলু : আমাকে শিঙ্গাড়া দেয়নি কেন? আমি শিঙ্গাড়া খাব!
অর্ষা : মনে হচ্ছে ছেলেটা অসুস্থ!
সীমান্ত : কিংবা এখনো শক্ড!
ছোটকাকু : হু... অপেক্ষা করতে হবে, সবুরে মেওয়া ফলে আর সে মেওয়া মিষ্টি হয়!
দৃশ্য-৬
লোকেশন : আউটডোর, কুয়াকাটায় চায়ের দোকান
দোকানের সামনে একটা মোটরসাইকেল এসে দাঁড়াবে। মোটরসাইকেল থেকে পুরো মাথা কামানো এক লোক প্রায় চিৎকার করতে করতে দোকানে ঢুকবে। ইনি সাংবাদিক হাবিবুর রহমান।
হা. র. : কোথায়? ঢাকা থেকে আসা লোকগুলো কোথায়?
ফাদার বেনাস ছোটকাকুকে ফিসফিস করে বলবে :
ফাদার : ওই লোকটিই আপনার হাবিবুর রহমান! সাংবাদিক!
হাবিবুর রহমান বাবলুর সামনে এসে দাঁড়াবে। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাবে।
হা. র. : তখনই বুঝেছিলাম এই সবকিছু চৌধুরী সাহেবের জানা। নাতি হারানোর গল্প ফেঁদে নিজে জনপ্রিয় হতে চান!
ছোটকাকু : ব্যাপারটা হতেও পারে, নাও পারে।
হা. র. : আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, আপনার সঙ্গেই আমার ফোনে কথা হয়েছে। তখনই আপনাকে বলেছিলাম কুয়াকাটার এই ঘটনায় নিজেকে জড়াবেন না!
ছোটকাকু : আমি কিসে জড়াবো আর কিসে জড়াবো না সেটা বলার আপনি কে? তাছাড়া আমি কিসে জড়াবো বা জড়াবো না সে ব্যাপারে কেউ কথা বলুক, সেটা আমি একদমই পছন্দ করি না!
হাবিবুর রহমান প্রথমে ছোটকাকুর কথায় একটু অপ্রস্তুত হবে। এরপর গলার স্বরটা নামিয়ে বলবে :
হা. র. : এটা ঢাকা নয় মি. ছোটকাকু, এটা কুয়াকাটা! এখানে আমার ইচ্ছারও দাম আছে!
ছোটকাকু : সাংবাদিকতা করেন বলে কি সবাই আপনাকে ভয় পাবে?
হা. র. : সাংবাদিকের চেয়েও বড় পরিচয় আমি এই এলাকার একজন মানুষ। এখানকার সব লোক আমাকে মানে!
ছোটকাকু : আপনি কী বলতে এখানে এসেছেন?
ঠিক তখনই একজন ওয়েটার এক প্লেট মোগলাই পরোটা নিয়ে হাবিবুর রহমানের পাশে এসে দাঁড়াবে। হাবিবুর রহমান প্লেটটা হাতে নিয়ে একটা চেয়ার টেনে ছোটকাকুদের টেবিলে এসে বসবে।
হা. র. : দেখুন আমি না বলার পরও আপনি কেন এই ব্যাপারটায় জড়িয়েছেন আমি জানি না। কিন্তু ফাদার বেনাস আপনি তো ভালো মানুষ। আপনি কেন চৌধুরী সাহেবের এই ফাঁদে পা দিলেন?
ফাদার : চৌধুরী সাহেবের ফাঁদ বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
হা. র. : চৌধুরী সাহেব আগামী নির্বাচনে দাঁড়াতে চান। এই ছেলে হারানোর ব্যাপারটা তিনিই ঘটিয়েছেন! এবার ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : তাতে তার লাভ?
হা. র. : লাভ এটাইÑ আপনার মতো বড় একজন মানুষকে কুয়াকাটায় নিয়ে এসে ছেলে উদ্ধারের গল্প বানানো!
ছোটকাকু : সেটা কেন?
হা. র. : এই যে আপনারা কুয়াকাটায় পা দিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে বাবলু উদ্ধার হয়ে গেল!
ছোটকাকু : কিন্তু বাবলুকে তো আমরা উদ্ধার করিনি! পথের মধ্যে হঠাৎ করে পেয়ে গেছি।
হা. র. : আগামী কয়েক দিনে এভাবে বাকি তিনজন ছেলেকেও ফিরে পাবেন। আর চৌধুরী সাহেব সবার ঘরে ছেলেদের পৌঁছে দিয়ে কৃতিত্ব নেবেন।
এবার ফাদার বেনাস কথা বলবে :
ফাদার : হাবিব, একজনকে এভাবে দোষ না দিয়ে বরং বাবলুকেই জিজ্ঞেস করা যাক, এই কয়েকদিন সে কোথায় ছিল।
এবার ফাদার আর হাবিবুর রহমান বেশ কয়েকবার বাবলুকে ডাকবে।
এসএস : বাবলু এত লোক তোমাকে ডাকছি। তুমি কথা বলছো না কেন?
ফাদার : বাবলু তোমার কথা বলা খুব দরকার।
হাবিবুর রহমান বাবলুকে দাঁড় করিয়ে বলবে :
হা. র. : বাবলু কথা বলো! কোথায় ছিলে এই কয়দিন?
ফাদার : আমি ফাদার বেনাস। আমাকে তুমি চিনতে পারছো না?
এবার বাবলু ফাদারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলবে :
বাবলু : ফাদার আমি আপনাকে চিনি। কিন্তু আপনারা সবাই আমাকে ‘বাবলু’ বলছেন কেন? আমি তো হারুন!!!!!!!!!
চতুর্থ পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৫
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য ১
লোকেশন : আউটডোর, চায়ের দোকান
বাবলুর মুখে তার নাম হারুন এটা শোনার পর সবাই অপ্রস্তুত হয়ে যাবে।
ছোটকাকু : হারুনটা কে?
ফাদার : তা তো বুঝতে পারছি না!
ছোটকাকু : যে ছেলেগুলো হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে কারও নাম কি হারুন?
ফাদার : নাহ্, ছোটকাকু হাবিবুর রহমানের দিকে তাকাবে।
হা. র. : হারুন নামে তো কেউ হারায়নি!
ছোটকাকু : তবে?
হা. র. : তবে কী? হারায়নি তো হারায়নি। আমরা তো আর জোর করে কিছু বলছি না!
ছোটকাকু : তবে মিথ্যাও তো বলতে পারেন?
হা. র. : দেখুন আমি আপনাকে আগেও বলেছি এটা কুয়াকাটা, ঢাকা নয়। গোয়েন্দাগিরি ঢাকায় ফলালেই ভালো!
ছোটকাকু কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকবে, এরপর ধীরে ধীরে বলবে :
ছোটকাকু : গোয়েন্দাগিরি আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে ফলাব, তা আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে না আমার। এখন আপনাকে যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দেন। হারুন কে?
হা. র. : জেলেপাড়ার ইয়াসিন জেলের ছেলের নাম সম্ভবত হারুন।
ফাদার : ইয়েস ইয়েস ও তো আমার স্কুলেই পড়ে।
ছোটকাকু : বয়স কত?
ফাদার : বাবলুর সমানই তো হবে।
ছোটকাকু বাবলুর কাছে যাবে।
ছোটকাকু : বাবলু, ইয়ে মানে হারুন তোমার বাবার নাম কী?
বাবলু কোনো কথা বলবে না।
ছোটকাকু : আচ্ছা হারুন, তোমার বাবা কী করেন?
বাবলু : মাছ ধরে।
ছোটকাকু ফাদারের দিকে তাকাবে।
ছোটকাকু : আমি এখনই ইয়াসিন জেলের বাসায় যেতে চাই।
ফাদার : এখন যাওয়া যাবে না। তবে সকালে নিয়ে যেতে পারি।
ছোটকাকু : এখন যাওয়া যাবে না কেন?
হাবিবুর রহমান তাদের মাঝখানে এসে বলবে :
হা. র. : এটা ঢাকা শহর নয়। ইচ্ছা করলেই গাড়ি করে যেখানে-সেখানে যাওয়া যায় না।
ছোটকাকু : আমি জানি এটা কুয়াকাটা। এখানে সবার বাড়িতে গাড়ি করে যাওয়া যাবে না। নৌকায় যেতে হতে পারে, রিকশা-ভ্যানে যাওয়া যাবে।
এসএস : অথবা মোটরসাইকেলে।
ছোটকাকু : ইয়েস। গাড়ি যাবে না বলে যাওয়া তো বন্ধ হতে পারে না!
