কাগজে আছে, ঠিকানায় নেই: ইসিতে নিবন্ধনের দৌড়ে ভূঁইফোড় দল

ছবি: আহমেদ দীপ্ত

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদনে 'জনতার বাংলাদেশ পার্টি' তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে দেখিয়েছে রাজধানীর পল্টন মোড়ের দারুস সালাম আর্কেডের ১৩ তলায়। তবে গত ২৫ জুন ১৪ তলা ওই ভবনে গিয়ে দলটির কোনো অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৩ তলায় রয়েছে পাঁচটি ট্রাভেল এজেন্সি এবং আটটি ল-চেম্বার। দুটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীরা জানান, এই নামে কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস ভবনটিতে নেই।

যোগাযোগ করা হলে দলটির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সবুজ খান দাবি করেন, তারা এখন আর ওই ভবন ব্যবহার করেন না। তিনি বলেন, 'আমরা বক্স কালভার্ট রোডে একটি নতুন অফিস ভাড়া নিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই অফিস তৈরি হয়ে যাবে।' তবে নতুন অফিসের ঠিকানা তিনি দেননি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য ১০ মার্চ থেকে ২২ জুনের মধ্যে আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। গত ২৪ জুন ইসি দলগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোর একটি বড় অংশই নামসর্বস্ব। এর মধ্যে একটি জনতার বাংলাদেশ পার্টি।

গত জুনের শেষ সপ্তাহে এই প্রতিবেদক পল্টন এলাকায় আবেদনকারী ১৩টি দলের দেওয়া ঠিকানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। দেখা যায়, এর মধ্যে নয়টি দলেরই উল্লেখ করা ঠিকানায় কোনো কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা এমনকি সাইনবোর্ডও নেই। অন্যদিকে, একটি ১৫ তলা ভবনের ছাদে চারটি দলের অফিস পাওয়া যায়।

ছবি: আহমেদ দীপ্ত

ইসিতে নিবন্ধিত হতে হলে একটি রাজনৈতিক দলকে তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে একটি শর্ত হলো— একটি কার্যকর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকা, একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকা এবং অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলা বা ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় থাকা।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি দল নিবন্ধন পেয়েছে।

ভুয়া ঠিকানার ছড়াছড়ি

বাংলাদেশ জনজোট পার্টি তাদের ঠিকানা হিসেবে ৮৫/১, পল্টন লাইন, কালভার্ট রোড উল্লেখ করেছে। কিন্তু সেখানে দলটির কোনো অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। দলটির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল মিয়াজী বলেন, 'আমরা গত বছর ১৪ মার্চ দলের কার্যক্রম চালু করেছি। আমরা কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা কমিটি গঠন করছি। তবে নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত এখনো পূরণ করতে পারিনি।'

একই ভবনে ৮৫/১এ ঠিকানা উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি। সেখানে গিয়েও দলটির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস নেই।

বাংলাদেশ তিসরি ইনসাফ পার্টি পুরানা পল্টনের ৫৪ নম্বর বাড়িকে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করেছে, যার কোনো অস্তিত্ব ওই ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি।

ছবি: আহমেদ দীপ্ত

বাংলাদেশ সংস্কারবাদী দল তাদের আবেদনে ঠিকানা দিয়েছে ৪২/১ সেগুনবাগিচা। আট তলা ওই ভবনে দলটির কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোবারক হোসেন অবশ্য দাবি করে বলেন, 'আমাদের অফিস ওই ভবনেরই তৃতীয় তলায়। আমরা বিকেল ৪টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালাই।' তবে ওই তলায় একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের স্টুডিও পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জানান, এই ভবনে কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস নেই।

একই ছাদে ৪ দলের অফিস

পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ১৫তলা প্রীতম জামান টাওয়ারের ছাদে চারটি রাজনৈতিক দলের অফিস পাওয়া গেছে। দলগুলো হলো—ন্যাশনাল লেবার পার্টি, জনতার অধিকার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন।

ন্যাশনাল লেবার পার্টি তাদের ছাদের দুটি ঘরের একটি জনতার অধিকার পার্টিকে ভাড়া দিয়েছে। মজার বিষয় হলো, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনও ইসির আবেদন ফরমে ওই একই কক্ষকে তাদের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ন্যাশনাল লেবার পার্টির মুখপাত্র শরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ছয় মাস আগে এই ঘরটি জনতার অধিকার পার্টিকে ভাড়া দিয়েছি। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনও ঘরটি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে।'

দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান কে এম রকিবুল ইসলাম স্বীকার করেন যে তারা জনতার অধিকার পার্টির সঙ্গে ঘরটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, 'আমার দলের স্টিকার দরজায় লাগানো ছিল। হয়তো পড়ে গেছে। আমরা শিগগিরই সেখানে ব্যানার টানিয়ে দেব।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago