ঘোষণার ৩ মাস পরেও মূল ক্যাম্পাসে ফেরেনি চবি চারুকলা

চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত চারুকলা ক্যাম্পাস। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে চারুকলা ইনস্টিটিউট ৩১ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে সরিয়ে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। কিন্তু ঘোষণার তিন মাস ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি চবি প্রশাসন।

চবি প্রশাসন বলছে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সব সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিলে তাদের সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু সিন্ডিকেট সভার অপেক্ষা।

চবি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন।

উপ-উপাচার্যের ঘোষণার পরপরই গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।

চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে দেরি হওয়ায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চারুকলার শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। তখন প্রশাসনের পক্ষে উপ-উপাচার্য শামীম স্যার আমাদের বলেছিলেন ৩১ মার্চের মধ্যে চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে। আমরা সেই সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এখনো কোনো বাস্তবায়ন দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কি আওয়ামী শিক্ষক সিন্ডিকেট মহোদয়দের হাতে বন্দি? চারুকলা স্থানান্তর যদি দ্রুত করা না হয়, তবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চারুকলা শিক্ষার্থীরা কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। বর্তমান প্রশাসনের ওপর এখনো আমাদের আস্থা রয়েছে।'

চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, 'প্রশাসন চারুকলা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের পক্ষে থাকলেও আমাদের বিভাগে আওয়ামী লীগপন্থী কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা নানা রকম বাহানা করছেন। বিভাগে শিক্ষকদের দুটি গ্ৰুপ রয়েছে। একটা চাচ্ছে চারুকলা ক্যাম্পাসে যাক, আরেকটা গ্রুপ চাচ্ছে যেকোনো মূল্যে যেন চারুকলা শহর থেকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা না হয়।'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলন থেকে সরে এলেও গত তিন মাসেও চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি চবি প্রশাসন।

এদিকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শুরুর দিকে চারুকলার শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও পরে তারা নিজেদের মধ্যে এটি সমাধান করে। তাদের দাবি ছিল চারুকলা ইনস্টিটিউটে আরও কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট যুক্ত করে অনুষদ হিসেবে এবং বাকি সব স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হোক। এটা খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একাডেমি কাউন্সিলে তাদের সব সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।

'এখন শুধু সিন্ডিকেট সভার অপেক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে আমরা একটা সিন্ডিকেট সভা করব। সেখানেই চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হবে। আমরা যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে সেটি আইন মেনেই করতে হবে', বলেন তিনি।

এর আগে, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর চারুকলার শিক্ষার্থীরা ২২ দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। টানা ৮২ দিন আন্দোলনের পর ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও সাত দিনের আল্টিমেটাম শেষে ৩১ জানুয়ারি পুনরায় আন্দোলনের নামে। এরইমধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

1h ago