সবাই দোকান থেকে বের হবে ইয়াসিন জেলের বাড়ি যাওয়ার জন্য। এ সময় হাবিবুর রহমান ছোটকাকুর পথ আটকিয়ে বলবে :
হা. র. : দেখুন আপনি কী করছেন না করছেন তার আমার একটা ধারণা থাকতে হবে। আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। এটাকে সহযোগিতাও বলতে পারেন।
ছোটকাকু : ধন্যবাদ। আপনাকে আমার প্রয়োজন।
সবাই গাড়িতে উঠবে। গাড়ি ছেড়ে দেবে। হাবিবুর রহমান তার মোটরসাইকেল স্টার্ট দেবে।
দৃশ্য-২
লোকেশন : আউটডোর, অহনাদের গাড়ি
অহনা ও তার গ্রুপ গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করে গাড়ি নিয়ে দোকান থেকে একটু দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে।
জামাল : ওরা কিন্তু বের হচ্ছে।
রিমা : সঙ্গের ন্যাড়া মাথার মোটরসাইকেলওয়ালা কে?
অহনা : আমার মনে হচ্ছে হাবিবুর রহমান। জামাল তাকে চেনো না?
জামাল : আমি কখনও তাকে দেখিনি। শুধু কথা বলেছি।
রিমা : আমরা কি ফলো করব?
অহনা : অবশ্যই। দেখতে হবে কোথায় ওরা যায়। জামাল ক্যামেরা রেডি রেখো।
জামাল : ওকে ম্যাডাম, আই অ্যাম অলওয়েজ রেডি।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : আউটডোর, ছোটকাকুর গাড়ি
গাড়ি চলছে।
এসএস : ক্যাপ্টেন, লোকটা আমাদের পিছু ছাড়ছে না কেন?
ফাদার : আগেই বলেছি আপনাদের লোকটা অনেক বাজে লোক। শুধু সংবাদ খুঁজে বেড়ায়। হয়তো ভাবছে আমাদের সঙ্গে থাকলে কোনো একটা খবর তৈরি হবে।
ছোটকাকু : হতে পারে ফাদার। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও একটা ধাঁধাঁর মধ্যে আছে।
অর্ষা : কিন্তু তোমাকে হুমকি দিচ্ছে কেন?
সীমান্ত : হু, তুমি তো বলছো উনি নিজেই কনফিউজ।
ছোটকাকু : সে তার ধাঁধাঁটা মেলাতে পারছে না। প্রথমে সে ব্যাপারটাকে এতটা জটিল না ভেবে একটা সোজাসাপ্টা ব্যাপার মনে করেছিল।
এসএস : মানে চৌধুরী সাহেবের ইনভল্বমেন্ট?
ছোটকাকু : ইয়েস, এখন বাবলুর ফিরে আসা, বাবলুর নিজেকে হারুন ভাবা এসবে জিনিসটা জট পাকিয়ে গেছে।
আর এই জট ছাড়াতে এখন ওর আমাকে দরকার।
অর্ষা : এজন্যই তবে একটু আগে সে তোমাকে সহযোগিতা করার কথা বলল?
ছোটকাকু : হু। আর আমারও ওর সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন।
ফাদার : আপনি কী বলছেন এসব? একটা বাজে লোকের সহযোগিতা আপনি নেবেন?
ছোটকাকু : মি. ফাদার আপনি আমার কাছে ওই লোকটার মতোই আননোন। আপনাকে চিনি কয় দিন? আর আপনার চৌধুরী সাহেবকে তো একদিনও দেখলামই না।
কথা বলতে বলতে তাদের গাড়ি একটা সরু গলির মধ্যে এসে দাঁড়াবে। এরপর আর গাড়ি এগোবে না। আর কিছু দূরে অহনাদের গাড়িও দাঁড়াবে।
দৃশ্য-৪
লোকেশন : আউটডোর, অহনাদের গাড়ি
ছোটকাকুর গাড়ি দাঁড়ানোর পর অহনাদের গাড়িও বেশ দূরে গিয়ে দাঁড়াবে।
অহনা : এটা তো মনে হচ্ছে একটা বস্তি?
রিমা : জেলেদের বস্তি হতে পারে? কুয়াকাটায় জেলের তো অভাব নেই!
অহনা : কিন্তু এই বস্তিতে ওদের কী কাজ? চলো নেমে পড়ো। কাজ মনে হয় ফাইনালি আমাদের শুরুই হলো! তারা গাড়ি থেকে নেমে পড়বে।
দৃশ্য-৫
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, ছোটকাকু ও তার গ্রুপ
ছোটকাকু সবাইকে নিয়ে জেলেপাড়ার সামনে একটা সরু গলির সামনে এসে দাঁড়াবে। অন্ধকার। কিন্তু মোটরসাইকেলের আলোতে গলিটা দেখা যাবে।
ফাদার : এখান থেকে মিনিট পাঁচেক হেঁটে যেতে হবে। কিন্তু একে অন্ধকার, তার ওপর গলি। আপনারাও নতুন মানুষ।
এসএস : ফাদার আপনাকে যেতে হবে না, আপনি গাড়িতেই থাকুন।
হাবিবুর রহমান ছোটকাকুকে বলবে :
হা. র. : আপনি ইচ্ছা করলে আমার সঙ্গে মোটরসাইকেলে যেতে পারেন। এই গলিতে মোটরসাইকেল যাবে।
ছোটকাকু : আপনি চিন্তা করিয়েন না হাবিবুর রহমান সাহেব, আপনার মোটরসাইকেল আমার প্রয়োজন, তবে এখন নয়।
ছোটকাকু অর্ষা আর সীমান্তকে পাশে নিয়ে গলির ভেতর ঢুকবে, পেছনে ফাদার, এসএস। মোটরসাইকেল পার্ক করে হাবিবুর রহমান সবার পেছনে থাকবে।
দৃশ্য-৬
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, অহনাদের গাড়ি
অহনারা গাড়িতে বসে থাকবে। আর অর্ষা বার বার পেছন ঘুরে অহনাদের গাড়িটা দেখবে।
রিমা : অহনা, ব্যাপার কী বলো তো? ওই মেয়েটা বার বার আমাদের দিকেই দেখছে।
অহনা : ওর নাম অর্ষা, ছোটকাকুর ভাতিজি, বলতে পারো সহকারীও। শুধু ওই মেয়েটা নয়, একটা ছেলে আছে খেয়াল করেছো?
জামাল : আর মোটাসোটা একটা লোকও আছে।
অহনা : একজন সীমান্ত, ছোটকাকুর ভাতিজা আর অন্যজন শরীফ সিঙ্গাপুরী সংক্ষেপে এসএস; দুজনেই সহকারী!
রিমা : ওরা কিছু বোঝার আগে আমাদের হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
অহনা : কিন্তু কীভাবে? হাবিবুর রহমান তো ওদের সঙ্গে আঠার মতো লেগে আছে।
রিমা : তার স্বার্থটা কী?
অহনা : আমাদের যেরকম সেরকম। চলো পা চালিয়ে চলো, হাবিবুর রহমান ওদের অনেক পেছনে।
তারা প্রায় দৌড়ে হাবিবুর রহমানকে ধরে ফেলবে।
জামাল : হাবিব ভাই আমি জামাল। ঢাকা থেকে নিউজ বাংলার ক্যামেরাম্যান। ও অহনা, ও রিমা। দুজনেই রিপোর্টার।
হা. র. : আপনি অহনা, আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন?
অহনা : জি। আপনার সাহায্য আমাদের দরকার।
হা. র. : আপনাদের সাহায্য করে আমার লাভ?
অহনা : লাভ? কিছু বাচ্চা হারিয়ে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না, এলাকার লোক হয়ে আপনি বলছেন আপনার লাভের কথা?
হা. র. : নীতিকথা এখন থাকুক। নীতিকথা এসি রুমে বসে, স্টিকার লাগানো গাড়িতে ঘুরে বলা যায়, স্পটে আসুন, দেখুন, জীবনটা জটিল।
অহনা : দেখুন হাবিব সাহেব, আপনি নিজে আমাকে বলেছেন আপনি চৌধুরী সাহেবকে সন্দেহ করেন, আর এখন আপনি নিজে চৌধুরী সাহেব যাকে ডেকে পাঠিয়েছে সেই ছোটকাকুর সঙ্গে চলাফেরা করছেন?
