যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩১ জনকে ফেরত, বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণের পর দেশটি থেকে কমপক্ষে ৩১ জন বাংলাদেশিকে এখন পর্যন্ত ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টা জোরদার করে।

গত দেড় মাস ধরে বাণিজ্যিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই অভিবাসন মামলায় হেরে গিয়েছিলেন।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ডেস্ক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে।

'আমরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পেয়েছি। সম্প্রতি, দুই দিন আগে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঁচজন এসে পৌঁছেছেন' বলে জানান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এবং এসবি প্রধান গোলাম রসুল।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার আগে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মেগান বোলডিন অংশ নেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত এক পরবর্তী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের গ্রহণে লজিস্টিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে।'

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন এই ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য অংশীদার দেশগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন বেশ কিছু বাংলাদেশি তাদের আবাসন সংক্রান্ত সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছেন এবং এখন তাদের চূড়ান্তভাবে ফেরত পাঠানোর আদেশ জারি করা হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুশৃঙ্খলভাবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন পক্ষ দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছে। অনুরোধের ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নথিপত্র ইস্যু করা এবং বাণিজ্যিক, চার্টার বা সামরিক বিমান যে মাধ্যমেই হোক না কেন, ফেরত আসা ব্যক্তিদের গ্রহণ করা। তারা বাংলাদেশকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

এর জবাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং স্থানান্তরের যেকোনো পদ্ধতিতে তার নাগরিকদের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে।

স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সম্মানের সঙ্গে ফেরত আনার লক্ষ্যে সরকার মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণে, অন্যান্য কিছু দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশি যারা ফেরত এসেছেন তাদের হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি।

ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ প্রথমে যেকোনো অনিয়মিত বাংলাদেশিকে শনাক্ত করার পর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।

এরপর বাংলাদেশ বিষয়টি ঢাকায় জানায় এবং এসবি ফেরত পাঠানো ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করে বিমানবন্দরে তাকে গ্রহণ ও নিবন্ধন করে।

যদি কোনো ফেরত আসা কোনো ব্যক্তির আইনি সহায়তার প্রয়োজন হয়, সরকার তাকে সহায়তা দেবে, বলে জানান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, সরকার ফেরত আসা ব্যক্তির সহায়তার জন্য শীর্ষস্থানীয় এনজিও ব্র্যাককে যুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর শরিফুল হাসান বলেন, 'আমরা নিয়মিত বিমানবন্দরে ফেরত আসা অভিবাসীদের সহায়তা করি এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এবং আর্থিক সহায়তা দিতে পারি।'

দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে।

মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা রতন মোড়ল বলেন, তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। আমি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু আদালত আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৬ মার্চ আমাকে ফেরত পাঠানো হয়।  

তিনি আরও জানান, তার বিমানভাড়ার খরচ বহন করেছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ।

রতন বলেন, ফেরত পাঠানোর আগে তাকে একটি ডিপোর্টেশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল, যেখানে তিনি অন্তত আরও ৫০ জন বাংলাদেশিকে দেখেছেন।

ফেরত আসা আরেকজন নোয়াখালীর ইব্রাহিম খলিল বলেন, তিনি গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ৯ মার্চ তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

খলিল বলেন, আমার বিমানভাড়ার খরচ দিয়েছে মার্কিন সরকার। আমাকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়। কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি, হাতকড়া পরানো হয়নি, কোনো অপমান করা হয়নি। আমার সঙ্গে একজন নিয়মিত যাত্রীর মতোই আচরণ করা হয়েছে।

খলিলও রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন, যা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ

নিউইয়র্কে বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে।

তিনি বলেন, 'অনেকেই খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হচ্ছেন না। কেউ কেউ মাসের পর মাস স্থানীয় বাজারেও যাচ্ছেন না।'

তিনি আরও বলেন, যদিও বৈধ কাগজপত্র যাদের আছে তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন না তবে পুরো কমিউনিটির মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

অন্তত আরও দুজন বাংলাদেশি একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
IMF sets new loan conditions

Bangladesh needs more time for fully flexible exchange rate, says IMF

Bangladesh is currently going through a transition towards a fully flexible exchange rate regime, and the process may take time, said the International Monetary Fund (IMF).

8h ago