সাগরে নিখোঁজ ২৫ জেলে পরিবারে অপেক্ষার যন্ত্রণা, ঈদের আনন্দ নেই

নিখোঁজ জেলেদের এ স্বজনরা এখনো তাদের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন। ছবি: সংগৃহীত

সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ২৫ জেলে পরিবারে কেবল অপেক্ষার যন্ত্রণা। তাদের ঘরে এবারও ঈদ আসেনি।

২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে নিখোঁজ হন এই ২৫ জেলে। তাদের বাড়ি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা, পদ্মা, চরলাঠিমারা, জিনতলা ও টেংরা এবং চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী, তাফালবাড়িয়া, জ্ঞানপাড়া, গাববাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রামে।

নিখোঁজ এই জেলেরা ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নিখোঁজের পর থেকে তাদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যরা অভাবের তাড়নায় মানবেতর জীবনাযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ তাদের কাছে কেবল আফসোসেরই নাম। অপেক্ষার কাঁটাকে সঙ্গী করে হারানো স্বজনদের স্মৃতিই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

নিখোঁজ এই জেলেরা হলেন - আবু কালাম (৬০), মজিবর চাপরাশি (৪৫), ইউসুফ আলী (৩৫), মো. জাফর (৩৫), আব্দুস সত্তার (৬৫), নাদিম (২০), মো. বেল্লাল (২৫), মো. ইয়াসিন (২৫), আউয়াল বিশ্বাস (৪৮), সফিকুল ইসলাম (৪০), মো. ফারুক (৩৫), আব্দুল খালেক (৫০), মো. নান্টু মিয়া (৩৫), মাহতাব (৪৫), সিদ্দিক মৃধা (৪৩), কালু মিয়া (৪০), মো. মনির হোসেন (৪৫), সহিদুল ইসলাম (৪০), মো. সুবাহান খাঁ (৭১), মো. ইউনুস সরদার (৭৩), মো. খলিল (৬১), আব্দুর রব (৬০), মো. আল আমিন (৩৫), মো. লিটন (৪১) ও মো. কালাম (৩৬)। 

কথা হয় রুহিতা গ্রামের কালু মাঝির মেয়ে রাইসা মনির সঙ্গে। রাইসা বলেন, 'প্রতি মুহূর্তে বাবার জন্য মন কাঁদে। মাঝেমধ্যে নিজের অজান্তে বাবাকে ডাক দিই। বাড়ির দরজায় দৌড়ে আসি। মনে হয় এই বুঝি বাবা আসছেন। মা অসুস্থ। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে আমাদের।'

প্রতিবেশী নিখোঁজ ইউসুফের ছোট ভাই ইয়াকুব আলীর কাছ থেকে জানা গেল, তার ভাই দুই সন্তান রেখে সাগরে যান। আর ফিরে আসেননি। ইয়াকুব বলেন, 'ভাইয়ের সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। বাবা বাবা বলে কান্না করে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। আজও ভাইকে পাইনি। জীবিত আছেন না মারা গেছেন, তা-ও জানি না।'

সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের লাভলী আক্তার জানান, সিডরে সাগরে মাছ ধরার সময় ছয় মাসের ছেলেকে রেখে নিখোঁজ হন তার স্বামী। সেই ছেলে বড় হয়ে এখন রিকশা চালায়। এতে প্রয়োজন মিটলেও সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আসেনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'মোগো বাড়ি কোনো ঈদ হয় না।'

স্থানীয় সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকনের ভাষ্য, উপকূলের কান্না কেউ শুনতে পায় না কিংবা শুনতে চায় না। প্রতি বছরই কোনো না কোনো জেলে পরিবার স্বজন ছাড়া ঈদ করছেন। এ তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। 

বিষয়টি নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, 'পাথরঘাটায় ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের তালিকাসংবলিত স্মৃতিফলক করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ১৮৮ জেলে পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

External balance swings to surplus after 3yrs

The country’s balance of payments returned to a surplus in the fiscal year (FY) 2024-25, ending a three-year spell of deficits.

11h ago