হা. র. : এজন্য বলেছি স্পটে আসুন, ছোটকাকু কে তা জানার চেষ্টা করুন।
বলে হন হন করে হাবিবুর রহমান এগিয়ে যাবে। অহনারা দাঁড়াবে, এরপর তারাও পিছু নেবে।
দৃশ্য-৭
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া
ছোটকাকু অর্ষা আর সীমান্তকে পাশে নিয়ে গলির ভেতর ঢুকবে, পেছনে ফাদার, এসএস। সবার পেছনে হাবিবুর রহমান।
অর্ষা : ছোটকাকু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের পেছনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে।
সীমান্ত : হ্যাঁ, আমি চায়ের দোকানে থাকতে খেয়াল করেছি, আমাদের গাড়ি ছাড়ল আর একটা গাড়ি আমাদের পেছনে চলা শুরু করল।
ছোটকাকু : সেটা যে সাংবাদিক মেয়েটা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল তার।
অর্ষা : তুমি কীভাবে বুঝলে?
ছোটকাকু : তোমরাই বলো দেখি কীভাবে বুঝেছি।
সীমান্ত : তুমি গাড়িতে মেয়েটাকে দেখেছো?
ছোটকাকু : না।
অর্ষা : আমি ঢাকায় দেখেছি টিভি চ্যানেলের গাড়িতে স্টিকার লাগানো থাকে, আর হাইওয়ে রেস্টুরেন্টেও ওদের গাড়িতে আমি স্টিকার দেখেছি।
ছোটকাকু : যাক মাথা তবে খুলেছে। সীমান্ত গোয়েন্দাদের প্রথম যে ক্ষমতাটা রাখতে হয় সেটা অবজারভেশন। সেটাই আসল।
তারা কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসবে, আর তখনই একটা ভয়ার্ত চিৎকার ভেসে আসবে।
চিৎকার : হেলপ... হেলপ... সেভ মি...
পঞ্চম পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৬
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া
ভয়ার্ত আওয়াজ পাওয়ার পর সবাই থমকে যাবে। হঠাৎ-ই দেখবে লাল রঙের প্যান্ট আর হলুদ রঙের শার্ট পরা এক বিদেশি লোক ছুটে আসছে। তার নাম হিপহিপ সাহেব।
হিপহিপ : সেভ মি, ইহ্Ñ কী বিপদে পড়েছিলাম। ফাদার, ও ফাদার!
ফাদার : আরে হিপহিপ সাহেব আপনি কোত্থেকে?
সাংবাদিক হাবিবুর রহমান সেখানে ছুটে আসবে।
হা. র. : ফাদার বেনাস আপনি তো চৌধুরী সাহেবের কাজেই ছুটছেন। জানবেন কী করে, দুই দিন আগে উনি কুয়াকাটায় এসেছেন।
ফাদার : আপনার কাজই হলো মানুষকে খোঁচা দেয়া। আচ্ছা হিপহিপ সাহেব কী ব্যাপার আপনি ওইভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন?
হিপহিপ সাহেব কাঁপা কাঁপা আঙুলে সামনের দিকে দেখিয়ে দেবে। সবার মুখে একটা আতঙ্কের ছাপ পড়বে।
দৃশ্য-২
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, অহনাদের গ্রুপ
ছোটকাকুদের গ্রুপের পেছনে অহনাদের গ্রুপটি চুপি চুপি আসছে। তারা দেখবে হিপহিপ সাহেবকে নিয়ে ছোটকাকুরা ব্যস্ত।
রিমা : গল্পে মনে হচ্ছে নতুন নায়কের আবির্ভাব হয়েছে?
অহনা : হু... মনে হচ্ছে হিপি, কিন্তু আজকের যুগে হিপি পাওয়া তো পদ্মায় ইলিশ পাওয়ার সমান!
রিমা : এই ধ্যাদ্ধারা জেলে বস্তিতে এই বিদেশির কাজ কী?
অহনা : কাজ অনেক থাকতে পারে। কিন্তু ছোটকাকুদের সঙ্গে তার কী কাজ? একটু আড়ালে থাকো... লোকটাকে আসলেই ধরতে হবে।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, ছোটকাকুর গ্রুপ
হিপহিপ সাহেবের কথায় সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ এলেও যে জিনিসটা দেখে তার ভয় লেগেছে তা দেখে সবার মুখে হাসি চলে আসবে। হিপহিপ সাহেব কতগুলো কুকুর দেখে ভয় পেয়েছে। কুকুরগুলো কিছুক্ষণ ডেকে অনেক মানুষ দেখে চলে যাবে।
ফাদার : কুকুর?
হিপহিপ : কুকুরগুলো এমনভাবে তাড়া করল, আর একটু হলেই কামড়ে দিত!
ছোটকাকু : কিন্তু কুকুরগুলো আপনাকে দেখে তাড়া করল কেন? আপনি কি তাদের কিছু করেছিলেন?
হিপহিপ : না না... টুডে আই গট সাম টেরিফিক জিনিস! মনে হয় তাদের গন্ধ পেয়েছিল।
ছোটকাকু : টেরিফিক জিনিসটা কী?
হিপহিপ সাহেব কিছু বলতে যাবে তখন ফাদার তাকে বাধা দিয়ে বলবে :
ফাদার : কী আর হবে হাড়গোড়!! এখান থেকে তো একা একা রেস্টহাউসে যেতে পারবেন?
হিপহিপ : শিওর। কুকুরগুলো দেখে একটু ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু ফাদার এরা কারা?
ফাদার : এরা আমার বন্ধু, আপনি যান আমি পরে আপনার সঙ্গে দেখা করছি। গুড বাই।
ফাদার বেনাস সবাইকে নিয়ে রওনা দেবে। হিপহিপ সাহেব পেছন ঘুরে হাঁটা শুরু করবে।
দৃশ্য-৪
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, অহনাদের গ্রুপ
হিপহিপ সাহেব হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা এগোলে অহনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
অহনা : কী সাহেব মনে হচ্ছে খুব ভয়ে আছেন?
হিপহিপ : ছিলাম, এখন নাই।
অহনা : তা সৈকত ছেড়ে এই ময়লা বস্তিতে।
ফিসফিস করে রিমা বলবে :
রিমা : আরে এই বিদেশিগুলা তো এটাই দেখতে আসে... পুওর পিউপিল, হাংরি পিউপিল!! (হাসি)
অহনা রিমার দিকে তাকিয়ে একটু বিরক্ত হবে।
হিপহিপ : একটা জিনিস আনতে গিয়েছিলাম।
অহনা : একটা না অনেকগুলো?
হিপহিপ : ইয়েস ইয়েস অনেকগুলো...
অহনা : জিনিসগুলো কি হারিয়ে গিয়েছিল?
হিপহিপ : ওহ... আপনি ডিটেকটিভ নাকি? জিনিসগুলো আসলেই হারানো জিনিস... আচ্ছা যাই...
হিপহিপ চলে যাবে।
রিমা : ব্যাপারটা কী অহনা?
অহনা : ব্যাপারটা একটা ধাঁধাঁ... আর ধাঁধাঁর সমাধান ওই ছোটকাকুদের হাতে... চল
অহনারা হাঁটা শুরু করবে।
দৃশ্য-৫
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, ছোটকাকুর গ্রুপ
ছোটকাকুরা অন্ধকারে হাঁটছে। ফাদার আর ছোটকাকুর কথোপকথন চলছে।
ফাদার : ভদ্রলোককে দেখে একটু অবাক হচ্ছেন?
ছোটকাকু : সাধারণত আমি অবাক জিনিসটা বেশি হই না। তবে জানতে ইচ্ছে করছে ভদ্রলোকটা কে?
ফাদার : ভদ্রলোকের আসল নাম জানি না। কিন্তু সব সময় হিপিদের মতো সাজগোজ করে থাকেন। তাই তার নাম আমরা দিয়েছি হিপহিপ সাহেব।
ছোটকাকু : হিপহিপ সাহেব কুয়াকাটায় কেন? তাও জেলেপাড়ার গলিতে?
ফাদার : হারুনের বাবা সেকান্দার জেলে যদিও নামে জেলে কিন্তু...
ছোটকাকু : কেন? সে কি সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় না?
এবার হাবিবুর রহমান বলবে :
হা. র. : যায়, যায়... দলের সঙ্গেই যায়, দলের বাকি সবাই মাছ ধরে, সে আরেকটি কাজ করে!
ছোটকাকু : সেটা কী রকম?
হা. র. : সেকান্দার জেলে খুব ভালো ডুবুরি। পানির নিচে ত্রিশ মিনিটের বেশি থাকতে পারে।
সবাই হাবিবুর রহমানের মুখের দিকে তাকাবে।
হা. র. : শুধু ডুবুরি নয়, অদ্ভুত একটা শখ আছে সেকান্দার জেলের। সমুদ্রের প্রাণীর বিভিন্ন রকম হাড় সংগ্রহ করে সে।
এবার এসএস বলবে :
এসএস : সমুদ্র থেকে প্রাণীর হাড় মানে?
