ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার প্রত্যয়

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন | ছবি: পিআইডি

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর চীন ও বাংলাদেশ তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীনের রাজধানীর গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বৈঠককালে প্রেসিডেন্ট সি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডার প্রতি চীনের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস তার দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে গ্রেট হলে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট সি বাংলাদেশের নেতাকে বিরল সম্মান জানিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন।

পরে উষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই নেতা তাদের নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন। এটি ছিল বিদেশে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর।

বাংলাদেশকে চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট বেইজিংয়ের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করার এবং বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখবে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দুই বছর পর ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত এই মর্যাদার মেয়াদ বৃদ্ধি করবে।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আরও চীনা বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে বেইজিং ঢাকার সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা চীনা বিনিয়োগ নীতিতে এ ধরনের বড় পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় সমর্থন কামনা করার পর প্রেসিডেন্ট বলেন, তার সরকার আরও চীনা বেসরকারি বিনিয়োগ এবং চীনা উৎপাদন কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরকে উৎসাহিত করবে।

তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্প পার্ক নির্মাণে সহায়তা করবে। তিনি চীনে আরও বাংলাদেশি পণ্য এবং বিআরআই প্রকল্পগুলোতে 'উন্নত মানের' সহযোগিতা, সেই সঙ্গে ডিজিটাল ও সামুদ্রিক অর্থনীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট চীনের ইউনান ও অন্যান্য প্রদেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের স্বাগত জানিয়েছেন। চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চায়। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনা সহায়তাও চেয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট সি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রত্যাবাসনে চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের স্বপ্ন পূরণে চীনের সমর্থন কামনা করেন এবং বাংলাদেশে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বেইজিংয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি চীনা প্রকল্প ঋণের সুদের হার হ্রাস এবং ঋণের ওপর ধার্য করা প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফেরও দাবি জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে তার দুটি সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালে অধ্যাপক ইউনূসের প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার উত্থাপিত বিষয়গুলোতে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন।

তিনি এসব ফলের গুণমানের প্রশংসা করে বলেছেন, চীন বাংলাদেশ থেকে ফল আমদানি করতে প্রস্তুত।

দুই নেতা তিস্তা নদী প্রকল্পের জন্য চীনের সমর্থন, বহুমুখী যুদ্ধ বিমান ক্রয় এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কুনমিংকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য বহুমুখী পরিবহন সংযোগের বিষয়েও আলোচনা করেছেন।

চীনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, 'আজআমরা ইতিহাস তৈরির সাক্ষী হয়েছি। এটি একটি রূপান্তরমূলক সফর। দুই নেতা সুদৃঢ় কৌশলগত সম্পর্কের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছেন, যা কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago