যা আছে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে, আগ্রাসন কি থামবে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত তিন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন এক বাবা। ছবি: এএফপি

গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই প্রস্তাবিত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে হামাস 'ইতিবাচক' সাড়া দিলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের শর্তকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির শর্তে সম্মত হয়েছে। এর পরপরই হামাস জানায়, তারা কিছু প্রস্তাবে কিছুটা পরিবর্তন করে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইতিবাচক জবাব দিয়েছে। নেতানিয়াহু হামাসের এসব দাবিগুলোকে অগ্রহণযোগ্য বললেও কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচক দল পাঠিয়েছেন। এর মধ্যেই আজ সোমবার ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু।

মার্কিন প্রস্তাবে যা আছে

  • হামাসের হাতে থাকা জীবিত ১০ জন ইসরায়েলি জিম্মি এবং ১৮ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
  • জাতিসংঘ এবং রেডক্রস ফিলিস্তিনিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করবে।
  • গাজার কিছু অংশ থেকে পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

হামাসের প্রধান তিন দাবি

গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) বন্ধ করা: হামাসের অভিযোগ, এই সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়াকে ইসরায়েল রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সংস্থাটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান টম ফ্লেচার মে মাসে বলেছিলেন, 'অনাহারকে দর-কষাকষির উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে সংস্থাটি।'

ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার: হামাস চায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে এই বছরের মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে।

যুদ্ধ শেষ করার আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা: এর আগে জানুয়ারিতে সম্মত হওয়া একটি যুদ্ধবিরতি মার্চ মাসে ইসরায়েল একতরফাভাবে লঙ্ঘন করেছিল। তাই এবার হামাস চাইছে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযান পুনরায় শুরু হবে না যুক্তরাষ্ট্রকে সেরকম নিশ্চয়তা দিতে হবে।

মূল বাধা নেতানিয়াহু

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা নেতানিয়াহু নিজেই। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, সব জিম্মি মুক্তি এবং হামাসকে 'ধ্বংস' না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, হামাসকে ধ্বংস করা একটি অসম্ভব লক্ষ্য এবং এটি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতানিয়াহুর একটি রাজনৈতিক অজুহাত মাত্র।

নেতানিয়াহু বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে চান, যা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাহায্য করবে। তার কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ, আরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হামলা চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে সেখানে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

চুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী এবং গাজার ফিলিস্তিনিরা স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি হামলার অবসান চান। তবে মূল বাধা ইসরায়েলের সদিচ্ছা।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আদনান হায়াজনেহ আল জাজিরাকে বলেন, 'ইসরায়েল এবং নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়। এরকম সম্ভাবনা খুবই কম।' তিনি আরও বলেন, 'ইসরায়েল যা চায় তা স্পষ্ট... ফিলিস্তিনিমুক্ত একটি এলাকা। তাই ফিলিস্তিনিদের সামনে তিনটি পথ খোলা—অনাহারে মৃত্যু, নিহত হওয়া অথবা এলাকা ত্যাগ করা। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা প্রমাণ করেছে, তারা কোনো অবস্থাতেই নিজেদের ভূমি ছাড়বে না।'

Comments

The Daily Star  | English

US lowers Bangladesh tariff to 35% from 37%

Failure to secure a more favourable bilateral agreement by Aug 1 deadline would be a significant blow to the country's export-oriented economy

6h ago