আন্দোলন স্থগিত ‘করেননি’ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, দাবি পূরণে সরকারের কমিটি

ছবি: সংগৃহীত

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফার মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  

কমিটিতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি), ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এবং ছাত্র প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক ও রেল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। 

কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র প্রতিনিধিরা গতকাল সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে এ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাত করেন। এসময় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইডিইবি'র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ছাত্র প্রতিনিধিদের ছয় দফা দাবির মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ (টিএমইডি) আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ আন্দোলনরত ছাত্রদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবে বলে ঘোষণা করেছে।

আন্দোলনরত ছাত্রদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা দূর হয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আশা করা যায় বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, 'আমাদের ছয় দফা দাবি নিয়ে গতকাল সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ বিষয়ে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।'

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। 

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে। 

তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। 

পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র 'কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা' মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও 'কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago