বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ পেতে সিভিতে পুতুলের মিথ্যা তথ্য, দুদকের মামলা

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ পেতে সিভিতে মিথ্যা তথ্য এবং সূচনা ফাউন্ডেশনে জোরপূর্বক ৩৩ কোটি টাকা জমার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ গতকাল বুধবার এ দুটি মামলা দায়ের করেন।

প্রথম মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে যে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি জমা দিয়েছিলেন সেখানে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে।

দুদক বলছে, ২০২৩ সালে জমা দেওয়া সিভিতে পুতুল বিএসএমএমইউতে শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও নিজেকে ওই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখ করে মিথ্যা দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবেদন করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, পুতুল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৭ সালে অটিজম ও স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যা বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ পান। 

ওই পদে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে জমা দেওয়া সিভিতে নিজের তৎকালীন কর্মস্থল হিসেবে বিএসএমএমইউর অনারারি স্পেশালিস্ট উল্লেখ করেন।

অর্থাৎ, তিনি ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে সিভি জমা দেওয়ার সময় বিএসএমএমইউতে শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম ও মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন। 

এসব তথ্য উল্লেখ করায় তার সিভি সমৃদ্ধ হয় এবং এর ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে পুতুলের নিয়োগের পথ সুগম হয় বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। 

এতে আরও বলা হয়, তিনি ওই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন কি না, তা যাচাই করতে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে বলা হয়, পুতুলের অনারারি স্পেশালিস্ট বা এক্সপার্ট হিসেবে শিক্ষকতা বা শিক্ষা মানুয়েল তৈরি অথবা রিভিউ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। 

অর্থাৎ, সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের জন্য সিভিতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা উল্লেখ করে আবেদন ও নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দুদক।

দ্বিতীয় মামলার এজাহার অনুযায়ী, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সদস্যভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে পুতুলের প্রতিষ্ঠান (চেয়ারপারসন) সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন এবং ২০টি ব্যাংক থেকে মোট ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য করে।

এজাহার থেকে আরও জানা যায়, দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে গত ২৯ জানুয়ারি সূচনা ফাউন্ডেশনে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুতুল ও নজরুল ইসলাম মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে চিঠি দেয়।

২০১৭ সালের মে মাসে ১৭টি ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের সিএসআর খাত থেকে মোট ২১ কোটি টাকা দেয় এবং এ প্রক্রিয়ায় মোট ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে জমা দিতে বাধ্য করা হয়। 

চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করে আদায় করা এই অর্থ কীভাবে কোন খাতে খরচ হয়েছে, তা জানার জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় অনুসন্ধানকালে চিঠি দেওয়া হলেও, কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। 

দুদক বলছে, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, তাই ওই অর্থ উত্তোলন করে বা বিভিন্ন ভুয়া রেকর্ড তৈরি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং এটি মামলার তদন্তের সময় খতিয়ে দেখা হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

4h ago