হা. র. : প্রাণী মানে সমুদ্রে অনেক বড় বড় মাছ থাকে। এর মধ্যে অনেক মাছ আছেÑ যেগুলো মাছ নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী। কুয়াকাটার সাগর গভীরে এসব মাছ আর প্রাণীর হাড় সংগ্রহ করে সেকান্দার জেলে!
ছোটকাকু : আর এই হাড় নিতেই হিপহিপ সাহেব আসে সেকান্দার জেলের কাছে?
হা. র. : আমাদের তো তাই মনে হয়। কারণ কুয়াকাটায় কিছুদিন পরপর হিপহিপ সাহেব আসেন আর সব সময় থাকেন এই সেকান্দার জেলের বাড়িতেই!
হঠাৎ ছোটকাকু মাটিতে একটা জ্বলজ্বলে জিনিস খুঁজে পাবে। সে সেটা হাতে তুলে একটু দেখে পকেটে রেখে দেবে। তা দেখে অর্ষা বলবে :
অর্ষা : কী ওটা ছোটকাকু?
ছোটকাকু : খুব মূল্যবান জিনিস। অন্তত আমাদের এই কুয়াকাটার ঘটনার জন্য। কারণ আজকের রাতের মতো ঘটনাগুলোও অন্ধকার। অনেকগুলো চরিত্র আমাদের সামনে, তার মধ্যে থেকে একটা চরিত্র যদি বাদ পড়ে তো আলো আসতে একটা বাধা দূর হয়।
অর্ষা বিভ্রান্ত একটা মুখ নিয়ে সামনে দেখবে আর দেখবে ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা আলো হঠাৎ জ্বলে উঠে ছোট্ট আলোর ফুলকি ওঠা-নামা করছে।
অর্ষা : ছোটকাকু ওটা কী?
অর্ষার কথায় একটা ভয়ার্তভাব থাকবে। ছোটকাকু থমকে যাবে।
দৃশ্য-৬
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, ছোটকাকুর গ্রুপ
ছোটকাকু দাঁড়িয়ে হঠাৎ হাবিবুর রহমানকে ডেকে বলবে :
ছোটকাকু : সেকান্দার জেলে কি খুব বিড়ি খায়?
হা. র. : তা খায়। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?
তখনই তারা সেকান্দার জেলের সামনে এসে দাঁড়াবে। দেখা যাবে সেকান্দার জেলে বিড়ি খাচ্ছে।
সীমান্ত : অর্ষার মাথায় হরর মুভি ইফেক্ট।
অর্ষা : তুমি বুঝবা কী হরর মুভি কাকে বলে? কুংফু পান্ডা দেখার বয়স যে তোমার ৫ বছর আগে চলে গেছে তা তোমাকে না বুঝিয়ে বাবলুকে বোঝালেও ও বুঝত!
সীমান্ত : আমাকে না বুঝিয়ে নিজে বোঝো...
অর্ষা : আমি যে তোমার থেকে বেশি বুঝি তার প্রমাণ হয়ে যাক... বলো তো এখানে আমরা কয়জন আছি?
সীমান্ত : ছোটকাকু, তুমি, আমি, ফাদার, হাবিবুর রহমান, এসএস আর এখন সেকান্দার জেলে... ৭ জন... ওহো... বাবলু... বাবলুও আছে... ৮ জন।
অর্ষা সীমান্তের মাথায় একটা টোকা দিয়ে পেছনে দেখাবে। পেছনে কারো মাথা সামনে এসে আবার সরে যাবে।
সীমান্ত : কী ওটা? মনে হচ্ছে একটা মানুষ... কিন্তু লুকালো কেন?
অর্ষা : আমাদের কেউ ফলো করছে... হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের সাংবাদিকদের গ্রুপ!!
দৃশ্য-৭
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, অহনাদের গ্রুপ
অহনা ছোটকাকুদের ফলো করতে করতে যেই একটা গলি থেকে মাথা বের করবে অমনি সে অর্ষা আর সীমান্তের মুখোমুখি হয়ে যাবে।
অহনা : ইহহহ... ধরা তো খেলাম মনে হচ্ছে?
রিমা : বসের নাকি অ্যাসিস্ট্যান্টদের?
অহনা : অ্যাসিস্ট্যান্ট।
রিমা : ওরা কি বুঝতে পেরেছে?
অহনা : বুঝতে কেন যেন মনে হচ্ছে ওরা আগেই পেরেছে। চলো আরেকটু সামনে চলো... তবে সাবধানে।
দৃশ্য-৮
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া, ছোটকাকুর গ্রুপ
ছোটকাকুরা যখন সেকান্দার জেলের বাসায় যাবে, তখন সেকান্দার জেলে বিড়ি ফেলে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াবে। ঠিক তখনই তার সামনে সবাই এসে পড়বে। সে অবাক হয়ে হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করবে :
সেকান্দার : কী হাবিব সাংবাদিক? কী ব্যাপার ফাদার? আপনারা?
হা. র. : কই যাও?
সেকান্দার : হারুন ঘরে ফেরেনি। খুঁজতে যাই। আপনারা কী দেখছেন? এরা কারা?
হঠাৎই বাবলু ‘আব্বা’ বলে সেকান্দার জেলের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
সেকান্দার : আরে বাবলু আমারে আব্বা আব্বা কয় কেন? হারুন কই? হারুন?
বাবলু : আমিই তো হারুন। আব্বা আম্মার কাছে নিয়া চলো!
সেকান্দার : বাবলু আমার লগে নাটক করছিস কেন?
ফাদার ফিসফিস করে ছোটকাকুকে বলবে :
ফাদার : বাবলু খুব ভালো যাত্রা করে। শীতকালে যখন যাত্রা হয়, বাবলু তখন কিশোরের ভূমিকায় অভিনয় করে!
হাবিবুর রহমান বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে এগিয়ে আসবে।
হা. র. : আমার মোটরসাইকেলে গরু পেটানোর লাঠি থাকে। লাঠিটা দিয়ে ছেলেটাকে দিতে হবে কড়া মাইর।
এরপর ওর হারুনগিরি বের হবে!
ছোটকাকু : মারামারির কা-টা একদমই করবেন না। আগে সব বুঝুন তারপর পদক্ষেপ নিন।
এবার বাবলু সেকান্দার জেলেকে আঁকড়ে ধরে বলবে :
বাবলু : চলো বাড়ি ফিরি। আম্মাকে দেখব, ভাত খাব।
হা. র. : ফাদার আপনি বাবলুর বাড়ি চেনেন না?
ফাদার : হু, চিনি।
হা. র. : ওকে বাসায় নিয়ে যান। আর নাটক ভালো লাগছে না।
এখন ছোটকাকু খুব ঠা-াভাবে বলবে :
ছোটকাকু : আজ বাবলু সেকান্দার জেলের বাসায়ই থাকবে!
এটা শুনে হাবিবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে বলবে :
হা. র. : এটা কেমন কথা? আজ সাত দিন বাবলুর মা পাগল হয়ে আছেন। তাদের ছেলেকে আপনারা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন?
ছোটকাকু : আমরা ফিরিয়ে এনেছি মানে?
হা. র. : সেই ধাঁধাঁ আমরাও বুঝতে পারছি না। কিন্তু বাবলুকে ওর বাবা-মা’র কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত!
ছোটকাকু : উচিত আমিও মানছি। কিন্তু আজ নয়। আজ বাবলুর মাথায় ঘুরছে ও হারুন, আজ ঠা-া মাথা ঘুমাক, কাল সকালে দেখা যাবে।
এরপর ছোটকাকু ফাদার বেনাসের দিকে তাকিয়ে বলবেন :
ছোটকাকু : তবে রেস্টহাউসে যাওয়া যাক মি. বেনাস?
ফাদার : চৌধুরী সাহেবের বাড়ি একটু ঘুরে গেলে হয় না?
ফাদারের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে হাবিবুর রহমান বলবে :
হা. র. : চৌধুরী সাহেবের বাড়ি মানে? উনিই তো সব কিছুর হোতা! এত রাতে ওখানে গিয়ে নতুন নাটক করে লাভ কী?
কথাটি বলেই হাবিবুর রহমান মোটরসাইকেল স্টার্ট দেবে। ছোটকাকু তার কাছে গিয়ে বলবে :
ছোটকাকু : আমরা এখন রেস্টহাউসে যাব। আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন।
সবাই কথাটা শুনে অবাক হবে, বিশেষ করে ফাদার বেনাস।
হা. র. : আমি আর এত রাতে আপনাদের সঙ্গে যেতে চাই না!
উত্তরে ছোটকাকু বেশ কঠিন স্বরে বলবে :
ছোটকাকু : কিন্তু আমি চাই!
