ইতালিতে নাগরিকত্ব আইন শিথিল প্রস্তাবে গণভোট

ইতালির গণভোটে হ্যাঁ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স
ইতালির গণভোটে হ্যাঁ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স

নাগরিকত্ব আইন শিথিল ও শ্রমিক অধিকার আইনকে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে মত দেওয়ার জন্য ইতালিতে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার দেশটির নাগরিকরা এই গণভোটে অংশ নেবেন।

আজ এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকার উভয় সংস্কার প্রস্তাবেই নারাজ। সরকারের প্রতিনিধিরা দেশবাসীকে 'না' ভোট দিয়ে ওই দুই প্রস্তাব নাকচ করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইতালির বর্তমান অভিবাসন আইন অনুযায়ী, কোনো ইতালীয় ব্যক্তির সঙ্গে রক্ত সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্ক নেই বা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশের নাগরিক নন, এমন মানুষ ১০ বছর ইতালিতে বসবাস করার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারেন।

আবেদন জানানোর পরও নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। সব মিলিয়ে, বিদেশিদের জন্য প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ।

গণভোটে এই সময়সীমা কমিয়ে ১০ থেকে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব আনা হয়েছে।

জার্মানি ও ফ্রান্সে ইতোমধ্যে এই সময়সীমা পাঁচ বছর করা হয়েছে।

ইতালির কয়েকটি এনজিওর নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ের এই প্রচারণা তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় গণভোট আয়োজনে বাধ্য হয়েছে সরকার।

এই সংস্কারের পক্ষের মানুষরা বলছেন, এতে ২৫ লাখ মানুষ উপকৃত হতে পারেন। ইতালির মধ্যম-বামপন্থি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এতে সমর্থন জানিয়েছে।

জর্জিয়া মেলোনির কট্টর-ডানপন্থি ব্রাদার্স অব ইতালি দল অবৈধ অভিবাসন কমিয়ে আনার বিষয়টিকে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাধান্য দিয়েছিল। ক্ষমতায় এসে তারা অভিবাসীদের জন্য ভিসার সংখ্যা বাড়ালেও এই উদ্যোগের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার মেলোনি বলেন, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, তা অসাধারণ। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিকত্ব দেওয়ার তালিকার ওপরের দিকেই থাকছি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: এএফপি (৪ জুন, ২০২৫)
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: এএফপি (৪ জুন, ২০২৫)

২০২৩ সালে দুই লাখ ১৩ হাজার ৫০০ মানুষ ইতালির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ২০২০ সালের তুলনায় সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

ওই বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়া মানুষের ২০ শতাংশই ইতালির নাগরিক হয়েছেন।

ইতালির নাগরিকত্ব পাওয়া মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা মানুষ। আলবেনিয়া ও মরক্কো থেকেই এসেছেন বেশিরভাগ মানুষ। পরের দুই অবস্থানে ছিল যথাক্রমে  আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল।

মেলোনি ও তার জোটের অন্যান্য দলের নেতারা এই গণভোট বর্জন করতে ভোটারদের উৎসাহ দিচ্ছেন।

ইতালির নিয়ম অনুযায়ী, গণভোটে ৫০ শতাংশ 'হ্যাঁ' ভোটের সঙ্গে অপর এক ব্যক্তির ভোট যোগ হলেই (ফিফটি পারসেন্ট প্লাস ওয়ান) নতুন নিয়ম চালু হবে।

তবে এই প্রস্তাব পাস হলেও ইতালির অভিবাসন আইনের সবচেয়ে কঠোর বিধানটি বদলাচ্ছে না। ইতালিতে বিদেশি নাগরিকরা সন্তানের জন্ম দিলেও তাদের বয়স ১৮ হওয়ার আগে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারে না।

শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার উদ্যোগ

ইতালির সংবিধান অনুযায়ী, অন্তত পাঁচ লাখ ভোটার কোনো একটি প্রস্তাবের পক্ষে আবেদনে সই দিলে সরকার বিষয়টি নিয়ে গণভোট আয়োজন করতে বাধ্য হবে।

ইতালির গণভোটে পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স
ইতালির গণভোটে পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স

এ সপ্তাহের ব্যালটে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তনের পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়াতে আরও চারটি সংস্কারের প্রস্তাবও আনা হয়েছে।

এক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক বরখাস্ত হয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে বিপদে অথবা কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছেন, তাদের সুরক্ষা আরও বাড়বে।

বামপন্থি ট্রেড ইউনিয়ন সিজিআইএল এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

সিজিআইএলের মহাসচিব মরিজিও ল্যানদিনি এএফপিকে বলেন, 'ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে কর্মীদের স্বার্থের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার সংস্কৃতি আমরা পাল্টে দিতে চাই।'

সিজিআইএলকে সমর্থন দিচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। তবে অতীতে ওই দলটি ক্ষমতায় থাকাকালীন পাস হওয়া কিছু আইনও সংস্কারের প্রস্তাব এনেছে সিজিআইএল।

 

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

2h ago