গণহত্যায় অনীহা বাড়ছে আইডিএফে, নেতানিয়াহু-বিরোধী চিঠিতে ১২ হাজারের বেশি সেনার সই

যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় গণহত্যা চালিয়ে গেলেও ইসরায়েলে এর বিরুদ্ধে জনমত বাড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) ১২ হাজারেও বেশি রিজার্ভ সদস্য একটি চিঠিতে সই করেছেন—যেখানে যুদ্ধ বন্ধ করে ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত আনতে চুক্তি করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে।

১৮ মাস আগে গাজায় গণহত্যা শুরুর সময় নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের প্রতি প্রায় সব ইসরায়েলি নাগরিকের সমর্থন ছিল। হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের উদ্ধার করা হবে—সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছে পুরো দেশ। 

জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে একমত হওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিল, এটাই বুঝি যুদ্ধের শেষ। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গণহত্যা শুরু করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতোম বিবিসিকে বলেন, 'আমরা বুঝতে পারছি ইসরায়েল খুবই খারাপ পথে এগোচ্ছে। এটাও বোঝা যাচ্ছে, নেতানিয়াহু তার স্বার্থের বাইরে কিছু ভাবছেন না। জিম্মিদের ফেরত আনাটা কখনোই তার প্রথম অগ্রাধিকার না। তার অগ্রাধিকারের তালিকার শুরুতে আছে নিজের স্বার্থ ও এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার চিন্তা।'

সাম্প্রতিক চিঠিগুলোতে সই করা অনেকেই ইয়াতোমের মতো দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে আসছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার আগেও সরকারবিরোধী আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন তারা।

'আমি রাজনৈতিক কারণে না, দেশের কথা চিন্তা করে চিঠিতে সই করেছি এবং বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, দেশটা পথ হারিয়ে ফেলছে,' বলেন ইয়াতোম।

গত এক মাসে কয়েক দফায় নেতানিয়াহুর কাছে খোলা চিঠি পাঠানো হয়েছে, যার প্রথমটি প্রকাশিত হয় এপ্রিলের শুরুর দিকে। সেখানে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর এক হাজার রিজার্ভ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সই করেন।

সেই চিঠিতে তারা লেখেন, 'যেসব লক্ষ্যের কথা বলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সেগুলো আর পূরণ হবে না। উল্টো জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে।'

গাজায় এখনো জীবিত আছে বলে ধারণা করা ২৪ জিম্মির কথা চিন্তা করে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা।

জেরুজালেমে সুপ্রিম কোর্টের সামনে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

'প্রতিটি দিন যাচ্ছে, তাদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে,' বলা হয় চিঠিতে। 

পরের কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) প্রায় সব শাখা থেকে কর্মকর্তারা এমন চিঠিতে সই করেছেন।

সব মিলিয়ে এসব চিঠিতে ১২ হাজারের বেশি কর্মকর্তা সই করেছেন।

যুদ্ধে যোগ দিতে রিজার্ভ সেনাদের অনীহা বাড়ায় সংকটে পড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত ১৮ মাসে রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

গত গ্রীষ্মে গাজায় গণহত্যায় অংশ নেওয়া এক রিজার্ভ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, 'তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল, সেখানে (গাজায়) গিয়ে আমার ভাইবোনদের সাহায্য করা দরকার। বিশ্বাস করেছিলাম, ভালো কিছু করতে যাচ্ছি। কিন্তু এখন আর সেটা মনে হয় না।'

ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকায় লেখা এক কলামে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আমিরাম লেভিন বলেন, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে সেনাদের এখন আদেশ অমান্য করার কথা চিন্তা করা উচিত।

'যুদ্ধাপরাধে জড়ানোর ঝুঁকি, পাশাপাশি আইডিএফ ও ইসরায়েলি সমাজের নৈতিক চেতনার ওপর মারাত্মক আঘাতের মুখে চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই,' লিখেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

যদিও ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধের সীমা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করে সিংহভাগ মানবাধিকার সংস্থা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলমান আছে।
 

Comments

The Daily Star  | English

123 ‘pushed in’ from India

Border Guard Bangladesh (BGB) yesterday detained at least 123 individuals, including Rohingyas and Bangla-speaking individuals, after India pushed them into Bangladesh through Kurigram and Khagrachhari border points.

2h ago