সব পক্ষ রাজি হলেই মানবিক করিডোর দেবো, এমন কোনো কথা নেই: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

মিয়ানমারে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, 'আমরা দেখব, সব পক্ষ রাজি কি না। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেবো, এমন কোনো কথা নেই। কারণ এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে।'

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

নতুন যারা রোহিঙ্গা আসবে, মানবিক কারণে কি আমরা তাদের গ্রহণ করব—এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি যাতে নতুন করে না আসে এবং এ কথাটি আমরা খুব জোরেসোরে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি।'

'তাদের যে কটি কথা জাতিসংঘের মাধ্যমে জানিয়েছি, সেগুলো হলো—আরাকানে যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, তার সব স্তরে আমরা রোহিঙ্গাদের দেখতে চাই। যদি সেটা তারা না করেন, সেটা হবে জাতিগত নিধনের একটি নিদর্শন; যেটা আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আমরা সেটা কখনোই করব না। এই কাজটি যদি তারা না করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা-বার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে,' বলেন তিনি।

আরাকান আর্মিকে দেওয়া এ বার্তার জবাব বাংলাদেশ পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, 'না, আমরা প্রশ্ন করেছি, জবাব পেলে আমরা বিচার-বিবেচনা করে দেখব কী ধরনের জবাব পাচ্ছি। আমরা জাতিগত নিধন কোনোভাবেই সমর্থন করি না—পৃথিবীর যে কোনো জায়গাতে। এটি হলো আরাকান আর্মির জন্য একটি পরীক্ষা। অপেক্ষা করছি, এ পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে কি না।'

আরাকান আর্মির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র। নিজের স্বার্থে যার সঙ্গে ইচ্ছা, তার সঙ্গে কথা বলব। কে কী বলল, যায় আসে না। আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছি এবং সেটি বাস্তবায়ন করছি। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাও (মিয়ানমার) তো তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে যোগাযোগ করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আরেকটা জিনিস বিবেচনায় আনতে হবে। আমাদের সীমান্তের ওপারে নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির। এটা আমাদের বর্ডার, সার্বভৌম বর্ডার, এ বর্ডার আমাদের (বাংলাদেশ) ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। এর জন্য ওপারে যে-ই থাকুক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব। যদি পারে, তারা (মিয়ানমার আর্মি) আসুক ওপাশে, তাদের সঙ্গে তো যোগাযোগ ছিল, সেটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক।'

মিয়ানমারের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, 'মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কথা-বার্তা আছে। কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে আমরা সাহায্য পাঠিয়েছি, তাদের অনুরোধের জন্য অপেক্ষা করিনি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তাদের সঙ্গে বাণিজ্য যোগাযোগ আছে, রোহিঙ্গার ব্যাপারেও কথা-বার্তা আছে। কোনো সমস্যা সমাধান চাইলে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে, না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।'

বাংলাদেশ মিয়ানমারের সার্বভৌম ও অখণ্ডতায় বিশ্বাস করে, তাহলে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিপরীতমুখী কি না, জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, 'না, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগটি বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা। ওপারে সীমান্তে তারা (আরাকান আর্মি) আছে, তাদের সঙ্গে তো আমাদের কাজ করতে হবে।'

মানবিক করিডোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা দেখব, সব পক্ষ রাজি কি না। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেবো, এমন কোনো কথা নেই। কারণ এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আরাকানে যে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরি হচ্ছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চাই। আমরা চাই, সেখানে যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তাদের ওপর যেন কোনো অত্যাচার না হয়, তাদের বিরুদ্ধে যেন বৈষম্যমূলক আচরণ করা না হয়, তারা যেন আবার দলে দলে বাংলাদেশে না আসে—এ কথাগুলো মানতে হবে। জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই আমরা মানব না।'

ভারত তার সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাড়াবে কি না গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার আমরা তাই করব।'

Comments

The Daily Star  | English

The end of exemption?

TRIPS waiver end poses dual challenge: legal and technological

20h ago