ঈদে ছুটির আমেজ: একাল-সেকাল

ইলাসট্রেশন: নাতাশা জাহান

একটা সময়ে ঈদের ছুটির জন্য অপেক্ষা করতাম শিক্ষার্থী হিসেবে। আর এখন অপেক্ষা করি শিক্ষক হিসেবে।

শিক্ষাজীবনে যতটা না পঞ্জিকার দিন গুণতাম, তার চেয়েও বেশি দিনক্ষণের হিসেব রাখি এখন শিক্ষকতা জীবনে। দুই জীবনে ছুটির আমেজও পাল্টেছে বেশ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রোজায় ছুটির আমেজ শুরু হতো এক সপ্তাহ ক্লাসের পরই। হল ছেড়ে বন্ধুরা বাড়ি চলে যেত। মুখরিত ক্যাম্পাস হয়ে যেত নিরিবিলি।

সে সময়টা বৃত্তির টাকাও আসত রমজানের সময়। বাসার বড়দের থেকে ঈদের খরচার জন্য থাকত আরেক অপেক্ষা। পকেট খুব স্বচ্ছল না থাকলেও হাতে সময় ছিল অনেক। নতুন কী পোশাক এল, বাজারে কী চলছে—এসব দেখার জন্যই নিউমার্কেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয় ঘোরা হতো।

আর পুরো ছুটির মাসটা কাটিয়ে দিতাম দুপুরবেলা নীলক্ষেত থেকে সস্তায় কেনা বই পড়ে। সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দুর বইয়ের জগতের সঙ্গে পরিচয় আমার এ সময়েই।

একালে অবশ্য চাকরি জীবনে ছুটির আমেজ শুরু হয় রমজান মাসের অর্ধেক পেরুলে, যখন ক্লাস নিতে নিতে হাঁপিয়ে উঠি।

ছুটি মানেই কিন্তু এখন আর একটানা ছুটি নয়। গবেষণার কাজটুকু লিখে শেষ করা, নতুন সেমিস্টারের লেকচারগুলো গুছিয়ে নেওয়া, খাতা দেখে দ্রুত নম্বরপত্রে লিখে ফেলা—এসব এখন ছুটির দিনের তালিকা।

সপ্তাহজুড়ে ক্লাস নিয়ে এসবের বা সময় হয় কখন। তাই ছুটি মানে এখন ঘরে বসে তালিকায় রয়ে যাওয়া কাজগুলো শেষ করা, আর ফুরসত শুধু অফিসে না যাওয়া। এ সময়টাতে একটু বেলা করে ঘুমিয়ে নেওয়া। এই হলো এখনকার ছুটির আমেজ।

আমরা যারা শিক্ষকতা পেশায় আছি, আমাদের আসলে অমনভাবে ঘড়ির সময় হিসেব করে দাপ্তরিক কাজ সেরে ওঠা হয় না। ঘরে ফিরেও পড়তে হয়, কয়টা গবেষণা করলাম তার হিসেব রাখতে হয়।

শ্রেণীকক্ষের বাইরেও রয়েছে এমন বহু কাজ। যেমন—অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের কবে পরীক্ষা হবে, কবে ফলাফল জমা দিতে হবে কিংবা কারিকুলামে আগামী বছরে শিক্ষার্থীরা কী পড়বে, এগুলো নিয়ে রাজ্যের মাথা ঘামাতে হয়।

তাছাড়া আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেভাবে এখনো গবেষণাকেন্দ্রিক বা আর-ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠেনি। শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য গবেষণাকাজ অন্যতম হলেও এই ব্যাপক পরিশ্রমের কাজটির জন্য সময়, সুবিধা দেওয়া হয় খুবই কম।

সাধারণত একটি ভালো গবেষণাকাজ শেষ করে, তারপর আবার প্রকাশনার কাজ করতে সময় লেগে যায় বছরেরও বেশি। এই সময়টা পাঠদান আর আনুষঙ্গিক কাজ শেষে একজন শিক্ষক কীভাবে ঠিক করবেন, তা নিয়ে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই আলাদা কোনো পরিকল্পনা রাখে না।

এমনও অনেক ছুটির দিন গেছে, যখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা বাদ দিয়ে, ভোরবেলার শান্তির ঘুম বিসর্জন দিয়ে কাজে বসে যেতে হয়েছে।

এসবের পর পকেটে মাস শেষে বেতন আর ঈদের বোনাস থাকলেও বন্ধুদের নিয়ে দোকানপাট, মার্কেট ঘুরে দেখবার এত সময় কই। ছুটির সময়ক্ষণ সীমিত, আর পাঠ্যবই পড়ে সাহিত্যচর্চা করবার সময়ও পাওয়া যায় কদাচিৎ।

এখন ছুটির শান্তি মানেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, রান্না কিংবা নানান আয়োজনে তাদের সহযোগিতা করা, আর বেলা করে ঘুমিয়ে নিয়ে দুয়েকটা বিকেলে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ।

তারপরও ছুটির আমেজ বলে কথা। এখন যদিও বয়স হয়েছে পরিবারের সবার জন্য উপহার কেনার, তা সত্ত্বেও বাসার অন্যতম ছোট সদস্য হিসেবে সবার কাছ থেকে ঈদের উপহার পাওয়া এবং এর জন্য সেই আগেকার মতোই অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকা, কত সালামি পাওয়া যাবে এবার, এসব বিষয় কিন্তু রয়ে গেছে ঠিক আগেকার মতোই।

এমনকি দেশের বাইরে থাকবার সময়ও মা ফোন করে জানিয়ে দিতেন, যে নতুন জামা কিনে আলমারিতে তুলে রাখা হয়েছে ঠিকই। দেশে গেল যেন পরতে পারি।

তাই শিক্ষাজীবন হোক কিংবা শিক্ষকতা, ছুটির দিনগুলো থাকুক এমনটাই। প্রিয় মানুষ আর চেনা অলিগলিতে দিনলিপির সময়গুলো কেটে যাক। 

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

5h ago