কথাটা বলেই ছোটকাকু হাবিবুর রহমানের মোটরসাইকেলে গিয়ে বসবে।
ছোটকাকু : অর্ষা, সীমান্ত তোমরা এসএসের সঙ্গে রেস্টহাউসে যাও। ফাদার বেনাস গুডনাইট। আমি আসছি।
এরপর ছোটকাকু হাবিবুর রহমানের মোটরসাইকেলে করে অন্ধকারের মধ্যে চলে যাবে। কিছুদূর যাওয়ার পর কড়া ব্রেকের আওয়াজ আসবে, সঙ্গে একটা নারীর ব্যথার চিৎকার। সবাই অবাক হবে, ভয় পাবে।
ষষ্ঠ পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৭
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : আউটডোর, জেলেপাড়া
কড়া ব্রেকের আওয়াজের পর সবাই ছুটে যাবে। দেখবে সেখানে কেউ নেই।
অর্ষা : কী হলো ছোটকাকু কই?
এসএস : একটা মেয়ের চিৎকার পেলাম; কোথায় গেল সবাই? মেয়েটাইবা কে?
সীমান্ত : অর্ষা, বুঝতে পারছো মেয়েটা কে?
অর্ষা : হু, লুকিয়ে ছিল, ফলো করছিল, হঠাৎ-ই ধাক্কা খেয়েছে।
এসএস : তোমাদের কথা বুঝতে পারছি না কিছুই? একটু খুলে বলবা?
তারা সবাই মিলে হাঁটা শুরু করবে। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলবে :
অর্ষা : হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমাদের মনে আছে আপনার?
এসএস : হ্যাঁ হ্যাঁ সাংবাদিক।
সীমান্ত : ওরা আমাদের সব সময় ফলো করছিল!
এবার ফাদার তাদের সঙ্গে কথা বলবে :
ফাদার : ফলো? কিন্তু কেন?
অর্ষা : এটাই তো রহস্য!
কথা বলতে বলতে তারা রেস্টহাউসে চলে আসবে। রেস্টহাউসের রিসিপশনের সামনে রাখা সোফায় বসে ফাদার বলবে।
ফাদার : কিন্তু তোমাদের ছোটকাকু ওই সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কোথায় গেল? ওই লোকটাকে আমার ভালো মনে হয় না!
এসএস : আপনার যেটা ভালো লাগবে না সেটা যে আর একজনের কাছে ভালো লাগতে পারে এটা বোঝেন না কেন? ক্যাপ্টেনের কোনো একটা পরিকল্পনা আছে, আর সে সেভাবেই এগোচ্ছে!
অর্ষা : কিন্তু এসএস ছোটকাকু যদি কোনো বিপদে পড়ে?
এসএস : বিপদ তো থাকবেই। কিন্তু ক্যাপ্টেন কি বিপদে ভয় পাওয়ার লোক?
সীমান্ত : কিন্তু ওরা গেল কই?
এসএস : অপেক্ষা করি কেমন? ফাদার আপনি না হয় চলে যান?
ফাদার : আমি যাব, অবশ্যই যাব! কিন্তু আমার খটকা লাগছেÑ ওই হাবিবুর রহমান লোকটাকে নিয়ে, আবার কে আমাদের ফলোও করছিল। না আপনাদের ছোটকাকু আসুক তারপর যাব।
দৃশ্য-২
লোকেশন : আউটডোর, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত
সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে আছে ছোটকাকু, হাবিবুর রহমান, অহনা ও তার গ্রুপ।
হা. র. : আপনারা কতদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন? ওভাবে অন্ধকার রাস্তায় কেউ দাঁড়ায় থাকে? আর আপনার নাম তো অহনা? ব্যথা কি খুব পেয়েছেন?
অহনা : না ব্যথা পাইনি, তবে লজ্জা পেয়েছি!
হা. র. : কিসের লজ্জা?
অহনা : ছোটকাকুর কাছে ধরা পড়ে যাব!
ছোটকাকু : ধরা তো তুমি আগেই পড়েছো, আমার এক অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে।
অহনা : হু, অর্ষা... আমি বুঝতে পেরেছি। ছোটকাকু আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই... অনেকটা অনুরোধও বলতে পারেন!
ছোটকাকু : আমি জানি তোমার অনুরোধটা কী! তুমি আমার পাশে থেকে এই কেসটার ইনভেস্টিগেশন দেখতে চাও! অহনা একটু অবাক হবে।
অহনা : আপনি গোয়েন্দার সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতিষীও নাকি?
ছোটকাকু : প্রথম যেদিন তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল তুমি বার বার আমাকে আমি কি কুয়াকাটায় বাচ্চা নিখোঁজ রহস্য নিয়ে কাজ করছি কিনা তা জানতে চাচ্ছিলা। আমি তখনই বুঝেছি।
অহনা : বাহ আপনার সঙ্গে তো বুঝে শুনে কথা না বললে বিপদ।
এবার ছোটকাকু হাবিবুর রহমানকে বলবে :
ছোটকাকু : আচ্ছা বাবলু ছেলেটা হারিয়ে যায় কখন?
হা. র. : আনুমানিক রাত ১০টা, কারণ সৈকতে সেদিন যাত্রাপালা চলছিল আর বাবলু তাতে কিশোরের পাট করেছিল।
ছোটকাকু : যাত্রাটা হয়েছিল কোথায়?
হা. র. : আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে।
ছোটকাকু : আর বাবলুর বাড়ি?
একটা পথ দেখিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন :
হা. র. : এ পথ দিয়ে এগোতে হবে।
ছোটকাকু : তবে চলুন, আমি বাবলুর বাড়ির দিকে যেতে চাই।
ছোটকাকু, হাবিবুর রহমান, অহনা ও তার গ্রুপ সেই পথ ধরে যাওয়া শুরু করবে। যেতে যেতে তারা এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়াবে যেখানে সৈকত জোয়ারের পানিতে ভরপুর। আর সেই পানির পাশে সৈকতে কিছু নারিকেল গাছ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই তারা দেখবে নারিকেল গাছের সঙ্গে জ্বলজ্বলে কিছু একটা জড়িয়ে আছে। ছোটকাকু নারিকেল গাছটির দিকে যাবে। সে জ্বলজ্বলে জিনিসটি হাতে নেবে।
হা. র. : কি ওটা?
ছোটকাকু : এটা একটা পোশাক, আগেকার দিনের রাজাদের পোশাক।
অহনা : এখনকার দিনে রাজাদের পোশাক আসবে কোথা থেকে?
ছোটকাকু : হাবিবুর রহমান সাহেব সেদিন কোন পাট চলছিল?
হা. র. : আমি যতটুকু জানি সেদিন ‘রূপবান’-এর পাট চলছিল।
ছোটকাকু : আর যদি বাবলু রূপবান হয় তবে এটা ওরই পোশাক, মানে আমরা যেখানে বাবলু হারিয়ে গিয়েছিল সেখানে পৌঁছে গেছি।
ঠিক তখনই তারা দেখবে দূরে পানিতে একটা নৌকা বাঁধা আছে।
ছোটকাকু : কিন্তু নৌকাটা ওখানে বাঁধা কেন?
হা. র. : কারণ ভাটার সময় ওই অংশটা শুকনো থাকে।
ছোটকাকু : ভাটা কখন হবে?
হা. র. : ১২ ঘণ্টা পরপর।
ছোটকাকু : হাবিবুর রহমান সাহেব কাল সকালে ভাটার সময় আমি এখানে আবার আসতে চাই। আপনি কি আমাকে নিয়ে আসবেন?
হা. র. : অবশ্যই!
অহনা : আমরাও আসতে চাই, আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন!
ছোটকাকু : ওকে... শুধু তোমরা না আমার দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট আর আমার বন্ধুও আসবে।
এবার হাবিবুর রহমানের দিকে তাকিয়ে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : আচ্ছা এখান থেকে চৌধুরী সাহেবের বাড়ি কতদূর?
হা. র. : কাছেই...
ছোটকাকু : বাড়িটা কত পুরনো?
হা. র. : ব্রিটিশ আমলের বাড়ি, বেশ পুরনোই হবে, চৌধুরী সাহেবের দাদা এ এলাকার খান বাহাদুর ছিলেন!
ছোটকাকু : মানে জমিদার! ওকে... আমরা যেখানে নৌকা বাঁধা দেখলাম ওই জায়গাটা কি আগে ছিল?
