বিএনপির দুই গ্রুপের কোন্দলে হচ্ছে না ৩৫০ বছরের পুরোনো মেলা

ছবি: সংগৃহীত

সাড়ে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুরের বোয়ালমারীর 'কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ' মেলা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে জেলা প্রশাসন কোনো পক্ষকেই মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়নি।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, 'দুই পক্ষই মেলা আয়োজনের জন্য আবেদন করেছিল। তাদের জানানো হয়েছিল এক হতে পারলে মেলার আয়োজন করা যাবে। কিন্তু তারা এক হতে পারেনি, তাই অনুমতি দেওয়া হয়নি।'

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে দেওয়ান শাগির শাহ (র.)-এর ওফাত দিবস উপলক্ষে উরস ও মেলার আয়োজন করা হয়। চৈত্রের ১২ তারিখ শুরু হয়ে এক মাসব্যাপী চলত এই মেলা। ১৮৪০ সালে শাগির শাহ (র.)-এর ওফাতের পর থেকেই ভক্তরা তার মাজার প্রাঙ্গণে সমবেত হতে শুরু করেন। মাজারের পাশের মাঠে বসত ঘোড়দৌড়, মেলা ও ভক্তিমূলক গানের আসর, যা পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করত।

এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ থেকে ৩০ মার্চ মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে বিএনপির দুই পক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিল।

এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন রূপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাস ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিচুর রহমান। তারা ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুউদ্দিন মিয়া ওরফে ঝুনুর সমর্থক।

অন্যদিকে, কাটাগড় মাজারের খাদেম মো. ইরাদত ফকিরের মাধ্যমে পাল্টা আবেদন করেন রূপাপাত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে সোনা মিয়া, ইউপি কৃষক দলের শাহীন মোল্লা ও বিএনপি নেতা আক্কাস শেখ। তারা কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলামের অনুসারী।

এই দুই পক্ষের মধ্যে গত ১৫ মার্চ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে এবং মানববন্ধনও করেছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, মেলার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে, তাই অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামচুউদ্দিন মিয়া ওরফে ঝুনু বলেন, 'আমরা নিয়ম মেনে মেলার অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু খন্দকার নাসিরের অনুসারীরা পাল্টা আবেদন করেছে এবং আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।'

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'এখানে বিএনপির কোন্দলের চেয়ে বড় বিষয় হলো, মেলার আয়োজকদের অর্থনৈতিক স্বার্থ। মেলা উপলক্ষে যে আয় হয়, তা নিয়েই মূল বিরোধ।'

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, 'দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং মামলা হয়েছে। মেলার আগেই যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তাহলে মেলার সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।'

তবে ইউএনও তানভীর হাসান চৌধুরী জানান, "ম'লা না হলেও ওরস শরিফ আয়োজন করতে কোনো বাধা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Political clashes, mob attacks leave 25 dead in July 2025: MSF

The report, based on news from 18 media outlets and verified by rights activists, also noted an alarming rise in mob attacks, recording 51 incidents last month

50m ago