আমি ভাগ্যবান বর্ষাকে বৌ হিসেবে পেয়ে
দুজন-দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। বর্ষাকে ভালোবেসেই সিনেমা প্রযোজনায় এসেছিলেন। পাশাপাশি সিনেমার প্রতি ভালোবাসা ছিল। প্রথম সিনেমা ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’ দিয়ে একটা পরিবর্তন আনলেন সিনেমায়। বদলে গেল অনেক কিছু। প্রথম সিনেমায় বর্ষা শুধু প্রেমিকাই ছিলেন। পরে বিয়ে করেন। দুজনার প্রেম, বিয়ে, সংসার, সিনেমা, আগামী পরিকল্পনা ও ঈদযাপন নিয়ে বিস্তারিত বললেন। সঙ্গে ছিলেন জাহিদ আকবর
আনন্দধারা : দুজনার মধ্যে ভালোবাসার রসায়নটা কী? দুজনে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।
বর্ষা : এখনকার ভালোবাসাটার সম্পূর্ণটাই আমাদের সন্তান আরিজের জন্য। তাকে ঘিরেই দুজনার ভেতরে এখন ভালোবাসা ছড়িয়ে রয়েছে। মাঝে আমাদের মধ্যে ছোট্ট একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন আমরা গল্প করি সেটা নিয়ে। যদি আমাদের জীবনে আরিজ আগে আসত তাহলে এই ছোট্ট সমস্যাটা হতো না। দুজনার মধ্যে গভীর একটা বন্ধন আরিজ। যতকিছুই হোক না কেন এখন সুখ আর সুখ।
অনন্ত জলিল : আমাদের মধ্যে সমস্যাটা কিন্তু অন্যভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমি আমার ব্যবসা, অফিস নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি। খুব বেশি সময় দিতে পারি না। অফিস-ফ্যাক্টরি বাদ দিলে বাসায় ফিরে আমরা সপ্তাহে তিন-চারদিন বাইরে খেতে যাই। একসঙ্গে অনেক গল্প করি। বাচ্চাকে নিয়ে খেলা করি। দুজন দুজনার প্রতি দায়িত্বশীল। সামাজিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করি। সবকিছু মিলেমিশে করার চেষ্টা করি। এটাই ভালোবাসার রসায়ন।
আনন্দধারা : দুজনার একটা সিক্রেট জানতে চাই। গোপন কোনো নামে কি ডাকা হয়?
অনন্ত জলিল : আমাকে নাম ধরে ডাকার প্রশ্নই আসে না। তবে আমি ওর নাম ধরে কখনো ‘জানু’ বলে ডাকি। অনেক সময় বেবি বলেও ডাকি দুজন-দুজনাকে।
বর্ষা : ভালোবেসেই ডাকি। ভালোবেসে কী নামে ডাকি সেটা বলেই তো দিল।
আনন্দধারা : একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন কখন। কোন সিনেমার মাধ্যমে। কী দৃশ্য ছিল সেটা?
অনন্ত জলিল : প্রথম আমরা শুটিং করি ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’ মুভিতে। লাভ একটা সিকোয়েন্স ছিল। দারুণ ছিল দৃশ্যটা।
বর্ষা : শিখিয়ে দেয়ার, দেখিয়ে দেয়ার কেউ ছিল না। যতটুকু শিখেছি, করেছি এ. জে. আমাকেই সবটুকু শিখিয়েছে, দেখিয়েছে। তখন আমাদের বিয়ে হয়নি কিন্তু।
অনন্ত জলিল : আমাদের বিয়ে হয়েছে তো ২০১১ সালে। তারও কয়েক বছর আগের ঘটনা এটা। আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ২০০৮ সাল থেকে। যখন সিনেমায় অভিনয় করি তখন বর্ষা আমার প্রেমিকা ছিল শুধু।
আনন্দধারা : ভালোবাসাটা কে প্রথম জানিয়েছিলেন। ‘ভালোবাসি’ কে প্রথম উচ্চরণ করেছিলেন?
অনন্ত জলিল : ভালোবাসি তোমাকে অনেক। ভালোবাসি শেষ পর্যন্ত। শুধু আমাকে প্রশ্ন করলে তো হবে না। বর্ষাকেও প্রশ্ন করতে হবে।
বর্ষা : আমিই প্রথম ওকে ভালোবাসার কথাটা জানিয়েছিলাম। তবে কী বলেছিলাম এটা গোপনই থাক।
অনন্ত জলিল : তবে ভালোবাসার গভীর কথা আমিই বলেছিলাম প্রথম।
বর্ষা : না, না আমিই বলেছিলাম। একটা লাভ চিহ্ন দিয়েছিলাম এঁকে।
আনন্দধারা : নায়িকা হিসেবে বর্ষাকে দশে কত দেবেন এবং কেন?