হা. র. : অবশ্যই ছিল, ওটা খুব পুরনো একটা ঘাট। আমি ছোটবেলায় কত নৌকা দেখেছি, কিন্তু ’৯১-এর সাইক্লোনে জায়গাটা ল-ভ- হয়ে যায়, এরপর ওটা আর ঘাট থাকেনি, ঘাট সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ছোটকাকু : হাবিবুর রহমান সাহেব আপনি কাটাকাটি খেলা খেলতে পারেন?
হা. র. : কাটাকাটি খেলা? কী বলছেন যা তা? এই রাতে না ঘুমিয়ে আপনার সঙ্গে কাটাকাটি খেলা খেলব?
ছোটকাকু : না, আপনাকে খেলতে হবে না, সে খেলার লোক আছে আমার! অহনা তোমরা তো আমাদের রেস্টহাউসে উঠেছো, রাতে কাটাকাটি খেলায় আমন্ত্রণ।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : ইনডোর, রেস্টহাউস
ছোটকাকুকে মোটরসাইকেলে করে হাবিবুর রহমান নামিয়ে দেবে। অহনারা তাদের গাড়িতে করে রেস্টহাউসে আসবে। তারা দলবলে রেস্টহাউসের রিসিপশনে আসবে। সেখানে বাকি সবাই বসে আছে। ছোটকাকুকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়াবে। ছোটকাকু ফাদারকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : ফাদার আপনি বাড়ি যাননি?
ফাদার : একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য বসে আছি। আসলে আপনি কী চান?
ছোটকাকু : কী চাই মানে?
ফাদার : আপনি চৌধুরী সাহেবের নাতিকে উদ্ধার করতে চান না? নাকি হাবিব সাংবাদিক আপনাকে কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে?
ছোটকাকু : ফাদার আমার কাছে শুধু চৌধুরী সাহেবের নাতি উদ্ধারেরই দায়িত্ব নয়, আছে বাকি ৩ জন ছেলে উদ্ধারের, আপনি বাড়ি যান, আজ অনেক হইচই গেল, কাল চৌধুরী সাহেবের বাড়ি আমাকে যেতেই হবে, না হলে কাটাকাটি খেলার সমাধান হবে না।
ফাদার চলে যাবে।
দৃশ্য-৪
লোকেশন : ইনডোর, রেস্টহাউস, ছোটকাকুর রুম
ছোটকাকুর রুমে বসে আছে অর্ষা, সীমান্ত আর এসএস।
অর্ষা : কাটাকাটি খেলা বলতে কী বোঝাচ্ছো ছোটকাকু?
ছোটকাকু : দাঁড়াও দাঁড়াও... আরো দুজন আসবে।
ঠিক এই সময় অহনা আর রিমা রুমে ঢুকবে।
ছোটকাকু : এসএস... এদের সঙ্গে পরিচয় আছে?
অহনা : এই তো অর্ষা যে আমাদের ফলোর ওপর ফলো করছিল?
ছোটকাকু : হু... এসো আমরা এখন কাটাকাটি খেলব। অর্ষা, সীমান্ত, এসএস তোমাদের বলে রাখি আজ এমন একটা জায়গায় গিয়েছিলাম যেখানে গিয়ে আমার কাটাকাটি খেলার কথাটা মনে হয়েছে। কাল সকালে তোমাদেরও নিয়ে যাব। আর নিয়ে যাব চৌধুরী সাহেবের বাসায়। এখন অর্ষা আর সীমান্ত ছেলে হারানোর পুরো ঘটনাগুলো বলো তো।
অর্ষা : চৌধুরী সাহেবের নাতিসহ বাচ্চা হারিয়েছে ৪ জন। যাদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।
সীমান্ত : সবাই ছেলে আর ফাদারের স্কুলে পড়ে।
অর্ষা : তার মধ্যে আমরা বাবলুকে খুঁজে পাই।
ছোটকাকু : বাবলু পড়াশোনার পাশাপাশি কী করত?
অর্ষা : যাত্রায় পাট করত, কিশোরের।
এবার ছোটকাকু সৈকতে খুঁজে পাওয়া যাত্রার কস্টিউমটা দেখিয়ে বলবে :
ছোটকাকু : আজ সৈকতে সিমলা নামে একটা জায়গায় আমি এটি খুঁজে পাই, এটা যাত্রার পোশাক।
এসএস : মানে বাবলুর পোশাক, মানে বাবলু হারিয়েছে ওখান থেকেই!
ছোটকাকু : ইয়েস... এটাই প্রাথমিক ধারণা। বাকি ধারণাটা সত্যি হবে কাল সকালে ভাটার সময় সৈকতে গেলে।
এখন বলো এসব ঘটনায় তোমাদের সন্দেহ হয় কাকে কাকে?
এসএস : হাবিবুর রহমানের কথা যদি সত্যি হয় তবে চৌধুরী সাহেব।
অহনা : চৌধুরী সাহেব ক্রিমিন্যাল হলে ফাদারও সাসপেক্টেড।
অর্ষা : আবার ফাদারের কথা সত্যি হলে হাবিবুর রহমান।
সীমান্ত : এবং হিপহিপ সাহেব ও সেকান্দার জেলে।
ছোটকাকু : হিপহিপ সাহেব এবং সেকান্দার জেলেকে প্রথমেই বাদ দিতে হবে এ কারণে, অর্ষা তোমার মনে আছে কিনা যে সেকান্দার জেলের বাড়ির রাস্তায় আমি একটা জিনিস কুড়িয়ে পেয়েছিলাম?
অর্ষা : হু... চকচকে একটা জিনিস।
ছোটকাকু একটা আইডি কার্ড সবার সামনে রাখবে, যেখানে হিপহিপ সাহেবের ছবি লাগানো আছে। নাম লেখা জাঁ রেনে মাকগ্রিথ।
ছোটকাকু : কুকুরের তাড়া খেয়ে যখন হিপহিপ সাহেব দৌড়াচ্ছিল তখন অজান্তে তার এ কার্ডটা পড়ে যায়।
হিপহিপের আসল নাম জাঁ রেনে মাকগ্রিথ, পেশায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব ফ্রান্স বা এপি’র সাংবাদিক। এই কার্ডের পেছনে যে নম্বরটা আছে তাতে ফোন দিয়ে জেনেছি হিপহিপ কুয়াকাটা এসেছে সেকান্দার জেলের এই প্রাণীর হাড়গোড়ের সংগ্রহের ওপর ডকুমেন্টারি বানাতে।
অহনা : এখন আমাদের কাজ?
ছোটকাকু : এখন আমাদের কাজ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা। সূর্য উঠলেই অন্ধকার কাটবে!!!
দৃশ্য-৫
লোকেশন : আউটডোর, সমুদ্রসৈকত
সময় : সকাল
সমুদ্রসৈকতে নারিকেল গাছের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ছোটকাকু, অর্ষা, সীমান্ত, হাবিবুর রহমান, এসএস এবং অহনা ও তার গ্রুপ।
ছোটকাকু : এই সেই নারিকেল গাছ যেখান থেকে আমি বাবলুর জামা পেয়েছি। আচ্ছা হাবিবুর রহমান সাহেব চৌধুরী সাহেবের বাড়িটা কি এখান থেকে দেখা যায়?
হাবিবুর রহমান দূরে একটা পুরনো বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন :
হা. র. : ওটাই চৌধুরী সাহেবের বাড়ি।
ছোটকাকু : যেহেতু চৌধুরী সাহেবরা জমিদার ছিল, আর জমিদার মানেই সবসময় শত্রুর আক্রমণের ভয়। এজন্য সব জমিদার বাড়িতে একটা সুড়ঙ্গ থাকে, বাড়ি থেকে সুড়ঙ্গটা শুরু হয়ে শেষ হয় নদী বা সমুদ্রের ঘাটে। কারণ তখন বাহন বলতে নৌকাটাই সহজলভ্য ছিল।
এবার হাবিবুর রহমানকে উদ্দেশ করে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : আর আপনি বলতে চাচ্ছেন এ জায়গাটা একসময় ঘাট ছিল?
হা. র. : আপনি এখনও আসলে দেখতে পাবেন। আসুন আমার সঙ্গে...
যে জায়গায় কাল জোয়ারের পানি ছিল আজ সেটা খটখটে। আর খটখটে জায়গায় অতীতের এক স্থাপনার ভাঙাচোরা অংশ দেখা যাচ্ছে।
ছোটকাকু : তবে এখানে একটা সুড়ঙ্গ থাকতেই হবে!! আসুন সবাই মিলে আমাকে হেল্প করুন।
তারা সবাই মিলে নৌকাটা সরাবে। আর ভাঙা স্থাপনা থেকে একটা সুড়ঙ্গ পথ বের হয়ে আসবে।
হা. র. : এটা কী?
ছোটকাকু : সুড়ঙ্গ... আমাদের এখনই চৌধুরী সাহেবের বাসায় যেতে হবে। আমরা কাটাকাটি খেলার ফাইনালে পৌঁছে গেছি!!!!
