অনেকদিন ধরে বিপিএল শিরোপার জন্য লড়াই করছিলাম: দিয়াবাতে

২০১৮–১৯ মৌসুম থেকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলছেন মালির ফরোয়ার্ড সুলেমানে দিয়াবাতে। এই সময়ে ক্লাবের এক অবিচল শক্তি হিসেবে সাদা-কালোদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে হয়ে উঠেছেন এক নিষ্ঠার প্রতীক। চলতি মৌসুমে তার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষা অবশেষে সার্থকতা পেয়েছে—নিজের এবং ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিতেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শিরোপা।

অধিনায়ক হিসেবে দিয়াবাতে ক্লাবের এই ঐতিহাসিক অর্জনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা; ১৫ ম্যাচে করেছেন ১০টি গোল। তার এই অর্জন, মোহামেডানের প্রতি তার অটল ভালোবাসা এবং আরও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টার-এর আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তার উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

দ্য ডেইলি স্টার: অধিনায়ক, মোহামেডানে ছয়টি মৌসুম কাটানোর পর এবার আপনি লিগ জিতলেন। কেমন লাগছে?

সুলেমানে দিয়াবাতে: আমি খুব খুশি। ছয় বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে মোহামেডান লিগ জিতেছে, আমিও জিতেছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা চ্যাম্পিয়ন। আমি অনেকদিন ধরে এই শিরোপার জন্য লড়াই করছিলাম।

ডেইলি স্টার: এবার লিগে শেখ জামাল ডিসি এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো বড় দল ছিল না। তারপরও কেমন চ্যালেঞ্জ ছিল?

দিয়াবাতে: এই বছরটা ছিল আমাদের বছর। সব দলই ছিল পূর্ণাঙ্গ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আল্লাহ আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন—এই বছর মোহামেডানই লিগ জিতবে। তাই কেউ সেটা বদলাতে পারেনি।

এবার লিগ খুবই কঠিন ছিল। আবাহনী ছিল, বসুন্ধরা কিংস ছিল, ফর্টিসসহ আরও অনেক ভালো দল ছিল। আমরা লড়াই করেছি, এবং জিতেছি।

ডেইলি স্টার: গত মৌসুমে মোহামেডান লিগ, ফেডারেশন কাপ এবং ইন্ডিপেনডেন্স কাপ—সবকিছুতেই রানার্সআপ হয়েছিল। এবার ফেডারেশন কাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়লেন। এটা কি আপনাদের লিগ জয়ের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল?

দিয়াবাতে: হ্যাঁ, আমরা সেটা জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি আগেও বলেছি, সব আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা ফেডারেশন কাপে বাদ পড়ে গেছি, কিন্তু সেটা আমাদের জন্য বড় কিছু ছিল না—কারণ আমরা আগেই সেটা জিতেছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল লিগ। মোহামেডান আগে কখনও এই শিরোপা পায়নি। তাই এবার আমরা পুরো মনোযোগ দিয়েছিলাম লিগে। ফেডারেশন কাপের চেয়ে এটা আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ডেইলি স্টার: মোহামেডান অনেক দিন ধরেই অর্থ সংকটে আছে, এমনকি শেষ তিন মাসের বেতনও পরিশোধ করতে পারেনি। একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে আপনি এমন অবস্থায় কীভাবে মোটিভেটেড থাকেন?

দিয়াবাতে: আমরা পেশাদার ফুটবলার। বাংলাদেশে আসার আগে অনেক দেশে খেলেছি। এই ধরনের সমস্যা আমরা আগেও দেখেছি। তাই মানসিকভাবে শক্ত থেকে খেলা চালিয়ে যাই।

আমরা আফ্রিকা থেকে এসেছি। আমাদের মানসিক দৃঢ়তা অনেক বেশি। আমি জানতাম মোহামেডান ঠিকই সব বেতন পরিশোধ করবে। তারা আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আগে সব কিছু মিটিয়ে দেবে। আমি এখানে ছয় বছর ধরে আছি, জানি যে স্থানীয় বা বিদেশি—সব খেলোয়াড়দেরই ওরা পরিশোধ করবে। এজন্যই আমরা কোনো সমস্যা করিনি, খেলা চালিয়ে গেছি।

এই মৌসুম নিয়েও আমি বলছি—তারা ঠিকই পরিশোধ করবে। চিন্তা করার কিছু নেই। দেশে অনেক সমস্যা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ প্রায় ভেঙে পড়েছিল। ব্যবসায়িক সমস্যা হয়েছে, তারপরও মোহামেডান খেলোয়াড়দের টাকা দিয়েছে। আমি জানি তারা আমাদের বেতন দেবে।

ডেইলি স্টার: দুই বছর আগে আপনাকে মোহামেডান ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কেন থাকলেন?

দিয়াবাতে: ফুটবল শুধু টাকার ব্যাপার নয়। এখানে সম্মান আর ভালোবাসার বিষয়ও আছে। মোহামেডান আমাকে যে ভালোবাসা ও সম্মান দেয়, সেজন্যই আমি থেকেছি। আমি জানি, অন্য কোনো দলে গেলে এত ভালোবাসা পাব না। হ্যাঁ, আমরা টাকার জন্যও খেলি, কিন্তু টাকা সব কিছু নয়। তারা আমাকে সম্মান করে, ভালোবাসে, আমার কথা শোনে। আমি যা বলি, সেটা গুরুত্ব দিয়ে শোনে।

ডেইলি স্টার: আপনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

দিয়াবাতে: বাংলাদেশ ফুটবলে আরও পেশাদারিত্ব দরকার। অনেক দেশেই এর চেয়ে অনেক বেশি পেশাদারিত্ব রয়েছে। আমাদের দলকেও আরও পেশাদার হতে হবে।

লিগ ভালো, কিন্তু আরও বেশি দল দরকার, আরও পেশাদারিত্ব দরকার।

ডেইলি স্টার: মোহামেডান সমর্থকরা কি আগামী মৌসুমেও আপনাকে সাদা-কালো জার্সিতে দেখতে পারবে?

দিয়াবাতে: এখনই কিছু বলতে পারছি না। আপাতত আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, সেটার উদযাপন করব। এরপর দেখা যাবে, থাকব কি না।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser calls for urgent reforms in social services to prioritise senior citizens, girls

Political interference led to unfair distribution of benefits in the past, he says

1h ago