অনন্ত জলিল : দশে আমি দশই দেব। ওর অভিনয় ছাড়াও পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকিছুই আমার ভালোলাগার।
আনন্দধারা : অনন্ত জলিল যখন অন্য কোনো নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেন তখন কেমন লাগে?
বর্ষা ; না, কোনোকিছুই মনে হয় না, এটা তো অভিনয়। তেমন কিছু হয় না। কয়েকটা বিজ্ঞাপনে তো অন্যদের সঙ্গে অভিনয় করেছে। ঈর্ষা করার কিছুই নেই। তিনি তো আমার হাজব্যান্ড। তাকে নিয়ে মানুষ প্রাউড করে। আমার ভালো লাগে ভীষণ। কোনো প্রকার মন খারাপ হয় না এসব দেখে। অনন্ত জলিলের প্রতিটি নিঃশ্বাস আমার চেনা। এখানে ঈর্ষা, জেলাস, কোনো ভ্রম প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।
আনন্দধারা : ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’ সিনেমা করে একটা পরিবর্তন এনেছেন বাংলা সিনেমায়। চকচকে দৃশ্য, মনোরম লোকেশন, দারুণ সাউন্ড, গ্রাফিক্স, সম্পাদনা, অ্যাকশন সবকিছু। সবকিছু কেন এবং কিসের জন্য সিনেমায় প্রবেশ করা। পেছনের গল্পটা জানতে চাই।
অনন্ত জলিল : এই গল্প অনেকবার, অনেকখানে বলেছি। এবার বিস্তারিত বলছি আপনাদের সঙ্গে। প্রথম কারণ হলো, বর্ষা একজন মডেল হওয়ার জন্য ঢাকায় আসে। তখন ওর সঙ্গে আমার রিলেশন হয়। ওর স্বপ্নের কথা বলল। ওর স্বপ্নের সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করলাম। স্বপ্ন ছুঁয়ে দিতে চাইলাম। আরেকটা কারণ হলোÑ বাংলাদেশের মানুষ সিনেমা দেখে না, হলে যায় না। একটা অবহেলা বাংলা সিনেমার প্রতি। ভাবলাম বর্ষার স্বপ্নও পূরণ হবে। অন্যদিকে এমন সিনেমা বানাবো বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষজন, ইয়াং জেনারেশন বাংলা সিনেমা দেখবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে বানালাম ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’। আমার স্বপ্ন, আশা কোনোটাই বৃথা যায়নি। আন্তর্জাতিকমানের সিনেমা বানানোর চেষ্টা করেছি। প্রবাসেও আমাদের সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে। কিছু তো একটা করতে পেরেছি। আমার ছবি সবশ্রেণির মানুষ দেখে। দেশের সম্মানিত মন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষিত মানুষ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের ছবি দেখে। হাউসফুল হয় আমাদের ছবি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী থাকতে পারে? আমাদের স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। সবখানে আমাদের সিনেমা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিটি প্রান্তরে আমাদের কথা উড়ে বেড়ায়। সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আমাদের। আর কী লাগে একটা জীবনে। যে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা স্বপ্নের মধ্যেই রাখিনি, সেটার বাস্তবায়ন করেছি।
আনন্দধারা : আপনার নামে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে, আপনার সিনেমায় দেশের বাইরের কণ্ঠশিল্পী-সুরকারদের গান বেশি ব্যবহার করা হয়? এটা নিয়ে আপনার মতামত কী? সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে কী বলবেন?
অনন্ত জলিল : আমার যে সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে একটাতেও দেখবেন না শুধু দেশের বাইরের কণ্ঠশিল্পী-সুরকাররা গান করেছেন। যদি সেখানে ছয়টা গান থাকে তিনটা আমাদের এখানকার মানুষ গেয়েছে। বাকিটা বাইরের কেউ। এমন না যে ছয়টা গান বাইরের কারো কাছ থেকে করেছি। আমার এ রকম রেকর্ড নেই। যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ আমার সিনেমা ছাড়া কোথাও কোনো আলোড়ন দেখতে পাই না। এটা নিয়ে কী বলব। একটা সিনেমা মুক্তি পাওয়ার যদি আলোড়ন না হয়, তাহলে সে সিনেমা নিয়ে কিসের কথা বলব।
আনন্দধারা : আপনার কয়েকটা সিনেমায় কাহিনী তামিল হিন্দি সিনেমায় গল্প কপি করার কথা শোনা যায়?
অনন্ত জলিল : আমার কোনো সিনেমা হিন্দি বা তামিল সিনেমার কপি না। হয়তো দু-একটা সিকোয়েন্স মিলে যেতে পারে। আমি কপি বিষয়টা ঘৃণা করি। আমার প্রথম ছবি থেকে শেষটা আমাদের দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিনেমা করেছি। আমার দ্যা স্পিড সিনেমা অসৎ এবং সৎ বিজনেসম্যানদের নিয়ে ছবি। মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমা ছিল মানি লন্ডারিং নিয়ে। যারা দেশের টাকা নিয়ে তছনছ করে। আমার একটা সিনেমাও নকল না। প্রতিটা সিনেমার গল্প এখানকার বাস্তব ঘটনা নিয়ে। নকলের আশপাশে নেই আমি।
আনন্দধারা : খোঁজ দ্যা সার্চ থেকে শুরু করে মোস্ট ওয়েলকাম-২ পর্যন্ত আপনার কয়েকটি প্রিয় সিনেমার নাম বলেন?
অনন্ত জলিল : আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং ভালোলাগার সিনেমা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তার কারণ এই যে বর্ষা মডেল হতে ঢাকা শহরে এসেছে। মডেল হতে এলে তাকে কী কী করতে হয়, কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেটা তুলে ধরেছি। মিডিয়ায় নানাজনে নানান অফার করেন। এখানে বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছি। বর্ষা তার সেরাটা এখানে অভিনয় করেছেন। অনেক অনেক ভালো করেছেন।
আনন্দধারা : ট্যালেন্ট হান্ট করার পরিকল্পনা কেন করেছিলেন?
অনন্ত জলিল : এটা করেছি তার প্রধান কারন ঘুরেফিরে একই মুখ দেখা যায় সিনেমায়। আমি বিভিন্ন ক্যাটাগরি এখানে হান্ট করেছি। শুধু নায়ক-নায়িকা নয়। বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয় শিল্পী বেছে বের করেছি। কারণ একই মুখ দেখতে দেখতে সবাই বিরক্ত। অনেক ট্যালেন্ট ছড়িয়ে রয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। তাদের আমরা খুঁজে বের করেছি। নিজের সবকিছু ঠিক রেখে এখানে অভিনয় করা যায় এটা বিশ্বাস করি। তাই এই প্রতিযোগিতা করেছি। তাদের একটা সুযোগ দেয়া, টালেন্ট খুঁজে বের করা। যারা প্রডিউসার আছে তাদের একজনের কাছে বন্দি হয়ে থাকতে না হয় তার একটা ব্যবস্থা করেছি। সবকিছু মিলিয়ে এটা আমার অনেক আগের পরিকল্পনা ছিল। বছরে তাদের নিয়ে একটা বা দুইটা সিনেমা করব। হয়তো আমরা সেখানে থাকবও না। আমাদের বছরে একটা
সিনেমা করা খুব টাফ হয়ে যায়। কারণ আমার ব্যবসা নিয়ে অনেক ব্যস্ততা। পৃথিবীর বড় কোনো হিরো বছরে একটার বেশি সিনেমা করে না। প্রযোজক খসরু ভাই এদের নিয়ে একটা সিনেমা করার কথা বলেছে। এটা ভালো একটা দিক। এটিএন বাংলার কর্ণধার মাহফুজুর রহমানও সহযোগিতা করবেন বলেছেন।
আনন্দধারা : ‘দ্যা স্পাই’ সিনেমার কাজ কবে শুরু করবেন?
অনন্ত জলিল : চলতি বছরে সিনেমার কাজ শুরু করব আশা করছি। সিনেমার গল্প-স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ শেষ । এখন কিছু কাজ করছি, সেটা হয়ে গেলে শুরু হবে।
বর্ষা : এই প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়েছে, তারা প্রথম সিনেমায় আমাদের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছে। এটা তাদের জন্য বড় একটা পাওয়া। মনসুন ফিল্মের সিনেমা অনেক বাজেটের হয়। একটা আলোড়ন ওঠে সবখানে। মানুষ দেখে। এটা তাদের জন্য বড় একটা প্লাস হবে। একটা সিনেমায় একটা ব্রেক হয়ে যাবে।
আনন্দধারা : আপনার করা সিনেমাগুলোর মধ্যে কোন চরিত্রগুলো আপনার প্রিয়?
বর্ষা : বেশিরভাগ সিনেমায় আমি জুয়েলারি টাইপ হয়ে থেকেছি। সুন্দর করে সবকিছু করেছি। গহনা টাইপ বলতে পারেন। আর আমাদের এখানে সিনেমায় কোনো নায়িকার করার কিছুই থাকে না। আর অনন্ত একটা ব্যান্ড। তার নামেই তো সিনেমা চলে। তার সঙ্গে কাজ করতে আমাদের এমনি ভালো লাগে। টম ক্রুজ একটা ব্র্যান্ড, সালমান একটা ব্র্যান্ড আর আমাদের অনন্ত একটা ব্র্যান্ড। তার সঙ্গে স্ক্রিনে পাঁচ মিনিট থাকা মানে অনেক কিছু।
অনন্ত জলিল : নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সিনেমার গল্পটা একশ’ভাগ বর্ষাকে ঘিরে ছিল। মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্ক্রিনে ছিল। বর্ষা হয়তো মজা করে বলেছে গয়না হয়ে থাকে। এমন একটা গল্প চাই যেখানে নায়িকা আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। আমার সঙ্গে মিশনে থাকুক।
অনন্ত জলিল : গয়নার মতো বলেছে তার কারণ হতে পারে আমি বর্ষাকে অনেক আদর করি। কোলে কোলে রাখি শ্যুটিংয়ের সময় তাই (হা হা হা)।
বর্ষা : নায়িকা তো জুয়েলারি, তাকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করতে হয় সিনেমায়।
আনন্দধারা : দ্যা স্পাই সিনেমায় কী চমক থাকবে?
অনন্ত জলিল : একসঙ্গে একঝাঁক তারকা দেখতে পারবে। এটাই প্রথম চমক। অনন্ত-বর্ষা একটা চমক। আমরা অভিনয় গল্প নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করি। লোকেশন, ড্রেসআপ, সিকোয়েন্স নিয়ে চিন্তা করি। আমাদের মতো কেউ এত ভাবে না। সুতরাং অনেক চমক থাকবে।
আনন্দধারা : প্রচারণায় নতুন কী থাকবে?
অনন্ত জলিল : অনেক চমক থাকবে। এটা দু-একটা কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়ে দেব প্রচারণার। মোবাইলের অ্যাপ থেকে শুরু করে সবখানে প্রচারণা থাকবে। যেখানে যেখানে মানুষ ঢুঁ দেবে আমাদের দেখতে পাবে। সব মাধ্যমে। আমি পারি না, কারণ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমি সিনেমা করতে এসে কিন্তু আমার ব্যবসার কোনো ক্ষতি করিনি। আমার একটা দিনের ভিডিও কেউ যদি করে তাহলে দেখতে পাবে কতটা ব্যস্ত থাকি আমি। দিনদিন আমার ব্যবসা বড় হচ্ছে। আমার একটা দিন কেউ দেখলে পাগল হয়ে যাবে। বলবে এটা রোবট না অন্যকিছু।
আনন্দধারা : এত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় পেলে কী করতে ইচ্ছা করে?
অনন্ত জলিল : একেবারে শোল থেকে বলি আমার মনে হয় আমার বাচ্চাটাকে যদি একটু সময় দিতে পারি। ওকে সময় দিতে পারলে আমার আরো ভালো লাগত। সবচেয়ে ভালোলাগা সে। অফিস থেকে এক সেকেন্ডের জন্য অন্য কোথাও যাই না। বর্ষার সঙ্গে যখন থেকে প্রেম শুরু করেছি, তখন থেকে অফিস থেকে সরাসরি ওর কাছে চলে আসি। একা কোথাও যাই না।
আনন্দধারা : বর্ষাকে নিয়ে কিছু একটা বলেন?
অনন্ত জলিল : বর্ষা আধুনিক একজন ঘরনী মেয়ে। একদিকে ওর ঘর সাজানো দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। রান্না করতে পারে না এমন কিছু নেই। তার মধ্যে কই মাছ ভাজাটা আমার অনেক প্রিয়। বাটি যদি অনেকদূরেও থাকে, দেখে বলে দিতে পারব এটা ওর তৈরি। সব রান্না আমার প্রিয়। পায়েস যে কী সুন্দর করে তৈরি করে। মিডিয়ার কোনো মানুষ যদি বর্ষার মতো বৌ পায়, তবে সে অনেক ভাগ্যবান। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি বর্ষাকে পেয়ে।
বর্ষা : আমিও অনেক লাকী এমন একজন স্বামী পেয়ে। আমার সবকিছু তাকে ঘিরে। এভাবেই যেন থাকতে পারি আজীবন।
আনন্দধারা : ঈদের কেনাকাটা কোথায়, কীভাবে করেন?