সপ্তম পর্ব সমাপ্ত
ছোটকাকু
কুয়াকাটায় কাটাকাটি
পর্ব-৮
ব্যাপ্তি : ২০ মিনিট
দৃশ্য-১
লোকেশন : ইনডোর, চৌধুরী সাহেবের বাড়ি
সময় : সকাল
এক পুরনো জমিদার বাড়ির সামনে দাঁড়াবে ছোটকাকু ও তার গ্রুপ। সঙ্গে অহনারাও আছে। গেটে দাঁড়িয়ে আছে ফাদার বেনাস। দরজার পাশে বাড়ির নাম লেখা ‘মাকড়সা’।
ফাদার : যাক আপনারা তবে এলেন।
ছোটকাকু : অবশ্যই ফাদার বেনাস, না এসে যে পারলাম না!
তারা ভেতরে ঢুকে যাবে। বাগান পার হয়ে বিশাল হলরুমে তারা ঢুকবে।
ফাদার : এই হলো চৌধুরী প্যালেস।
এসএস : কিন্তু দরজায় তো লেখা মাকড়সা!
ঠিক তখনই হুইল চেয়ারে করে এক বৃদ্ধ প্রবেশ করবে। দেখে মনে হবে সে অসুস্থ।
চৌধুরী সাহেব : এই বাড়িটা বানিয়েছিল আমার দাদা আকরাম চৌধুরী। প্রচ- প্রতাপ-প্রতিপত্তি ছিল তার এ অঞ্চলে। তার কথায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে পানি খেত।
ছোটকাকু : সৈকতে যে ঘাট একদিন ছিল সেই ঘাটে কি?
চৌধুরী সাহেব : কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?
ছোটকাকু : কিছু না... আপনি শেষ করুন।
চৌধুরী সাহেব : আকরাম চৌধুরী বাড়িটা এমনভাবে বানিয়েছিল যাতে বাইরের কোনো শত্রু একবার ঢুকলে আর বের হতে না পারে, অনেকটা মাকড়সার জালের মতো, কোনো পোকা একবার আটকালে মাকড়সার পেটে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না তেমন। তাই তিনি এ বাড়ির নাম রাখেন মাকড়সা।
ছোটকাকু : কিন্তু তিনি জানতেন তার থেকে শক্তিশালী শত্রু যদি আক্রমণ করত তবে এই মাকড়সা থেকে বের হওয়ার উপায় কী!!
চৌধুরী সাহেব : মানে?
ছোটকাকু : আপনি কি আপনার দাদাকে দেখেছেন?
চৌধুরী সাহেব : না, আমার বাবা যখন ছোট তখনই তিনি মারা যান।
ছোটকাকু : এ বাড়িতে আপনি ছাড়া আর কে থাকে?
চৌধুরী সাহেব : নাতিটা ছিল, প্রতীক। ও তো হারিয়ে গেল, আর এক চাকর আছে। আবদুল্লাহ। কথাটি বলে চৌধুরী সাহেব আবদুল্লাহ বলে দু’বার চিৎকার দেবে।
ফাদার : চৌধুরী সাহেব আপনি অসুস্থ। এভাবে চিৎকার করলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন। দাঁড়ান। কথাটি বলে ফাদার বেনাস ভেতরে ঢুকে যাবে। এরপর একজন যুবককে নিয়ে ঘরে ঢুকবে।
চৌধুরী সাহেব : ওর নাম আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ এদের চা-নাশতা দাও।
আবদুল্লাহ : দিচ্ছি সাহেব।
বলে আবদুল্লাহ চলে যাবে।
এবার ছোটকাকু চৌধুরী সাহেবকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : আপনার নাতি প্রতীক সম্পর্কে বলুন...
চৌধুরী সাহেব : কী বলব বলুন, একটু ডানপিটে, একটু অ্যাডভেঞ্চারাস, রক্তেই তো ওসব মিশে আছে, ওর কী দোষ, ওজন্য যেদিন হারিয়ে গেল ভাবলাম কোথাও ঘুরতে গেছে, পাশে গঙ্গামতীর জঙ্গলে প্রায়ই যেত...
ছোটকাকু : পরে বুঝলেন কী করে হারিয়ে গেছে?
চৌধুরী সাহেব : ওর একটা বাইসাইকেল আছে, প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসত, যখন দেখলাম সাইকেলটা ঘরেই, প্রতীকও আসছে না... তখনই বুঝতে পারি...
ছোটকাকু : ওকে... আমি আপনার নাতির ঘরটা একটু দেখতে চাই।
চৌধুরী সাহেব : অবশ্যই। ফাদার আপনি নিয়ে যান।
ছোটকাকুদের নিয়ে ফাদার বেনাস যাবে চৌধুরী সাহেবের নাতির রুম দেখতে।
ফাদার : এই হলো প্রতীকের রুম।
ফাদার গিয়ে রুমের দরজা খুলবে। যেই দরজা খুলবে অমনি সবাই অবাক হয়ে যাবে।
ফাদার : কী ব্যাপার তুমি এখানে কেন?
দৃশ্য-২
লোকেশন : ইনডোর, চৌধুরী সাহেবের নাতির রুম
সময় : সকাল
দৃশ্যটি শুরু হবে ফাদারের থেকে।
ফাদার : কী ব্যাপার তুমি এখানে কেন?
দেখা যাবে আবদুল্লাহ দাঁড়িয়ে আছে চৌধুরী সাহেবের নাতির রুমে।
আবদুল্লাহ : না মানে, আইছিলাম, প্রতীক বাবারে খুব মনে পড়ে... তাই রুমটা ওনার ঘুইরা যাই... মনে শান্তি আহে...
ফাদার : তোমার না চা বানানোর কথা?
আবদুল্লাহ : যাইতেছি তো...
আবদুল্লাহ চলে যাবে। ছোটকাকু তীক্ষè দৃষ্টিতে আবদুল্লাহর যাওয়া দেখবে। রুমের ভেতর ঢুকে ফাদার ছোটকাকুকে তাড়া দেবে।
ফাদার : কী হলো আসুন?
ছোটকাকু : হু, আসছি...
ফাদার : এই হলো প্রতীকের রুম... দেখুন সব...
ছোটকাকু : তা দেখব, আচ্ছা ফাদার বেনাস এই আবদুল্লাহ ছেলেটা কতদিন এই বাড়িতে কাজ করছে?
ফাদার : আমি যতদূর জানি ৬ মাসের বেশি না। কারণ আমি চৌধুরী সাহেবের বাসায় আসছি তাও প্রায় ৫ বছর ধরে। আগে একজন ছিল, সে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তারই এক আত্মীয় এই আবদুল্লাহ চাকর হিসেবে জয়েন করে।
ছোটকাকু : ওর কাজ কী?
ফাদার : মূলত প্রতীকের দেখাশোনা করাই ওর কাজ।
ছোটকাকু : বুঝলাম...
এরপর ছোটকাকু রুমের আনাচে-কানাচে সব খুঁজে দেখবে। খাটের নিচে, আলমারির ভেতরে, বইয়ের র্যাকে, পড়ার টেবিলে। ঘরের কোনায় একটা সাইকেল রাখা আছে। ছোটকাকু সাইকেলটির দিকে এগিয়ে যাবে। সে দেখবে সাইকেলটির চাকায় টাটকা কাদার দাগ। কাদাটি হাতে নিয়ে ছোটকাকু অনেকক্ষণ দেখবে।
ফাদার : কি সাত সকালে কাদা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলেন?
ছোটকাকু : প্রতীক হারিয়ে গেছে কবে ফাদার?
ফাদার : এই তো বাবলুর আগে। কেন?
ছোটকাকু : বাবলুর আগে বলতে কতদিন আগে?
ফাদার : ধরুন আজ থেকে ১০ দিন আগে...
ছোটকাকু : যদি ১০ দিন আগে প্রতীক হারিয়ে যায় তবে আজ এই সকালে ওর সাইকেলের চাকায় কাদার দাগ কেন? ফাদার আপনি আবদুল্লাহকে ডাকুন!
ফাদার আবদুল্লাহকে ডেকে আনবে।
ছোটকাকু : আবদুল্লাহ তোমার প্রতীক বাবা হারিয়ে যায় কবে?
আবদুল্লাহ : দিনক্ষণ ভুলে গেছি স্যার... দশ দিন তো হইব...
ছোটকাকু : তুমি সাইকেল চালাতে জানো?
আবদুল্লাহ : জানব না কেন স্যার!
ছোটকাকু : প্রতীকের সাইকেল তুমি চালাও...
ফাদার এসে বলবে :
ফাদার : কখনই না, প্রতীককে চৌধুরী সাহেব এতটাই ভালোবাসে যে ওর জিনিস কাউকে হাত দিতে দেয় না।
ছোটকাকু : আবদুল্লাহ এ বাড়ির প্রত্যেকটা অংশ তুমি চেনো?
আবদুল্লাহ : জি স্যার... চিনি...
ছোটকাকু : কে চিনিয়েছে তোমাকে, প্রতীক?
আবদুল্লাহ : জি...
এবার ছোটকাকু নিচে আসবে। বাগানে যাবে। বাগানে একটা পুরনো ঘরের মতো। সে ঘরটাতে ঢুকতে যাবে তখন আবদুল্লাহ বলবে :
আবদুল্লাহ : স্যার ওইহানে যাইয়েন না, সাপে কাটব...
ছোটকাকু : সাপ? আমি সাপের ওঝা...
বলে ছোটকাকু ভেতরে ঢুকবে। সবাই বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশি উসখুস করছে আবদুল্লাহ। ছোটকাকু বের হয়ে আসবে। এসে অর্ষা, সীমান্ত আর এসএসকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : তোমরা এখানে থাকবে, আবদুল্লাহকে পাহারা দেবে, ও যেন কোথাও না যায়...
এরপর হাবিবুর রহমানকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : হাবিবুর রহমান সাহেব আপনাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে, আসুন...
এরপর অহনা, রিমা আর জামালকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : অহনা তোমার স্টোরি করার পারফেক্ট সাবজেক্ট আমি পেয়েছি... তোমরাও এসো...
এরপর ছোটকাকু সবাইকে নিয়ে বের হবে।
দৃশ্য-৩
লোকেশন : আউটডোর, পুলিশ থানা
সময় : সকাল
চৌধুরী সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে হাবিবুর রহমানকে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : হাবিবুর রহমান সাহেব কুয়াকাটা থানায় আপনার যোগাযোগ কেমন?
হা. র. : যোগাযোগ অনেক ভালো! আপনি কি থানায় যেতে চান?
ছোটকাকু : হ্যাঁ চলুন।
তারা সবাই কুয়াকাটা থানার কম্পাউন্ডে এসে পৌঁছবে। থানার ওসির সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর বের হয়ে এসে অহনার টিমকে বলবে :
ছোটকাকু : অহনা আমি চাই পুলিশের পুরো অপারেশনটি তুমি কভার করো তোমার টিম দিয়ে।
অহনা : থ্যাংক ইউ স্যার।
এরপর ছোটকাকু হাবিবুর রহমানকে বলবে :
ছোটকাকু : আপনি বাবলুকে নিয়ে আসুন, আমরা সিমলা যাচ্ছি। আপনি বাবলুকে আনলে বাবলুসহ পুলিশের একটা গ্রুপ যাবে সিমলায়, সঙ্গে অহনারা। আর আমার সঙ্গে পুলিশের একটা গ্রুপ যাবে চৌধুরী সাহেবের বাসায়।
এরপর পুলিশের ইন্সপেক্টরকে উদ্দেশ করে বলবে :
ছোটকাকু : ইন্সপেক্টর সাহেব, আমি ১০০% নিশ্চিত আজকে কালপ্রিট উদ্ধার হবেই!!
দৃশ্য-৪
লোকেশন : আউটডোর, সমুদ্রসৈকত
সময় : সকাল
বাবলুকে নিয়ে পুলিশের একটা আন্ডারকভার দল পৌঁছে যাবে সৈকতের সেই নৌকাটার কাছে। পেছনে রিপোর্টিং করছে অহনা।
অহনা : এখন আমি আপনাদের দেখাব কুয়াকাটা পুলিশের এক বিখ্যাত অপারেশনের লাইভ টেলিকাস্ট।
পুলিশ কি পারবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেদের উদ্ধার করতে? থাকুন আমাদের সঙ্গে...
এরপর তারা সেই সুড়ঙ্গটির মধ্যে ঢুকে যাবে।
দৃশ্য-৫
লোকেশন : ইনডোর, চৌধুরী সাহেবের বাসা
সময় : দুপুর
চৌধুরী সাহেবের বাগানে পায়চারি করছে ছোটকাকু। পাশে চিন্তিত মুখে বসে এবং দাঁড়িয়ে আছে বাকিরা। ঠিক তখনই ভাঙা ঘরটি থেকে বের হয়ে আসবে অহনাসহ পুলিশের দল। সঙ্গে বাবলু, তারই বয়সী ২টি ছেলে আর ৫ জন অপরিচিত মানুষ। ইন্সপেক্টর ছোটকাকুর কাছে এসে বলবে :
ইন্সপেক্টর : ভেতরে তো একদম কিডন্যাপারদের রাজ্য বানিয়ে দিয়েছে। এই নিন স্যার... ৫ জনকে ধরেছি...
তখন ফাদার বলবে :
ফাদার : কিন্তু এদের মধ্যে আমাদের প্রতীক কই?
ছোটকাকু : প্রতীক আছে ফাদার, আছে... এ বাসাতেই আছে...
ফাদার : এই বাসায় মানে?
এবার হাবিবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে বলবে :
হা. র. : আমি আগেই বলেছিলাম আপনাকে...
ছোটকাকু : না হাবিবুর রহমান সাহেব চৌধুরি সাহেব এসবের কিছুতেই নেই, তার নাতি আসলেই হারিয়েছে, আসলে হারিয়েছে বলা ভুল, তাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল... কারণ যে ৩ জন ছেলেকে ধরা হয়েছে তাদের পরিবার এতটা গণ্যমান্য নয় যে সবাই নড়েচড়ে উঠবে। তারা প্রথমে রিচার্ড নামে একজনকে কিডন্যাপ করে, এরপর হারুন আর যেদিন হারুনকে কিডন্যাপ করে ঘটনাচক্রে বাবলু তা দেখে নেয়, এরপর তারা বাবলুকেও কিডন্যাপ করে। আর পুরো প্ল্যানটার মাস্টারমাইন্ড আমাদের আবদুল্লাহ।
সবাই অবাক হয়ে যাবে।
ফাদার : আবদুল্লাহ্? আবদুল্লাহ্?
ছোটকাকু : ইয়েস... ও জানত প্রতীক একটু ডানপিটে আর চৌধুরী সাহেবের প্রিয়পাত্র। তাই ওকে লুকিয়ে রাখল এই সুড়ঙ্গেই। আর ওকে ভোলানোর জন্য সাইকেল চালাতে দিত প্রতিদিন।
ফাদার : সাইকেল... এজন্য আপনি আজ সাইকেলের চাকায় কাদার দাগের কথা বলেছিলেন? কিন্তু বাবলু ফিরে এলো কেন?
ছোটকাকু : বাবলু, হারুন, রিচার্ড কাউকেই ওদের প্রয়োজন নেই; প্রয়োজন শুধু প্রতীক। আর এজন্য ওরা প্রথমে বাবলুকে পাঠিয়ে দিল হারুন সাজিয়ে। অনেকটা হুমকি দিয়েই পাঠাল। বাবলু যদি হারুন না হয় তবে হারুনকে মেরে ফেলবে। বাবলু এলো। কিন্তু ঘটনাচক্রে ও আমাদের গাড়ির নিচেই অ্যাক্সিডেন্ট করতে বসল। আমরা ওকে পেলাম। ওদের প্ল্যান ফেইল। ওরা চেয়েছিল এভাবে নাটক করে পুরো ঘটনাটা ঘোলাটে করে প্রতীকের মুক্তিপণ দাবি করবে।
ফাদার : আপনি বললেন প্রতীক সুড়ঙ্গেই আছে... কিন্তু ওরা তো সুড়ঙ্গ দিয়েই বের হলো... প্রতীক তো এলো না...
ছোটকাকু : যখন আবদুল্লাহ আমাদের প্রতীকের রুমে ঢুকতে দেখে তখনই সে প্রতীককে সরিয়ে রাখে... এ বাড়ির কোনো একটা রুম খুঁজলেই আপনি ওকে পাবেন।
ইন্সপেক্টর তখন বেশ কয়েকজন পুলিশকে বলবে পুরো বাড়ি সার্চ করতে। তারা পুরো বাড়ি সার্চ করে অচেতন অবস্থায় প্রতীককে খুঁজে পাবে।
এরপর অর্ষা আর সীমান্তকে উদ্দেশ করে ছোটকাকু বলবে :
ছোটকাকু : অর্ষা সীমান্ত অঙ্ক মিলেছে?
অর্ষা : কুয়াকাটায় কাটাকাটি...
সীমান্ত : মিলেছে ফাটাফাটি...
সমাপ্ত
Comments