অনন্ত জলিল : ঈদের তেমন কেনাকাটা করা হয় না। এমনিতেই যখন দেশের বাইরে যাই, প্রচুর শপিং করি। এবারের ঈদেও সেটা হয়তো করা হবে। কয়েক দিন আগে ব্যবসায়িক কাজে তুর্কি গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ঈদের জন্য শপিং করেছি। আনন্দের বিষয়, আরিজকে নিয়ে এবারই প্রথম দেশের বাইরে ঈদের শপিং করেছি।
বর্ষা : সাধারণত অনন্তর সঙ্গে দেশের বাইরে গেলে সবসময় শপিং করি। এটা আমার ভালোলাগা। আরিজকে নিয়ে এবার অনেক কেনাকাটা করেছি। ওর জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। নিজের জন্য পছন্দের কিছু পোশাক কিনেছি। ঈদের আগে দেশ থেকেও কেনাকাটা করা হবে।
আনন্দধারা : ঈদের দিনটা কীভাবে কাটে?
অনন্ত : সকালে ঘুম থেকে উঠে আরিজকে নিয়ে নামাজে যাব। সাজের ব্যাপারটা নিয়ে বর্ষা সচেতন থাকে। আমাদের বাপ ও ছেলের পোশাক কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয়। নামাজ থেকে এসে বিশ্রাম নিয়ে এতিমখানায় যাব। সেখানে এতিমদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাব। ফিরে ভক্তদের সঙ্গেও সময় কাটাব। বাসায় ভক্তরা শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। তাদের সঙ্গেও সময় কাটে। বিকেলের দিকে বর্ষা ও আরিজকে নিয়ে হয়তো কোথাও ঘুরতে যাব। কিছু দাওয়াতেও অংশ নিতে হয়।
বর্ষা : অনন্ত ও আরিজকে তৈরি করে দেয়াই হচ্ছে আমার প্রথম কাজ। নামাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলে কিছু খেতে দেই। সাধারণত মিষ্টিমুখ করেই অনন্ত ঘর থেকে বের হয়। এবার আরিজও থাকবে সঙ্গে। ওরা নামাজে যাওয়ার পর ঈদের খাবার তৈরি করি। বাকি দিনটা আরিজ ও অনন্তকে নিয়েই কেটে যাবে। পাশাপাশি মেহমান ও আত্মীয়-স্বজনকেও আপ্যায়ন করব।
আনন্দধারা : কী ধরনের পোশাক প্রিয়?
অনন্ত : পোশাক কেমন হবে সেটার ব্যাপারে বর্ষাই দেখে। নামাজে যাওয়ার সময় আরিজ ও আমি পাঞ্জাবিই প্রিয়। ফিরে ঘরোয়া পোশাকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেব। এরপর এতিমখানায় যাওয়ার সময় পাঞ্জাবি কিংবা স্যুট পরেও যেতে পারি। এছাড়া ভক্তদের সঙ্গে থাকার সময়টা টি-শার্ট। সন্ধ্যায় আরিজ ও বর্ষাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময় ম্যাচিং করে পোশাক পরব আমরা।
বর্ষা : ওরা নামাজ থেকে আসার আগ পর্যন্ত ঘরোয়া পোশাকেই থাকব। এবার থ্রিপিসও প্রাধান্য পেতে পারে। বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার সময় শাড়ি পরার ইচ্ছে রয়েছে। তবে সেটা অনন্তর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। কারণ ওর ড্রেসের সঙ্গেই মিল রেখে আমি শাড়ি কিংবা অন্য কোনো পোশাক পরব।
আনন্দধারা : ঈদে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে?
অনন্ত : প্রতি বছরই ঈদের পরের দিন কিংবা তার দিন দুয়েক পর আমরা দেশের বাইরে বেড়াতে যাই। এবারও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে এ বছর ব্যবসায়িক ব্যস্ততাটা বেশি। সবে তো কয়েকটি দেশ ঘুরে এলাম। দেখি কী হয়?
বর্ষা : ঈদে বাইরে যাওয়া আমাদের রুটিন। আরিজকে নিয়ে অন্যরকম একটা ঈদ কাটবে। কিন্তু এবার সে আধো আধো বুলিতে কথা বলতে পারে। ভাবতেই ভালো লাগছে। এবার কোন দেশে যাব তা ঠিক হয়নি।
ছবি : শাহিরয়ার কবির হিমেল
Comments